আমি এই বাবা দিবসটাকে এক দিনের জন্য মানতে রাজি নই। বাবা দিবস তো প্রতিদিনের। এক দিনের এই বাবা দিবস পালন করার সুযোগ দিয়ে আমি ৩৬৪ দিন থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। আমি চাই আমি বাবা হয়ে প্রতিদিন অপেক্ষা করি আমার মেয়ে অফিস থেকে সময় মতো ফিরলো কি না, আমার ছেলে বাইরে গিয়ে দেরি করছে কেন এই উৎকন্ঠা নিয়ে বার বার ঘড়ি দেখি। আমি চাই দোকানে গিয়ে কোন কিছু পছন্দের দেখলে তা ছেলে মেয়েদের কথা মনে করিয়ে দিক।
আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা অবসরে বসলে যেন একবারটি বাবা-মা’র কথা মনে করে। তাঁর ছেলেমেয়েদের দিকে তাকালে যেন একবার আমাদের কথাও মনে পড়ে…এমন ছোট্টটি ছিল সে, এমন করেই হাত ধরে সেও একদিন হাঁটতো।
আমরা পাশ্চাত্য সমাজের এক দিনের বাবা-মা হতে চাই না। বছর ঘুরে বাবা-মা’কে একদিনের জন্য নতুন করে চিনতে চাই না। আমাদের সমাজ আমাদের মতো। আমরা সন্তানদের আগলে রাখি আমৃত্যু। আমরা সন্তানদের ভালবাসা চাই শেষ দিনটি পর্যন্ত।
আর কি অদ্ভূত, বাবা-মা’কে আলাদা করে ফেলা হলো! হলোই যদি তবে ‘বাবা-মা’ দিবস এক সঙ্গে নয় কেন? কেন একটি স্বর্গীয় সম্পর্কের এমন নিষ্ঠুর পৃথক বিন্যাস! বাবা দিবসে ছেলেমেয়েরা ছবি তুলতে গেলে মা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে, মা দিবসে বাবা হা করে তাকিয়ে আফসোস করে। মুখ্য ছবির পাশে একটি গৌণ ছবি তোলা হয়, সান্তনা পুরস্কারের মতো। এই দু’টি দিনে দু’জন আলাদা হয়ে যায়।
যা শাশ্বত, যা চিরদিনের তা কেন শুধু একদিনের!
চাইতাম যেমন, চাইছি তেমনি প্রতিদিন শুনতে ‘বাবা’!
আমি প্রার্থনা করি যেন কখনো ছেলে দিবস বা মেয়ে দিবস অথবা কন্যা দিবস কিংবা পুত্র দিবস না হয়। আমি আমার ছেলেমেয়ে দুটিকে সমান ভালবাসি। দশটি হলেও একই রকম ভালবাসতাম। ঐ এক দিন আমি আমার কোন একটিকে দূরে রেখে যেমন ছবি তুলতে পারবো না, তেমনি কেক কাটতেও পারবো না।
আমার সন্তানদের মতো পৃথিবীর সব সন্তানদের জন্য প্রার্থনা...’আমাদের সন্তানেরা যেন থাকে দুধে-ভাতে’।