তুমি তোমার স্বভাবসিদ্ধ রাগে পাগল হয়ে উঠতে। কিন্তু পর মুহুর্তেই আবার আমার কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে পুরাই বেড়ালছানা। অনেকেই হয়ত ভাববে এই কান্নাকাটি পেনপেনানি ঢং মেয়েদের অস্ত্র। ছুড়ি থেকে বুড়ি হলেও এই অস্ত্রেই তারা ঘায়েল করে দুনিয়ার সব বাঘ ভালুক। কিন্তু যত দুষ্টুর শিরোমনিই হইনা আমি কেনো তখন সেটা কিন্তু ঢং ছিলো না। সেটা সত্যিকারের কান্নাই বের হয়ে যেত আমার। কারণ আমি তো তোমার কোনো রাগ বা মন খারাপই সহ্য করতে পারতাম না। তুমিও না, নইলে কি আর ওমন রাগের বাঘ থেকে মিউ মিউ বিড়াল হয়ে পড়ো? আর তাই দেখে আমি সব ভয় ভীতি বিসর্জন দিয়ে তোমার জন্য একটু সময় ম্যানেজ করে ফেলতাম ঠিকই তোমাকে কল দেবার। তাও কি ফোনটা নিয়ে আজকালকার মত কোথাও লুকানোর জো আছে? টিএনটি ফোন। তাও আবার এক বাড়ি লোকজন দেখা যায় এমন স্থানে ঠিক মধ্যের বিশাল বড় ড্রইং রুমে। সেই সময়টা থেকেই মনে হয় আমি অভিনয় শিখতে শুরু করেছিলাম। বাড়ির লোকজনের নজর ফাঁকি দিতে শিখে গিয়েছিলাম।
আচ্ছা তোমার কি মনে আছে? একদিন আমি তোমাকে গান শুনিয়েছিলাম?
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি তোমার চরণে দিয়েছি।
লহ লহ করুন করে।
যখন যাবো চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে
তোমার মালা গাঁথার আঙ্গুলগুলি মধুর কিরণকরে
যেন আমায় স্মরণ করে।
এই লুকানো ভালোবাসায় যে তোমার কাছে যাওয়া প্রায় অসম্ভবের পায়ে মাথা কোটা তা আমি আমার চরম বদরাগী কড়া নজরদারীর মায়ের বাড়িতে বাস করে ভালোই জানতাম। কিন্তু তুমি আজও মানতে পারোনা। বিশ্বাসই করো না আমি আসলেই নিরুপায় ছিলাম যার কারণ ছিলো মায়ের কথার অবাধ্য হবার সাহস আমার তখনও গড়ে ওঠেনি। আজ খুব দুঃখ হয় কেনো পারিনি? আবার এটাও ভাবি এই মনে হয় ভালো হলো। নইলে কি সত্যিই আমি কখনও জানতাম অভাবনীয় ভালোবাসা বলেও যে কিছু আছে দুনিয়ায় যা যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সমাজ সংসার সংস্কার ভেদ করে দুটি হৃদয়ের সংযোগে থেকে যায় বছরের পর বছর সকলের অগোচরে দৃঢ় কঠিন বন্ধনে।
সত্যিই এই সব কথা যে কোনো মানুষের কাছে মনে হয় আলগা ঢং বা অনৈতিক অথবা সমাজ সংস্কারকে হেয় করা। আচ্ছা সমাজ ও সংস্কার মানুষকে আটকিয়ে রাখতে পারে। ঠিক অতটাই কড়াভাবে যতটা আমার মাও আটকে রেখেছিলো একদিন আমাকে তার কড়া নজরদারীর র্যাপুঞ্জেল টাওয়ারে। কিন্তু মনকে কি কেউ কখনও আটকাতে পেরেছে? মনের বেড়ি কেউ কখনও কোনোদিন দিতে পারেনি এই জগতে। হয়ত পরজগতেও পারা সম্ভব নয়। এই কথা বলতে সেদিন তোমাকে গান শুনালাম- হাত বান্ধিবি পা বান্ধিবি মন বান্ধিবি কেমনে? শুনে তো তুমি হাসতে হাসতে শেষ। বললে এই খেত্তু মারকা গান কোথায় পেলে নীলমনি? লোকে বলে আমি ঢঙ্গী তুমি আমার চাইতেও বড় ঢঙ্গী। এই গান খেত্তু হবে কেনো? শাহাানা বাজপেয়ী গেয়েছে। তার মত স্মার্ট মানুষ যখন গেয়েছে সে তো ফেলে দেবার নয় তাই না?
