ঘটনাটা আজকে ভোরের। গোসল করতে করতে ভাবছিলাম কোথায় খাওয়া যায়। কারণ এত ভোরে কোথাও খাবারের দোকান খোলা থাকার কথা না। সিদ্ধান্ত নিলাম সাড়ে পাঁচটা বেজে গেলে বাইরে খেতে বের হব, নাহয় ঘরে মজুদ বিস্কুট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। রুমে এসে দেখলাম পৌনে ছয়টা বাজে। খেতে বের হলাম। আমার ঘর থেকে কিছুটা দূরে নার্স কোয়ার্টার মোড়ে এক মুসলিম পরিবারের স্বামী-স্ত্রী মিলে একটা দোকান চালায়। তারা ভোরে ভোরে খাবার বানাতে শুরু করে। সোয়া ছয়টা নাগাদ যখন তার দোকানে গেলাম তখনও তারা খাবার বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অগত্যা আধ ঘণ্টা বসে অপেক্ষা করতে হবে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অত্যন্ত আন্তরিক লোক। ভদ্রলোককে ফরিদ ভাই আর তার স্ত্রীকে বুবু বলে সম্বোধন করি। তাদের দোকানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটা দোকানের মালিক (মানে জমিদার; তারা দোকানগুলো ভাড়া দিয়েছে) বুবুর ভাইয়েরা আর দোকানের পিছনে বুবুর পৈতৃক ঘরবাড়ি। আমি বসে বসে পেপার পড়ছিলাম আর খাবারের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। এরমধ্যে বুবুর ছোটভাই এসে বুবুকে বলছে, বুবু বলছি গরুর গোশ এক কিলোতে হয়ে যাবে না? তখন বুবু উত্তর দিল, আরে নাহ। এত লোকের এক কিলো গোশে হয়? দেড় কিলো লাগবে। ফরিদ ভাইও সাথে সাথে বলল, হ্যাঁ!! এত লোককে নেমন্তন্ন করেছিস আর এক কিলো গোশ কিনছিস? বুবুর ভাই বলল, সবার জন্য দু'পিস করে ধরলে তো এক কিলোতে হয়ে যাওয়ার কথা। এবার ফরিদ ভাই বললেন, তুই এককাজ কর; তুই পাঁচস কিনে নে। তোর এক কিলোও কিনতে হবে না। কথোপকথনের এই পর্যায়ে বুবুর ভাই প্রস্থান করল। আমি আগ্রহ চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ফরিদ ভাই, কিসের নিমন্ত্রণ করছে লোকদের? ফরিদ ভাই উত্তর দিল, সালাবাবুর ছোট মেয়েটার জন্মদিন। সেজন্য নাকি বার্থডে পার্টি করবে। রাতে খাওয়া দাওয়া হবে, তাই লোকজনদের নেমন্তন্ন করছে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তাই?? ক'জনকে নিমন্ত্রণ করেছে? ফরিদ ভাই, এই, গোটা তিরিশ জনের মত লোককে নেমন্তন্ন করেছে।
তখন বসে বসে চা খাচ্ছিলাম, কেন জানি হাসি চেপে রাখতে পারছিলাম না। এরমধ্যে বুবুর ছোটভাই ফিরে এসে বুবুকে বলছে, বুবু, তোমার ভাবী তো বলছে এক কিলো আড়াইস (এককেজি আড়াইশ' গ্রাম) গোশে হয়ে যাবে। ভাবছি অতটুকুই কিনব। বুবুও উত্তর দিল, তাই কিন। এবার বুবুর ভাই ফরিদ ভাইকে বলছে, ফরিদ ভাই, তুমি তাহলে তোমার ও পাড়া থেকে বিকেলে রসগোল্লা কিনে এন। ফরিদ ভাই বলল, ক'টা আনব? সে উত্তর দিল, সবাই খেতে পারে মত করে নিয়ে এসো। একস টাকার আনলে তো মনে হয় সবার হয়ে যাবে।
নাস্তা বানানো শেষ হতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে আর আমার চা খাওয়াও শেষ। কোথাও গিয়ে একটু হাসা দরকার, তাই বুবুকে নাস্তা বানাতে বলে আমি একটু হাঁটতে গেলাম। পরে অবশ্য আফসোস হচ্ছিল কেন যে উঠে আসলাম!! আরও কিছুক্ষণ বসলে হয়ত বার্থডে পার্টির আয়োজনে আরও কি কি হচ্ছে তা জানতে পারতাম। হাঁটতে হাঁটতে একটা হিসাব কষছিলাম। এক কিলো আড়াইস গোশ মানে ১২৫০ গ্রাম গোশ। প্রতিজনে দুপিস করে হিসেব করলে মোট ৬০ পিস। তাহলে এক পিসের ওজন হবে ২০ গ্রামের কিছুটা বেশি; প্রায় ২১ গ্রাম। ভাই কারো কাছে যদি গ্রাম স্কেল থাকে তাহলে ২০-২১ গ্রাম ওজনের একটা গরুর গোশের আয়তন মোটামুটি কতবড় হয় আমাকে একটু জানাতে পারবেন?
১. ০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩০ ০