ইউনিভার্সিটি শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ।ল্যাটিন ভাষায় এই শব্দের মানে হচ্ছে জ্ঞানসাধনার স্থান।তবে এই অর্থ সারা দুনিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রযোজ্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র,শিক্ষকদের কার্যকলাপে তাই মনে হয়।লিখাটা যেহেতু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই তাই বিস্তারিত প্যাচালের আগে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধরন,ধারন
চলন,বলন সম্পর্কে বিস্তারিত গেজানোর প্রয়োজন অনুভব করছি




বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা
যায়।সরকারী ও বেসরকারী।দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩১টি।
আর বেসরকারী অগণিত





বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এখন পর্যন্ত দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা কিছুটা হলেও পূরণ করেছে।তাই বাংলাদেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে
প্যাচাল পাড়াই সংগত।
বাংলাদেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩১টি।সবগুলো নিয়ে লিখতে গেলে হাত রাত শেষ হয়ে যাবে।আপনাদেরও আর পড়ার ধৈর্য থাকবে না।তবে আশার কথা এই যে,বংলাদেশের সবগুলা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাম্যাবস্থায় বিরাজমান





প্রাচ্যের অক্সফোর্ড,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে,এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রাতঃস্মরণীয়।
তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা দেখলে কেউ আর একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলার সাহস পাবেনা।ছাত্র রাজনীতির নোংরা আবর্জনায় এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতাস কুলষিত।শিক্ষকদের মাঝেও আছে চরম গ্রুপিং।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অহংকার ছিল যে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
এক দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টে কিছুদিন আগে দেখেছিলাম,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ১৯ ভাগ ছাত্র নাকি মানসিক সমস্যায় ভুগে।প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া,পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে এই মানসিক সমস্যাগুলো দেখা দেয়।এই সমস্যা নিরসনের জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা বা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই।অথচ পৃথিবীর সব উন্নত
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের মানসিক সমস্যা দেখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে।মানসিকভাবে অসুস্হ্য একজন ছাত্র কোনোভাবেই ভালো কিছু করতে পারে না।কিন্তু এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ উদাসীন।প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই যদি এই অবস্থা হয় তো দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি প্রধাণ সমস্যা মাদক সমস্যা।ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের সোহরোয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন মাদকের হাট বসে।এই মাদক হাটের প্রধাণ ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্ররাই।সবকিছু জানার পরও,বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কিছু করতে অনড়।মাদক সমস্যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও প্রধাণ সমস্যা।
ওই সোহরোয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন এলাকাতেই রাতে চলে পতিতাবৃত্তি।তবে অবাক হতে হয় এই শুনে যে,অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীরাই অল্পকিছু টাকার বিনিময়ে দেহদান করে।হায়রে বাংলাদেশ,আজ তোর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রীদের ও এই অবস্থা!!তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেশ্যালয়ের পার্থক্য আর থাকল কোথায়??আমি আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা বলি।কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম টিএসসিতে।ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যা।বের হয়ে হাটতে হাটতে বাসার দিকে এগোচ্ছিলাম।দেখি একজোড়া কপোত কপোতী।এতটুকু শুনতে ভালোই লাগছে।কিন্তু তারা যা করছিল তা শুনতে কারোই ভালো লাগবে না। এটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা না।বরং বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই একই অবস্থা।
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল।অনেক অন্ধকারের মাঝেও আশার আলো হয়ে ছিল এই ভর্তি পরীক্ষা।কারণ নিদারূণ ভর্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তির সুযোগ পেত,তারা যে মেধাবী সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না।কিন্তু গত বছরসহ এই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক ফল জালিয়াতি হয়।অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলাই বাহুল্য।
শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অহংকার।তাঁদের দেখলে ছাত্রদের মনে শ্রদ্ধা জাগবে।তাঁদের কাছ থেকে ছাত্ররা শেখার অণুপ্রেরণা পাবে।কিন্তু আজ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক যখন,তার নিজ ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করার অভি্যোগে অভিযুক্ত হন,তখন আর বলার কিছু থাকে না।এইসব নর্দমার কীট শিক্ষকরা দুনিয়ার সকল শিক্ষকের জন্য অপমান।দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাই এমন।তাছাড়া কিছু ছাত্রীও শিক্ষকদের হাতে নিজেদের দেহ সঁপে দেন,শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য।আমার কথা হচ্ছে এই যে,যার ভালো রেজাল্ট করার,সে এমনিতেই করবে।তাছাড়া বেশ্যার ভালো রেজাল্ট দিয়ে জাতি কি করবে??
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধাণ সমস্যা।কিছুদিন পর পরই সামান্য কারণে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মাঝে মারপিট লেগে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রাবাসগুলো যেনো সেনানিবাস।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি তৎপর বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব বীরসেনানী।সামান্য উস্কানীতেই প্রতিপক্ষকে মেরে গুড়িয়ে দেয় এরা।এতো হতাশার মাঝেও আশা হয়ে ছিল প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ত।আর এগুলো ছিল তুলনামূলক ঝামেলামুক্ত।কিন্তু গতকিছুদিন আগে বুয়েট এবং সর্বশেষ রুয়েটে গন্ডগোল প্রমাণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আর পিছিয়ে নাই।নিজেদের বীরত্ব প্রদর্শনে এগিয়ে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়ে।তারাই দেশের ভবিষ্যত।কিন্তু সমস্যাসংকুল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার মান কতটুকু ধরে রাখতে পারছে তা ভাবার বিষয়।এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করাটাই যুক্তিযুক্ত।কিছু পাগল আর কতিপয় বেশ্যা, মাস্তানদের জন্য যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটি আর কুলষিত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০১