পৃথিবী কোনদিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । আজকে অনেক সময় নিয়ে একটা নিউজ করলাম। করার সময় অনেক সাইট ঘাঁটতে হয়েছে। এবং আশ্চর্য্যের সাথে লক্ষ্য করলাম, প্রায় কোন মার্কিন সাইটেই খবরটা সেভাবে দেয়নি!
যদিও বারবার বলা হয় যে ইন্টারনেটের কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক নেই, তারপরও আমেরিকা কিভাবে যে নিয়ন্ত্রকের জায়গাটা দখল করে রেখেছে, আমরা টেরও পাইনা। নিউজে যে সব তথ্য দেয়া যায় না ... কিন্তু বিশ্বের শত কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যাবতীয় ইনফর্মেশন বিনামূল্যে সংরক্ষণ করে যেভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে গুগল, ফেসবুক, সেটাও অস্বীকার করা যায় না!
দুবাইতে হতে যাচ্ছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন কনফারেন্স ২০১২। এবারের কনফারেন্সের মূল বিষয়- ইন্টারনেটকে শেকল পরানো হবে কিনা!
আইটিইউর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশও ভোট দেবে কনফারেন্সে। কিন্তু অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না, আমাদের আসলে কাদের সমর্থন করা উচিত? একদিকে আমেরিকার হাত থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টারনেটের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা, আরেকদিকে ইন্টারনেট কুক্ষিগত হওয়ার ভয়।
আবার এটাও ঠিক, নিউজে যে ইটনোর প্রস্তাবের কথা বলেছি, সেটা ঠিকঠাক হলে গুগল, ফেসবুকের একচেটিয়া ব্যবসা কমবে। ব্যবহারকারী হিসেবে আমরা যেমন তাদের টাকা দেব, তেমনি তারাও আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার জন্য আমাদের টাকা দেবে। কিন্তু এর সাথে আবার আছে ইন্টারনেটকে সব দেশের সরকারের আওতায় আনার প্রস্তাব। সাহারা আপার আন্ডারে যদি আসে ইন্টারনেট... বুঝেনই তো অবস্থা!
কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন পোস্টের একটা লেখায় পড়েছিলাম, বল্গাহীনভাবে ইন্টারনেট যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, সেভাবে এটা একসময় এটাকে 'ইন্টারনেট বম্ব' বলা হবে, এটার প্রভাব হবে অ্যাটম বোমার চেয়ে শক্তিশালী। পার্থক্য শুধু এই যে ইন্টারনেট বম্ব আমাদের মনকে সাইলেন্ট কিল করবে। ইন্টারনেট নিয়ে বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই কথাটা খুবই সত্যি মনে হয়। একবেলা খাওয়া না পেলে পাকস্থলী যেমন মোচড় দেয়, আমাদেরও মনও মনে হয় দুই-চারদিন ইন্টারনেট না পেলে হুহু করে কান্নাকাটি করতে থাকে। বিশ্বে এতো এতো প্রযুক্তি এসেছে এ পর্যন্ত, কিন্তু এমন ভয়াবহ অ্যাডিকশান কোনটাতেই আর আসেনি।
সাইকোলজিস্টরা কিন্তু বলছেন, ইন্টারনেটকে ঘিরে এতো অপরাধ, ব্যাধির মূল কারণ এর স্বাধীনতা। গরুর মতো নিরীহ প্রাণীও ছাড়া পেলে ছুটে পগারপার হয়ে যাবে, আর ইন্টারনেটের মতো চিতাবাঘকে ছাড়া রেখে দিলে যে বনের নিরীহ প্রাণী একটাও থাকবে না, সেটাও নিশ্চিত।
কিন্তু বিপরীতটা চিন্তা করলে সেটাই ঠিক মনে হয়! ইন্টারনেটের জন্যই মিশরে মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, আমরা সাধারণ মানুষরা অবারিত তথ্যের নাগাল পাচ্ছি ইন্টারনেটের স্বাধীনতার কারণেই। অন্য সবখানে যেখানে মুখ বন্ধ, সেখানেও ইন্টারনেটে এসে প্রকাশ করতে পারছি নিজের সবচেয়ে বিরোধী মত।
আমার মনে হয় ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধতা আনার সিদ্ধান্তটা শুধু যে গুরুত্বপূর্ণ তা না, ইন্টারনেটের এখনকার ধারণাকেই পুরো বদলে দিতে সক্ষম। এবং আমার মনে হয় বিটিআরসির বাংলাদেশের ভোট দেয়ার আগে অবশ্যই সাধারণ নাগরিকদের মতামত নেয়া উচিত।
আপনাদের কি মনে হয়? ইন্টারনেটকে শেকল পরিয়ে বসিয়ে রাখা ভালো, নাকি এখনকার মতোই দুদ্দাড় করে সামনে দিকে এগোতে দেয়া ভালো?
প্রাণবন্ত একটা আলোচনা আশা করছি!
আর পোস্ট পুরো না বুঝলে নিউজটা একবার পড়ে নেবেন।