আমি রাষ্ট্র চিন্তক নই । তবে আশা জাগানিয়া নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপিকে ফাইভষ্টার হোটেলের “মাথাপিছু ১০ হাজার টাকার ইফতার পার্টি”র ফাঁদে পা দিতে দেখে স্থির থাকতে পারলাম না । তাই কী-বোর্ড নিয়ে আবার একটু বসা । পেছনের কিছু ইতিহাস কচলাতে হবে এর জন্য ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যে সকল রাজনীবিদ তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে গত ৫৪ বছর শাসন করেছেন, তাদের চরিত্র, শাসন ক্ষমতাকে পুঁজি করে জনগনের সম্পদ কৌশলে লুন্ঠন করা, ক্ষমতার অপব্যবহার, নাগরিক অধিকার হরণ, বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ, ক্ষমতার পালা বদলের ধরন ইত্যাদি নানা রকম রাজনীতির নামে শয়তানী জনগন উপভোগ করেছে ( কমে-বেশী ) । তবে স্বাধীনচেতা এই দেশের মানুষ সরল-সোজা হলেও তারা রাজনীতি সচেতন । তারা বার বার বিভিন্ন শাসকদের ভুল সিদ্ধান্তের কবলে পড়েছে । ভুলের সুযোগ নিয়ে অত্যাচারী শাসক ক্ষমতায় এসেছে বার বার । জুলুম-নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে পরিবর্তনের আশায় সংগ্রাম করেছে, জীবন দিয়েছে । নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে পরিবর্তন সাধিত হলেও জনগনের অধিকার হরণকারি “সংবিধান” নামক একটা ক্যান্সারের জীবাণু গোটা জাতির শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে পরিবর্তনের আশা জাগানিয়া স্বপ্ন বার বার ভেংগেছে । কেননা এসব স্বপ্ন দেখিয়ে যারাই ক্ষমতায় বসেছেন, তারা সত্যিকার ভাবে জনগনের আশা আকাংখা পূরণের জন্য নিবেদিত হলেও তাদের রাজনৈতিক অ-দূরদর্শিতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তাহীনতার সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে কোন কোন মোনাফেক কাপুরুষরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে আবারো ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত করেছে । কারণ একটাই । কিছু চরিত্রহীন লুটেরা শ্রেণীর ক্ষমতাধর পেশী-শক্তির অধিকারি মানুষ শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছে সর্বদা । এই দেশের নিরিহ মানুষদের নাগিরক অধিকার হরণ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের সম্পদ লুট পাট করে ওভারনাইট বিশাল টাকার পাহাড় বানিয়ে দুনিয়াতে স্বর্গ বানিয়েছে । সাধারণ নাগরিকদের তারা মনে করে তাদের কৃৃতদাস হয়ে বেঁচে থাকবে আজীবন । তাদের কোন মান-সম্মান, ইজ্জত থাকতে নেই । এ জন্য ক্ষমতাসীনরা কখনওই চায়নাই দেশের ম্যাক্সিমাম সাধারণ মানুষ সু-নাগরিক হিসেবে তাদের আত্ম মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে টিকে থাকুক। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আসলে এরা প্রতিটি নাগরিকের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার নিশ্চিৎ করা সহ একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠণ করতে চায়নাই । তারা কেবল স্বার্থপরের মত ৫ বছরের জন্য ঠিকাদারী কারবার করার যন্ত্র হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে ।
এই অবস্থা এই রাষ্ট্র স্বাধীন হবার পর থেকেই কম বেশী সব সরকারের আমলেই জনগন প্রত্যক্ষ করেছে । তারা দেখেছে কিভাবে শাসক চক্র মাফিয়া হয়ে উঠেছে । জনগনের অধিকার হরণকারি সংবিধান নামক জীবাণুকে ক্ষমতার অপব্যবহার নামক ক্যান্সারে পরিণত করে গোটা জাতিকে অসুস্থ্য করে ফেলা হয়েছে । বিশেষ করে বিগত ১৬ বছরের ভয়ানক ফ্যাসিবাদী সরকারের যে চরিত্র এই জাতি উপভোগ করেছে, তাতে তাদের এই আশংকা হয়েছিল যে, হয়তোবা এই দুনিয়ায় আর কোন কেমো-থেরাপী নিয়ে বেঁচে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না । কেননা তারা দেখতে পেয়েছে, এ ভয়ানক ক্যান্সার থেকে জাতিকে যারা রক্ষা করতে এগিয়ে আসার জন্য সর্বতা