শবে বরাত পালিত হত একটা জয়ীফ হাদিস এবং কুরআনের একটা আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে ।
আসলে কুরআন হাদীস এর আলোকে শবে বরাত বলে কোন বিশেষ ইবাদাত ইসলামে নেই । এই রাতে সারা রাত জেগে কোন বিশেষ ইবাদাত রাসুল(সঃ) করেন নি । তার সাহাবীরা কেউ করেন নি । তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন , ৪ প্রসিদ্ধ ইমাম, সলফে-সলেহীনদের কারো জীবনীতেই এরকম কোন ইবাদাতের দলিল প্রমাণ পাওয়া যায় না ।
কিন্তু তারপরও এক শ্রেণীর বিদ্-আত পন্থী আলেমগন ৪৪ নম্বর সূরা আদ্-দুখান এর ৩ নম্বর আয়াত (اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَكَۃٍ اِنَّا كُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ ﴿۳ “ নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী”-এর ব্যাখ্যা দিয়ে বহুকাল মধ্য শাবানের রাতে কুরআন নাজিলের স্মরণে শবে বরাত আবিষ্কার করে হালুয়া-রুটির কালচার চালু করেছিলেন । এটা করে তারা নিজেদের কিছু স্বার্থ হাসিল করেছেন । এধরনের একটা বিদ্-আত চালু করে বহু মানুষকে মূলতঃ প্রত্যেক চান্দ্র মাসের সোম এবং বৃহষ্পতিবার ছাড়াও চান্দ্র মাসের ১৩-১৪ এবং ১৫ তারিখে রাসুল(সঃ) নিজে এবং তার সাহাবীরা যে নফল সওম পালন করতেন, সেই সুন্নাহ থেকে বঞ্চিত করেছেন। রাতভর আমোদ-ফুর্তি করে রুটি হালুয়া উৎসব এবং সারারাত মসজিদে নামাজ আদায়ের নামে কিছু বৃদ্ধ বা মধ্য বয়সী মানুষ ব্যতিত অধিকাংশ তরুন সারারাত আড্ডাবাজী করে রাত কাটায় । এরকম একটা বদ কালচার তৈরী করে এই জাতিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত থেকে মাহরুম করার ব্যবস্থা করেছিলেন । সহীহ দলিল প্রমাণের কল্যাণে যখন প্রমাণ হলো যে, কুরআন নাজিল হয়েছিল রামাদান মাসে (শাবান মাসে নয়) [ আপনারা সবাই জানেন সেই আয়াত- সূরা আল্-কদর এর আয়াত-১ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ ۚ﴿ۖ۱ “ নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল ক্ব’দরে।’অর্থাৎ রমাদান মাসের ক্ব’দর এর রাতে - তখন তারা একটা জয়ীফ হাদিস আবিষ্কার করেছে, যা আর উল্লেখ করতে চাই না । আপনারা সবাই জানেন । রাসুল(সঃ) এর বিবির বর্ণনা দিয়ে হাদীস রচিত হয়েছে । অথচ এর স্বপক্ষে মূল কোন হাদীস গ্রন্থে সহীহ দলিল প্রমাণ পাওয়া যায় না । তিরমীজিতে যে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে লেখা আছে -হাদীসের সনদ দুর্বল । তাহলে প্রশ্ন জাগে, আপনারা সূরা দুখান এর আয়াতের ব্যাখ্যায় ধরা খেয়ে কেন একটা দুর্বল হাদীস মেনে সেই পুরণ বদ কালচারকে জিয়িয়ে রাখতে এতটা মরিয়া ? তার চেয়ে আসল কাজের খবর কি মুসলমানের ? কতজন ফরজ নামায ঠিক মত পড়ছে ? মসজিদে ফজরের নামাযে ভিড় নেই কেন জুমআ’র ভিড়ের মত ? মুসলমানকে আল্লাহ মানব জাতির কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন, এই বিষয়ে কে কতটুকু কল্যাণকর কাজ করছে ? এইসব ওয়াজ কেন করেন না ? আবার যারা নামায পড়তে পড়তে কপালে বিশাল দাগ বানিয়েছে কিন্তু বোনের সম্পত্তি ফাঁকি দেয়, সুদ খায়, ঘুষ খায়, টাকা পাচার করে, লুট-পাট করে মানুষের হক্ক মেরে খাচেছ, মানব কল্যাণতো দূরের কথা । এইসব নামাজীদের ধমক দিয়ে আল্লাহ কি বলেছেন ? সূরা বাক্কর’হ এর ১৭৭ নম্বর আয়াতে ?
