-- বুঝলি জসিম, গিন্নী যখন বেশি রাঁধে, তখন গৃহে যুদ্ধ বাঁধে।
-- রান্নার সাথে যুদ্ধের কি সম্পর্ক চাচা?
-- আছে, সম্পর্ক আছে। অতি নিবিড় সম্পর্ক। আচ্ছা জসিম, তুই কদম গাছে চড়তে পারিস?
-- কদম গাছে চড়া তো কোন ব্যাপার না চাচা। ব্যাপার হলো তাল গাছ, নারকেল গাছে চড়া। আপনার দোয়ায় আমি তাল এবং নারকেল দুই গাছেই চড়তে পারি। মা বলে আমি না-কি বিরাট গেছো।
-- মা’সাল্লাহ। তুই তো বড়ই বিদ্বান ছেলে। গাছে চড়তে পারাটাও বিরাট বিদ্যার কাজ। আমাকে তাহলে এখন নীপগাছ থেকে কয়েকটা টাটকা নীপ ছিঁড়ে দে বাপ--
-- নীপগাছ আবার কোনটা চাচা? এই গাছ তো আমি চিনি না।
-- নীপগাছ মানে কদমগাছ। রবীন্দ্রনাথের গান শুনিস নি, এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে--
-- ও আচ্ছা শুনছি। কিন্তু চাচা আপনি নীপ, মানে এই কদম দিয়ে কি করবেন?
-- তোর চাচীকে দেবো। আজ পহেলা আষাঢ়। পহেলা আষাঢ়ের পহেলা কদম ফুল দেবো। তোর চাচী অনেক খুশি হবে--
সত্তুর-আষাঢ় ছুঁই ছুঁই চাচার রোমান্টিকতা দেখে জসিম বিস্মিত হলো। গাছে চড়ে তড়িঘড়ি পাঁচ-ছয়টা কদম ছিঁড়ে দিয়ে বললো, চাচা আপনি কি চাচীকে প্রতি আষাঢ়েই এভাবে কদম দেন?
-- হ্যাঁ এখন পর্যন্ত কোন আষাঢ় বাদ যায়নি—
গেছো জসিম আবারও বিস্মিত হলো। বললো, চাচা আর ওই যুদ্ধের ব্যাপারটা?
-- বুঝিস নি। বেশি রাঁধলে কর্তার ভুরি বাড়ে। আর কর্তার ভুরি বাড়লেই গিন্নী যুদ্ধ বাঁধায়। হাঃ হাঃ হাঃ---
কদম হাতে বাড়িতে চুপিসারে ঢুকে বজলুল উদ্দিন কদমগুলো লুকিয়ে রেখে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন। আষাঢ়ের আকাশ থেকে থেকে ঝংকৃত হতে লাগলো। বজলুল উদ্দিন গান ধরলেন, আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবি বসি দুরাশার ধেয়ানে /আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে--
-- তিথি কে? শুভ্রকেশী বৃদ্ধা পাশে এসে দাঁড়ালেন।
-- কোন তিথি?
-- এই যে যার প্রেমডোরে তুমি বাঁধা পড়ে আছো?
-- হাঃ হাঃ হাঃ—
-- হাসছো কেনো?
-- ভাবছি তুমি এখনো সেই আগের মতোই আছো। চাঁদকে এখনো তোমার সতীন ভাবো।
-- তুমিও তো একটুও বদলাও নি। দাও আমার কদম কোথায়? শুভ্রকেশী বৃদ্ধা মিষ্টি হেসে উত্তর দেন--
-- দাঁড়াও নিয়ে আসছি--
বজলুল উদ্দিন লুকানো কদম ফুল এনে তাঁর বৃদ্ধা প্রেয়সীর শুভ্র কেশে পরিয়ে দিতে লাগলেন। বৃদ্ধা আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাসতে লাগলেন কুটি কুটি। এমনসময় আষাঢ়ের আকাশ ফেটে রিমঝিম বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। বৃদ্ধ বজলুল উদ্দিন প্রথম আষাঢ়-বৃষ্টি ভুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁর বৃদ্ধা প্রেয়সীর নীপশোভিত কেশদামের দিকে তাকাতে লাগলেন। আহ! কতো সুন্দর লাগছে। শুভ্র খোঁপাতেও যে কদম ফুল এতো সুন্দর লাগে এটা তিনি ছাড়া ভালো আর কে জানেন?