ছোটবেলা থেকেই আমার বাগান পরিচর্যা খুব সখের একটা বিষয় ছিল। সত্য বলছি আমি কখনো ভাবিনি একটা সময় এসে এই সখটাই আমার পেশা হয়ে দাঁড়াবে। আগে টুকিটাকি নিজের বাসার বারান্দায় গাছ পরিচর্যা শুরু করি।পরে ধীরে ধীরে বেশ কিছু গাছ দিয়ে সাজিয়ে ছিলাম আমার বাসার বারান্দা ।
কোরোনা শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ডেঙ্গুর বেশ উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আমার সবগুলো গাছ ফেলে দিতে হয় । কারন মশা বাস স্থল হলো গাছে। টপে এবং ড্রামে পানি জমে থাকলে সেই পানিতে প্রচুর মশার বংশ বিস্তার লাভ করে,তাই এক প্রকার বিশেষ করে আমার সখের থেকে বেশি হলো পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা, তাই পরিবারের সকলের কথা ভেবে সব গাছ ফেলে দিলাম আর টপগুলো প্লাস্টিকের ছিল, তাই টপগুলো ঢুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একদম খাটের নিচে রেখে দিলাম।
করোনারি মহামারীর জন্য লকডাউন অনেক বড় একটা সময় ব্যবসা,কর্ম বিরতি সময় কোনো ভাবেই যেন পার হচ্ছিল না।ঠিক তখনই আবার গাছ পরিচর্যা বিষয়টা মাথায় চেপে ধরলো,ব্যাস আবার নার্সারি থেকে বেশ কিছু গাছ সংগ্রহ করলাম।শুরু হলো গাছের পরিচর্যা। করোনার মহামারীর জন্য ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বা লম্বা একটা সময় কর্ম বিরতি থাকায় হাতের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায় । অর্থের বেশ সংকটে পরে যাই। আমার পাশের বাসায় থাকতো একজন নার্সারির মালিক,উনি প্রায়শই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার বাগান পরিচর্যা দেখতো আর বলতো আপনি খুব ভালো পরিচর্যা জানেন, আপনার বাগান পরিচর্যা সম্পর্কে মেধা ভালো আপনি চাইলে এই মেধাটুকো কাজে লাগিয়ে আয় রোজগারের একটা রাস্তা বের করতে পারেন।
তাই নাকি ভাই ? হ্যা ভাই সত্যি বলছি আপনি পারবেন।
আচ্ছা ভাই সেটা কিভাবে ? ভেঙ্গে বলেন।
ভাই আমার প্রজেক্ট আছে বিশটির মতো, লোকজন করোনার ভয়ে সব পালিয়েছে এখন আমি একা আর পারছি না, আপনি চাইলে
আমার সাথে পার্টনার হিসেবে জয়েন্ট করতে পারেন। এতে করে অন্তত মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে হাজার বিশের মত ইনকাম থাকবে।
আর ভবিষ্যতে করোনার পর যদি দিনকাল ভালো হয় আর আপনি যদি লেগে থাকেন তখন ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার ইনকাম হবে প্রতি মাসে।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম বিষয়টা মন্দ হয়না করোনার মধ্যে বসে থেকে বাসায় সময়ো কাটে না তাই তার অফারে রাজি হয়ে গেলাম আর শুরু হলো এই বাগান পরিচর্যা কর্ম বা পেশা । মাসাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতি মাসে আমার পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ইনকাম হয়। এবং এটা একদম হালাল ইনকাম।
আমি চাইলে ইনশাআল্লাহ আরো একটু বেশি ইনকাম করতে পারি তবে এর বেশি আমার লাগে না তাই করি না।বিষয়টা শেয়ার করার কারন
আজ আমার কিছু পুরোনো দিনের বন্ধুদের সাথে হঠাৎ করে একটা প্রজেক্টে দেখা হয়ে যায়।তারা আমার বর্তমান পেশার কথা শুনে বেশ
হাসাহাসি করলো এক প্রকার আমার সাথে এমন ব্যবহার করলো যেন বন্ধু না কোনো কামলার সাথে তারা কথা বলছে। আমার আগে ছোট খাটো কম্পিউটার সার্ভিস এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল, কিন্তু করোনার মহামারীর প্রকপে সব শেষ হয়ে যায়।
এর পর অনেক দিন বেকার থাকায় বুঝতে পেরেছি পকেটে মাল না থাকলে ভাই পুরুষ আর হিজড়াদের মধ্যে মনে হয় কোনো পার্থক্য
থাকে না।
তখন থেকেই আমার একটাই ইচ্ছে জীবনে বেঁচে থাকতে হলে, পরিবার পরিজন নিয়ে সুন্দর একটা জীবন পার করার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য হালাল উপায়ে যে কোনো কাজ করতে আমি ইচ্ছুক। শুধু কাজটা হালাল এবং সৎ পথে হলেই হলো।
কাজ কখনো ছোট বড় হতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:২৭