একটা সময় কবি বা লেখক হতে চেয়েছিলাম। হাতে কলম আর কাগজ নিয়ে বসে থেকেছি মুহুর্তের পর মুহুর্ত। খোলা ছাদের উপর শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি রাতের পর রাত। কত আমাবশ্যার ঘন কালো রাত কিংবা পূর্ণিমার ঝলমলে জ্যোৎস্না আমার উপর দিয়ে চলে গেলো- টেরই পেলামনা!! নির্জন দুপুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি ঘন্টার পর ঘন্টা। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাক ভেজা হয়েছি আবার হাঁটতে হাঁটতেই রোদে শুখিয়েছি। অনেক পথ ঘুরে ক্লান্ত ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে এসেছি পুরোনো ঠিকানায়, তবুও কোন গল্প বা কবিতা বের হয়নি আমার ভিতর থেকে।
এখন আমি বুঝতে পারি আমার জ্ঞাণের সীমাবদ্ধতার কথা, শুধু কাগজ আর কলম নিয়ে বসে থাকলে, কিংবা পথে পথে ঘুরে বেড়ালেই কবি বা লেখক হওয়া যায়না। তার জন্য জানতে হয় অনেক…… অনেক কিছু। আমার ব্লগে যে দুই একটা লেখা আছে তা আমার সেই ব্যার্থ সময়ের ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি। দেখেছি সজীব, নুর হোসেন, ইসমাইল, রফিক, হালিম, শাফায়েত, আল-আমিনদের জীবনের সাথে লড়াই করে বেচেঁ থাকতে। যেই হাতে বই-খাতা আর কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা আজ সেই ওরা ধরেছে রিক্সার হ্যান্ডেল (কেউ কেউ আবার হলের ডাইনিং কিংবা ক্যান্টিনে আমাদের দেশ গড়ার কারিগরদের খাবার পরিবেসন করছে)। ওরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্যাডেল মারে কারন রিক্সার সিটে বসে যে ওদের ছোটো ছোটো পা প্যাডেল ছুঁতে পারেনা। আমরা হাসতে হাসতেই ওদের উপর চেপে বসেছি, ওরা আমাদের নিয়ে ছুটেছে আর পিছন দিয়ে ঠেলা দিয়েছে ওদের সংসারের অভাব, কিছু অনাহারী মুখ কিংবা অসুস্থ মা। ওরা যখন মাত্র ৫ টাকার জন্য ছুটেছে বিশ্ববিদ্যালয় গেইট থেকে ক্যাম্পাসের ভিতরে কিংবা ভিতর থেকে গেইটে তখন আমরা টং-এ বসে ৫ টাকার কাগজে তামাক মুড়িয়ে আগুনে পুড়িয়েছি আর হাসি ঠাট্টা করেছি। ব্যাপারগুলো আমাকে অনেক ভাবিয়েছে, কাঁদিয়েছে কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি।
এখন আমি একটি চাকরি খুজছি, যেখানে আমাকে কোনো দূর্ণীতি করতে হবেনা, ঘুষ খেতে হবেনা কিংবা হাতের তালু ঘষে কেউকে তোষামোদ করতে হবেনা। হোকনা সেটা অনেক ছোটো কাজ। হতে পারে কোনো লেখা লেখির কাজ। বিনিময়ে যা পাব তা থেকে কিছুটা আমার সামান্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য আর বাকিটা ঐ সকল শিশু কিশোরদের জন্য যাতে করে ওরা এই তিন চাকার জীবন থেকে বেরিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারে……
ছবিঃ beautifullifeblog.com
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪৩