মঙ্গলধ্বনি
প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ এর পক্ষে
এমন অনেক অনেক অনেক মিডিয়া দরকার, যে মিডিয়া যাবতীয় রকমের ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে অবস্থান করবে। মানে তার সাথে সরকারের, কিংবা ব্যবসায়ের কিংবা আমলাতন্ত্র্রের কিংবা সেনাবাহিনীর কিংবা ধর্মীয় অন্ধত্ববাদীদের কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কিংবা বৈশ্বিক ক্ষমতাশক্তির তথা আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের তথা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার কোনো স্বার্থের বন্ধন থাকবে না। এমন কোনো জাতীয় বা স্থানীয় দৈনিক নেই, এমন কোনো টিভি চ্যানেলও নেই। থাকবার কথাও না। কেননা টিভি চ্যানেলগুলো অথবা পত্রিকাগুলো ব্যবসায়ীদের নয়তো সরকারের চামচাদের। স্থানীয় পত্রিকাগুলো বাদ দিলে জাতীয় দৈনিক এবং টিভি চ্যানেলগুলো বড় বড় সব কর্পোরেশনের। পত্রিকার কাজ তাই হয় ক্ষমতায় থাকা সরকারের কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধীদের কিংবা বড় বড় সব ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করে যাওয়া। গ্রামীন ফোনের বিজ্ঞাপন যে পত্রিকার ২ পাতা জুড়ে থাকে সেই পত্রিকার পক্ষে কোনোভাবেই গ্রামীন ফোনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা সম্ভব হয় না। আমরা এমন একটি মিডিয়া চাই যারা বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে থাকবে না। বিজ্ঞাপনদাতা বিজ্ঞাপন দিক না দিক, তাতে যেহেতু মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই তাই বিজ্ঞাপনদাতার স্বার্থের উপর আমরা নির্ভর করে থাকবো না। মঙ্গলধ্বনি তেমনই একটি মিডিয়া হয়ে উঠতে চায়।
আমাদের দেশের প্রায় সব মিডিয়াই চলে অগণতান্ত্রিকভাবে। সম্পাদক থেকে শুরু করে ক্রমে ক্রমে স্তরে স্তরে আছে কর্তৃত্বের চাবি। এখানে একজন সংবাদকর্মী স্বাধীনভাবে চিন্তা করবার সুযোগ পায় কম। উপরের লোকজনেরা তাদের বিকাশ রুদ্ধ করতে চায়, চায় যেন তার থেকে বড় হয়ে উঠতে না পারে। এজন্যই পত্রিকায় অগণিত সংবাদকর্মী কাজ করলেও মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মতামতই সেখানে প্রাধান্য পায়। তাই কোনোভাবেই সেই মিডিয়াটি পারে না অনেক অনেক সংবাদকর্মীর মিলিত চিন্তায় মিলিত ভাবনায় মিলিত শ্রমে ঋদ্ধ হতে। আমরা এমন অনেক মিডিয়া চাই যেখানে সমস্ত সংবাদকর্মীর মতামতের সমান গুরুত্ব থাকবে এবং সব সংবাদকর্মীর মিলিত চিন্তায় একটি চমৎকার মিডিয়া হয়ে উঠবে। মঙ্গলধ্বনি তেমন একটি মিডিয়া হয়ে উঠতে চায়।
বেনিয়া বিজ্ঞাপনদাতা নয়, এই মিডিয়ার চালিকাশক্তি হবে অনেক অনেক মানুষ। সমাজের অগ্রগতি বলে আলাদা কিছু নেই, নিজের নিজেদের অগ্রগতির মধ্যে দিয়েই সমাজ সভ্যতা এগিয়ে যায়। তাই যার পক্ষে ১ টা টাকা, ১ টা সংবাদ, ১ টা লেখা দেয়া সম্ভব সে ঐ ১ টা টাকা, ১ টা সংবাদ, ১ টা লেখা দিয়ে এই মিডিয়ায় অংশীদারত্ব নিন। কিন্তু মনে রাখবেন যদি আপনি ১ টা টাকা, ১ টা সংবাদ, ১ টা লেখাও না দিতে পারেন, তবুও আপনি সমান অংশীদার। যার শ্রম দেবার আছে, তার শ্রম দিয়ে, যার টাকা আছে তার টাকা দিয়ে আর যার কিছুই দেবার নেই তার মৌনতা নিয়ে সবাই মিলে একটি মিডিয়া গড়ে তুলতে চাই।
