‘তুই বেটা সুইপারের ছেলে, লেখাপড়া শিখে কী করবি। যা, বাপের সাথে ঝাড়ু দে গা’—প্রতিবেশীদের নিত্য এ ভর্ত্সনা টলাতে পারেনি নাটোরের ছোটনকে। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সার্থক হয়েছে ছোটনের জিপিএ-৫ পাওয়া।
ছোটনের স্কুল নাটোরের দীঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়েই ঝাড়ুদার হিসেবে ৮শ’ টাকা বেতনে কাজ করে তার বাবা বাবু কুমার। ছোটনরা দুই ভাই, দুই বোন। তাদের নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। বসবাস উত্তরা গণভবনের পাশে দীঘাপতিয়া বাজারে। তিন বেলা যেখানে খাবার জোটে না, সেখানে গ্রামের তীব্র লোডশেডিংয়ে কেরোসিন কিনে লেখাপড়া করা ওর জন্য অসম্ভব।
তাই গণভবনের নিরাপত্তার জন্য দেয়া বাতির নিচে বসেই ছোটন বেশি সময় পড়াশোনা করত। বছরের পর বছর ইচ্ছা থাকলেও স্কুল ড্রেস তৈরি করে পরা সম্ভব ছিল না। এজন্য নিয়মিতই ওকে শিক্ষকদের হাতে মার খেতে হয়েছে। পড়াশোনার জন্য খাতা-কলম কিনতে বাড়ির পাশের একটি জুয়েলার্সে সহকারী হিসেবে নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করত ছোটন। তার স্কুলের শিক্ষক আবদুস সালাম অর্ধেক বেতনে ইংরেজি আর রমজান আলী স্যার বিনা বেতনে ওকে অংক প্রাইভেট পড়াতেন।
ছোটনদের বাড়ি গেলে তার বাবা বাবু কুমার ভুঁইমালী বলেন, ছেলের ফলাফলে সে খুব খুশি। তিনি বলেন, ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সবকিছু করতে প্রসু্তুত আছেন। আরও বড় হয়ে ছোটন একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে জাতির সেবা করার স্বপ্ন দেখে। এত আনন্দের মাঝেও ছোটন হতাশভাবে ভাবছে শুধু অর্থের জন্যই বন্ধ হয়ে যেতে পারে তার উচ্চ শিক্ষার সব স্বপ্ন।
Click This Link
নাটোরের জিপিএ-৫ পাওয়া সাগর ফলাফল প্রকাশের সময়ও রড মিস্ত্রির কাজ করছিল। হেড মিস্ত্রি আবদুর রহিম মোবাইলে স্কুল থেকে ফল প্রকাশের সংবাদটি সাগরকে জানায়। নাটোর সদরের ছাতনী এলাকার হাড়িগাছা গ্রামের রিকশাচালক সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাগর এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা সিরাজুল ইসলাম রিকশা চালিয়ে পরিবারের সব সদস্যদের তিন বেলা ঠিকমত খাবার দিতে পারেন না; নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। তাই ছোটবেলা থেকেই সাগর সব ছুটির দিনে গ্রামের মানুষের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কৃষি কাজ করে স্কুুলড্রেস, বই, খাতা ও কলম কিনেছে। সাগর নিজের লেখাপড়ার খরচ সব সময় নিজেই জুগিয়েছে। সাগরের মা নূরজাহান বেগম জানান, ছেলে আমার বই, খাতা, কলম না থাকায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় শিক্ষকদের হাতে মার খাওয়ার পর থেকেই সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন গ্রামের কৃষকদের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত নিজের খরচেই লেখাপড়া শিখেছে। ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের এন্তাজ আলী স্যার সব সময় তাকে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া বাবা-মায়ের উত্সাহ ছাড়া আর কোনো সম্বলই ছিল না সাগরের। একটি ছোট্ট মাটির দেয়ালঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গেই বসবাস করে সাগর। এই ছোট্ট অন্ধকার ঘরেই পড়ালেখা করেছে সাগর।
বিদ্যুত্ ও কেরোসিন না থাকায় বেশিরভাগ সময়ই দিনের আলোতে পড়ালেখা করতে হয়েছে সাগরকে।
Click This Link
যদি এরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:৩৮