তোমার কথা একটুও মনে পড়েনা। সত্যি বলছি... সেই প্রথম দেখার মাহেন্দ্রক্ষণ, সেই সে সোনালী রোদ ঝরা বিকেলে গর্বিত রাজহাঁসের মতো মরাল গ্রীবা উঁচু করে হেঁটে যাওয়া। বড়ো ছোট ছিলাম। বড়ো ক্ষুদ্র মনে হতো তোমার কাছে নিজেকে। তবুও অবিরত বেঁচে রই রক্তস্নাত হয়ে। সেই বিতর্কের দল, সেই তোমার উপস্থিতিতে উজ্জীবিত হয়ে আমার আগুন ঝরানো! নিজেকে প্রমাণে সে কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা! তোমাকে পাবার আশা ছিলো অনেকেরই, নিয়মিত যাতায়াতে আমার জীবন নিয়ে টানাটানির কথাও তোমার অজানা ছিলো না।
আমার কাঁদে মনপাখি... বারে বারে তবু চলে যাই সে পথ ধরে সে মাঠটির ধারে। তুমি ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছো মনে করে সে কত বিকেল গেছে ক্রিকেট খেলে। মাঝ দিয়ে লাভ হলো জেলার সবচেয়ে বড়ো দলে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে স্থান পাওয়া। তোমাকে দেখাতেই যেন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অতিমানবিক সব উড়াল দিতাম। শূণ্য এক হাতে বলটা থামাতে পারলেও তোমাকে মুঠিবদ্ধ করা হলো না। আমার নামে অন্যেরা বাজি ধরলেও তোমাকে নিয়ে বাজিতে ঠিকই হেরে যাওয়া এক বালক মাথা উঁচু করেও মন নিচু করে এখনো রাতে আকাশের তারা গোনে মাঠের মাঝে শুয়ে। ক্যামন আছো তুমি?
শুধু একটা বার দেখতে ইচ্ছে করে। একটা বার। সেই সূদুর নীল সমুদ্রের ধারে পাল ওঠানো শহরে কত মানুষের বাস! তোমাকে কি তারা আমার মতো করেই অপলক তাকিয়ে দেখে? যার তীব্রতায় আমি তোমার বড়ো আপুর সাথে সুমধুর একটা সম্পর্ক গড়ে নিয়েছিলাম। প্রতিটা দিনতো তোমাকে দেখবো! সেই দুইটা বছর বিকালে তোমার বাসায় তাঁর সাথে আড্ডা কি তাঁর আমার প্রতি স্নেহের কারণে? নাকি আমার একটি পাখির খসে পড়া পালকের স্পর্শ নেয়ার আকাংখা?
জানতাম তুমি আসবে, সেই আশায় আমাদের পড়া শেষ হয়ে গেলেও স্যারকে কম্পিউটার শেখানোর নামে আমার থেকে যাওয়া। তোমাকে দেখে একটুও তাকাতে পারতাম না। তুমি কি সুন্দর হেসে আমাকে বলতে, ভালো আছেন? আমি যে তখন দুনিয়াতে সবচাইতে ভালো থাকতাম! জানতে কি, কতো দিন তোমার পড়ার শেষে সাইকেল নিয়ে তোমার পেছন পেছন যেতাম? জানতো সবাই, জানতো আকাশ, ভেসে যাওয়া মেঘ গুলো...
বিশেষ কোন দিনে তোমার আপুই শুধু নয়, তোমাদের বাড়ির আশ্রিত মানুষটিও একটি উপহার পেতো...যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলে শুধুই তুমি। কোন খুশীর খবর শোনাতে আগে সেই পথ ধরেই ছুটতাম, আর বের হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সাইকেলে চলে গেছি কতোশতো পথের শেষ প্রান্তে! পিচ ঢালা পথ, ইটের পথ, মাটির পথ শেষ হয়ে যখন নদীর কিনারায় পৌঁছাতাম, ক্লান্ত হয়ে ভাবতাম এই বুঝি আমার সাধনা...
যখন তুমি আমার হলে, ততটা খুশীর সময় এ জীবনে আমার আসেনি... তিনটা মাস আমার যেন ঝড়ো হাওয়ায় ভর দিয়ে উড়ে গেলো আঁধারে কালোর দিকে। কেন আঁধার? জানোনা? জানো, আমিও জানি। তোমার অভিমান আর আমার ভুল বোঝাতে পা বাড়ালাম সেই পথে... খারাপ হতে সময়ও লাগে না। হাতে তখন হিংস্র মারনাস্ত্র! বড়োরাও চোখ তুলে কথা বলতে পারেনা। তোমার অভিমান কি এতোই বেশী ছিলো? আমি কি নিজের জানের পরোয়া করতাম? নইলে কিভাবে সশস্ত্র সতের জনকে একা শুইয়ে বের হয়ে এলাম? মনে প্রাণে চাইতাম ভুলে যাই, ভুলে যাই তোমাকে... বাড়ি থেকে যখন বাইরে পাঠিয়ে দিলো, চাইনি জীবনে আর তোমার সাথে দেখা হোক...
তবুও ফিরে আসতে হয়, আসি সেই পথ ধরে, সেই মাঠের ধারে.... তুমি ক্যামন আছো? দেখা হতে তোমার ছলছল চোখ কি আমাকে পুড়িয়ছিলো কষ্টে? কি জানি! তখনই পরিচয় তোমার সেই বড়ো আপুর বান্ধবীর সাথে... হায়... ততদিনে যে দেরী হয়ে গেছে! তুমি যে আমার উপরে অভিমানের পাহাড় নিয়ে বসে ছিলে সেদিনই জানলাম। তোমার হাতের আংটিটি যে আরেকজনের দেয়া! আমাকে একটুও সময় দিলেনা? দুই দিনেই চলে গেলে? ক্যানো আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলে গায়ে হলুদের দিন? তুমি ভালো থাকো এটাই তো আমার চাওয়া... আমি কি তখন পারতাম তোমাকে ভালো রাখতে?
মুছে গ্যাছে দেনা পাওনার স্মৃতি...
মনে পড়েনা কিছুই, এখন ভালো আছি, বড্ডো ভালো... ভালো থেকো। জীবনে কখনো যদি কোন সুর কেটে যায়, আমিতো আছি তোমারই পাশে। পাশে থেকে ফিস ফিস করে বলবো, ভালোবাসি, বড্ডো ভালোবাসি...