প্রস্তত থাকে, তাদেরকে চিহ্নিত করে খুন , গুম করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে খুনী শাসক চক্র । আর এই সম্পূর্ণ আয়োজনে শক্তিশালী সহায়ক ভুমিকায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। বলা বাহুল্য ভারত এই পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পেয়েছে মূলতঃ এই রাষ্ট্রেরই প্রধান নির্বাহী হাসিনার সরাসরি সহযোগীতায় এবং তার সাথে সহকারি হিসেবে সক্রিয় ছিল কতিপয় শক্তিশালী চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদক, শিক্ষক, বুদ্ধির ফেরিওয়ালা, চোর-ডাকাততূল্য ব্যবসায়ি, চরিত্রহীন-ঘুষখোর-লুটেরা সামরিক-বেসামরিক আমলা, বিচারক সহ আরো কতগুলো শক্তিধর মোনাফেক, গাদ্দার, দেশদ্রোহী । এই কলংকিত চরিত্রহীন অমানুষতুল্য মানুষগুলো প্রায় সবাই চিহ্নিত ।
সম্ভবতঃ দীর্ঘদিনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার কিছু মজলুমের আর্তনাদ, দীর্ঘশ্বাস আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল বলে জুলাই’ ২০২৪-এ একটা সফল বিপ্লব সাধিত হয়ে বর্বর খুনী হাসিনার পতনের পাশাপাশি তার মূল পৃষ্ঠপোষক ভারতেরও সেদিন পরাজয় ঘটেছিল । এই বিপ্লব সফল করতে হাজার হাজার তরুন, ছাত্র-জনতার তাজা প্রাণ এবং অংগহানী হয়েছে । খুনী হাসিনার নির্দেশে এই রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এই নৃসংশ খুন এবং পংগু করেছে । জুলাই বিপ্লবে এভাবে মানুষ খুনের ঘটনা দেশবাসী সহ গোটা বিশ্ব দেখেছে, থমকে গিয়েছে মানব সভ্যতা । সেদিন ছাত্র-জনতার এই আত্ম বলির কারণে সমগ্র দেশের মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে জালিমের পতনের জন্য রাস্তায় নেমে আসলে খুনী হাসিনা তার দলবল দিয়ে পালিয়ে যায় ।
কিন্তু এই রাষ্ট্রে যে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত এত বড় একটা বিপ্লব ঘটে গিয়েছে, এই বিপ্লবের ফসল এই জাতি ঘরে তুলতে পারল না । কারণ কি ? ৮ ই আগষ্ট সে বিপ্লবের বিজয়কে ছিনতাই করা হয়েছে । কারা সেই ছিনতাইকারি? কয়েকজন রাষ্ট্রদ্রোহী গাদ্দার । তারা চেয়েছে কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু চরিত্রহীন মানুষরাই যাতে শাসন ক্ষমতায় সর্বদা থাকতে পারে, তারই একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা করতে । কেমন ? রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা যদি এবার স্বাধীনভাবে ভোট দিতে সুযোগ পায়, তাহলে নিশ্চিৎ তারা তাদের এলাকার জনপ্রিয়, সত্যিকারভাবে জনগনের আমানতের খেয়ানত করবে না, এরকম সৎ, যোগ্য, মেধাবী ব্যক্তিদের ভোট দিবে । এ জন্য এই চরিত্রহীন ক্যান্সারের জীবাণূদের ভয়, তাহলে তাদের এতকালের সব আমলনামা জনগনের সামনে হাজির করা হবে এবং প্রকৃত সুবিচারের মাধ্যমে জনগনের লুণ্ঠিত সকল সম্পদ জনগনের হাতেই ফিরিয়ে দিবে । এইটা তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না । তাই তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে একটা ভংগুর, নড়বড়ে সরকার কাঠামো বানাতে ।
এ জন্য তাদের প্রথম চক্রান্ত সফল করেছে । হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগী অপরাধী রাজনীতিবিদ এবং তাদের সহযোগী চিহ্নিত শক্তিশালী চরিত্রহীন-ঘুষখোর-লুটেরা সামরিক-বেসামরিক আমলা, বিচারক সহ আরো কতগুলো শক্তিধর গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদক, শিক্ষক, বুদ্ধির ফেরিওয়ালা, চোর-ডাকাততূল্য ব্যবসায়ি মোনাফেক গাদ্দার, দেশদ্রোহীদের গ্রেফতার করে জেলে আটকানো যায়নাই। অথচ বিপ্লব বিজয়ী সরকারের প্রথম কাজ হয় সেটা । এটা করতে দেয়া হলোনা কেন? তারা চাচ্ছে এই দেশের মানুষকে হাসিনার খুনী-লুটেরা চরিত্রকে আড়াল করে ভুলিয়ে দিতে । জনগনকে কিছুদিন এভাবে মোনাফেকী করে কিছু সুবিচারের আশা, বিপ্লবের কিছু আকাংখ্যা বাস্তবায়নের