বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসীদের রেমিটেন্সের একটা বিরাট অংশ আসে সিঙ্গাপুর থেকে। ২০০১- ২০০২ অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমান ছিল ১৪.২৫ মিলিয়ন ইউএসডলার আর সময়ের পরিক্রমায় তা বেড়েছে কল্পনাতীতভাবে। সিঙ্গাপুর থেকে বৈধপথে প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমান অনেকটা এরুপঃ
দেশ ২০০৯-২০১০ ২০১০-২০১১ ২০১১-২০১২ ২০১২-২০১৩ ২০১৩-২০১৪ ২০১৪-২০১৫
সিঙ্গাপুর ১৯৩.৪৬ ২০২.৩৩ ৩১১.৪৬ ৪৯৮.৭৯ ৪২৯.১১ ৪৪৩.৪৪
সুত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক (রেমিটেন্সের পরিমান মিলিয়ন ইউএসডলার এ)
এতো গেল বৈধ্য পথের কথা, হুন্ডি নামক পন্থায় যে কত টাকা বাংলাদেশে যাচ্ছে তা অননুমেয়। প্রবাসীদের আবাসস্থল (ডরমিটরি), সেরাঙ্গুন রোড অথবা মুস্তাফা প্লাজার আসেপাশে ছুটির দিনগুলোতে গেলেই হুন্ডির ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে অবলোকন করা যায়।
হাজারও বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হচ্ছে আইনের দেশ সিঙ্গাপুরে। নিয়মত্রান্ত্রিকতার অনুকরনীয় আদর্শিক দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে সবার উপরে রাখলে বাহুল্য হবে না। নিয়মভঙ্গের জন্য রয়েছে কঠোর সাস্তির বিধান এবং তার যথার্থ প্রয়োগ।
এবার আসল কথায় আসি, আইনের কঠোর প্রয়োগের পরেও কিছু কিছু বাংলাদেশী লিপ্ত হছে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। একসময় অপরাধগুলো সীমাবদ্ধ থাকত শ্লীলতাহানি, অর্থধারদেনা থেকে মারামারি। তবে এগুলো নেহায়েতই সংখ্যায় কম (যদিও সিঙ্গাপুরে একটি অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডকেই অধিক মনে করা হয়) অন্যান্য অভিবাসীদেশের বা জাতির তুলনায়। তারপরও এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেমন বাকি বাংলাদেশীদের মস্তক লজ্জায় অবনত রাখতে বাধ্য করে তেমনি তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এ দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রনালয়েও যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশীদের আগমনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে।
এতো গেল পুরনো গল্প। ইদানিং ভিন্ন কিছুও লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরের বিশেষফ্লাইটে করে সন্দেহভাজন ২৫ বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা সব পত্রিকাতেই ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সিঙ্গাপুরের প্রতিবেশীদেশ গুলতে জঙ্গি থাকার কথা অজানা নয়। এর সাথে যুক্তহয়েছে আইএস নামা। সিঙ্গাপুর ধর্মান্ধতামুক্ত কিনা তা বোধগম্য নয় তবে ধর্মচর্চা নিয়মের মধ্যেই পরিচালিত হয়। যেমন জুমার নামাযের খুদবা / বয়ান যথাথতকতৃপক্ষের কাছে পেশ করে অনুমতি নিয়ে ঠিক ততটুকুই মুসল্লিদের শোনান হয়। সেখানে বাংলাদেশীদের ধর্মচর্চায় বাড়াবাড়ি দৃষ্টিকটু লাগবারই কথা।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর ডালাপালা, সিঙ্গাপুর শাখা। ইদানিং নানা দিবস ঘটা করে পালিত হচ্ছে, বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সুভাস (!)। প্রবাসে দেশীয় রাজনীতি যে শেষ পর্যন্ত গঙ্গা যমুনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মানে দেশের মূল ধারার রাজনীতির মতই চর্চা হয় তা ইউরোপ আমেরিকার শাখা প্রশাখাগুলোর দিকে তাকালেই লক্ষ্যিত হয়। বাংলাদেশের মুলদলগুলো’র অনুমোদন সাপেক্ষ্যে এ শাখাগুলোর আত্নপ্রকাশ নাকি স্বঘোষিত তা নিয়ে চিন্তা না করাই শ্রেয় কিন্তু সিঙ্গাপুরে অন্যদেশের রাজনৈতিক চর্চা কতটা বৈধ তা নিয়ে ভাবার আছে বৈকি। প্রথমে বিভিন্ন দলের লেজুড়দের মধ্যে দলাদলি পরে নিজদলের কর্মীদের মধ্যেই ঘাত-প্রতিঘাত। রাজনীতি, প্রতিবাদ আমাদের রক্তে, চিন্তাশক্তিতে আমরা অচেতন। তাই সহজেই বিপথে ঠেলে দেওয়া যায়। আজকের এই শাখা প্রশাখার মত ক্ষুদ্রপ্লাটফরম গুলো ডালাপালায় বিকশত হলে তা নিয়ন্ত্রন হবে খুবই কঠিন। সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থান হবে প্রশ্নবিদ্ধ।
রেমিটেন্সের হিসেব গুনাতে সীমাবদ্ধ না রেখে সময় এসেছে সচেতনতা সৃষ্টি করার, নিয়মবিরুদ্ধ কার্যকলাপ বন্ধকরার। তা না হলে গুটিকয়েক প্রবাসীর কার্যকলাপের নেতিবাচক ফলাফল সিঙ্গাপুরস্থ সকল বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভোগ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের মত এশিয়ার অর্থনীতির টাইগার সিঙ্গাপুরের রেমিটেন্সের প্রভাবে ভাটা পরা অস্বাভাবিক কিছু না। দেশের নিরাপত্তা ও সুনাম ধরে রাখতে সিঙ্গাপুর সরকার পিছপা হয়না তার প্রমান ভুরিভুরি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০১