somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেইম রিভিউঃ অ্যালান ওয়েক

০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অ্যালান ওয়েক একজন তুমুল জনপ্রিয় রহস্য-রোমাঞ্চ লেখক। কিন্তু প্রায় দু বছর ধরে সে রাইটার্স ব্লক নামক মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত, যা তার লেখনীকে প্রচুর বাধাগ্রস্থ করছে। অবশেষে সে এর হাত থেকে মুক্তির আশায় স্ত্রী অ্যালিসের সাথে চলে যায় ওয়াশিংটনের ‘ব্রাইট ফলস’ নামের একটি ছোট্ট গ্রামে। গ্রামের পাশেই কলড্রন লেক, যার উপর অবস্থিত একটি দ্বীপের কেবিনে বাস করা শুরু করে তারা। স্ত্রীর সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে ঘর থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলে অ্যালান শুনতে পায় অ্যালিসের চিৎকার। দৌড়ে ফিরে আসে অ্যালান। কিন্তু ততোক্ষণে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। ‘কিছু একটা’ অ্যালিস কে টেনে নিয়ে গিয়েছে লেকের পানিতে। স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্যে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অ্যালান, কিন্তু মুহূর্তে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। প্রায় এক সপ্তাহ পর জ্ঞান ফিরে অ্যালানের। সে বুঝতে পারে, তাদের ঘিরে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটছে। সে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ায় অ্যালিসের খোঁজে। প্রচন্ড মানসিক চাপ ও শোকে পাগলপ্রায় হয়ে যায় অ্যালান, একই সাথে জানতে পারে লেকের পানির নিচে বন্দি ‘ডার্ক প্রেজেন্স’ নামক অস্তিত্ত্বের কথা, যা মানুষদের ‘ঞধশবহ’-এ পরিণত করতে পারে। শুরু হয় অ্যালানের সাথে ‘ডার্ক প্রেজেন্স’-এর যুদ্ধ। অস্ত্র হাতে তুলে নেয় নিরীহ লেখক।



না, কোন হলিউডের হরর মুভির কাহিনী নয়। এই নাটকীয় কাহিনী সমৃদ্ধ গেইমটির নাম অ্যালান ওয়েক। মাইক্রোসফট গেইম স্টুডিওজ ও রেমেডি এন্টারটেইনমেন্ট-এর তৈরি মনস্তাত্ত্বিক অ্যাকশন-থ্রিলার গেইম। মূল গেইমটি ২০১০ সালে এক্সবক্সে প্রকাশিত হলেও এর পিসি ভার্সনটি মুক্তি পেয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারী মার্চে। দুর্দান্ত একটি থ্রিলার গেইম হিসেবে এটি টাইম ম্যাগাজিনের ২০১০ সালের সেরা দশ গেইমের একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো।

বুদ্ধি ও দক্ষতা গেইমটিতে আপনার মূল হাতিয়ার। অ্যালিসকে খোঁজার পথে আপনার পথে আসবে হাজারো বিপদ। যখন তখন হানা দিতে পারে প্রধান শত্রু ‘ঞধশবহ’ রা। তাদের একেকজনের রয়েছে একেক আকার, একেক গতি। আবার কেউ কেউ অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে এক স্থান থেকে অপর স্থানে। হাতুড়ি, কুড়াল ইত্যাদি ভয়াবহ অস্ত্র থাকে তাদের হাতে। তবে সমস্যা হচ্ছে, তাদের উপর আলো না পড়া পর্যন্ত তাদের খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য। অর্থাৎ আরও অনেক হরর গেইমের মতো এতেও আপনাকে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে আলো ও আগ্নেয়াস্ত্রের সমন্বয়ে। আলোর সঠিক ব্যবহার এতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তীব্র মাত্রার আলো ছুঁড়ে দ্রুত ধ্বংস করে দিতে পারেন তাদের, কিন্তু সেক্ষেত্রে টর্চ কিংবা ফ্ল্যাশলাইটের ব্যাটারীও কমে যাবে দ্রুত। ব্যাটারী শেষ হয়ে গেলে হয়ে যাবে মহাবিপদ; নতুন ব্যাটারী খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত একেবারেই নিরুপায় হয়ে পড়বেন ‘Taken’ দের সামনে।



আলো ও অন্ধকারের ব্যবধান ভালোভাবে খেয়াল করে তারপর অ্যালানকে আক্রমণ করতে হবে। কারণ ‘Taken’ রা সবসময় অন্ধকার ঘিরে থাকে আর এ অন্ধকারের পুরুত্ব নির্ভর করে বিভিন্ন ‘Taken’ এর উপর। বিভিন্ন ‘Taken’ এর জন্যে বিভিন্ন ধরনের আলো প্রয়োজন। আলো নিক্ষেপ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা রেখেছেন ডেভেলপাররা। যেমন- অস্ত্রের সাথে যুক্ত আলো, বড় বড় সার্চলাইট দিয়ে খুব সহজে ধ্বংস করতে পারবেন অনেক শত্রুকে। আরও রয়েছে রাস্তার স্ট্রিটলাইট, গাড়ির হেডলাইট। স্ট্রিটলাইটের নিচে দাঁড়ালে শত্রুরা আর আপনার কাছে ঘেঁষতে পারবে না। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে তুমুল বেগে গাড়ি ছুটিয়ে শত্রুদের ছিন্নভিন্ন করে ফেলাও দারুণ অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। তবে আলোর এতো কারসাজি সত্ত্বেও গেইমটিতে শত্রুর সাথে সাথে আলো নিয়ন্ত্রণ করা কিন্তু মোটেই সহজ নয়।

গেইমের কাহিনীর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অ্যালান জানে না যে সে তার নিজেরই একটি রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। নির্জন আলো-আঁধারির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার খেয়াল হয় না যে এটি তারই লেখা সদ্য সমাপ্ত উপন্যাস ‘Departure’ এর কাহিনী। কিন্তু আপনি এর প্রমাণ পাবেন গেইমের নানা জায়গায় ছড়ানো উপন্যাসের পৃষ্ঠাগুলো থেকে।



আলো-নির্ভর গেইমপ্লে ও চমৎকার কাহিনীকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে যে গ্রাফিক্স ও সাউন্ড প্রয়োজন ছিলো, তা সফলভাবে দিতে সক্ষম হয়েছেন নির্মাতারা। তাই গেইমটিতে তেমন কোন খুঁত নেই বললেই চলে।

গেইমটির পিসি ভার্সন ইতোমধ্যে ২০ লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের এক্সবক্স ভার্সনটি বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১৪ লক্ষ কপি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেইম ম্যাগাজিন একে গড়ে রেটিং দিয়েছে ৮.৮/১০।





গেইমটি খেলতে নূন্যতম যা লাগবেঃ

- ইন্টেল কোর ২ ডুয়ো ২ গিগাহার্জ/এএমডি অ্যাথলন এক্স২ ২.৮ গিগাহার্জ প্রসেসর
- ২ গিগাবাইট র‌্যাম
- এএমডি রেডন ৩৬৫০/এনভিডিয়া জিফোর্স ৮৮০০জিটি ৫১২ মেগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড
- ৮ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস।

পূর্বে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৩
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×