আমাদের দেশের কোনো মিডিয়াতেই পাঠক গুরুত্ব পায় না। পাঠক মতামত, নাগরিক মন্তব্য, চিঠি নামে কিছু জিনিস ছাপলেও মানুষের কথা উঠে আসে না। পাঠকের মতামত যথাযথ গুরুত্ব পায় না। আমরা এমন মিডিয়া চাই যেখানে পাঠক লেখক আলাদা সত্তা না। লেখক যতোটুকু বলতে পারবে চাইলে পাঠকও ততোটুকু বা তার চেয়ে বেশি বলতে পারবে। আমরা এমন একটা মিডিয়া বানাতে চাই যেখানে পাঠক আর লেখকের আলাদা কোনো সত্তা থাকবে না। পাঠকও হবে একজন সক্রিয় লেখক।
আর এইসব স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা একটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পৃথিবীর পক্ষে বলবো। না, শুধু ভোট হলে আর সংসদ বসালে যে গণতন্ত্র হয় সেটা নয়, সত্যিকারের গণতন্ত্রের পক্ষে বলবো আমরা। গণতন্ত্র মানে প্রত্যেক মানুষের মতামতের সমান অধিকার, প্রত্যেক মানুষের অংশগ্রহণে যে গণতন্ত্র হয় সেই গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাবো।
আমরা তাই মঙ্গলধ্বনি নামে এই ইন্টারনেটের মুক্ত জমিনে এমন একটি মিডিয়া বানালাম যেখানে আমি আপনি আমরা সবাই সমান। আমরা সবাই সাংবাদকর্মী আমরা সবাই পাঠক। পাঠক, ইন্টারনেট আমাদের জন্য সেই ভরসার জায়গাটা তৈরী করেছে। এখানে নিউজপ্রিন্ট কিনবার টাকা লাগে না যতোখুশি লেখা যায় ছোট্ট স্পেস ব্যবহার করে, এখানে ছাপতে হয় না তাই টাকা লাগে না, এখানে চার রবঙের জন্য চারটা প্লেট লাগে না। এখানে তাই কোনো এডিট নেই, এখানে তাই কোনো শব্দসংখ্যা নেই, এখানে তাই দরকার পড়লে আমরা অনায়াসে রঙে রঙে রাঙিয়ে নিতে পারি, এখানে তাই আমরা এই পত্রিকার কর্মীরাও যা, পাঠক আপনিও তাই। আমরা সবাই মিলে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাজের লড়াইয়ের পক্ষের একজন সৈনিক।
ঢাউস ঢাউস সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের প্রায় সমস্ত প্রধান মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জিম্মি হবার কারণে ঐ সব বেনিয়াদের স্বার্থ দেখাটাই মিডিয়ার কাজ হয়ে দাঁড়ায়। মুখে দেশের কথা, মানুষের কথা বলবার নাম করে আসলে ব্যবসায়ীদের, শুধুই বড়লোকদের স্বার্থ দেখা তাদের কথা বলা, তাদের জন্য পরামর্শ দেয়া মিডিয়ার কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্যই, পত্রিকা যখন প্রথম পাতা সাজায় সেই পাতায় খালেদা-হাসিনা-ইউনুস-আবেদ-নায়িকা-গায়িকা ছাড়া সমাজের বেশিরভাগ মানুষের সমস্যাগুলো আলোচিত হয়না বললেই চলে। যখন পত্রিকা বিদেশনীতির বিষয়ে মতামত ছাপে তখন চিন্তা করে কোনটুকু বড়লোকদের স্বার্থ। দেশের জাতীয় সম্পদ বিকিয়ে দেবার পক্ষে মতামত ছাপে, জায়েজ করে তাকে, রক্ষা করে কর্পোরেশনের স্বার্থ। পত্রিকা যখন রান্না করা শেখায় তখন এমন রান্না করাই শেখায় যেটার রসদ দেশের অগণিত মানুষের পক্ষে যোগাড় করা সম্বভ নয়। যখন পোশাক নিয়ে ফ্যাশন নিয়ে একটা পাতা করে তখন এমন পাতাই করে যেটা মুষ্টিমেয় কিছু উঁচু তলার মানুষের পক্ষেই কেনা সম্ভব। বড়লোকদের স্বার্থে নয়, সমাজের সমস্ত শ্রেনী-পেশা-বর্ণ-জাতি-ধর্মের মানুষের এবং অপরাপর প্রাণের এবং প্রকৃতির স্বার্থে কাজ করবে এমন মিডিয়া দরকার। মঙ্গলধ্বনি তেমন একটি মিডিয়া হয়ে উঠতে চায়।
