
একদেশে ছিলেন এক ব্লগার । তিনি সামু নামক এক ব্লগে ব্লগিং করতেন । ধরা যাক ব্লগারের নাম ততমচং । তো তিনি একদিন রাতের বেলা ব্লগে একটা পোস্ট করে ঘুমাতে গেলেন । পরদিন সকালে তিনি ব্লগে ঢুকে দেখেন তার পোস্টে অনেকগুলো কমেন্ট । কিন্তু কমেন্টগুলো পড়ে তিনি কিছুতেই খুশি হতে পারছিলেন না , কারন প্রায় সবগুলো কমেন্টই গালাগালিতে পূর্ন । গালাগালির সাথে প্রায় সব কমেন্টেই যে কথাটি লিখা হয়েছিল তা হচ্ছে ছাগু । তিনি অনেক চিন্তা করেও কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না ছাগু আবার কি ?




না এ হতে পারে না , তিনি নিশ্চয়ই ভুল দেখেছেন । ছাগলের ছবি কিভাবে তাকে চোখটিপে দিতে পারে ?তিনি পুরো দু মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকলেন ।
কিন্তু চোখে খোলে দেখেন ছাগলটি মহানন্দে দাঁত বের করে হাসছে , তিনি তার দিকে চাইতেই ছাগলটা চোখ টিপে দিল ।
তিনি এবার পুরোপুরি অবাক হয়ে গেলেন , আরে কি ঘটছে এসব । তিনি তার স্ত্রীকে ডাকলেন রেহানা রেহানা একটু শুনে যাও তো ।
তার স্ত্রী রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন । কি হল ডাকছ কেন ?
দেখ তো এই ছাগল টা তোমাকে চোখ টিপে দেয় কিনা ?
রেহানা পুরো ঘরে চোখ বুলালেন , তিনি অবাক হয়ে বললেন কোথায় ছাগল ?
ততমচং সাহেব তার ল্যাপটপে দেখালেন , এই যে এখানে ।
রেহানা ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেলেন , তিনি অনেকক্ষন দেখে তার স্বামীর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললেন , কি বল এইসব ? এই ছাগলের ছবি আমাকে চোখ টিপে দেবে কেন ?
ও না এমনি ! ঠিক আছে যাও তোমার কাজে যাও ।
রেহানা বললেন ঠিকাছে , কিন্তু তোমার শরীর খারাপ নাকি ?
না আমি ঠিকাছি , তুমি কাজে যাও । ওকে আমি যাই , শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাও ।
রেহানা চলে যাবার পর ততমচং সাহেব ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলেন , ছাগলটি এখন চোখ টিপার বদলে তার দিকে চেয়ে জিহ্বা বের করে ভেংচি কাটছে ।
এর মধ্যেই তার ব্লগে ছাগু লেখা আরও অনেক কমেন্ট আসতে লাগল । তার কেমন যেন লাগতে লাগল , তিনি ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে গেলেন ।
রাতে ততমচং সাহেব ঘুমিয়ে আছেন , হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন গম্ভীর গলায় কে যেন তাকে ডাকছে
ততমচং সাহেব , ততমচং সাহেব শুনতে পাচ্ছেন ?
ততমচং সাহেব ঘুমজড়ানো গলায় বললেন , হু আপনি কে ?
আপনার ঘুম কি ভেঙ্গেছে ? আপনি তো গভীর ঘুমে অবচেতন ছিলেন ।
প্যাঁচাল না পেরে বলুন আপনি কে ?
স্লামালিকুম , আমি ঙংলহং
মানে ? হংলহং আবার কি ?
হংলংহ না ততমচ সাহেব আমার নাম ঙংলহং ।
আপনার নাম হংলহং বংলহং যাই হোক আপনি এখানে কি চান ?
জ্বী আমি ছাগুসম্প্রদায়ের একজন , আপনার সাথে সাক্ষাৎ এর জন্যে এসেছিলাম ।
ততমচং সাহেব এবার কেঁপে উঠলেন , ভাল করে চেয়ে দেখেন ব্লগের সেই বলশালী ছাগলটা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
ততমচং সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন এই হারামজাদা তুই এখানে কি চাস ।
কিছু চাই না , আপনার সাথে সাক্ষাতের আশায় এসেছিলাম । মুচকি হেসে বলল ছাগলটা ।
আমার সাথে সাক্ষাৎ করবি কিজন্যে ? চেঁচিয়ে উঠলেন ততমচং সাহেব ।
ছাগলটি মুচকি হেসে বলল আপনি তো এখন আমাদের সমাজের একজন , তাই সৌজন্য সাক্ষাৎ আর কি ? আপনি আমি তো এখন একি জিনিস । মানুষে মানুষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে না সেইরকম আরকি ।

