somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজন্ম ৭১

০৭ ই মে, ২০০৯ ভোর ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা আমার প্রজন্ম'৭১ কবিতা পড়ে মন্তব্য করেছেন উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তাঁদের জন্য অন্য ব্লগে প্রকাশিত অপরিচিত_আবিরের দুটো লেখা তুলে ধরলাম।
একজন নতুন প্রজন্মের ভাবনা এখানে জানতে পারবেন।

বাউল ধ্বংস উৎসব
২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:৫৫

মাদ্রাসার ছাত্ররা যে কান্ড ঘটাচ্ছে তাতে আমি মুগ্ধ। শুধু আমি কেন, সারা দেশের মানুষই মনে হয় এখন তাদের মুখ চেয়ে আছে। তারা যে জাতীয়তাবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে তা সত্যিই অনন্য। বাউল গান আবার আমাদেরে দেশের জিনিস নাকি? এগুলা কি আবার আমাদের দেশের কোন ঐতিহ্য নাকি? কেন লালন সাঁইয়ের ভাস্কর্য থাকবে এ দেশের মাটিতে? তাঁর গান শুনে কিছু মানুষের মন আজো উদাস হয় বলে? তাঁর গানে ইসলামের যে আধ্যাত্মবাদের অতুলনীয় সব নমুনা আছে তার জন্য? দুর ওসব বাজে কথা। লালন কেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতীক হতে যাবেন, বাংলাদেশের প্রতীক তো হবেন ঐ সব ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতকেরা যারা আজ থেকে ৩৭ বছর আগে থেকে দেশের বিরুদেবধ কাজ শুরু করেছিল এবং এখনো তা চালিয়ে যাচ্ছে সগৌরবে। অন্তত ঐ মাদ্রাসার ছাত্ররা য়ে লালনের থেকে ঐ রাজাকারদেরকে নিজেদের গর্ব বলে মানে এ বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কাজেই কেন এত মানববন্ধন আর মিটিং মিছিল ? যেতে দিন না সবাই দেশকে ঐ মাদ্রাসার ছাত্রদের পথে। তাহলে হয়তো দেশকে স্বাধীন করবার আরো একটা সুযোগ পাবো আমরা অদূর ভবিষ্যতে।

একটি মাঝারী গল্প : দু:স্বপ্ন
২৯ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:১৬

