somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত পা ভাঙ্গা অবস্থায় হসপিটালে আবিষ্কার করে। জ্ঞান ফিরলেই ডাক্তার স্বামীকে জানায়, তার স্ত্রীর শুধু হাঁটুতে আঘাত পেয়েছে। আর তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। স্বামী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, হাঁটুর আঘাতে স্মৃতিশক্তি কিভাবে লোপ পায়? ডাক্তার তখন স্বামীকে বলল, সেকি আপনি জানেন না, মেয়েদের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে?"

যাই হোক আসল কথায় আসি। বর্তমান সময়ের কিছু কিছু ব্যাপার গলায় আটকে থাকা কফের মত হয়ে আছে। গিলতে ঘিন্না করছে আবার থু মেরে একদলা কফ রাস্তায় ফেলব, সেটাও বিবেগে বাজছে।

ঘটনা ১. প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ৫০টাকা জরিমানা করার আইন করা হয়েছে। খুব ভাল কথা। কিন্তু যে বস্তু প্রকাশ্যে ভোগ করা নিষিদ্ধ সে পন্য থেকে কেন রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কর আদায় করে? সরকার কি ধূমপানের কোন জোন বা রুম সব জায়গায় তৈরী করে দিয়েছে? যেখানে আইন মানার ব্যবস্থা নাই, সেখানে আইন অমান্য তো হবেই। এটাতো আইন ভাঙ্গার পরোক্ষ উষ্কানী।

ঘটনা ২. সেন্টমার্টিন ভ্রমনে অনেক নিয়মকানুন জাহির করা হয়েছে। কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভ্রমন ফি বাড়ানো হয়েছে। এখন আর মধ্যবিত্তরা যেতে পারে না। এর মাধ্যমে কি ধনী-গরীবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য স্পষ্ট করা হলো না? আমার কথা হল, আমার দেশ, আমি নাগরিক, আমি পাহাড়ে ঘুরতে যাব, নদী যাব, সাগরে যাব। এটা আমার অধিকার। তার জন্যে রাষ্ট্রের উচিত ব্যবস্থা করা। আমি রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেই, আমি মধ্যবিত্ত বলে কেন পক্ষপাত দুষ্ট আইন বা নিয়মের বলি হব। রাষ্ট্র সেন্টমার্টিন পরিষ্কার রাখতে, ভূমি ক্ষয় রোধে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে দিক। কেন সেই দ্বীপ ভ্রমন নিষিদ্ধ করবে? চাহিদা থাকলে যোগান বাড়াতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। একটা কৃত্রিম দ্বীপ তৈরী করুক। আমার পায়ের জুত ক্ষয় হবে বলে আমি সেটা পরব না? নাকি হাটাই ছেড়ে দেব?

হাঁটুতে বুদ্ধি থাকলে যা হয় আর কি ! গেল সপ্তাহে ভোলা হাতিয়া রুটে লঞ্চ চালু করা হয়েছে হাতিয়া ও কাছাকাছি দ্বীপে যাওয়ার জন্যে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বণ্য প্রানী দর্শনের জন্যে। আমার জানা মতে সেন্টমার্টিন হল ৮৭বর্গকিমি এলাকা আর হাতিয়া হল ১৫০৭ বর্গকিমি. । আপনারাই বলুন, কোনটার আয়তন বড়? আপনি হলে সমূদ্র এলাকার কোন দ্বীপটি রক্ষা করতেন? আমি হলে হাতিয়া কে রক্ষা করতাম।

এটা ঠিক যে সরকারের একটা দূরভিস্বন্ধি আছে, আজ হোক কাল হোক সেন্টমার্টিনকে শক্তিশালী ২য় কোন রাস্ট্রের কাছে তুলে দেবে। যেহেতু আমজনতা এখন ঐ দ্বীপে প্রচুর ভ্রমন করে। দিনে দিনে তাদের ঐ ভ্রমন স্পট থেকে বিমুখ করতে করতে এক সময় বন্ধ করে দেবে। তখন সুদূর প্রসারী সেই লক্ষ্য, মানে ২য় বা ৩য় কোন এক বা একাধিক রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে সহজ হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনটা করে। বাংলাদেশও কেনই বা পিছিয়ে থাকবে?

