স্থান-কাল-পাত্র বলে একটি কথা আছে। এটা তিনটি মৌলিক শব্দ মিলে একটি মিশ্র শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ছোট বেলায় আমরা ব্যাকরণে পড়েছি। এমন কি “এই শব্দের দ্বারা কি বুঝায় তাহা বুঝিয়ে লিখ” জাতীয় প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছি। শিক্ষকরা বলেছেন জীবনে কোন কাজ করার আগে বা বলার আগে এই তিনটি শব্দ মনে রাখবে। আমার ধারনা যারা এই ত্রয়ী শব্দকে মাথায় রেখে কাজ করে বা কথা বলে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই পাড় পেয়ে যায়। এখন objective যুগে বাংলা ব্যাকরণ আর তেমন করে পড়ানো হয় কি না জানি না। তেমন উপদেশও আর দেওয়া হয় বলে মনে হয় না। বিশেষ করে আমাদের ক্রিকেটাররা এই মিশ্র শব্দটি সম্বন্ধে ওয়াকেবহাল আছে বলে একেবারেই মনে হয় না।
এই লেখাটা লিখছি আমাদের মাহমুদউল্লাহ্ সাহেবের গতকালের আউট হওয়া দেখে। দিনের শেষ বল, তিনি সুইপ করতে চাইলেন চার মারার জন্য। কেন? জবাব বেশ কয়েকটা দেওয়া যেতে পারে কিন্তু আসল কথা হলো তিনি এই মিশ্র শব্দটির ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ বুঝা গেল। এখানে স্থান আর পাত্র জরুরী নয় কিন্তু “কাল” শব্দটি খুবই জরুরী ছিল। অর্থাৎ সময়। দুটো জবাব দেয়া যেতে পারে...তিনি অস্থির চিত্তে একটা চার মেরে তার অর্ধ শতক পূর্ণ করতে চেয়েছেন অথবা দিনের শেষটা চার মেরে শেষ করতে চেয়েছেন। কত বড় দায়িত্বহীন হলে একজন ক্রিকেটার এমন ভুলটি করতে পারেন! তিনি কি শুধু নিজেকেই দেখলেন? দল কিংবা দেশ কিছুই দেখলেন না! ক্রিকেটাররা প্রায়ই বলেন ভুল থেকেই আমরা শিখবো। কিন্তু কবে শিখবেন? মাহমুদউল্লাহ্ এই রকম ভুল আগেও করেছেন। গত টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের ৪ বলে ৩ রান দরকার। তিনি ছক্কা মেরে জিতবেন বলে শর্ট রান না নিয়ে সেই ছক্কা মারতে গিয়ে নিজেকে হারিয়েছেন এবং দেশকেও ডুবিয়েছেন। কি ভয়াবহ দুঃখ সেদিন এই জাতী পেয়েছিল আজও মনে হলে বিমর্ষ হয়ে পড়ি। সেখানেও তিনি কাল বা মুহূর্তকে মনে রাখেন নি।
এই সেদিন চট্টগ্রাম টেস্টেও দ্বিতীয় ইনিংসে তার আউট হওয়াটাও ছিল অপ্রত্যাশিত। সেই ম্যাচে তিনি যে বলটায় আউট হয়েছিলেন সেই বলটাকে ক্রিকেটের ভাষায় বলা যায়...well outside of the off stamp and flighted. তাই যদি হয় তাহলে তিনি সেই বলটাকে খেলতে গেলেন কেন? একটা টেস্ট ম্যাচে ঐ পরিস্থিতিতে বলটাকে তো ছেড়ে দেওয়ার কথা। আসলে তার বুদ্ধি মাথার চেয়ে হাঁটুতে বেশী। তিনি senseless mistake কতবার করবেন? সাকিবও একই কাজ করলেন। অফ স্ট্যাম্পের এতো বাইরের বল, যেটা ওয়ান-ডে ম্যাচ হলে wide হতো, সেটাকে তিনি মারতে গিয়ে আউট হলেন। টেস্ট ম্যাচে যেমন লোভের কোন জায়গা নেই, বোকামিরও। এভাবে আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অনেক ম্যাচকে জলাঞ্জলি দিয়েছি। শুধু বুদ্ধির অভাবে। শুধু অস্ত্র হলেই যেমন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়না, বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে, তেমনি খেলাতেও শুধু skill বা দক্ষতা থাকলেই হয় না, বুদ্ধিরও প্রয়োজন আছে। আমরা অনেক আগে থেকেই জানি, টেস্ট খেলা হচ্ছে…kill the time and get the runs. যা করতে গেলে অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন। অনেকেই হয়তো বলবেন, বিশেষ করে যারা আবেগ নিয়ে চলেন, মাহমুদউল্লাহ্ রান তো খারাপ করে নাই! ঠিক, কিন্তু তিনি কি সময়কে পরাস্ত করতে পেরেছেন? টেস্ট ম্যাচে তো ৮২ স্ট্রাইকিং রেট দরকার নাই, আমার দরকার ৮২ মিনিট। তাছাড়া টেস্ট ম্যাচে দিন শেষের উইকেট সবসময়ই বিপক্ষের অনুকুলে চলে যায়। দিনের শেষ বলে স্যুইপ, ভাবতেও অবাক লাগে! মাহমুদউল্লাহ্র দায়িত্বহীন আউট হওয়াটাই আমাদের জন্য কাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট, যখন আমাদের tail end-এ হাল ধরার মতো ব্যাটসম্যান নেই। ওদিকে ইংল্যান্ডের বলতে গেলে ১১ জনই ব্যাট করতে পারে। আক্ষেপ করে আর কতদিন কাটাবো?
অনেক আগে ভারতের একটা স্বভাব ছিল, ব্যাটিং লাইন যখন ভাংতো তখন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তো। এখন আমাদের হয়েছে সেই দশা! কেবলই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ছে। কাকে যে ভাল বলবো বুঝতে পারছি না, একমাত্র ওপেনিং জুটি ছাড়া।
ভুল থেকেই তো মানুষ শেখে, কিন্তু যদি না শেখে!!!!