১। সূরা বাক্ব’রহ এর ১৭৭ নম্বর আয়াতে শুধু সলাত আদায় করলেই যে কোন কাজ হবে না, আরো যে ১৭ টা কর্মসূচি আল্লাহ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে হুকুম করেছেন, তা করছেন কয় জনা ?
২। এই দেশের কয়জন মানুষ তার বিবিকে যে কাপড় কিনে দেয়, সেই একই মানের কাপড় তার কাজের বুয়াকেও দেয় ? তার বিবি-বাচ্চাদের নিয়ে যে বিরুই চালের দামী ভাত খায়, সেই একই চালের ভাত কি তার বাসার কাজের মানুষকে খেতে দেয় ?
৩। কয়জন মানুষ তার আত্মীয়-স্বজনের হক্ব, পাড়া প্রতিবেশীর হক্ব, পথচারির হক্ব, মসজিদের কাতারে অংশগ্রহণকারি পাশের মুসল্লীর হ্ক্ব আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে তা করতে পারে ?
৪। কয়জন মানুষ নিজের পকেটে একটু ছেড়া বা দুর্বল টাকার নোটটা রেখে চকচকে ভালো নোটটা রিক্সাওয়ালাকে দিতে পারে ?
৫। মানব জাতির কল্যাণে একজন মুসলমান কতটুকু কাজ বাস্তবে করেছে ?
এসব কি কোনদিনও কারো কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন ? সম্মানিত আলেম সাহেব, আপনি নিজের জীবনেও কি এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন ?
৬। ফরজ স’লাত আদায় করতে কতটুকু বিনয়ী হতে পেরেছেন ? সূরা ফাতিহা পড়ার সময় যারা প্রকৃত মু’মিন, তাদের নাকি আল্লাহর ভয়ে অন্তর কাঁপে, চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়তে শুরু করে ( সূরা যুমার এর আয়াত ২৩ মতে ) , কয়জন মুসলমানের সেই অবস্থা হয় ? রুকু সিজদাহ সঠিকভাবে করেন কয়জনে ? নামাযে তা চুরি করে কয়জনে [ হাদীসের ভাষায় ] ? তাশাহহুদ পড়ার সময় অর্থাৎ আসামীর মত আল্লাহর সামনে বসে সাক্ষ্য দেবার সময় যেসব কথা বলে সাক্ষ্য দেই, তার মানে কি জানি ? সাক্ষ্য দেয়ার সময় আমাদের মনের অবস্থা কি ভীরু -কম্পিত থাকে ?
আসল কামের খোঁজ নাই, একটা জয়ীফ হাদিস নিয়ে এখনো সেই পুরণ বিদ্-আত পুষে আসছেন ?
সম্মানিত পাঠক, আসুন আমরা নিজেরা একটু লেখা পড়া করি । বর্তমান যুগে ইসলামী স্কলারগণ সকল জাল হাদিস তথ্য প্রমাণ দিয়ে পৃথক করে ফেলেছেন । কোন সহীহ হাদীস গ্রন্থে বর্তমান সংস্করণগুলোতে কোন জাল-দুর্বল হাদিস কেউ ব্যবহার করেন না । সুতরাং আমরা জানার চেষ্টা করি, কুরআন কি বলে ? রাসুল(সঃ) কি বলেছেন ? এটা মেনে চলি । বিদ্-আত থেকে নিজে বাঁচি, পরিবারকে বাঁচাই । কেননা জেনে শুনে বিদ্-আত করা কুফুরীর চেয়েও ভয়ানক অপরাধ ।
আল্লাহ আমাদের সকল শিরক-বিদ্-আত থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দিন ।