গত সপ্তাহে একুশের বই মেলায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার ইচ্ছে ছিল আরও আগে…কামাল এসেছিল মার্কিন মুল্লুক থেকে, ওকে নিয়ে একসঙ্গে যাবো এই রকম পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। আমি সুস্থ হয়ে উঠতে উঠতে ওর যাওয়ার সময় হয়ে গেল। আমি বইমেলায় গেলাম কামাল চলে যাওয়ার পর। একসঙ্গে গেলে ভালই হতো। দু’জনে মিলে কিছু বই বাছাই করে কেনা যেতো। যাক, জীবন যখন যেমন। একা একা ঘণ্টা খানেক ঘুড়লাম। কিছু বই কিনলাম। আসলে বই মেলায় গেলে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা হাতে নিয়ে যেতে হয় যাতে সময় করে ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো বই কেনা যায়। অফিস থেকে গিয়েছিলাম, হাতে এক ঘণ্টা সময় পেয়েছিলাম। কিছু বই কেনার পর মনে হলো সেই বইগুলো তো কেনা হলো না যেগুলো মনে করে রেখেছিলাম! ওদিকে মেলার বাতি নেভানো শুরু হয়ে গেছে।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, বাতি যতই নিভছে ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। আর ওদিকে পেছনের স্বাধীনতা স্তম্ভ আরও স্পষ্ট হচ্ছে… উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। যত অন্ধকার ততই উজ্জ্বল!
এবারের বইমেলা গতবারের চেয়ে ভাল লাগলো। গত বছর সোহরাওয়ারদি উদ্যানে একটু বেশি মাত্রায় বিস্তৃত ছিল। এবার একই জায়গায় ঠিকঠাক মনে হলো। স্টলগুলো খুঁজে পেতে তেমন একটা কষ্ট হয়নি। তথ্যকেন্দ্র থেকে ঘোষণা শুনলাম…২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২,৬৭০টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে! শুনে আমার কাছে একটু অবাকই লাগলো। প্রতিদিন ১২১টি বই! এত্ত বই এত্ত লেখক এই দেশে! কখন কারটা পড়বো?
এই স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের একটা ভাল গুণ আছে। আমরা সবাই লিখতে পারি। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, সবকিছু। কিন্তু ভাবতে পারি সম্ভবতঃ খুব কমই। গভীরে যেয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের কমই আছে সম্ভবতঃ। আর সেই কারনেই হয়তো ভুল ভাবনায় ভুল শব্দে ভুল কিছু লিখে ফেলি। শুধু বিচরণ করলেই তো আর হয় না…চোখ-কান-মস্তিষ্ক খোলা রেখে বিচরণ করতে হয়, নইলে যেই সব ইন্দ্রিয় নিয়ে আমি যে মানুষ তার স্বার্থকতা কোথায়? আর তাই যদি না হয় তাহলে আমার মতো শফিক আলম রাস্তা-ঘাটে অনেক চোখে পড়বে কিন্তু আপনাকে-আমাকে-দেশকে কিছু দিতে পারবে এমন মানুষ বা লেখক পাওয়া যাবে খুব কমই। ফেরার পথে ভাবছিলাম, হুমায়ূন আহমেদ-এর পর উপন্যাসের জায়গাটি ভরাট করতে কারো আসার সম্ভাবনা আছে কি? অথবা অন্যরকম একটা ট্রেন্ড নিয়ে, ভিন্ন স্বাদে? সৈয়দ শামছুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক এরা চলে গেলে কারা আসবে থেকে যাবার জন্য? দু’একজন যারা এসেছে তারা কতটুকু নাড়িয়ে যেতে পারবে! দেখবার বিষয় বটে।
ভিন্ন স্বাদের বইও আমি উল্লেখ করার মতো তেমন একটা দেখিনি এবার, যা গত বছর দেখেছিলাম। তবুও অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি বই কিনেছি যা অনেকেই পছন্দ করে না। আরও দু’চারটে বই, যা গত বছর কিনতে পারিনি এবার কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আর যেতে পারবো বলে মনে হয় না।
আজকাল তো কেউ আর তেমন একটা পড়ে না…শুধু তুলে আর দেখে, তুলে আর দেখায়। স্ট্যাটাস মেইন্টেইন করতেই সময় চলে যায়। সামাজিকতা বলে একটা ব্যাপার আছে না? পড়ার সময় খুঁজে পাওয়া মুস্কিল!