শুক্রবার সকালেই আমার যাবার কথা ছিলো। উদ্দেশ্য স্থানীয় রাজনীতির ভেতরের কিছু কাহিনী নিয়ে আলাপচারিতা। আগের রাতে প্রভাবশালী সেই রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতির অনুমোদন মিললো। এর আগে যে কয়বার তার সঙ্গে একান্তে আলাপ হয়েছে, প্রতিবারই আমি গিয়েছিলাম তার অফিসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে তিনি আমাকে পরদিন ডাকলেন তার বাসায়। সেখানে আমি আগে কখনো যাই নি। লোকেশন জেনে নিয়ে সকাল ১০টায় যখন তার বাসার সামনে আমি গেলাম, তখন পুরানো ঐতিহ্যবাহী অভিজাত একটি সুরম্য বাড়িকে কীভাবে আধুনিকায়নের মাধ্যমে হাল আমলের সঙ্গে মানিয়ে দেয়া যায়, তা দেখলাম। বড় গেট। সেখান দিয়ে অনুমোদন সাপেক্ষে ঢুকে মূল বাড়ির সামনে বিস্তৃত জায়গা দিয়ে হেঁটে যেতেই নেতা বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে এলেন। পথ চিনিয়ে সসন্মানে নিয়ে গেলেন বৈঠকখানায়। সোফায় বসলাম। হালকা কিছু আলাপচারিতার ফাঁকেই দরজায় উঁকি দিলো একটি হাড় জিরজিরে মুখ। সালাম দিলেন সেই মুখের মালিক। নেতা উঠে দাঁড়ালেন, সমীহের সঙ্গে ভেতরে নিয়ে এলেন তাকে। অন্তরঙ্গ মানুষের মতো পাশে বসালেন। আমি ভালো করে খেয়াল করলাম আগন্তুককে। সত্তুরের কম কোনোভাবেই বয়স নয়। পড়নে মলিন শার্ট আর লুঙ্গি। অজস্রবার ধুয়ে নিলেও সেসব পরিষ্কার হয় না বলেই বোধহয় সেদিকে মনোযোগ নেই। শুকনো পাটকাঠির মতো শরীরের ওপর যে মুখখানি বসানো, তাতে অসংখ্য ভাঁজ মসৃণ সড়কে বারবার হোঁচটের কথা মনে করিয়ে দেয়। আগন্তুকের সঙ্গে নেতা আমাকে বসিয়ে রেখে আলাপচারিতায় মাতলেন। বুঝলাম, নেতার নির্বাচনী আসনের মানুষ। এলাকার খোঁজ খবর দিতে শুরু করলেন আগন্তুক, নেতাকে। আগন্তুক ভীষণ উৎফুল্ল, 'এবার এলাকায় আপনি ছাড়া আর কারো কথাই শোনা যাচ্ছে না। আপনি জিতলে আমরা শান্তি পাবো' ইত্যাদি কথা তিনি নেতাকে শোনালেন পরম আগ্রহে। নেতা তৃপ্তিতে গদগদ হয়ে শুনলেন, মাঝে মধ্যে উমুক তমুকের খবর নিলেন। বুঝলাম, নেতার সঙ্গে এই আগন্তুকের যোগাযোগ মাঝে মধ্যেই হয়। এক ফাঁকে নেতা প্রশ্ন করলেন, ব্যবসা কেমন চলছে? আগন্তুক জানালেন, ভালো নয়। এতোক্ষণে জানতে পারলাম, শীর্ণদেহী আগন্তুক গ্রাম থেকে শহরে আসেন মশলা বাটার কাজে ব্যবহৃত সিলপাটায় ধারকাটার কাজে। সারাদিন শহর ঘোরেন। দিনের শেষে যা পান নিয়ে বাড়ি যান। নেতার প্রশ্নের জবাবটি একটু ব্যাখ্যা করলেন আগন্তুক, আগে বাড়ি বাড়ি মশলা বাটতো। তখন আমাদের ব্যবসা ছিলো চাঙ্গা। এখন গুঁড়া মশলার প্যাকেট শহরের ঘরে ঘরে। কে আর কষ্ট করে মশলা বাটে। আমাদের ব্যবসা আর নাই। অন্য কাজ তো শিখিও নি। সংসার আর চলে না! নেতা চিন্তিত হলেন। মুখটায় খানিকটা ব্যথিত মানুষের আদল এলো। `কী আর করবেন, দেশের যা অবস্থা...'। নেতা আগন্তুক না দেশ কাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত ও ব্যথিত বোঝা গেলো না। নেতা শুক্রবার দিনের সফেদ জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে টেনে বের করে আনলেন একশ টাকা। আগন্তুককে দিলেন। জানাতে ভুললেন না, তিনি যেনো এমন সমস্যায় পড়লে বিনা দ্বিধায় তার কাছে আসেন। আগন্তুক উঠছিলেন। নেতা তাকে বসালেন চা খাওয়াবেন বলে। খানিক পরে চা এলো। আগন্তুক আমার সামনে বসে আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। তার কপালের রেখাগুলো থিরিথির কাঁপছে। আমার স্মৃতি জেগে উঠলো। নেতার অফিসে গিয়েই আমি জেনেছিলাম, নেতার গুঁড়া মশলার কারখানা আছে। বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। সেই গুঁড়া মশলা বিক্রির লভ্যাংশ থেকেই কি ওই একশ টাকা এসেছে? কিংবা এই চাও কি ওই টাকায় কেনা? ঠিক নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। চায়ে চুমুকরত আগন্তুকও অভিনব 'মজুরি'র বাইরে আর কিছু ভাবতে রাজি হবেন কি না, আমার এই চিন্তায় বাধা পড়লো। চা শেষ করে আগন্তুক উঠে দাঁড়িয়েছেন ততোক্ষণে; নেতার হাতে তার হাত। বলছেন, 'আপনি না থাকলে কী যে হতো! সংসার নিয়ে মরা ছাড়া বোধহয় গতি থাকতো না।' হাসিমুখে দু'জনের বিদায়পর্ব আমি অবলোকন করলাম।
আমি এমন অনেক আগন্তুককে চিনি, এমন অনেক নেতাও আমার অচেনা নয়


আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বন্ধ করা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা
সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বহুল আলোচিত "ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন" বন্ধ করা নিয়ে অনেককেই উদ্বিগ্ন দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমাদের মতো সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তার কারণ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বিশেষ ভূমিকা পালনকারী দল। দলটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....
আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....
বিএনপি জানে তাদের মূল প্রতিপক্ষ কারা.....
ছাত্রসমন্বয়করা জানে রাজনীতিতে তাদের দৌড় কতদূর...
তারেক রহমানের যখন দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে তখনই হাসনাত গং নানান কাহিনী শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস
পিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের একটা জরীপের ফলাফল নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। পিউ রিসার্চ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সামাজিক জরীপ এবং গবেষণা সংস্থা। এই জরীপের বিষয় ছিল, ২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
শ্বেতশুভ্র সোর্ড লিলি
সোর্ড লিলি বা মেক্সিকান সোর্ড লিলির নামের সাথে লিলি থাকলেও এটি আসলে লিলি বা লিলি পরিবারের কোনো ফুল নয়। কিভাবে কিভাবে যেনো এর নামের সাথে লিলি জুড়ে গেছে। এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন