ঐতিহ্যগহত ক্যামেরার মত দেখতে এই ক্যামেরা গুলোর বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। ধাপ্পাবাজ (Tricky) ডিজাইনের ক্যামেরাগুলো খুব দ্রুত বাজার ছেড়ে যায় কারন ফটোগ্রাফাররা চায় ছবি তুলতে এবং ব্যবহার করতে কঠিন এমন প্রযুক্তির পাঁকে পড়তে চায় না।
ডিজিটাল ক্যামেরার অনেক কিছুই ফিল্ম ক্যামেরার মত অভিন্ন, কিছু সামান্য পরিবর্তন (Tweaked) করা, আর কিছু বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট আপনাকে এমন কিছু ভাল ছবি তুলতে সাহায্য করাবে যা ফিল্ম ক্যামেরা দিয়ে কখনো করতে পারেন নি।
যেকোন ক্যামেরা হতে ভাল ফল পেতে, মৌলিক ফটোগ্রাফী এখনো বিবেচনা করে না যে ছবিটি কিভাবে তোলা হয়েছে। ট্রাইপড খুব গুরুত্বপূর্ণ যদি ধীর শাটার স্পীডে ছবি তোলার প্রয়োজন হয় ও বড় টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করা হয়। স্টপস একশন (Stop Action) পেতে দ্রুত শাটার স্পীড দরকার, এবং F-stops ডেপ্থ অব ফিল্ড তৈরী করে। একটি দৃশ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ফোকাসের মাঝখানে থাকা দরকার, এবং নাটকীয় আলো নাটকীয় ছবি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
ডিজিটাল ক্যামেরার ‘ডিজিটাল’ বৈশিষ্টটি মানুষকে এমনকি অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারদেরকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যে নতুন প্রযুক্তি আয়ত্তে আনা কঠিন হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন: নতুন কেউ একজন একটি ক্যামেরা হাতে নিল আর এর সবকিছু জেনে ফেলল, আজ পর্যন্ত এমন হয় নি। নিষ্ঠাবান (Serious) ফটোগ্রাফারদেরও নিশ্চিতভাবে F-stops ও শাটার স্পীড সহাজাত নয়।
ক্যামেরার প্রকার:
নানান ধরনের ডিজিটাল ক্যামেরা রয়েছে, পয়েন্ট এন্ড শুট (ধর তক্তা, মারো পেরেক) ক্যামেরার থেকে শুরু করে এডভান্সড ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা পর্যন্ত। কোন সঠিক বেঠিক ধরন বলে কিছু নেই, অবশ্য যেকোন একটি আপনার ও আপনার ফটোগ্রাফীর জন্য আদর্শ হতে পারে।
সঠিক লেন্স ও সেন্সর থাকলে সাধারন পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরাও চমৎকার মানের ছবি দিতে পারে। কারন এগুলোর ফোকাস ও এক্সপোজার পুরোপুরি অটোমেটিক, এগুলো শুধু সাবজেক্টের সামনে রাখতে হবে এবং ক্লিক, ব্যাস। ছবিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এই ক্যামেরাগুলোর সীমিত, অবশ্য খুব সস্তা ক্যামেরায়ও হোয়াইট ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকে। কিছু ক্যামেরা একেবারেই কম্প্যাক্ট, খুব সহজেই শার্টের পকেটে পুরে যেতে পারে, হাতে রাখার জন্য এগুলো আদর্শ, যাতে আপনি একটি অসাধারন সুযোগও না হারান।
এডভান্সড পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরাগুলো একইরকম যে এগুলোর বেশিরভাগই অটোমেটিক নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে, অবশ্য ক্যামেরাকে নমনীয় করার জন্য কিছু ফিচার যোগ করার ঝোক রয়েছে। যেমন এক্সপোজার সমন্বয়, অধিক হোয়াইট ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণ, সীমিত ম্যানুয়াল সেটিং এবং আরও আরও। অপেক্ষাকৃত সস্তা এই ক্যামেরাগুলো ডিজিটাল ক্যামেরার ভাল পরিচয় হতে পারে এবং নিষ্ঠাবান ফটোগ্রাফারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা আপনাকে দেবে পরিবর্তনযোগ্য লেন্স, একটি ৩৫মিমি এসএলআর ক্যামেরার মত সব নিয়ন্ত্রণ সুবিধা ও ভাল ফোকাল লেংথ দিতে সক্ষম এমন লেন্স। এই ক্যামেরাগুলো অন্যান্য ক্যামেরার চেয়ে আকারে বড় হয়। এগুলোতে থাকে পরিপূর্ণ ও ব্যাপক ফটোগ্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, সেরা ইমেজ সেন্সর, প্রসেসিং প্রযুক্তি, উচ্চমানের নয়েজ নিয়ন্ত্রণ এবং আরও অনেক। এর পেছন দিকে যে LCD প্যানেল থাকে তা শুধু তোলা ছবি দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেহেতু মিরর ডিজাইনের কারনে সেন্সর ‘সরাসরি’ দৃশ্য যোগান দিতে পারে না।