এই যে আজকাল আমাদের প্রায়ই ঝগড়া হয়ে যায় পরিমনি নিয়ে, মিথিলাকে নিয়ে । তুমি বলো আমি নাকি নারীবাদী হয়ে পড়ছি দিন দিন আর আমি বলি তুমি দেখছি আস্তু নারীবিদ্বেষী। তখন তুমিই আবার হেসে ফেলো আমি জানি এই হাসির কারণ কি। মনে মনে ভাবছো তাই যদি হই নারীবিদ্বেষী এত বছরেও এত কিছুর পরেও এক ফোটা বিদ্বেষ তোমার উপর থাকলোনা কেনো? আমি অবশ্য এর উত্তর জানি। খুব ভালো করেই জানি এই পৃথিবীর দ্বেষ বিদ্বেষ রাগ দুঃখ ক্ষোভ সকল কিছুর উর্ধে রেখেছো তুমি আমাকে। তোমার চোখে আমি এক অপার্থীব রাজকন্যা। ঠিক তুমি যেমন আমার কাছে। লুকিয়ে থাকো আমার বুকের গভীরের গোপন কুঠুরে। মাঝে মাঝেই মুখ তুলে বলে যাও। ভালোবাসি নীলমনি।
কত পাগলামীই না জানো তুমি আজও। তোমার ছবির গায়ে লিখে দেওয়া ভালোবাসি নীলমনি বা ঐ যে ফোন এপসে বানানো আমাদের দুজনের ছবি দিয়ে বানানো গানের ফানি ভিডিও । এসব দেখে হাসতে হাসতে মরি আমরা নিজেরাই। কিন্তু জানো তোমাকে ধরতে পারিনা, ছুতে পারিনা বটে কিন্তু কত রকম উসিলাতেই না আমরা দুজন দুজনকে স্পর্শ করে ফেলি। আসলে এই পরাবস্তব জগতে বসেও যে ভালোবাসার সমুদ্রে ভেসে গেলাম আমরা। কেউ কি পায় তার হদিস চিরজীবন এক ছাদের নীচে বাস করেও?
লোকে শুনলে বলবে ঢং। বুড়াকালের ভীমরতি। তুমি বলো আচ্ছা তোমার এত লোকেদের শোনানো কেনো? খবরদার এই কাহিনী কোনোদিন কোথাও প্রকাশ করবানা এটা আমাদের নিজেদের জন্য লেখা। আমরা দুজনই শুধু এর পাত্র পাত্রী পাঠক পাঠিকা। তবুও আমি প্রকাশ করছি জেনে তোমার রাগ লাগে। আর একটাও পড়বেনা বলেছো। কিন্তু আমি জানি তুমি ঠিকই পড়বে আমার মনের সব কথাই তোমাকে জানতেই হবে।
কিন্তু তুমি এত হিংসুটে কেনো? তোমার লেখা এই ২০ বছরের ডায়েরী তুমি পড়তেও দেবেনা কাউকেই? কেনো বলোতো? তুমি রেগে যাও। বলো এই তোমাদের রাইটারদের বাজে স্বভাব। লেখার জন্য আইডিয়া খুঁজো সারাদিন। ইচ্ছা করে প্রেমে পড়ো, প্রেমে ফেলো যাতে রিয়েল ফিলিংসটা পাও আর তাই থেকে লিখতে পারো তাইনা? সেই কথা শুনে আমি সেই ২০ বছর আগের বালিকা হয়ে যাই। কেঁদে ফেলি। আচ্ছা তুমিই বলো তাই যদি হবে তো ২০ বছর আগে কি আমি রাইটার ছিলাম? আর আমি কি এতই বড় রাইটার হলাম যে আমাকে এত কষ্ট করতে হবে? আর আমার লেখা বেঁচে খেতে হবে নাকি?
