
১. সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে আপনার পোস্টের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিন। দেশে বা বিদেশে চলমান চাঞ্চল্যকর ঘটনাবলী নিয়ে লিখা পোস্ট স্টিকি হবার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। ঐসব ঘটনাবলী নিয়ে আপনার সম্যক ধারণা থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। উইকিপিডিয়া, গুগল, বিবিসি, দৈনিক সংবাদপত্র থাকতে কষ্ট করার কোন মানেই হয় না।

২. পোস্টের শিরোনামে ও মূল বক্তব্যে ভারী ভারী কথা লিখতে হবে। পোস্টের লেখনীর ধরন হতে হবে গুরুগম্ভীর। পোস্ট এমনভাবে লিখবেন যেন পোস্টের ৯০% কথা পাঠক তো দূরে থাক আপনার নিজেরও বোধগম্য না হয়। ফলে পাঠক অর্ধেক পোস্ট পড়েই ক্লান্ত হয়ে যাবে ও স্ক্রল করে সটান নিচে চলে আসবে ও রেটিং দেবে। না পড়ে মন্তব্য/রেটিং করা পোস্টে কেউই সাধারণত মাইনাস দেয় না।
৩. মনে রাখবেন স্টিকি পোস্টে কখনো ইমোটিকন তথা ইমো ব্যবহার করা যাবে না, এতে করে পেস্টের ওজন কমে যায় (সাঁঝবাতি'র রুপকথা)
৪. খেয়াল রাখবেন পোস্টটি যেন কোনোভাবেই ফানপোস্ট গোছের না হয়। ফানপোস্ট কখনোই, আমি আবার বলছি কখনোই স্টিকি করা হয়নি, হয় না এবং ভবিষ্যতেও হবে কিনা সন্দেহ।
৫. সাহিত্য নিয়ে কথা হতে পারে পোস্টে তবে পোস্টটি নিজে কখনোই যেন সাহিত্যকর্মে পরিণত না হয়। কারন সাহিত্যধর্মী লেখাও আবার স্টিকি হতে দেখা যায় না।
৬. পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৪ই ডিসেম্বর, ১৬ই ডিসেম্বর ও যাবতীয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও অগুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে পোস্ট আগে থেকেই লিখে ড্রাফট করে রেখে দিতে পারেন। নিয়মিত ক্যালেন্ডারে চোখ রাখতে ভুলবেন না যেন - জাতীয় ভিক্ষুক দিবসই হোক আর শালা-শালী দিবসই হোক মিস যাওয়া চাই না।

৭. প্রয়োজন পড়লে একই বিষয়ে একাধিক পোস্ট লিখুন। একাধিক নিক থাকলে তার সদ্ব্যবহার করুন।
৮. "একবারে না পারিলে দেখো শতবার" - এই নীতিতে বিশ্বাস রাখুন। প্রথম দফায় পোস্ট স্টিকি হয়নি তো কি হয়েছে? বারবার রিপোস্ট করতে থাকুন যতোক্ষণ পর্যন্ত মডুরা জ্বালা আর সহ্য না করতে পেরে পোস্টটি স্টিকি করে দেয়।
৯. এই পয়েন্টটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিচিত রেসিডেন্ট ভাঁড়ের মোবাইল নম্বর থাকলে বা ফেসবুক/ম্যাসেন্ঞ্জারে এ্যাড করা থাকলে তাদের ডেকে আপনার পোস্টে "স্টিকি করা হোক" কথাটা মন্তব্য আকারে দিতে বলুন। তারা একবার "স্টিকি করা হোক" কথাটা পোস্টে লিখলে আপনি নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন - পোস্ট স্টিকি হবেই। মনে রাখবেন: One phone call, to make it all. আপনার আর আপনার স্টিকি পোস্টের মাঝে শুধু একটি ফোন কলের ব্যবধান মাত্র।