শুরু থেকেই শুট করুন:
ডিজিটাল ক্যামেরা হতে সেরা ছবি পাওয়ার উপায় হল শুরু হতেই সঠিক ব্যবাহার করা। এখনো একটি ধারনা আছে যে, যেহেতু ‘সাহায্য’ পাওয়ার জন্য আপনার যখন কম্পিউটার আছেই তাহলে ফটোগ্রাফীতে সর্বপ্রচেষ্টা নিয়োগ করার দরকার নেই। এই ধারণাটি কিছু সময়ে পরাবাস্তব রুপ নিয়েছে। বছর দুই আগে একটি বড় ম্যাগাজিনে বলা হয়েছিল যে এমন সফটওয়ার আছে যা শৌখিন ছবিকেও ভাল পেশাদার ছবির প্রতিদ্বন্দ্বিরুপে অটোমেটিক রুপান্তর করে দিতে পারে। এমন সফটওয়ারের কখনোই কোন অস্তিত্ব ছিল না, কখনো থাকবেও না, কারন ভাল ফটোগ্রাফী সবসময়ই একটি শিল্প এবং দক্ষতা নির্ভর কাজ, এর হাতিয়ারগুলোকে বোঝার ও ব্যবহারের ব্যাপার এবং অনুভব ও এমন ছবি তোলার ক্ষমতা যা দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ ও কমুনিকেট করতে পারে।
শুধু মনে রাখবেন এখনো ডিজিটাল ফটোগ্রাফী হল ফটোগ্রাফি।
শুরুর কথা:
সবাই যে সাধারন ভুলটি করে তা হল ক্যামেরা কাপিয়ে ফেলা। শাটার টেপার সময় আপনি যখন অসাবধানতাবশত ক্যামেরা নাড়ান, ছবি ঘোলা (ব্লারি) হয়ে যাওয়া, শার্পনেস কমে যাওয়ার ঝুকি সৃষ্টি হয়। খুব খেয়াল রাখুন!
এক্সপোজার:
বেশির ভাগ পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরায় সাধারন এক্সপোজারকে অগ্রাহ্য করার সুবিধা থাকে, আপনার ছবিকে শুধু এক্সপোজার বাড়ানো কমানোর সুযোগ দেয়। যদি ছবির বিষয়বস্তুতে আঁধারের প্রাধান্য থাকে তবে তা মানিয়ে নেয়ার জন্য এক্সপোজার বাড়িয়ে নিন। যদি ছবির বিষয়বস্তুতে আলো বেশি থাকে তবে এক্সপোজার কমাতে হবে। এবার একটি ছবি তুলে দেখুন, ক্যামেরার স্কৃনে ছবি দেখুন, হিস্টোগ্রাম চেক করুন, এবং এক্সপোজার বাড়িয়ে কমিয়ে ঠিক করে নিন। চার পাঁচটি ছবি তুলতে ভয় পাবেন না। আপনি তো পরে বাজে ছবিগুলোকে মুছতে পারবেনই।
কম্পোজিশন:
কম্পোজিশনের অতি সাধারন একটি নিয়ম যেমন রুল অব থার্ডস (Rule of Thirds) বা টিক-ট্যাক-টো (Tic-tac-toe) বিধি। মনে মনে ভিউ ফাইন্ডার বা এলসিডি স্কৃনটিকে নয়টি সমান বর্গে ভাগ করে নিন, টিক-ট্যাক-টো গৃডের মত (অনুবাদকের সংযুক্তি: বর্তমানে পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরাগুলোতে গৃড ভিউয়ের অপশন থাকে, তাই কল্পনা করার প্রয়োজন হয় না)। ছবিকে এমন ভাবে কম্পোজ করুন যেন ছবির বিষয়বস্তু মাঝখানের চারটি চমৎকার চারটি পয়েন্টের একটিতে থাকে (অনুবাদকের সংযুক্তি: এই গৃডগুলোর কারনে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি চারটি রেখা ছবির মাঝখানে চারটি ছেদবিন্দু সৃষ্টি করবে)। এই পদ্ধতি আপনাকে নান্দনিক পোট্রেইট তুলতে সাহায্য করবে।
* আগামী পর্বে সমাপ্য।
* ছবিটি তুলেছেন রবার্ট ক্লার্ক।
* মূল ইংরেজী নিবন্ধটি রব শেফার্ড ও বব মার্টিনের Photography Field Guide: Digital Media and Ultimate Field Guide to Photography বই হতে নেয়া, প্রকাশিত হয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওয়েবসাইটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৯ সকাল ৯:৩৮