তুমি বলো আমি নাকি আজীবনই রাইটার ছিলাম সে তখনই তুমি বুঝেছিলে এত ঢং ঢাং কিউটের ডিব্বা দেখে। হা হা এই কথা শুনেই আমার সকল রাগ দুঃখ আবার গলে জল হয়ে যায়। লজ্জাও লাগে। আমি কিউটের ডিব্বা ছিলাম? শয়তানটা বলে কি ? তারপর বলি আচ্ছা কিউটের ডিব্বা কি ? তুমি জানো না এর উত্তর কিন্তু আমি এটা খুঁজে মানে গবেষনা করে বের করেছি। কিউট নামে একটা ক্রিমের ডিব্বা পাওয়া যেত তাই থেকেই মনে হয় মানুষ কিউটেরও কিউট বুঝাতে কিউটের ডিব্বা বানিয়েছে। হা হা
যাক কি লিখতে যে কি লিখলাম এতক্ষন বসে বসে। বলছিলাম এক গাধা আর গাধীর ভালোবাসার গল্প। গল্পটা লেখার সময় যদিও ফানি ফানি কিছু গাধামীর ঘটনা দিয়েই লিখবো ভেবেছিলাম লিখতে গিয়ে ভুলে গেলাম সব। যাইহোক আমরা যখন ছোট গাধা আর গাধী ছিলাম সে সময় তোমার একের পর এক রোখ চেপে গেলো। আমার বার্থডে, ভ্যালেনটাইন ডে, ঈদ ডে সব ডেতেই তোমার লাল নীল ম্যাজেন্টা জামা পরাতেই হবে একেক রঙে। শুধু তাই না সাথে ম্যাচিং দুল মালা চুড়ি। প্লাজা সেন্ট্রাল ছেড়ে তখন তুমি শপার্স ওয়ার্ল্ডে ছুটেছো। সেদিন বলছিলে জানো শপার্স ওয়ার্লডের মেয়েরা আর নাভানা টাওয়ারের ঐ চকলেট শপের ছেলেটা আমাকে এতই চেনা চিনেছিলো। আসলেই মনে হয় ভাবতো আসছে তারছেড়াটা।
যাকে দেখেইনি চোখের সামনে, যাকে জানেই না ভালো করে কে সে তাকে শুধু একটু গলা শুনে আর লিখে লিখে এমন হাবুডুবু প্রেম? তুমি বলো ওরা তোমাকে অনেক লাইক করতো। আসলেই কি দেবো কি দেবো স্যার স্যার? আমি এখন বড় গাধী হলেও বুঝতে পারি কেনো তারা তাকে এমন লাইক করতো। কারণ এত গুলো দিন পরে এসে বুঝেছি গলা কাটতে পারলেই তারা সবচেয়ে লাইক করে সেই সব কাস্টোমারদেরকে। আর তোমার তো তখন গলা নেই মাথা নেই শরীরই নেই আছে শুধুই মন তাও আবার আমার কাছেই পড়ে। গলা কাটলেই কি আর যায় আসে?
তোমার গলা কেটে কেটে যেসব তোমার হাতে ধরিয়ে দিত তারা সেসবই আমি লুকিয়ে রেখেছি সযতনে আমার লুকানো যাদুঘরে। প্রায়ই লুকানো বাক্সের ডালা খুলে বের করে আনি সেই অমূল্য সব অর্ঘ্য। এই পৃথিবীর কোনো হীরা মানিক্যের সাথেই তুলনা হয় না তার। তোমাকে জড়িয়ে ধরিনি বটে। কিন্তু তোমার দেওয়া সেই উপহারগুলি ছুঁয়ে রাখে আমাকে। আমার কান গলা চুল ছুঁয়ে সারা শরীরে, ছুঁয়ে থাকে আজীবন সকলের অগোচরের মনটাকেই ছুঁয়ে থাকে। এতটাই ঢেকে থাকে যে সেই পুরু স্পর্শের উপর আর কারো স্পর্শই ছুঁতে পারে না।
মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। এখন থামি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৬