এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে এই দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ “নামে মুসলমান” কিন্তু অন্তরে “মোনাফেক” (ব্যতিক্রম ব্যতিত) বলে ।
বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ প্রথমে একটু ইতিহাসের পেছনে যেতে হবে ।
বাংলাদেশ নামক মানচিত্রটি পাকিস্তানের অংশ ছিল । আর কি কারণে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল ? সেই ইতিহাস ভারতের বিকৃত ইতিহাস থেকে জানা যাবে না । জানা যাবে ঘটনার পরিক্রমায় বিভিন্ন পর্যক্ষেণ, ভারতের বর্তমান চরিত্র এবং অনেক ঐতিহাসিক, বুদ্ধিজীবিদের লেখনি থেকে । এই ইতিহাসের ধারাবাকিতায় আমরা বুঝতে পারব, ভারত কিভাবে এই দেশে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতায় বার বার সবচেয়ে বেশী সফল হতে পেরেছে অন্যান্য দেশের তুলনায় । প্রথমতঃ তারা আমাদের পূর্ব পুরুষদের এই মানচিত্র পাওয়ার ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে অনেকখানি সক্ষম এবং সফল হয়েছে আমাদেরই ঘরের মোনাফেকদের হাত দিয়ে ।
[ ইতিহাস বলছে, পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে মূলতঃ ভারতের উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের যবনদের ( মুসলমান ও নিম্নজাতের অন্যান্য ধর্মের মানুষ) প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকে । তারাই ষড়যন্ত্র করে ভারত ভেংগেছে । নইলে ৮০০ বছরের মুসলিম শাসনের ফলে গড়ে ওঠা উদার গণতান্ত্রিক ভারতকে কেন মুসলমানরা তাদের নিজেদের ক্ষমতাকে নিজেরাই ধ্বংস করার জন্য ভাংবে ? এটা কি কেউ বিশ্বাস করে ? কিভাবে উচ্চ বর্ণের হিন্দু পলিটিশিয়ানরা নাটক করে মুসলিম শাসকদের পরাভূত করেছিল ? একটার পর একটা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম দাংগার নাটক সাজিয়ে রাজ্য শাসকদের সরিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, সেই ইতিহাস বর্তমানে অনেক বুদ্ধিজীবিদের কলাম থেকে বেরিয়ে এসেছে । এই ইতিহাস না জানলে বাংলাদেশ প্রসংগে ভারতের নীতি কেন এমন কাপুরুষের মত আক্রমাণাত্মক, তা বোঝা যাবে না, এ জন্য জেন-জিকে ইতিহাস খুব ভালো করে জানতে হবে ]
২। জাতীয় পরিচয় সংকটঃ- তারা সফল হয়েছে এই দেশের অধিকাংশ মুসলমানকে তাদের আইডেনটিটি ক্রাইসিসে নিমজ্জিত করে মাদকসক্ত করতে পেরেছে । এটিও সম্ভব হয়েছে এই দেশেরই কিছু মোনাফেকদের কারণে । অধিকাংশ মুসলিম রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক, বিচারক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ি, সামরিক-বেসামরিক আমলা সহ শিক্ষিত মুসলমানরা নামে মুসলমান হলেও তাদের ব্যক্তি-পরিবারে ইসলাম অনুপস্থিত । প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলাম না বোঝার কারণে আইডেনটিটি ক্রাইসিসে আক্রান্ত হয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে এবং মোনাফেক চরিত্র ধারণ করেছে। এই মোনাফেকগুলোকেই কোন রকম টাকা পয়সা খরচ না করে এই দেশের জনগনের টাকা দিয়ে তারা খুব অল্প বুদ্ধি খাঁটিয়ে কিনে ফেলেছে [ হানী ট্র্যাপে ফেলে ] খুব অল্প দিনের মধ্যেই ।