ঘটনা ৩. পলিথিন নিষিদ্ধ করা হল দেশের মাটিকে বাঁচাতে। কেন রে ভাই? ওটার বিকল্প কি? কাগজের ব্যাগ? চটের ব্যাগ? সোনালি ব্যাগ? বাংলাদেশে একটা ১২ ইঞ্চি মাপের পলিথিন ব্যাগ বানাতে খরচ হয় ৩৫পয়সা, যার বিপরীতে কাগজের ব্যাগে ৬টাকা, চটের ব্যাগে ২০টাকা, সোনালি ব্যাগে খরচ হয় ৪টাকা। যেখানে দোকানদারকে তার ক্রেতাকে ব্যাগটা ফ্রি দিতে হয়। তাহলে সে কেন সস্তা ব্যাগে যাবে না। তার উপর দেখতে হবে, কোন ব্যাগটার যোগান আছে? আবার আপনি মাছ কিনেছেন, বরফ দেয়া। আপনি তো কাগজের ব্যাগ বা চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন না। অথবা মাংস কিনেছেন, সেক্ষেত্রেও পন্যের উপযোগিতা হল পলিথিন ব্যাগ। অন্যদিকে সোনালি বায়োব্যাগ ৩-৭ ঘন্টা পানির স্পর্শে থাকলে ক্ষয় শুরু হয়। পরবর্তী ৭ দিনে মাটিতে মিশে যাওয়া শুরু করে। যোগান নেই বললেই চলে।

আসলে বিকল্প ব্যবস্থা না করে আইন প্রনোয়ন করলে সেটা আইন ভাঙ্গতে আরও উৎসাহিত করে। কতজন কে জরিমানা করবেন? কতবার জরিমানা করবেন? সম্ভব না। যেখানে চাহিদা প্রচুর, সেখানে টেকসই বিকল্প ব্যবস্থা না করে চলমান পন্যের যোগান বন্ধ করলে ঐ আইনের ব্যবহার হিতে বিপরীত হয়। হচ্ছেও তাই।

একটা কাগজের ব্যাগ বানাতে প্রচুর বন ধ্বংস করে, প্রচুর পানি নষ্ট করতে হয়। একটা চটের ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার করতে প্রচুর পানির অপচয় হয়। উৎপাদনের সময় বিদ্যুৎ খরচের কথা বাদ দিলাম। যদি সে ব্যাগটা ১০০বার ব্যবহার করা যায়, তাও ১০০টা আলাদা পলিথিনের চেয়ে সাশ্রয়ী নয়। যদি মাটি চাপা থাকে একটা পলিথিন ২-৮ বছরের মধ্যে মিশে যায়, উন্মক্ত অবস্থায় থাকলে রোদে বৃষ্টিতে ৩ বছরে গুড়াগুড়া হয়ে মাটিতে মিশে যায়। একটা কাগজের ব্যাগ বা চটের ব্যাগ মাটিতে মিশতেও ২ বছরের মত সময় লাগে।

টোকাইরা এখন পলিথিন সংগ্রহ করে জমা দিচ্ছে। তৈরী হচ্ছে সুতলি বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় তরল। সরকারের যদি মাটি ও পরিবেশ নিয়ে এতই দরদ থাকে তাহলে পলিথিন ব্যাগ বন্ধ না করে, রাজশাহীর মত রিসাইকেলিং প্লান্ট বসাক সব জেলায়। শহরের সমস্ত আবর্জনা ডাম্পিং স্টেশনে গিয়ে পলিথিন মুক্ত হবে। হাঁটুতে বুদ্ধি নিয়ে ফটর ফটর করলেই হয় না।


