সে যে আজ কোথা হারিয়ে গিয়েছে, আঁধার ছেয়েছে ঘনঘোর কালো;
চাঁদ নেই তারকারাজিও উধাও, নেই জ্বলে কোথা টিমটিমে আলো!
সে যে জানে শত হৃদয়ের কথা, মায়াজালে ঘেরা হাজার স্মৃতি!
কত দিন কত রাতের প্রহর কেটেছে, সাক্ষী শুক্লাতিথি!
'কিছু মানুষকে মনে রাখার কোনো অর্থ নেই; আর আমি সেই মানুষগুলোরই একজন।'
যারা অতি সহজেই সবকিছু ভুলে যেতে পারে তারা তাদের কোনো দুঃখ নেই। সব, ব্যথা, যন্ত্রণা, কষ্ট, স্মৃতির আঁচড় থেকে মুছে গেলে জীবন শান্তিময়।
পৃথিবীতে ভুলোমনা মানুষের কমতি নেই। অনেক ভুলোমনা মানুষ আছে যারা কখন কোথায় কোন জিনিস রাখে একটু পরেই তা ভুলে যায়। তখন পাগলের মতো খুঁজতে থাকে। হয়ত আঁতিপাঁতি করে গামছা খুঁজছে, পরে দেখা গেল গামছা তার কাঁধেই ঝুলছে। হয়ত চশমা খুঁজতে গিয়ে ঘরের সবকিছু তছনছ করে ফেলছে, পরে দেখা গেল চশমাটা তার কপালের ওপর শোভা পাচ্ছে। কখন যেন ঠেলে কপালের ওপর তুলে দিয়েছিল।
এসব ভুলোমনা মানুষ একদিক দিয়ে ভালোই আছে। কারণ, কিছুক্ষণ আগে কী করেছিল একটু পরেই তা বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। আর এই সামান্য জিনিস ভুলে যাওয়া মানে জগতের সবকিছু ভুলে যাওয়া। টেনশন, প্যারা কোনোকিছুই তখন মাথার ওপর বোঝা হয়ে চেপে থাকার সুযোগ পায় না।
ঠিক এভাবেই মাঝেমধ্যে পৃথিবীর সবকিছু ভুলে, মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে সময় কাটানোর জন্য হা-পিত্যেশ করি। চেষ্টা করি অতীতের সবকিছু ভুলে যেতে। সব যন্ত্রণা, কষ্ট, দুঃখ এসব চিরতরে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা অনবরত কসরত থাকি। কিন্তু চেষ্টা করলেই কি সব হয়? দেখা গেল অনেক চেষ্টা করে কিছু জিনিস প্রায় ভুলেই গেছি, হঠাৎ করেই পরিচিত কোনো ঘটনা, দৃশ্য বা অন্য কোনো জিনিস সামনে উপস্থিত হয়ে অতীতের কিছু স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে। তখন হুড়মুড় করে আবার সব মনে পড়ে যাচ্ছে। আরে বাবা! আমি তো সব ভুলেই গেছি, মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি, কী দরকার আবার সেসব সামনে এনে খামোখা স্মৃতিকাতর করে দেওয়ার?
জীবনটা স্মৃতিবিহীন কাটিয়ে দিতে পারলে খারাপ হতো না, কিন্তু স্মৃতি এমনই এক জিনিস, যাকে হাজার তাড়াতে চাইলেও সহজে ছেড়ে যেতে চায় না।
মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ এমনটাই বলেছিলেন-
'ভুলে যেতে পারাই ভাল।
যে মানুষ কোনোকিছু ভুলতে পারে না,
সে শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে যায়।'
ভুলোমনা হওয়ার ধন্বন্তরী ওষুধ আছে কি কারো কাছে?
শেষে Devon Eaton-এর
A Book I’ll never write থেকে কিছু পঙক্তি:
'আমাকে তুমি ভুলে যাবে। এমন নয় যে, খুব দ্রুত বা হঠাৎ করেই ভুলে যাবে। এমনভাবেও নয় যে, একদিন আমি চলে যাব আর তার পরদিন সেখানে একটি খালি জায়গা পড়ে থাকবে। বাস্তব হলো, খুব ধীরে ধীরে তুমি আমার কন্ঠস্বর ভুলে যাবে। আমার মুখচ্ছবি আর তোমার চোখে ভাসবে না। অবশেষে একসময় তুমি বৃষ্টির পূর্বে আকাশে জমা হওয়া মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকবে, কিন্তু সে মেঘগুলোর রং কী, তা বুঝতে পারবে না। যদিও সেগুলোর রং দেখতে হবে আমার চোখের মণির মতোই, বাদামী-নীল।
তারপর থেকে তুমি আর কখনই জানবে না যে, আমি সমাপ্তিরেখার মতো অস্পষ্ট আকৃতি নিয়ে জেগে আছি। জেগে আছি সংযোগবিহীন স্মৃতি হয়ে, যেগুলো কখনও কখনও তোমার অতীত স্মৃতির সাথে মিলেমিশে যাবে। আমার মনে হয় সেটাই ভালো হবে। কিছু মানুষকে মনে রাখার কোনো অর্থ নেই; আর আমি সেই মানুষগুলোরই একজন।'
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