২৫শে ফেব্রুয়ারী,২০০৯(পিলখানা,বিডিআর সদর দফ্তর):
ভেতরে কি হচ্ছে কেউ জানে না। সবাই উত্তেজিত, রাইফেলস স্কয়ারের সামনে এক পুলিশ গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছে। গুলির ভয়ে কেউ কাছে আসছে না, হঠাৎ করে কোথা থেকে এক ছেলে দৌড়ে এসে তাকে সরিয়ে নিলো। আহত পুলিশকে যখন সে নিরাপদে নিয়ে আসলো তখনি হঠাৎ করে একটা গুলি সরাসরি তার মাথায় এসে লাগে। ঠিক তিন বছর আগের কথা, বিডিআর গেটে।
এইতো আর কিছু ঘন্টা পরেই তিন বছর আগের এই একই দিনের পিলখানার ছোট্ট একটি চিত্র এটি....
এরপর? একে একে লাশ বেরিয়ে আসাতে থাকে ম্যানহোল,ড্রেন দিয়ে, বাতাসে লাশের গন্ধ। অগণিত লাশের সারি,এক নির্মম হত্যাযজ্ঞের করুণ ইতিহাস। সাতান্ন জন সেনা অফিসারের জীবনাবসান,তিয়াত্তরটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ। কিন্তু গলায় কাঁটার মত যে প্রশ্নটি বিঁধে আছে তা হল এই ঘটনার বিচারের অগ্রগতি কতদূর?
এবার একটু ভিতরে তাকাই:
এই বিডিআর বিদ্রোহ একটি দীর্ঘমেয়াদীপরিকল্পনার অংশ। সেনাবাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তাদের হত্যাযজ্ঞে লাভবান অন্য রাষ্ট্রও তাদের দোসররা। বিভিন্ন দাবির আড়ালে বিডিআর এর চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর কমান্ড থেকে বিডিআরকে বিচ্ছিন্ন করার নীলনক্শা বাসত্মবায়নের প্রচেষ্টাচালাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এই দাবি বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাহুমকির মধ্যে পড়বে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা-বিডিআর এর যৌথ ভূমিকা অত্যনত্মগুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অথবা বাংলাদেশ রাইফেল্সএর যে কোন দুর্বলতা অথবা এই দুই প্রতিরক্ষা বাহিনীর পারস্পরিক সম্পর্কের দুর্বলতার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী রাষ্ট্র কোনটি???
বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র নয়। অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হবার মতো অনেক উপাদান আমদের রয়েছে...
আমাদের রয়েছে:
১) ১৫ কোটি মানুষ, যার অধিকাংশ মানুষ একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী।নেতৃত্ব দুর্বল ও বিভক্ত হলেও বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে এই জাতি ঐক্যবদ্ধ।
২) ভৌগোলিক পরিবেশের (বিশেষত: নদীমাতৃক সবুজ সমতল ভূমি) কারণে কোন বহিঃশক্তি কখনো এই ভূমিকে বেশীদিন নিজের অধীনে রাখতে পারেনি। রাশিয়া আক্রমণ করে যেমন হিটলার চরম মাশুল দিয়েছিল, তেমনি এদেশের মাটি দখলে রাখতে যে কোন বিদেশী শক্তির চরম খেসারত দিতে হবে।
৩) বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এই দেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ ভারত ও চীনের মাঝে স্বাধীন বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক। আমরা দেখেছি যে এই কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সেনা ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
৪) অনেকেই ভারতের পেটের ভিতরে বাংলাদেশের অবস্থানকে বাংলাদেশের দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেন। কারো ঘরের অভ্যন্তরে অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তির উৎস।
৫) বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী শৃংখলাবদ্ধ, দক্ষ ও মেধাবী। আর সশস্ত্রবাহিনীর সাথে এদেশের জনগণের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি দেশের জন্য অন্যতম পুঁজি।
আমাদের করণীয় এবং সবার প্রতি আহ্বান
জানাচ্ছি-
১. দেশবাসীকে সর্বাবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
২. সেনাবাহিনী-বিডিআরকে বিভক্ত ও দুর্বল করে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।
৩. সেনাবাহিনী, বিডিআরসহ সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
৪ . সমাজের সচেতন অংশকে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের মানুষের সামনে রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্রের ধারণা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।
৬. নিষ্ক্রিয়তা ও রহস্যজনক ভূমিকার জন্য সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।
৭. এই তথাকথিত বিদ্রোহের সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখীন করার ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।
৮. দেশী-বিদেশী তদন্তের নামে সরকার যেন এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে
সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
আসুন আমারা সকলে মিলে এর বিচার দাবি করি ,যা চাওয়া ও পাওয়া আমাদের মৌলিক অধিকার। প্রতিবাদ এ মুখর হওে উঠুক আমদের সেনা অফিসার দের হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়ার দাবি...