ছবি-গুগুল
অঝরে বৃষ্টি পড়ছে, না বাহিরে নয় আমার চোখ দিয়ে।
মানুষের জীবনে টাকার ভূমিকাটা খুব বেশিই। আজ কেন জানি আমার বার বার মনে হচ্ছে – ইস আমার যদি অনেক অনেক টাকা থাকত! না অনেক না, কিছুটা বেশি থাকলেই চলবে। চাকুরি করে যা বেতন পাই তার কিছুটা পরিবারে খরচ করি, নিজের জন্য খরচ করি আর বাকিটুকু জমা করি। এতে ভালই চলে যাচ্ছে জীবন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আরেকটু বেশিই টাকা দরকার। এই টাকার কারনে যখন দেখি স্বপ্নগুলো পূরন হয় না তখন অনেক কষ্ট লাগে। অনেক রাত হয়ে গেছে এখনো ঘুমাতে পারিনি। সকালেই উঠতে হবে কারন অফিসে যেতে হবে কিন্তু কিভাবে ঘুমাবো? আমার শুধুই বুক ফেটে কান্না আসছে। কেঁদে কেঁদে বুকটা হালকা করে নিচ্ছি।
আমি জানি না কেন রিফাত বাসায় আসলে ওকে খেতে দিলে ও গোশত খেত না। তবে আজ মনে হয় এর কারণটা আমি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছি। এই ছেলেটা আমাকে ভয় পায় কিছুটা। আপার কাছে বলে আমি নাকি অন্যরকম আপার মত না। ও ভাবে আমি খুব গম্ভীর টাইপের মেয়ে। এই কথা শুনে আমি শুধু হাসি। আর আপা নাকি রিফাত কে বলে আরে না লিনা এমন মেয়ে না। ওর মন খুব ভালো । একটু চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে এই আর কি।
আমি রিফাতের জন্য কাঁদছি। ওর সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই আমার। তবে ও খুব মিষ্টি করে আমাকে ছোট আপু বলে ডাকে। ফোন দিয়ে সুন্দর করে সালাম দিয়ে কথা বলে ছেলেটা। আমি তেমন খোঁজ খবর নিতে পারিনা। ফোন দিয়েই ওর অনেক অভিযোগ শুনতে হয়। আমাকে ফোন দিয়েই বলবে-হুম ছোট আপু, আপনিত একদিনও ফোন দেন না। একটুও খবর নেন না এই ভাইটার। আপনি জানি কেমন, বড় আপুর মতন না। ওর কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়ে, এটা আমি বুঝি। কিন্তু আমিও জানি ইদানিং কেমন হয়ে গিয়েছি কাউকেই ফোন দেই না ।রিফাত কে মাঝে মাঝে ফোন দিতাম আমি। কিন্তু রিফাত প্রায়ই ফোন দিয়ে কেমন আছি জানতে চাইত। আর আমার ফোন পেলে অনেক খুশি হত। খুশি হত এটা আপার কাছ থেকে শুনেছি। কারন ও খুশি হয়ে আপাকে বলত আজ ছোট আপু ফোন দিয়েছিল। ওর কণ্ঠে নাকি উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ত।
রিফাত ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। হলে ছিল কিছুদিন। কিন্তু হঠাৎ শুনি হল থেকে চলে এসেছে । কিন্তু কেন চলে এসেছে আজ তা আমি জানি। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকাটা অনেক কষ্টের। ক্ষুধার জ্বালা একমাত্র ক্ষুধার্তই বুঝে কেমন। নিজের খরচ জুগাতে কষ্ট হত তাই চলে এসেছে রিফাত। কিছুই জানতাম না। আজ সব পরিষ্কার চোখের সামনে।
আমার মনে হয় রিফাতের বুকটা কিছুটা এখন হাল্কা হয়েছে কারন রিফাত আজ অনেক কেঁদেছে। এতিম খানায় বড় হয়ে উঠা একটা ছেলে। রিফাত যখন খুব ছোট তখন রিফাত এর মা রিফাতকে রেখে বিদেশ চলে গিয়েছিল। কে রিফাতের বাবা রিফাত জানেওনা। শুধু জানে ওর বাবার বাড়ি চিটাগাং এ। রিফাত এর দ্বারে ওর দ্বারে ঘুরে, মানুষের লাথি, গুতা খেয়ে বড় হয়েছে। নিজের চেষ্টায় এতদূর এসেছে। খারাপ হয়ে যায়নি। পড়ালেখা শিখেছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে নিজের খরচে। নামাজ পড়ে, পড়া লেখায় অনেক ভাল। নিজেকে বিপথে নিয়ে যায়নি।
খুব দুঃখ পেলাম যখন শুনলাম ওর মা ওকে ভালবাসেনা। আরেকটা বিয়ে করেছেন। সে বাবাও দেখতে পারেনা। কোন সাহায্য করেনা ওকে। কত দিন যে গিয়েছে ওর না খেয়ে হিসেব নেই। রিফাত কেন গোশত খায় না এখন আমি জানি।
রিফাত বলছিল আমার পড়া লেখার দায়িত্ব যদি কেউ নিত তবে আমি সারাজীবন তার গোলামি করতাম। আমার বুকের ভেতরটানা হু হু করে উঠছে। আমি ব্যথা অনুভব করছি ভীষণ।রিফাতের দায়িত্ব আমি জানি আমার একার পক্ষে নেয়া সম্ভব না। তবে আমি নিজের প্রতি বদ্ধ পরিকর এই যে আমি ওকে সাহায্য করব ওর প্রয়োজনে। মেজো আপাকে বলেছি আপা অনেক খুশি হয়েছে শুনে।
আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি কেঁদেছি অনেক। মানুষের জীবনটা এত বৈচিত্রময় কেন? এই ছোট্ট একটা ছেলের এত দুঃখ? কিভাবে বয়ে বেড়াচ্ছে এসব? আর আমরা অল্পতেই কত অখুশি হই। এত ভাল আছি তারপরও মনে হয় আরো ভালো থাকতে চাই। মেজো আপাকে আমি বলেছি রিফাতের কেউ নেই কে বলেছে আমরাত আছি। আমি যতটুকু পারি ওকে সাহায্য করব।
আমার জন্য নয় আমি রিফাতের জন্য টাকা চাই। বোন হয়ে ওকে আমি কতটা সাহায্য করতে পারব জানিনা। তবে আমি চেষ্টা করব আমার এই ভাইয়ের জন্য কিছু করার। ওকে আমি যদি একটুও সাহায্য করতে পারি তবে আমি সেদিন সত্যিই অনেক শান্তি পাব।
একটা নিষ্পাপ ছেলের স্বপ্ন পূরনে সাহায্য করতে চাই। ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে চাই; অন্তত এক বোনের ভালোবাসা নিয়ে যেন আমি ওর পাশে দাঁড়াতে পারি। ওর মাথায় যেন পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে পারি। যেন বলতে পারি "ভাই তোর কেউ না থাকুক এই বোন তোর পাশে আছে"। মায়ের ভালবাসা, বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত এই ছেলেটির মনে যেন আমি এক বিন্দু শান্তি দিতে পারি এটাই এখন ভাবি আমি।
একি রক্ত না হয়েও আমাদের মধ্য ভাই-বোনের পবিত্র বন্ধন বিদ্যমান। এই বন্ধন অটুট থাকুক, অমলিন থাকুক সবসময়।