ঘটনা ৪. ব্রাজিলে জলবায়ু নিয়ে একটা কন্ফারেন্স (COP30 climate summit) হবে নভেম্বর ২০২৫ সালে । মজার কথা হল, ৪লেনের যে রোড তৈরী করা হচ্ছে অতিথিদের আসার জন্যে তাতে কমপক্ষে ১০,০০০ একর গহীন বন ধ্বংস হবে। অ্যামাজনের আদলে সুন্দরবনেও গত ১ মাসে ৪ বার আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আগস্ট, '২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০০ হরিন মারা হয়েছে। এদিকে বন কর্মীদের ছুটি বাতিল করে সরকারের নজর রয়েছে বোঝানো হচ্ছে। "ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি। সব পুরোহিত কে পুজোর ঘরে থাকতে বল।"

সুন্দরবন উজার হচ্ছে দেখার নেই। কিন্তু মৌয়ালিদের উপর খড়গ আর জেলেদের উপর আইনের নির্যাতন ঠিকই আছে। পাশেই যে স্বীতাকুন্ডে শত শত জাহাজ ভাঙ্গা হচ্ছে তার খেয়াল নেই। দুনিয়ার কোথাও ক্যামিক্যাল ভর্তি যে হাজামাজা জাহাজগুলো ডাম্পিং এ অনুমোদন পায় না, এমনকি পাকিস্থানেও না, তা স্বস্তায় চলে আসে বাংলাদেশে। আহ কি চমৎকার ! " আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি..." ।

পুরষ্কার পাবার জন্যে কেউ কেউ ২০ বছর আগে লোক দেখানো কেস ঠুকে দিয়ে কেল্লা ফতে। হাসিনা বুবু যেমন ২০১৭তে রহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নোবেল পেতে চেয়েছিল। নচিকেতার সেই গানটা মনে পড়ল: বেলা বোস তুমি কি শুনছ , চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি...হ্যালো...। আফসোস সেই বেলা বোসের এখন শোনার টাইম নাই। বেলা এখন নরম গদিতে বসে পরিবেশ নামের নৌকার পালে হাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে।


আসলে ব্যাপারটা হল, ওনাদের হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগাতে পাচ্ছেন না ... এখন কাপড় সেলাই বাদ, তাই আগে মলম খুঁজে ফিরছেন।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৪৬
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসিনা তার প্রেতাত্মা রেখে গেছে সর্বত্র!

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৩৯

হাসিনা তার প্রেতাত্মা রেখে গেছে সর্বত্র

কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন- আপনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ অস্বীকার করেন কিনা?
উত্তরঃ করি।
সব গোত্রে, সব দেশে সব সমাজে বাড়াবাড়ি বা টুকটাক বিশৃঙ্খলা তৈরি করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি বর্ষণমুখর দিনের কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৪২

প্রাক-কথনঃ আমার এই লেখাটির প্রসঙ্গ এর ঠিক আগের পোস্টটাতে কথা প্রসঙ্গে চলে এসেছিল। পোস্টের মন্তব্যে কয়েকজন পাঠক আমার এই লেখাটিও পড়তে চেয়েছেন। যেহেতু লেখাটি এর আগে ব্লগে প্রকাশ করা হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৩




‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি থাকবে নাকি পরিবর্তন হবে, সেই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষেরই বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যশোর জেলা

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৬



হাতে কোনো কাজ নেই। অলস সময় পার করছি।
কি করবো- সেটাই ভাবছি। কোনো কুলকিনারা না পেয়ে 'নেট' থেকে যশোর সম্পর্কে পড়লাম। কি কি জানলাম, সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েলের সাথে কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে।গাজার মতই তারা মুসলিম রাষ্ট্র সমূহকে দুমড়ে মুছড়ে দিবে।তারপর তাদের অস্ত্র শেষ হবে। তারপর মুসলিমরা একটাও ইহুদী রাখবে না। তাদের বন্ধুরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×