ততমচং সাহেব এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন , ধূর হবি হতভাগা , কুত্তার বাচ্চা ।

ছাগলটি আবারও মুচকি হেসে বলল , আপনার কথায় কিঞ্চিৎ ভুল রয়েছে আমি কুত্তার বাচ্চা না আমি হলাম ছাগলের বাচ্চা । আপনি যা আমি তা । আর আমি হলাম ছাগল সমাজের খুব উঁচুমানের একজন ছাগল , আমাকে এভাবে গালিগালাজ করা কি ঠিক ?
ততমচং সাহেব রাগ চেপে বললেন তুই যাবি ?
ঠিক আছে যাব কিন্তু আপনার জন্যে কিছু সুস্বাদু খাবার এনেছিলাম এগুলো কি রেখে যাব ।
খাবারের কথা শুনে ততমচং সাহেব কিছুটা নরম হযে বললেন কি খাদ্য ?
ছাগলটি হেসে বলল , জ্বী জনাব কাঁঠালপাতা ।
কি?
কাঁঠালপাতা চিনেন না ? আমাদের সমাজের সবথেকে প্রিয় খাদ্য ।

ততমচং রাগে পাগলের মত হয়ে গেলেন , এই তুই যাবি ?
ছাগলটি বলল ঠিকআছে জনাব যাচ্ছি , কিন্তু আপনি কি আমার একটা উপকার করতে পারবেন ?
কি উপকার ?
ছাগলটি হেসে বলল , দেখুন জনাব আমার দাড়িগুলো অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে , ইচ্ছে থাকলেও কাটতে পারছি না ,কারন আমারতো হাত নেই । আপনি ছাগু হলেও আপনার হাত আছে আপনি যদি দযা করে আমার দাড়িগুলো কেটে দিতেন ।

ততমচং সাহেব রাগে পাগল হয়ে চিৎকার করে উঠলেন ।
ততমচং সাহেবের চিৎকার শুনে রেহানা জেগে উঠলেন ।
তিনি লাইট জ্বালিয়ে বললেন , কি হয়েছে ?
ততমচং সাহেব কাঁপতে কাঁপতে বললেন ঐ শয়তান ছাগলটা কোথায় ? বলে কিনা আমি নাকি ওর দাড়ি কেটে দিব । কত্ত বড় সাহস ।