... রক্তমাখা মুখে ভয়ংকরভাবে সে হেসে উঠল। সেই সাথে অন্যরাও অপ্রকৃতিস্থদের মতো সমস্বরে হাসতে লাগল হা হা করে ... আবেদ সাহেবের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল ... এর মাঝে তিনি শুনতে পেলেন তারা সবাই বলছে "মর, মর, তুই মর আবেদ ... তোর ধ্বংস হোক ... তোর ফাঁসি হোক ..."
আবেদ সাহেব ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলেন। তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। টেবিলে রাখা পিরিচে ঢাকা এক গ্লাস পানি এক নিশ্বাসে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললেন। আবারো সেই একই দুঃস্বপ্ন। এতোবার এই একই দুঃস্বপ্ন দেখার পর যদিও এটা অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা তবুও কেন জানি প্রতিবারই এই দুঃস্বপ্নটা দেখবার সময় আবেদ সাহেবের জান গলার কাছে চলে আসে। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সকাল পাঁচটা বাজে। তড়িঘড়ি করে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন। আজ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। অনেক কাজ, অনেক ব্যস্ততা। ২৬শে মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে তাঁর মতো একজন প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা এবং মন্ত্রীর যে শ্বাস ফেলবার অবকাশ থাকে না তা বলাই বাহুল্য।
ডাইনিং রুমে আসতেই তাঁর ছেলে স্বাধীন তাকে জড়িয়ে ধরল।
"বাবা, একাত্তরের দিনগুলি বইটা পড়েছি, দারুন বই।" সে বলল।
"দারুন তো হবেই।" আবেদ সাহেব বললেন "মুক্তিযুদ্ধের এরকম সুন্দর এবং ভয়ংকর বর্ণনা খুব কমই আছে। তুমি আরো বই পড় আরো জানতে পারবে। এখন বাবার কাজ আছে সোনা ... আমাকে যেতে হবে। তবে রাতে তোমার সাথে কথা হবে।"
স্বাধীন তাঁকে ছেড়ে দিল, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় সে যে কতটা গর্বিত তা যদি একবার তার বাবা জানতো!
তাঁর স্ত্রী তাঁকে দরজা থেকে বিদায় জানালেন, যুদ্ধের পরে বিয়ে হলেও মুক্তিযোদ্ধা স্বামী নিয়ে তিনিও গর্বিত।
আবেদ সাহেব অনেকগুলো অনুষ্ঠানে হাজিরা দিলেন। বিশেষ করে দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অনুষ্ঠানে তাঁর মর্মস্পর্শী বক্তব্যে সবার চোখে পানি চলে এল। আরেক জায়গায় তরুণদের এক সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে এমন ভয়ংকর বক্তৃতা দিলেন যে উপস্থিত তরুণদের রক্ত গরম হয়ে উঠল।
দিনের শেষে টেলিভিশনেএকটি সাক্ষাৎকার। সারাটাদিন ভালভাবেই গেছে, তিনি মনে মনে ভাবলেন। শেষ এই ঝামেলাটা ভালয় ভালয় কাটলে হয়, তিনি ক্লান্ত মনে ভাবলেন।
সাক্ষাৎকারটা ভালভাবেই কাটল। তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তার বর্ণনা দিলেন, আর তার শেষ অপারেশনটা, যেটায় তাঁর সহযোদ্ধারা সবাই মারা গিয়েছিল তার কথা বললেন। সবশেষে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করলেন," আমরা জানতাম সাংবাদিক আনিস আহমেদ যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন করার সাহায্যের জন্য আপনার কাছে গিয়েছিলেন ..."
প্রশ্ন শেষ করবার আগেই আবেদ সাহেব উত্তর দিলেন,"ওহ, সে তো অনেকদূর এগিয়েছিল। আমি তাকে অনেক সাহায্যও করেছিলাম। সে যে এখনো নিখোঁজ আছে এটা নিসন্দেহে তৎকালীন রাজাকারদের কাজ যারা চায় না সত্যটা প্রকাশিত হোক .... "
ঘরে ফিরে ক্লান্ত আবেদ সাহেব বিছানায় মাথা রাখামাত্র ঘুমে তলিয়ে গেলেন এবং প্রায় সাথে সাথেই তাঁর অতি পরিচিত দুঃস্বপ্নটা দেখা শুরু করলেন।
বিশাল প্রান্তর ... আবেদ সাহেব সেখানে দাঁড়িয়ে। তাঁর চারদিকে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছে অনেক লোক ... কাউকেই মানুষ বলে চেনা যায় না ... কারো মাথার একটা অংশ নেই ... কারো সারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন। তাদের মধ্য থেকে ঝাঁঝরা বুকের এক বৃদ্ধ বলে উঠল,"কিগো আবেদ মিয়া, এখনো বাঁইচা আছো? আমাগো ধরাইয়া দিয়া তুমি বাঁইচা আছো এখনো?" আরেক জন বুদ্ধের পাশ থেকে বলে উঠল,"আমারে তুমি চাচা ডাকতা বাবা, তুমি কেমনে পারলা আমারে আর আমার পোলারে ঐ জানোয়ারগুলার রাইফেলের সামনে খাড়া করায় দিতে? " আরেক তরুণ বলে উঠল,"তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু ছিলি বলে তোকে বিশ্বাস করেছিলাম, দলে নিয়েছিলাম ... সেই তুই কিনা আমার পুরো বাহিনীকে তুলে দিলি ঐ জল্লাদদের হাতে? একটি গ্রামকে শেষ করে দিলি তুই ?" সাংবাদিক আনিস কাছেই ছিল, সেও যোগ দিল"মাত্র বাইশ বছর বয়স ছিল আমার। সত্যটা জানতে চাওয়াই কি আমার দোষ ছিল? আপনি আমকে আপনার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে খুন করিয়ে এমন ভাবে আমার লাশকে টুকরো করলেন যে আমার মা বাবা আর কোন দিনই আমার চেহারা দেখতে পারবে না?"
আবেদ সাহেব ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে গেলেন। ওরা বৃত্তটাকে ছোট করে ফেলছে।
মাথায় বুলেটের ফুটো নিয়ে আনিস বলল,"ভন্ড মুক্তিযোদ্ধা শেষে আপনি আর কতদিন আপনার পরিবার, সমাজ আর জাতিকে ধোঁকা দেবেন? আজ আমার মুখ বন্ধ করিয়েছেন ... কিন্তু কেউ না কেউ একদিন আপনার মুখোশ খুলবেই ... লোকে জানবে আপনি একজন রাজাকার!"
"না! কেউ জানতে পারবে না ! " আবেদ সাহেব পাগলের মতো চেঁচালেন"সবাই জানে আমি মুক্তিযোদ্ধা ... আমি-আমি কাউকে জানতে দেব না ... সবাইকে আমি সরিয়ে দেব ... শেষ করে ফেলব ..."
"ওরা জানবে ... একদিন সবাই জানবে ..." আনিস বলল আর
... রক্তমাখা মুখে ভয়ংকরভাবে সে হেসে উঠল। সেই সাথে অন্যরাও অপ্রকৃতিস্থদের মতো সমস্বরে হাসতে লাগল হা হা করে ... আবেদ সাহেবের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল ... এর মাঝে তিনি শুনতে পেলেন তারা সবাই বলছে "মর, মর, তুই মর আবেদ ... তোর ধ্বংস হোক ... তোর ফাঁসি হোক ..."
আবেদ সাহেব ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলেন। তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আবারো একই দুঃস্বপ্ন। আটত্রিশ বছর ধরে ২৬শে মার্চ একই স্বপ্ন দেখছেন তিনি। না জানে আরো কতবার দেখতে হবে!


লেখক : অপরিচিত_আবির
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ সকাল ৭:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×