দেশের সমস্ত প্রধান প্রধান মিডিয়া এক্সপার্টদের বক্তব্য প্রচার করে, যারা প্রায় সবাই কারও না কারও তাবেদার। কারও না কারও পক্ষের। বিক্রি করাটা মূল উদ্দেশ্য তাই চটকদার, মিথ্যে, উত্তেজক নিউজ ছাপায়। নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে কারও না কারও পক্ষ অবলম্বন করে। আমরা নিরপেক্ষতার ভান করতে রাজি নই। নিরপেক্ষতা নামের অলীক বস্তুর সন্ধান করতেও উৎসুক নই। নিরপেক্ষতার আদলে আসলে অদৃশ্য কোনো না কোনো ক্ষমতা-শক্তির পক্ষপাত জারি রাখতে চাই না আমরা। আমরা আবার শুধু মানুষের পক্ষেও নই। কেননা অপরাপর প্রাণ আর প্রকৃতির কথা না ভেবে শুধুই মানুষের পক্ষে বা অপরাপর প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের উপর মানুষের আধিপত্যের পক্ষে থাকা মানে প্রজাতি হিসেবে মানুষের এবং একইসাথে এই প্রকৃতির ধ্বংসকে অনিবার্য করে তোলা। আমরা তাই প্রাণ-প্রকৃতি প্রতিবেশের পক্ষে। আমরা প্রাকৃতিক আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ঐ আইনকানুন ছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট অন্য যেকোনো আইন যেকোনো বিধান যেকোনো তত্ত্ব যেকোনো মতবাদ যেকোনো উপস্থাপনকে আমরা পরখ করে দেখতে চাই। প্রশ্ন করতে চাই। খুঁজে দেখতে চাই তা প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ এর পক্ষে যায় কিনা।
-আমরা মানুষের পক্ষে বলবো।
-আমরা পৃথিবীর পক্ষে বলবো।
-আমরা যাবতীয় প্রাণের স্বার্থে বলবো।
-যাবতীয় প্রজাতির স্বার্থে বলবো।
-আমরা প্রকৃতির স্বার্থে বলবো।
-আমরা মানুষ-সহ সমস্ত প্রাণের এবং
এই প্রকৃতিজগতের স্বার্থে বলবো।
মঙ্গলধ্বনি। মঙ্গল স্থির-স্থিতিশীল-অনড় কোনো কিছু না। আজকে যা মঙ্গল বলে বিবেচিত হচ্ছে গতকাল তা হয়নি, আবার ভবিষ্যতে তা মঙ্গল বলে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু তাতে মঙ্গলের পক্ষে মানুষের আরাধনা শেষ হয় না। ক্রমাগত নতুন নতুন বোধে নতুন নতুন চিন্তা-তৎপরতায় মঙ্গলের পক্ষে মানুষের লড়াই চলমান থাকে। আমরা তাই মঙ্গলের জন্য সাইবার স্পেস থেকে এই মুক্ত জায়গাটুকু আমাদের জন্য বরাদ্দ নিয়েছি। সবাই মিলে কথা হলে, তর্ক হলে বাহাস হলে তখন সত্যিকারের গণতন্ত্র হয়। সংসদীয় গণতন্ত্র নামের ৫ বছরের জন্য নির্ধারিত স্বৈরতন্ত্র নয়, এটা অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, সত্যিকারের গণতন্ত্র। আর এভাবেই সবার অংশগ্রহণে এই মিডিয়াতে মঙ্গলধ্বনি ধ্বনিত হবে। যদি আমরা প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের জন্য যা কিছু মঙ্গলের তার পক্ষে এবং যা অমঙ্গল তার বিপক্ষে ধ্বনিত করতে পারি আমাদের নিষ্ঠা আর মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে দেয়া নিজেদের দায়িত্ব।
এই হলো মঙ্গলধ্বনির কথা.....
প্রথম সংখ্যা এখন অন-লাইনে--
http://www.mongoldhoni.com