somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অয়োময় অবান্তর
উঠে বসেnআমি আমার পর্দাগুলোর আড়াল থেকে ধরলাম nঅলক্ষ্য প্রজাপতিটাকেnযেন জ্যোৎস্না লোক দিয়ে গড়া অথবা এক বিন্দু শিশিরnআমার আঙুলের বন্দিত্ব থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যnছটফটে প্রজাপতিটা আমাকে দিয়ে গেল সুগন্ধের মুক্তিপণ

স্মরণে হুমায়ূন আহমেদ

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদকে বলা যায় খাঁটি বাংলাদেশী
লেখক। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'শঙ্খনীল কারাগার'
প্রকাশিত স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল। বাংলাদেশে
তাকে প্রথম লেখক বলা অন্যায়, তবে নতুন
দেশের প্রধান লেখক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত
দিয়েছিলেন প্রথম লেখাতেই। হয়তো ব্যক্তিগত
কষ্ট এড়াতে উপন্যাসে সম্পূর্ণ অবহেলা
করেছেন মুক্তিযুদ্ধকে (বাবা ফয়জুর রহমান শহীদ
হন পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে; নানা নিহত
মুক্তিযোদ্ধার রোষানলে)। তবু মধ্যবিত্তের
একেবারে গোপন গভীর যন্ত্রণাকে নিখুঁত তুলির
আঁচড়ে তুলে এনেছেন প্রকাশ্য দিবালোকে।
তার উপন্যাসে চরিত্ররা প্রতিদিনকার বঞ্চনা, দারিদ্র,
বিষন্নতায় ডুবে থাকা জীবনে একে অপরের
নির্ভরতায় একটু সুখ খোঁজে। সেই যে সহজ
ছন্দে জীবনের জটিলতাকে কাগজে ফুটিয়ে
তোলা - শেষ লেখা পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ সরে
আসেননি সেই মন্ত্র থেকে।

প্রথম লেখায়
পাঠক সাহিত্য সমালোচক মুগ্ধ হয়েছেন
একযোগে — 'বাংলা একাডেমী' সাহিত্য পুরস্কার
পেয়েছেন। বছর গড়াতে গড়াতে দেখি সাহিত্য
সমালোচকদের তিরস্কার জুটেছে প্রশংসার
চেয়ে বেশি তবে পাঠক বিশ্বাসী বন্ধুর মতো
সঙ্গ দিয়ে চলেছে একের পর এক সৃষ্টিতে।
জীবনের শেষ ক'বছরে আবার যেন ফিরে
পেতে যাচ্ছিলেন প্রথম দিককার জৌলুষ। 'মধ্যাহ্ন',
'বাদশাহ নামদার' আত্মজীবনীমূলক 'বলপয়েন্ট',
'কাঠ পেন্সিল' 'ফাউন্টেন পেন' — আকৃষ্ট
করেছে কঠোর সমালোচককেও।
নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১২ এর শুরুর
দিকে প্রকাশিতব্য 'দেয়াল' উপন্যাসের কয়েকটি
অধ্যায় 'দৈনিক প্রথম আলো'তে প্রকাশ হলে তা
নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। সর্বোচ্চ
আদালত নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের
সঙ্গে সঙ্গতি রেখে লেখা পরিবর্তন করার। হুমায়ূন
আহমেদের অবর্তমানে এই উপন্যাসটির পরিণাম কি
হয়, তা দেখবার বিষয় বটে। শুরু থেকে শেষ অবধি
জাদুকর এই গল্প বলিয়ের পাঠকের মুগ্ধতার অভাব
কখনো বোধ হয়নি। সমালোচকরা
ভালোবেসেছেন কিংবা তাচ্ছিল্যভাব
দেখিয়েছেন; মৃত্যুতে সবাই আবার এক কাতারে,
একমত হয়ে — 'হুমায়ূন আহমেদ বাংলার অমর,
অপরাজেয় কথাশিল্পী।'
শুধু কি গল্প, উপন্যাস? টিভি নাটককে পারিবারিক
বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত
করেছিলেন তিনি। তবে তার মূল্যায়ন শুধু দর্শকের
মনোরঞ্জনের উপর নির্ভর করবে না — এর
প্রভাব অনেক বিস্তৃত। হুমায়ূন আহমেদের নিজের
ভাষাতেই বলি — "আগে কোলকাতার ভাষা (নদীয়া-
শান্তিপুরের ভাষা বলাই ঠিক হবে) ছিল কি টিভি-নাটকের
ভাষা -- যাইনি, খাই নি, জুতো, নৌকো। আমি চেষ্টা
করলাম ঢাকার ভাষা বলে আলাদা কিছু দাঁড় করাতে। আমার
ধারণা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি।
আজকের নাটকের ভাষা 'নদীয়া-শান্তিপুর' মুক্ত।" —
কি অসম্ভব আত্মবিশ্বাস! লেখকের এই অভাবিত
স্পর্ধা আজকের বাংলাদেশী নাটককে করেছে
স্বতন্ত্র্। অগ্রজ - তরুণ সকল নাট্যকার অনুসরণ
করে চলেছেন হুমায়ূন আহমেদ এর দেখানো
আলোকবর্তিকা।

উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটকের পর হুমায়ূন আহমেদ
মনোযোগ দেন চলচ্চিত্র তৈরিতে। 'আগুনের
পরশমণি' তাঁর প্রথম ছবি। মধ্যবিত্ত দর্শককে হলে
ফিরিয়ে নেবার কৃতিত্ব দেয়া যায় তাঁকে। কারিগরী
দক্ষতায় তাঁর তৈরি করা সিনেমা খুব একটা পরিপক্ক না
হলেও, গল্প, অভিনয় আর সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায়
দর্শক, সমালোচক সকলকে আপ্লুত করেছে।
'আগুনের পরশমণি', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'চন্দ্রকথা',
শ্যামল ছায়া', 'আমার আছে জল' — সবকটি সিনেমা
পেয়েছে অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার।
অসাধারণ গল্প বলিয়ে এই মানুষটি গানও লিখেছেন।
বেশ কিছু কবিতাও রয়েছে তার সৃষ্টির ঝুলিতে।
সাহিত্যের সমঝদার ছিলেন তিনি। ঘুরে ফিরে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ সহ বিশ্বের
খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে পাঠক-
দর্শককে বারবার পরিচিত করিয়ে দিতেন তিনি।
বাংলাদেশের তরুণ পাঠক নতুন করে 'মুখর বাদল দিন'
জ্যোৎস্না রাতের বনে বেড়ানোর প্রেমে
পড়েছে তারই অনুপ্রেরণায়। গ্রামে গঞ্জের
অখ্যাত প্রতিভাধর বাউল তার কাছে পেয়েছে
প্রশ্রয় — জাতীয় জীবনে অপরিহার্য হয়ে
উঠেছে তারই হাত ধরে।

ছোটগল্পের অসাধারণ কারিগর ছিলেন হুমায়ূন
আহমেদ। বাংলার অন্যতম প্রধান লেখক সৈয়দ শামসুল
হক বলেছেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ
ছোটগল্পকারদের সঙ্গে নাম উচ্চারিত হবে হুমায়ূন
আহমেদের। আর বাংলাভাষায় বৈজ্ঞানিক কল্পতার
সূচনাকারী তিনিই — 'তোমাদের জন্য ভালবাসা'
উপন্যাসের মাধ্যমে।

জনপ্রিয়তায় তিনি হার মানিয়েছেন যেকোনো
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা শিল্পী সাহিত্যিককে। তবুও
এই জনপ্রিয়তার জন্যই বার বার সমালোচিত হতে
হয়েছে তাকে। সাহিত্যে স্বল্পশিক্ষিত মানুষের
পছন্দের লেখক হওয়াটাই যেন তার অপরাধ। তাকে
বলা হয়েছে 'অপন্যাসিক', 'সস্তা চটুল উপন্যাস রচয়িতা'
সহ অনেক কিছু। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসের
সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে এ সমালোচনা বড়ই
বেমানান। সংখ্যালঘু 'এলিট' শাসকের বিরুদ্ধে চিরকাল
রুখে দাঁড়িয়েছে এ দেশের মানুষ। ১৯৫২ সালে
সাধারণ মধ্যবিত্ত মুখের ভাষার গৌরব ছিনিয়ে এনেছে
প্রাণের বিনিময়ে। ১৯৭১ সালে প্রবাদপ্রতিম নেতার
ডাকে শুরুতেই এগিয়ে এসেছে এ দেশের
সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়ে। স্বাধীন
বাংলাদেশে তাই শুধু সহজ বাংলা জানা মানুষ সহজ সুন্দর
গল্পকারকে উন্নীত করবে মহাপুরুষের
অবস্থানে — তাই তো স্বাভাবিক, হুমায়ূন আহমেদ তাই
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নয়নমণি। ধুলোমাখা
সিন্দুকের তলদেশ থেকে উদ্ধার করে
সাহিত্যের সৌন্দর্যকে তিনি করে তুলেছেন
মধ্যবিত্তের আটপৌড়ে উৎসব।
'সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই' — এই অপবাদ হুমায়ূন
আহমেদের শুরু থেকেই ছিল। মুখে বলেছেন,
'আনন্দের জন্য লিখি', 'নিজের জন্য লিখি' তবু
স্বৈরাচারের সামরিক শাসনে হাঁসফাস করে বাঁচা তরুণের
কণ্ঠে তুলে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বুলি — 'তুই
রাজাকার'। হুমায়ূন আহমেদের এক টিভি নাটকে পোষা
ময়নার মুখের এই বচন স্বাধীনতা পরবর্তী
প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে
দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। নতুন নতুন
উপায়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা যখন সমাজে
পুনর্বাসিত হচ্ছে সেই বন্ধুর সময়ে রাজনৈতিক
শক্তিকে এই এক স্লোগানে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি
প্রদর্শন করেন। আরও এমনি অসংখ্য উদাহরণ
রয়েছে তার রচনায়। অমর সৃষ্টি 'হিমু'কে দাঁড়
করেছিলেন সরকারী সন্ত্রাসী 'র‍্য্যাব' এর
মুখোমুখি; গাছ লাগানো কর্মসূচীতে অংশ নেন
আগ্রহী হয়ে; একমাত্র লেখক যিনি বারে বারে
'তসলিমা নাসরিন' কে দেশে ফিরতে দেবার আহ্বান
জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
যিনি
বাংলাদেশের জ্যোৎস্নায়, বৃষ্টিতে, রোদ্দুরে
আর পূর্ণিমায় মিলে মিশে একাকার, সেই হুমায়ূন
আহমেদ শুধু সাহিত্যিক হয়েই নেই — তিনি মিশে
গেছেন আমাদের অস্তিত্বে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×