ফারুক যোশী
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের ছেলে মোমেন আযমীর অর্থজালিয়াতি সংক্রান্ত অপকীর্তি নিয়ে লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ম্যানচেষ্টারের একটি ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। শহরের লংসাইটে অবস্থিত কসম (উর্দু শব্দ) নামের ট্রাভেলসটির মালিক হলেন মোমেন আযমী।
অভিযোগে প্রকাশ, ভ্রমণ ও ট্রাভেলস ব্যবসায় কসম খাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আযমী জালিয়াতি ও প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন গ্রাহকদের লক্ষাধিক পাউন্ড। গ্রাহকদের একজন হলেন হাইড শহরের নাসির খান সোয়েব। ইজি সলিউশন নামের এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সোয়েব তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন গত ২৪ জুন। তিনি জানান, পবিত্র উমরাহ হজের জন্য ৮৮ জন মুসল্লির একটা গ্রুপের জন্য তিনি একটা ভালো প্রতিষ্ঠান খুঁজছিলেন। এ খবরটি জনাব আযমী জেনে তাকে ফোন করে একটা ভালো অফার দেন। তার ব্যবসায়িক পলিসি অনুযায়ী জনাব সোয়েব ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পাওয়া ডিপোজিট অর্থ (অগ্রীম আদায়কৃত) থেকে ৪ হাজার পাউন্ড জনাব আযমীকে দেন এবং এর পরে আরোও ৫ হাজার পাউন্ড তাকে দিলে আযমী তাকে সকল টিকেটের বুকিং রেফারেন্স দেন। এই রেফারেন্স পাওয়ার পর তিনি ৭ হাজার ও ১০ হাজার ৮০০ পাউন্ডের আরো দুটি কিস্তি তাকে পরিশোধ করেন।
অর্থ দেয়ার পর তার সন্দেহ হলে তিনি অনলাইনে লিবিয়ান এয়ারলাইন্সে খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু এরকম রেফারেন্সের কোনো হদিস উদ্ধার করতে না পারায় তিনি এয়ারলাইন্সে ফোন করেন। এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন এ রকম রেফারেন্সের কোনো বুকিং তাদের এয়ারলাইন্সে নেই। এরপর তিনি আযমীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে এটাকে তিনি কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে যাওয়ার এক হাস্যকর যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। সন্দেহ করা হচ্ছে জনাব আযমী পরিকল্পিতভাবে লিবিয়ান এয়ার লাইন্সের টিকেট বুকিংয়ের ফরমটা ব্যবহার করে জালিয়াতি করার জন্যই তিনি অভিনব কায়দায় টিকেট বুকিং রেফারেন্স তৈরি করেন। জনাব সোয়েব এরপরে এলাকার কিছু মানুষ এমনকি এখানকার জামাতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ যোগাযোগের পর আযমী তাকে ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ডের একটি চেক তার হাতে তুলে দেন। কিন্তু এই চেক ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয় এবং অর্থ তিনি পাননি। পরে কমিউনিটির কিছু নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই একটা প্যামেন্ট প্লান তৈরি করা হয়, যাতে আযমীর দস্তখতসহ নিজেই লিখিতভাবে উল্লেখ করেছেন ২২ জুলাই ১০ হাজার পাউন্ডের একটা প্যামেন্ট, আগস্টের ১৫ তারিখ আরো ১০ হাজার পাউন্ড এবং ৩১ আগস্ট আরো ৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড পরিশোধ করবেন। কিন্তু প্রথম প্যামেন্টের দিনই তিনি কেঁদে-কেটে জানিয়ে দেন তার এখন সে উপায় নেই এবং তিনি অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন না। তিনি এখন চাকরি খোঁজছেন এবং চাকরি পেলে এ অর্থ পরিশোধ করবেন। এদিকে জনাব সোয়েব গত ১৯ জুলাই হাইড পুলিশ স্টেশনে আযমীর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা করেছেন। এবং এ মামলা পুলিশের অধীনে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জনাব সোয়েব তার অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তার ক্লায়েন্টদের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার পাউন্ড তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে। কারণ পূর্বে বুক করা টিকেটের মূল্যের চেয়ে এখন পিক সময়ে টিকেট মূল্য অনেক চড়া। তাই তার ব্যবসায়িক সুনাম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ব্যক্তিগত ইমেজ যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সেজন্য তিনি বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে এনে ক্লায়েন্টদের টিকেট এবং কাউকে অর্থ ফেরত দিতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে অনেক টানাপড়েনের মাঝে আছেন।
জনাব সোয়েবের এই অর্থ এবং ম্যানচেস্টারের আরো কিছু মানুষের কয়েক হাজার পাউন্ড তিনি ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যানচেস্টারের আরেকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর পাওনা আছে প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড, লন্ডনের দুটো ট্রাভেল এজেন্সির একটি পাবে ১৮ হাজার পাউন্ড ও অন্যটি পাবে ৮ হাজার পাউন্ড। গুজরাটের একজন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে ১৯ হাজার পাউন্ড। এসব অর্থ আত্মসাৎ করতে একটা গ্র“প কাজ করেছে বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন। কারণ তাদের ব্যবসায়িক অফিসে লিবিয়ান এয়ারলাইন্সের নাম নিয়ে ব্যবসা চালায় একজন, আরেকজন চালান আরেকটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিস, আছে কার্গো সার্ভিসও।
মানি ট্রান্সফারের প্রতিষ্ঠানটি যদিও তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে, তবে এই মানি ট্রান্সফার এজেন্সিতে লোকজন ঘুরছে টাকার জন্য। কারণ বছর দিন আগে দেয়া পাউন্ড এখনো পায়নি ম্যানচেস্টারের অসংখ্য মানুষ। আর এ অর্থ তারা কোথায় কি করেছেন, তার ব্যাখ্যা তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে এ অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হতে পারে। এমনকি জঙ্গি তৎপরতায় এ অর্থ বিনিয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউই। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের ছেলের এ হেন কীর্তিতে ছিঃ ছিঃ রব পড়ে গেছে। অবশ্য অনেকেই বলছেন গোলাম আযমের ছেলের কাছ থেকে এরচেয়ে ভালো কী আশা করা যায়। বাপ কা বেটা!
তথ্যসূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