স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তাই যমুনা সেতু আর বনপাড়া সড়কটি বেশি আলোচিত। দু'টিই এখন নিজের স্থায়ীত্ব খুঁইয়েছে। যমুনা সেতুর ফাটলের বিষয়টি আমরা সবাই জানি। কে দায়ী, কার দায় এসব নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে ভালোই। কিন্তু কাজের কাজ নেই। সরকার দায়ীদের এখনো পযর্ন্ত চিহ্নিত করতে পারে নি। পেশাগত কারণে যমুনা সেতুর ফাটল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বিস্মিত হয়েছি। এই ফাটলের জন্য দায়ী কে, তা বের করতে সরকারের এতো সময় লাগছে। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কে দায়ী নয়, তাহলে বোধহয় বলা যাবে, এমন কেউই নেই। নিমার্ণকালীন ত্রুটি এবং নকশার ত্রুটি যে যমুনা সেতুর আজকের পরিণতির জন্য দায়ী, তা আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই বলেছেন। এই সেতুটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হুন্দাই নিমার্ণ করেছে। নকশা তৈরি করে নিয়েছে আরেক প্রতিষ্ঠান থেকে। বিশ্বজুড়ে হুন্দাই পরিচিত হলেও এই প্রতিষ্ঠানটির বড় বড় অনেক স্থাপনার স্থায়ীত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মালয়েশিয়ার পেনাং সেতু এগুলোর একটি। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার এখনো পযর্ন্ত হুন্দাইকে কঠোর ভাষার একটা ধমক পযর্ন্ত দিতে পারেনি। আসলে মুজরা নৃত্য আমাদেরই মানায়! মাগার্নেট ওয়ান নামের রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আর সেতু কতৃর্পক্ষের প্রকৌশলীদের নানা ধান্দাবাজির কাহিনী না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু এতোটুকু নিশ্চিত, যমুনা সেতু তার তিনভাগের একভাগ স্থায়ীত্ব হারিয়েছে।
আরো খারাপ পরিস্থিতি বনপাড়া-নলকা-হাটিকমরুল সড়কটির। বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পটি এখন সংস্কার করে চালানো যাবে না। মাত্র ৫ বছরে এই অবস্থা! বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টরা যেখানে ছিলেন এই প্রকল্বপ পরিচালনার মূল্ ব্যক্তি, সেখানে সড়কটি কীভাবে নিমির্ত হয়েছিলো যে, ৫ বছর পর বিশ্বব্যাংক নিজেই বলছে, রাস্তাটি সংস্কার করে আর চালানো যাবে না? এই রাস্তা পুণঃনিমার্ণ করতে হবে, যাতে ব্যয় হবে প্রায় দু'শ কোটি টাকা। বুঝুন, তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে যে সড়ক নিমার্ণ করা হয়েছে, মাত্র ৫ বছরের মধ্যে আরো দু'শ কোটি টাকা খরচ করে সেই রাস্তাকে চলাচলযোগ্য করতে হবে। আন্তজর্াতিক নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আমাদের সরকারের মাননীয় উপদেষ্টারা কিন্তু বিশ্বব্যাংকের জন্য এ পযর্ন্ত একটি কথাও খরচ করেননি। তারা প্রশ্ন তুলেননি, সব দুনীর্তি দূর করার ছবক দিয়ে বেড়ানো মানুষদের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়া বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টদের দুনীর্তির কারণে যখন আমাদের মতো রাষ্ট্র লোকসান গোনে, তখন তার দায় কে নেবে? বিশ্ব উন্নয়নের ঠিকা নিয়ে রাষ্ট্রের পাছায় উন্নয়ন সূচকের সিলমোহর মারিয়ে বেড়ানো বিশ্বব্যাংকের মোড়লি যে শেষপযর্ন্ত আমাদের নিঃস্ব করে ছাড়ছে তার আরো একটি দৃষ্টান্ত কেবল এটি। আমাদের রাষ্ট্রের কণর্ধাররা কি এতোটাই বোকা যে তারা বুঝছেন না? তা তো হবার কথা নয়। ডক্টরেট ডিগ্রিধারীরা কি এতোটা অবুঝ? না অবুঝ তারা নন। কিন্তু তারা কিছু বলছেন না, কারণ যাহা বাহান্ন তাহাই তেপান্ন। কারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা যায় না। প্রথম আলো-স্টার-আই-সিপিডিদের তৈরী সুশীল সমাজ এই সত্যটা বুঝতে পারছেন কি না কে জানে!
ব্যবহৃত ছবিটি আনোয়ার আলী হিমুর তোলা