গল্প প্রচার, কিছু মামুলী সংস্কার নামক নাটক করে কালক্ষেপনের মাধ্যমে দেশের মধ্যে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, একটু ভিন্ন কালারে, ভিন্ন মোড়কে এমন শক্তিশালী রাজনীতিবিদদেরকে ক্ষমতার কেন্দ্র-বিন্দুতে নিয়ে আসা যাতে এই রাষ্ট্রে হসিনার কুকীর্তিকে যেন মানুষ কুকীর্তি হিসেবে মনে না রাখতে পারে । সেই সাথে ইউনুস সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়ে তাকে অস্থির করে যেনতেনভাবে একটা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে হাসিনার আমলের মতই একটা সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা । ৭ মাসে যা কিছু এই রাষ্ট্রে ঘটেছে, তার সকল নাটক এভাবেই সাজিয়েছে এই গাদ্দার, রাষ্ট্রদ্রোহীরা । সহযোগীতা করছে ভারত প্রত্যক্ষভাবে । এরকম প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকার পরও এই দেশে দেশ প্রেমিক জনগন যেন আবারো প্রতি বিপ্লব ঘটিয়ে প্রকৃত বিপ্লবী সরকার গঠণ করতে না পারে , তার জন্য চলছে আরো ভয়ানক সব চক্রান্ত । যা এপার-ওপার সহ নানা জগতে ফাঁস হচ্ছে । চিহ্নিত হয়ে গেছে সহযোগীরা । সেনানিবাসে হাসিনার রেখে যাওয়া ভারতের কেনা কৃতদাস কয়েকজন জেনারেল, কতিপয় বাম ঘরানার উপদেষ্টা এবং কতিপয় শক্তিশালী চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ ( যারা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে মূলতঃ ভারতের ক্রয়কৃত কৃতদাস) ক্ষমতায় আসার জন্য যারা জনগনের সাথে অভিনয় করে গণতান্ত্রিকতার । তারপরও চলছে নানা রকম নাটক ।
সবচেয়ে বড় ট্যাজেডি ঘটেছে, বিপ্লব চুরি-ছিনতাই হয়ে যাওয়ার এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সাধারণ মানুষ যারপরনাই বিব্রত এবং হতাশ ।তারা আশা করেছিল, এ নাটকের যবনিকাপাত ঘটাবে কি ছাত্ররা ? কেননা এসব নাটকীয় কারসাজী বুঝতে পারছে জনগন এবং এই অবস্থায় যে ছাত্র নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের ম্যাক্সিমাম মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এই আশায় যে, এই তাজা তরুণ প্রাণগুলো নষ্ট রাজনীতি করবে না, তারা দায়িত্ব পেলে বোধকরি জনগন তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাবে, সেই ছাত্ররা দল গঠণ করে প্রথম প্রহরেই তাদের মেরুদন্ড তারা নিজেরাই ভেংগে দিল ? কি করে পারলে ফাইফ-ষ্টার হোটেলের ইফতার পার্টির ফাঁদে দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই করতে ? তোমরাতো শুধু নিজেদেরেই সর্বনাশ করনাই, করেছ তোমোদের ঘিরে যে জাতি তাদের ছিনতাই হয়ে যাওয়া বিপ্লবকে উদ্ধার করতে চেয়েছিল, তাদেরও সর্বনাশ করেছ । এই সাধারণ বোধ তোমাদের হল না ?
তবে মনে রেখ বাছারা ! এই দেশের জনগন চিরকাল স্বাধীনচেতা । তারা বার বার মার খায় । মরে । কিন্তু তারা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে । যুদ্ধ করে শহীদ হতে । মনে হচ্ছে আবারও তোমরা এই জাতিকে সেদিকেই ঠেলে দিলে ।
আমরা আশাহত হই না । আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই দেশের সাধারণ নাগরিকরা তাদের স্বকীয়তা, তাদের স্বাধীনতা, স্বার্বভেমৈত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আবারো কোন বিপ্লবে অংশ নেবার জন্য প্রস্তত হয়ে আছে । ২০২৫ এর এই প্রজন্মকেও বেকুব বানাতে সক্ষম হলো শত্রুরা ? এই প্রশ্ন সাধারণ প্রতিটি নাগরিকের মনে জেগেছে । তাই আমি মনে করি, গোটা জাতিকে এতটা বেকুব বানিয়ে কোন ষড়যন্ত্রকারিরা এখানে সফল হতে পারবে বলে আমার মনে হয় না । বিপ্লব আবার হবে, বার বার হবে । প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিপ্লব করবে, তবু কাপুরুষ ভারত এবং মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার চরিত্রহীন লোকদেরকে এই জাতি কোনদিনও সফল হতে দেবে না ইন শা আল্লাহ্ !!
আল্লাহ ভরসা ।