রেহানা অবাক হয়ে বললেন , তোমার কি হযেছে বলতো সকাল থেকে এরকম ছাগল ছাগল করছ ব্যাপারটা কি ?
আর ছাগলের দাড়ি কেটে দিতে হবে মানে কি ?
ততমচং সাহেব ধীরে ধীরে শান্ত হলেন , বললেন না কিছু না , চল ঘুমাই ।
লাইট নিভিয়ে তারা আবার শুয়ে পড়লেন ।
কিন্তু ততমচং সাহেবের কিছুতেই ঘুম আসছিল না , তার বারবার ছাগলের কথা কানে বাজছিল
আপনে আর আমি একই জিনিস
আপনে আর আমি একই জিনিস
আপনে আর আমি একই জিনিস
ভোরের দিকে তার তন্দ্রামত আসল , তিনি ছাগল নিয়ে ভয়ংকর একটা দু:স্বপ্ন দেখলেন ।
দু:স্বপ্ন টা হল এরকম : তিনি প্রাণপনে দৌড়ছেন , কয়েকটি ভয়ংকরদর্শন বলশালী ছাগল তাকে দৌড়াচ্ছে আর বলছে আমার দাড়ি কেটে দে , আমার দাড়ি কেটে দে । সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল তার পরনে কোন কাপড় নেই ।
পরদিন শুক্রবার ততমচং সাহেব বাজারে গেলেন । তিনি বাজার নিয়ে আসার পথে দেখেন রাস্তায় একটি ছাগল , ছাগলটি কেমন যেন তার দিকে চেযে ভেঙ্গাচ্ছে । তিনি দ্রুতপায়ে বাসায় চলে আসেন । ছাগলের যন্ত্রনায় তিনি ইতিমধ্যে ব্লগে বসাও ছেড়ে দিয়েছেন । যে দিকে তাকান সেদিকে শুধু ছাগল দেখেন । তার জীবন ছাগলময় হয়ে যাচ্ছে । সব সময় একই জিনিস তার কানে গানের মত বাজতে থাকে
আপনে আর আমি একই জিনিস
আপনে আর আমি একই জিনিস
খাবার টেবিলে বসে কিছুই খেতে পারেন না , তার কাছে সবকিছুকেই কাঁঠালপাতা মনে হয় ।
এভাবে কিছুদিন চলার পর তিনি নিজেকে কেমন যেন সত্যি সত্যিই ছাগল ছাগল ভাবতে লাগলেন । কেউ যদি বলে ছাগল খাব তিনি আৎকে উঠেন , তাকে আবার খেয়ে ফেলবে নাতো ?
একদিন তাদের বাসায় মেহমান খেতে আসবে , তখন কি খাওয়ানো যায় এ নিয়ে ঘরে আলোচনার সময় তার ছোট ছেলে বলল , বাবা একটা ছাগল নিয়ে আস অনেকদিন ধরে ছাগলের মাংস খাই না । এই কথা শুনে তো তার মাথায় রক্ত চড়ে গেল ছেলেকে ছুটে গিয়ে টাস করে মারলেন এক চড় ।
ছেলে তো অবাক হয়ে কাঁদতে লাগল । সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই কথায় মার খাওয়ার কি আছে ?
তার স্ত্রীও অবাক হয়ে গেলেন ।
এছাড়াও কোন কথাবার্তায় কেউ যদি কোন প্রসঙ্গে ছাগল বলত তিনি চটে যেতেন ।
তার এইরূপ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী তাকে একজন মনোবিষেযগ্গ এর কাছে নিয়ে গেলেন ।
মনোবিষেযগ্গ কামরন আলী তার দিকে চেয়ে বললেন আপনার সমস্যা কি ?
জ্বী আসলে আমার ছাগু সমস্যা ।
কি সমস্যা ? অবাক হয়ে বললেন কামরন সাহেব ।
ছাগু সমস্যা । নিজেকে ছাগু মনে হয় ।
ছাগু কি ?
ছাগু মানে ছাগল ।
ও আই সী ।
আর কি কি মনে হয় ?
খাবারগুলো কে মনে হয কাঁঠালপাতা ।
আর কিছু ?
জ্বী প্রতিরাতে একটা ভয়ংকর দু:স্বপ্ন দেখি । অনেক দাড়িওয়ালা ছাগল আমাকে তাড়া করে । আমি বিবস্ত্র হয়ে দৌড়তে থাকি । আর তারা আমাকে বলে :আমার দাড়ি কেটে দে ,আমার দাড়ি কেটে দে ।
কামরান সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপনাকে দাড়ি কেটে দিতে বলে ।
জ্বী ।
কামরান সাহেব বললেন , বুঝলাম আপনার মনে প্রচন্ড ছাগলভীতি জন্মেছে । আমার মনে হয় একটা কাজ করলে আপনার এই সমস্যা দূর হতে পারে । আপনি একটা ছাগল কিনে এনে , ঐটাকে চোখের সামনে কাটান তারপর খান ।
ডাক্তার সাহেবের এইরূপ কথা শুনে ততমচং সাহেব উঠে দাঁড়ালেন । পরক্ষনেই ঠাস করে একটা আওয়াজ শুনা গেল ।
কিছুক্ষন পর ততমচং সাহেবকে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতে দেখা গেল । এবং তার পিছু পিছু বিব্রত লজ্জিত অবস্থায় তার স্ত্রীকেও আসতে দেখা গেল ।