এক সময় মনে করা হোত ফিজিক্স এক পুরুষ প্রধান জগৎ। নারীকে বহু বাধা পেরিয়ে এখানে এগোতে হয়। আসলে পুরো ব্যাপারটাই একটা ভুল ধারণা। নারীরাই কৌতুকের সাথেই ব্যাপারটাকে গ্রহণ করেন। আগামী বছর জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের CERN এর ডিরেক্টর জেনারেলের পদ অলংকৃত করবেন এক নারী – ফ্যাবিওলা গিয়ানোত্তি।
৫৫ বছর বয়সী রোমে জন্ম নেয়া এই নারী পার্টিক্যাল ফিজিক্সে University of Milan এর Ph. D.। জিওলজিস্ট বাবা আর সিসিলিয়ান মায়ের এই প্রতিভাময়ী মেয়ের সাফল্যের ঝুলিতে ইতিমধ্যেই বহু অর্জন রয়েছে।
মা’র পড়াশোনা ছিলো সাহিত্য আর সঙ্গীত নিয়ে। ফ্যাবিওলাও প্রথমে আর্টসের দিকেই ঝুকেছিলেন। পিয়ানো বাজানোতেও তার ডিগ্রী রয়েছে। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে তার দর্শণের দিকে ঝোঁক বাড়লো, কেননা এখানে নানা ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিদ্যাকে বেছে নেন, কারণ তার ধারণা হোল যে এর মাধ্যমেই হয়তো তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব পাবেন বা দিতে পারবেন। এরপর কেটে গিয়েছে অনেকদিন। ১৯৮৭’তে তিনি CERN এ যোগ দেন। তিনি CERN এর ATLAS project এর প্রজেক্ট লিডার ছিলেন। তার অধীনে প্রায় চল্লিশটি দেশের, ১৭৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩,০০০ বিজ্ঞানী কাজ করতেন। এতগুলো তুখোড় মেধাবী বৈজ্ঞানিকের কাজ কর্মের সমন্বয় করা, সে সাথে ATLAS এর সার্বিক ধাক্কা ঠান্ডা মাথায় সামলানো এক সত্যিকারের অধিনায়কের কাজ।
২০১২ সালে TIME’S PERSON OF THE YEAR ছিলেন বারাক ওবামা, ফ্যাবিওলা হয়েছিলেন রানার-আপ। ফোর্বসের Most Powerful Women 2015’য় তার অবস্থান ৮৩।
ড. ফ্যাবিওলা, সার্নের কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যাগনিয়েযকা জালেভস্কা আর সাবেক ডিজি রলফ হিউয়ারের সাথে
২০১২’র ৪ জুলাই এক ঐতিহাসিক সেমিনারে তিনিই ATLAS এর ফলাফল তুলে ধরেন যাতে হিগস্ বোসনের অস্তিত্বের কথা পরীক্ষামূলকভাবে আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। ঐ সেমিনারের আগে দশ দিন ধরে তার দাঁতে ব্যাথা হচ্ছিলো। সেজন্য তিনি প্রথমে দিনে একটি করে ব্যাথানাশক বড়ি খাওয়া শুরু করেন। কোন কাজ না হওয়ার দিনে দু’টি, এরপর তিনটি পর্যন্ত খেতে শুরু করেন। সেমিনারের আগের রাতে ভয়ংকর জ্বরের কারণে তাকে ডেন্টাল সার্জারীতে নেয়া হয়। ডাক্তার চিকিৎসা শেষে তাকে ঘরে থেকে পূর্ণ বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দিলে তিনি বললেন – “আমি ২০ মিনিট ঘরে থাকতে পারবো।“ এই বলেই তিনি বাড়ী ফিরে গোসল সেড়েই CERN এ রওনা হলেন।
ডিরেক্টর জেনারেলের কন্ট্রাক্ট সইয়ের মুহূর্তে
মাঝে মাঝেই স্নিকার আর জিনস্ পড়া এই মহিলা তার নেতৃত্ব, আর ধৈর্য্যের সাথে সব পরিস্থিত মোকাবেলার জন্য সবার কাছেই শ্রদ্ধাভাজন।
ডিজি নির্বাচিত হবার পর তিনি বলেছিলেন – “১৫ জন অসামান্য পূর্বসূরীর পর CERN এর পরবর্তী ডিরেক্টর জেনারেল নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য এক বিশাল সম্মান আর দ্বায়িত্ব। CERN, বিজ্ঞান উৎকর্ষের এক কেন্দ্র আর সাড়া পৃথিবীর পদার্থবিদদের জন্য এক গর্ব আর অনুপ্রেরণার উৎস। সে সাথে এটা প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের এক সূতিকাগার, শিক্ষা আর জ্ঞানের এক প্রস্রবণ, এবং বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা আর শান্তির এক উজ্জ্বল মূর্ত উদাহরণ। এ চারটি সম্পদের সমাহার CERN কে করেছে অনন্য বৈশিষ্টমন্ডিত। এটা এমন এক স্থান যেটা শ্রেয়তর বৈজ্ঞানিক আর শ্রেয়তর মানুষ তৈরী করে। CERN কাউন্সিল, এর স্টাফ, সারা পৃথিবীব্যাপি ব্যবহারকারীসহ সবার সাহায্য নিয়ে আমি CERN এর সকল বৈশিষ্টের উৎকর্ষ রক্ষার ব্যাপারে পরিপূর্ণ আত্মনিয়োগ করবো।“
টাইমসের কভার
ব্লগার বন্ধুগণ, এতো সবাই জানে উপযুক্ত সুযোগ পেলে, মেয়েরাও ভাল কিছু করতে পারে। তাই তারা যেন পণ্য না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যার যতটুকু সাধ্য, চেষ্টা করা উচিত।
Fabiola Gianotti
বি: দ্র:- পোস্টের টাইটেল "আজকের মানবী, সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলেছে তার মন"এক ইন্ডিয়ান চ্যানেল থেকে ধার করা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