৩ । সাংস্কৃতিক আগ্রাসনঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কালচারে ইসলামী সংস্কৃতির কোন প্রভাব নেই । কারণ এই মোনাফেকরাই ঘুরে ফিরে বার বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয় এবং এই দেশের শাসন ব্যবস্থায় যাতে কোন সৎ এবং যোগ্য লোক থাকতে না পারে, তার জন্য মোনাফেক শাসকদের দিয়ে বাংলাদেশের জনগনের টাকায় যে বাজেট তৈরী করা হয়, সেই টাকা খরচ করেই( বিভিন্ন প্রকল্পের নামে লুটপাট করার সুযোগ, নারী এবং মদ এর নেশা ধরিয়ে) তাদেরকে দিয়ে রাষ্ট্রের নীতি তৈরী করা হয়েছে, যেখানে ইসলামী কৃষ্টি-কালচার বিলুপ্ত করা হয়েছে । শুধু তাই নয়, এই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাজার বছরের আইডেনটিটি থেকে সরিয়ে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদী ধর্ম হিসেবে হাইলাইট করে বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতিকে সার্বজনীন মানবতাবাদী সংস্কৃতি হিসেবে বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের আস্থার সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে অনেকদূর সফল হয়েছে ।
৪। ইসলামী জংগীবাদ উত্থানের নাটকঃ খুব অল্প মূল্যে ( তাদের খরচ করা লাগে না, আমাদেরই জনগনের টাকায়) সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করিয়ে ইসলামী জংগীবাদের উত্থান ঘটিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করানো সম্ভব হয়েছে । যেমন ধরুন, সামান্য দুই পিস জিলাপী খাইয়ে মানুষ খুন করানো গিয়েছে, অনেকের হাতে খুব অল্প টাকার লোভের মূলা ঝুলিয়ে তার হাতে পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিয়ে জ্যান্ত মানুষ সহ বাসে আগুন লাগানো সম্ভব হয়েছে । ইসলামী জংগীবাদের নাটক রচনা করে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েম করা সম্ভব হয়েছে । সহায়ক ? আমাদের ঘরের মোনাফেকরা ।
৫। সামরিক বাহিনীর মেরুদন্ড ভাংগাঃ বাংলাদেশের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের মেধা এবং বুদ্ধি দিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা তৎপরতাকে নস্যাৎ করে দিতে সমর্থ হওয়ায় খুব সুকৌশলে এই দেশের সামরিক বাহিনীকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে । আমাদেরই কিছু মোনাফেকদের দিয়ে ২০০৯ সালে মূল্যবান সামরিক অফিসারদের হত্যা করিয়ে সেই ধ্বসের সূচনা করা হয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে ।
[ তবে ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে তাদের সেই পরিকল্পণা ধুলিস্যাৎ করা হলেও এখনো তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে বরখাস্থকৃত, বহিস্কৃত, গুম করে রাখা দেশপ্রেমিক সামরিক অফিসাররা যাতে সামরিক বাহিনীতে ফিরে আসার আর কোন সুযোগ না পায়, তার জন্য তাদের তৈরী করা গোলাম, রাষ্ট্রদ্রোহী গাদ্দার জেনারেলদের বরখাস্থ্ না করে তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় না এনে ঐ পরিকল্পণার অংশ হিসেবে দায়িত্বশীল পদগুলোতে বসিয়ে রাখা হয়েছে । ]
এদেরকে চিরতরে উৎখাত করার উপায় কি নেই ? অবশ্যই আছে ।
অধমের মতামতঃ বাংলাদেশের মুসলমানদের মোনাফেকী ছেড়ে তওবা করে প্রকৃত মুসলমান হতে হবে । তাদেরকে শীষাঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে । এটা যতকাল না পারবে, ততকাল আমাদেরই ঘরের ভেতর থেকে তৈরী হওয়া শক্তিশালী মোনাফেকদের আমাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলা হবে ।
এটি বুঝতে খুব বড় বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার আছে ? বুঝতে হবে তারা কেন ইউনুসকে সরানোর জন্য এত ক্ষেপেছে ? এই দেশের রাজনীতিতে অধিকাংশ মোনাফেকদের চাওয়ার সাথে ভারতের চাওয়ার মিল খুঁজে পাওয়ার পরও যদি এই জাতি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই দেশকে আবারো ভারত সুযোগ পেলে তাদের পায়ের তলায় পিষ্ট করে উঁই পোকার মত মেরে ফেলবে ।
অতএব সাধু ! সাবধান !!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪০