somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় মা ও মাতৃভাষা, আমার অশ্লীল শব্দাবলীর জন্য আমাকে ক্ষমা করো

২১ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় মা আমার,
তোমার নিশ্চয়ই সেই দিনটিকে মনে আছে মা, যেদিন আমি বিপ্লবকে খুব করে মেরেছিলাম। গ্রামের লোকজন সালিশ বসিয়েই আমার বিচার করতে চেয়েছিল। তাদের এবং বিপ্লবের অভিযোগ ছিল যে আমি তাকে অহেতুক পিটিয়েছি। তাদের দাবি কেবল ‘শালার পো শালা’ গালির জন্য আমি কাউকেই ওরকম মারতে পারি না। কিন্তু মা, তুমি তো জান আমি শিশুবেলা থেকেই গালিকে কী ভীষণ ঘৃণা করতাম! আমার শিশুবেলা থেকেই কেন জানি মনে হত- যে ভাষার জন্য আমার দেশের ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়েছে সে ভাষাকে ব্যবহার করে গালি দিলে ওঁরা কষ্ট পায়। কেউ যখন বাংলা ভাষায় গালি দেয় আমার দুচোখে ভেসে ওঠে ওঁদের হারিয়ে যাওয়া লাশগুলোর ব্যথিত মুখ। আমি দেখতে পাই তোমার কোলে নিদ্রারত ওঁরা ব্যথায় কুকড়ে ওঠে।

মা, আজ আমি বিপ্লবের কাছে, গ্রামবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। আজ আমি গালিকে ঘৃণা করি না। বরং গালি দিতে আনন্দই বোধ করি। মা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বিপ্লব, তুই কোথায় আছিস জানিনা। যেখানেই থাকিস, আমাকে ক্ষমা করে দিস।

প্রিয় মাতৃভাষা,
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাকে ব্যবহার করে আমি আজ চূড়ান্ত অশ্লীল গল্প লিখি। মানুষরূপী জানোয়ারগুলোকে যাচ্ছেতাই গালি দিই। তোমার অপব্যবহারে আমি আর কেপে উঠি না। বরং মনে হয় তোমার শব্দভাণ্ডারে এইসব কুরুচিপূর্ণ-অশ্লীল শব্দ না থাকলে আমার মনের ভাব আমি সঠিক প্রকাশ করতে পারতাম না। আমার চারপাশে তথা আমাদের দেশের দিকে তাকিয়ে আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসে। তখন আমার মুখ দিয়ে - আমার হাত-কিবোর্ড দিয়ে গালি না বোরেলে আমি হাঁসফাঁস করি। সাধুদের মালা জপার মত আমি সারাক্ষণ বিড়বিড় করি ’শুয়োরের বাচ্চা’ ’শুয়োরের বাচ্চা’ বলে। প্রিয় মাতৃভাষা আমার, বিপ্লবের সাথে হয়তো কোনদিন দেখা হবে না, সে আমাকে কোনদিন ক্ষমাও করবে না; কিন্তু তুমি আমার প্রতিদিনের সাথি, তোমার শব্দাবলীর দিকে চোখ রেখে রেখে আমি প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ি, তুমি চাইলেই আমাকে ক্ষমা করে দিতে পার। আমি জানি তুমি তা করবে।

প্রিয় মা,
১৯৫২-৬৯-৭১ হয়ে ১৯৯০। তুমি তোমার বুকে বহু রক্ত ঝরতে দেখেছো। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, এরপর স্বৈরতন্ত্র পতনের আন্দোলন। তোমার দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়ে তাদের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু আজ আমরা এ কোন কৃষ্ণগহ্বরে পতিত? আমরা ভেবেছিলাম এবার আমরা তোমার বুকে আর রক্তের হোলিখেলা দেখব না। আমরা ভেবেছিলাম আর আমরা পাকিস্তানী আর্মি কিংবা স্বৈরতন্ত্রের পুলিশ বাহিনীর মত গুলি দেখব না। কিন্তু না মা। আমরা এখন দেখছি শুধু পুলিশ নয়, আমরা নিজেরাই একে অপরকে পিটিয়ে হত্যা করছি, আমরা একে অপরকে গুলি করে হত্যা করছি, আমরা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর বলে একে অপরকে ছুড়ি দিয়ে রগ কেটে হত্যা করছি। আমরা এতটাই বর্বরে পরিণত হচ্ছি যে মৃতের থ্যাতলানো নাক-চোখ দেখে আমরা মৃত্যোৎসাহে মেতে উঠছি। এইসব বর্বরগুলোকে আমি শুয়োর বলে গালি না দিলে আমি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাব। মা, তুমি আমার এই অসভ্যতাকে মার্জনা কর।

আমরা আজ বিভাজিত। কিছু ক্ষমতালোভী শুয়োরের কাছে জিম্মি আমরা পুরো জাতি। ওরা আমাদের ওদের ইচ্ছেমত ভাগ করে নিয়েছে। বাঙালীর জীবনে আর কোন ৫২-৬৯-৭১ জন্ম নিবে না। প্রিয় মা, তোমার প্রয়োজন হলেও আমরা আরেকটা ৬৯ কিংবা ৭১ ঘটাতে পারব না। কারণ এই ক্ষমতালোভী শুয়োরগুলো আমাদের ঐক্য, আমাদের শিক্ষা, আমাদের নৈতিকতা, আমাদের সমাজ, আমাদের সংস্কৃতি সবকিছুকে বিভাজিত করে দিয়েছে। তোমার ছাত্ররা, যারা তোমার সকল প্রয়োজনেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা আজ জাতির কাছে বিভীষিকা, মূর্তিমান আতংক। তোমার যুবসমাজ টেন্ডারবাজ, হতাশাগ্রস্ত, নেশাখোর, উদভ্রান্ত এবং খুনী। তোমার শিশুরা ভুল শিক্ষায় আক্রান্ত হয়ে শিশুবেলায়ই হয়ে যাচ্ছে এক একজন মানসিক রোগী। বল মা, এসব দেখেও কি আমি এইসব ক্ষমতালোভী ভণ্ডগুলোকে শুয়োর বলব না?

প্রিয় মা এবং মাতৃভাষা, আমার অশ্লীল শব্দাবলীর জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪২
৩১টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশন কিংস পার্টির

লিখেছেন sabbir2cool, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩



মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক দল গঠন করার। নব্বই দশক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সরাসরি পেরে উঠতে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সরাসরি না করলেও তার অধীনস্থরা এটা করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=খন্ড কাব্য ১-৪=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮


১।মনের অসুখ, মন আকাশ বৃষ্টির ভারে নুয়ে পড়েছে
চোখে বৃষ্টি নামার আগেই তুমি, বলো ভালোবাসি
অথবা চোখে তাকিয়ে বলো এ কাজল চোখে মানায় না বৃষ্টি
বলো, তুমি হাসো মন খুলে
ব্যস! চাই না কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বিবেকহীনদের জন্য কিছু প্রশ্ন”

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

ফেসবুকে দেখি কিছু মানুষ “আপা আপা” বলে চাটুকারিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। মনে হয় তাদের আত্মা পর্যন্ত বেরিয়ে যাবে, তবু তারা অন্ধভক্তি ছাড়বে না! প্রশ্ন হলো—আপনারা কি সত্যিই অন্ধ, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সারজিস আলম : শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০


জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের অগণিত তরুণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামলে সৃষ্টি হয় নতুন উপাখ্যান। বিগত সরকারের আমলের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ: সেনাবাহিনী ও এনসিপির পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০৬


শাহাবুদ্দিন শুভ :: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত কয়েকদিনে নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×