মোহাম্মদ আবদুল জলিল (জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ - মৃত্যু: ১৯ নভেম্বর, ১৯৮৯) যিনি মেজর জলিল নামেই বেশি পরিচিত, বাংলাদেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তা৷ তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯নং সেক্টরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও এই মুক্তিযোদ্ধাকে তার প্রাপ্ত সম্মান দেয়নি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরবর্তী কোন সরকার। তিনিই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি দেশ স্বাধীন করেও তার প্রাপ্য সম্মান পাননি। তবে এ নিয়ে তার আফসোস বা আক্ষেপ ছিলো না। দুনীতিবাজদের দেওয়া সম্মান তিনি লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মেজর জলিলকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি? কারণ তার রাজনৈতিক আদর্শ ছিল, শেখ মুজিবের নতজানু আদর্শের চেয়ে ভিন্ন। শেখ মুজির যুদ্ধ না করেও একাই সব কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে মেজর জলিল সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেও সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন একমাত্র ভারতের বিরোধিতা করার কারণে ৷স্রোতের বিপরীত একা চলা এক অকুতোভয় সেনার নাম হচ্ছে, মেজর আবদুল জলিল৷
তার প্রথম অপরাধ ছিল, তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, "জেনারেল ওসমানী থাকতে কেন পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের জেনারেলের কাছে আত্মসমর্পণ করলো? সেই সময় জেনারেল ওসমানী কোথায় ছিলেন?" শেষের প্রশ্নটিতে ভারত বিব্রতবোধ করতো কারণ, সেই সময় ধারণা করা হয়, "জেনারেল ওসমানীকে ভারতে নজর বন্ধি করে রাখা হয়েছিলো।"
তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়েও শুধুমাত্র গাদাবন্দুক চালাবের প্রশিক্ষন দিয়ে কি করে এতো বড় একটি জয়ের কৃতিত্ব ছিনিয়ে গেলো? জলিলের এই প্রশ্ম হুজুগে প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ মুজিব আর তার চাটুকারদের ভালো লাগেনি।
এছাড়াও মেজর জলিলের, আরো একটি অপরাধ ছিলো,স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানিরা চলে যাবার পর ভারতের সৈন্যরা যখন এ দেশে লুটপাট চালাচ্ছিল, মেজর জলিল তখন তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, দেখা মাত্র ভারতীয় সৈন্যদের গুলি করার হুকুম দিয়েছিলেন। শুধু তা না, সে কথা ভারতীয় কমান্ডারের কাছে ফোন করে জানিয়েও দিয়েছিলেন। বাথরুমের কমট থেকে আয়না সব খুলে নিয়ে গিয়েছিলো ভারতীয় বাহিনী।
গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়, মিল ফ্যাক্টরির মেশিনাদি যন্ত্রাংশ পর্যন্ত লুটপাট করে ভারতীয় সেনারা। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও খাদ্যশস্য, পাট, সুতা, যানবাহন, এমনকি সমুদ্রগামী জাহাজ, কারখানার মেশিনপত্র, যন্ত্রাংশ পর্যন্ত লুট করে। এই লুটের সম্পদের পরিমাণ ছিলো সবমিলিয়ে সেইসময়ের হিসাবে ২.২ বিলিয়ন ডলার।
এই যেমন হাসিনার পালানোর পর গণভবনের দৃশ্য আমরা দেখেছি অনেকটা সেরকম। এ দুটি অপরাধ খুনি শেখ মুজিবের ভালো লাগেনি। কত্ত বড় সাহস মনিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে? জলিল যদি সেনা অফিসার না হতেন তাহলে তাকেও সিরাজ সিকাদারের মতো হত্যা করা হতো।
সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে তার প্রাপ্য সম্মান দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হোক। যদিও তিনি শেখ মুজিবের মতো ক্ষমতালোভী এক ভারতীয় দালালের কাছ থেকে সম্মান নেওয়ার চেয়ে সম্মান না পাওয়াটাকেও বেশি সম্মানের মনে করতেন। এখন সময় এসেছে এই বীরকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার৷তাই এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মরোণোত্তর সম্মান দেওয়া হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