একটি স্যাম্পল পোস্ট দিলাম। শালী দিবস উপলক্ষে আপনার লিখিত স্টিকি পোস্ট হতে পারে নিম্নরূপ:
শিরোনাম: যে কথাগুলো ভেবে প্রতিমূহুর্তে শিউরে উঠি আমরা
পোস্ট: আরেকটি ৩১শে ফেব্রুয়ারী আজ........বসন্তের আরেকটি পত্রঝরা দিন আজ.........আরেকটি শালী দিবস আজ। শালা-শালী কথাটা বললেই চোখে ভেসে ওঠে শালীর কোমল হাসি, তীক্ষ্ণ চাহুনি আর শালার আ*ল চেহারাটা। কি সুন্দরই না কেটেছে সে সময়টা আমার। সকালে উঠেই বউয়ের আগে শালীর মুখখানি দেখতে পেতাম - পুরো দিনটাই যেন এক অদৃশ্য পবিত্র কোমলতায় ভরে যেতো আমার। ঐ রূপ, ঐ সৌন্দর্য্য....পৃথিবীর কোন পুরুষের সাধ্য তাকে এড়িয়ে বউকে দেখে। ঐ একটা চাহুনিতেই একটা আক্ষেপ বারবার ফিরে আসতো, আঘাত করতো এই মনকে বারবার সাগরের অবিরাম ঢেউমালা যেমন করে তীরকে আঘাত করে - কেন বউয়ের চেয়ে শালী বেশি সুন্দর হয়.....কেন ঈশ্বর কেন? কেন তুমি পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষকে এই আক্ষেপটা দিলে?

আজ স্বাধীনতার ৩৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি আমরা স্বাধীন? আমরা পুরুষরা কি পারি একটু স্বাধীনভাবে আমাদের শালীদের সাথে কথা বলতে? পারি কি তাদের একটু সঙ্গ লাভ করতে? না পারি না। পারি না কারন জীবনের প্রথমে বিবাহ নামক এক মালা আমরা বরণ করেছিলাম যার সাথে গলার কাঁটার মতো এসেছে স্ত্রী নামক এক যন্ত্রণা যে শালীকে আমাদের চৌহদ্দির মধ্যেও আসতে দেয় না। অথচ সরকার, মিডিয়া, বোদ্ধারা সবাই এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। কারো যেন এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। না! তা থাকবে কেন? তাদের যা আগ্রহ সব যেন পিলখানা, বিডিআর আর বসুন্ধরা সিটি নিয়ে। নারীদের অধিকার নিয়ে কথার ফুলঝুড়ি ছোটে তাদের মুখে অথচ পুরুষদের জন্য সামান্য প্রেম চাওয়ার সময়ও তাদের হয় না। ধিক্কার! ধিক্কার জানাই ঐসব বুদ্ধিজীবি নামের বেঁচু-বাবুদের। ধিক্কার পৃথিবীর প্রতিটি নারীকে যারা পুরুষকে পরিপূর্ণরূপে সুখী দেখতে চায় না।

কিন্তু ক্ষণিকেই চুপ হয়ে যাই আমরা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, মাথা ঘুরায় - ভয়ে আর আতঙ্কে। আজ বাড়িতে গিয়ে বউয়ের মুখে কোন কথাটা শুনবো তা ভেবে। আজ বেলনের বারি খাবো নাকি খুন্তির খোঁচা তা ভাবতেই আমরা শিউরে উঠি। আমদের রক্ত হিম হয়ে যায় যখন আমরা চিন্তা করি কি পৈশাচিক অত্যাচার নেমে আসবে আমাদের উপর। তাই আর এখন প্রতিবাদ করি না। প্রতিবাদের ভাষাও খুঁজে পাই না। শুধু অপেক্ষায় থাকি - তাকিয়ে থাকি জানালা দিয়ে পাশের বাসার বারান্দায় সখিনার মুক্ত চুলের শেষাগ্রে ঝুলে থাকা জলকণার দিকে.......আমাদের আশাটাও ঠিক ঐ জলকণার মতোই ঝুলে আছে। শেষ বিকেলের রোদে জলকণা চিকচিক করে ওঠে.......আমরা আশান্বিত হই......

পূর্বের টিউটোরিয়াল সমূহ:
১. টিউটোরিয়াল - কেমনে হইবেন পেশাদার ব্লগীয় ছাগু
২. টিউটোরিয়াল - কেমনে হইবেন পেশাদার ব্লগীয় লুল
৩. টিউটোরিয়াল - কিভাবে নিজেকে মডুদের হাত থেকে রক্ষা করবেন