সত্যি বলতে আলাদা রকমের সাহস লাগে একটি সার্থক উপন্যাস কে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করতে অথবা, শুধুমাত্র সেটার মূল গল্প বলতে। খালেদ হোসেইনি হচ্ছেন একজন আফগান-অ্যামেরিকান ঔপন্যাসিক। ২০০৭ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘A Thousand Splendid Suns’ প্রকাশ করেন। এই উপন্যাসটির প্লট, গল্প, সংলাপ এতটাই ভয়ংকর রকমের ভালো যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত এটির পাঠ্য অপরিহার্য হিসেবে মূল সিলেবাসে ঠাঁই পেয়েছে।
আপনার জীবনে যদি খুব খারাপ সময় যায়, যদি মনে হয় জীবন মানে ‘জাহান্নাম’ তাহলে এই বই আপনি হাতে সহসাই তুলে নিতে পারেন। কারণ, এখানে যে নিষ্ঠুর ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আপনার হৃদয়ও ব্যথিত করতে পারে।
কাহিনী শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ‘মরিয়ম’ প্রথম বারের মত ‘হারামি’ শব্দের সাথে পরিচিত হয়। এক বৃহস্পতিবারে ‘জলিল (মরিয়মের বাবা)’ ‘মরিয়ম’ এর সাথে দেখা করতে আসেন। ঠিক এই একই দিনে ‘মরিয়ম’ এর হাত থেকে একটি চাইনিজ সেট পড়ে ভেঙ্গে যায়। মরিয়মের মায়ের নাম হচ্ছে ‘নানু’।
‘নানু’ মরিয়মের হাত থেকে চাইনিজ সেট পড়ে কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় বেশ রেগে যান। এতটাই রেগে যান যে, তিনি মরিয়মকে ধমকের স্বরে বলেন, “তুই এটা কি করলি ‘হারামি’?” মাত্র পাঁচ বছর বয়সী মরিয়ম ঠিক বুঝতে পারে না যে, এই ‘হারামি’ শব্দের মানে কি?
এখানে ‘হারামি’ মানে হলো, বেজন্মা (বাস্টার্ড) । কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মরিয়ম অবশ্য ঠিকই বুঝে যায় এই ‘হারামি’ হওয়া ভালো কিছু নয়। নিজের মধ্যে একরকম হীনমন্যতাও তার কাজ করে। কারণ এমন মেয়েকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না; চায়ও না। কিন্তু ‘জলিল’ অবশ্য কখনো মরিয়মকে ‘হারামি’ বলে সম্বোধন করে না। জলিল সাধারণত দু’ভাবে মরিয়মকে সম্বোধন করতো, (এক) মেরি পেয়ারী মরিয়ম, এবং (দুই) এক ছোট খুব সুন্দর ফুল। জলিল ‘মরিয়ম’ কে কোলে নিয়ে নানান গল্প শোনাতো।
হেরাত, আফগানিস্তানের একটি ছোট্ট শহর। এই ছোট শহর ‘হেরাত’ -এ জলিল থাকে। তিনি একজন ব্যবসায়িক। বেশ টাকা পয়সাওয়ালা লোক। এই শহরে তার নিজস্ব সিনেমা হল আছে। সেখানে নানান রকমের সিনেমা চলে (বলিউড ও হলিউড সহ) এবং প্রতি শুক্রবারে তিনি তার এই পরিত্যাজ্য পরিবারে ফিরে আসেন। বাবা হিসেবে জলিল কখনো বাজেভাবে নিজের মেয়েকে সম্বোধন করতেন না। কিন্তু নানা (মরিয়মের মা) ‘হারামি’ নামে সম্বোধন করতেন।
এই জলিল সাহেবের তিন বউ এবং দশ বাচ্চাকাচ্চা রয়েছে। ‘নানু’ মানে মরিয়মের মা জলিলের ঘরে একজন হাউজকিপার ছিলেন। একসময় জলিলের সাথে প্রণয়… তারপর গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু যখন নানু গর্ভবতী হয়ে পড়েন তখন জলিল সেটা মেনে নেয় না। ফলে জলিল এদেরকে শহরের বাইরে একটি ছোট্ট কুঠরিতে রেখে যায়।
নানু (মরিয়মের মা) সবসময় মরিয়মকে বোঝায় যে, “জীবনে কখনো পুরুষদের বিশ্বাস করবি না। পুরুষ মানুষ মানেই যে কোনো সমস্যার দায়ভার কোন মহিলার ওপর দেবার চেষ্টা করে।” অন্যদিকে জলিল মরিয়মকে বলে, “তোমার মা তোমাকে মিথ্যা বলে। ওসব কথায় কান দিও না।”
মরিয়ম যখন আস্তে আস্তে বড় হয় তখন কিছুটা টের পেলেও সে জলিল (তার বাবা) কে বিশ্বাস করে। মাওলানা ফাজলুল্লাহ মরিয়মকে আরবি শেখাতো। একসময়, মাওলানা কে মরিয়ম তার পরিবার সম্পর্কে কিছু বিষয় খুলে বলে এবং স্কুলে যাবার জন্য অনুরোধ জানায়। তাই একদিন ‘মাওলানা’ নানু কে ব্যাপারটি অবগত করেন। কিন্তু নানু এতে আরো বেশি রেগে যান। তিনি বলেন, “এই ‘হারামি’র কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আগামীকাল আমি না থাকলে এর অবস্থা বুঝে নিও।” এখানে সিক্রেট একটি বিষয় হচ্ছে, নানুর ওপর এক জ্বীন ভর করে আছে। তাই তিনি এই ধরণের যা তা আচরণ করতেন। আর এই কথা কেউ জানতো না।
এরপর গল্প ১৯৭৫ সালে টার্ন নেয়। তখনও জলিল প্রতি বৃহস্পতিবারে তার এই ফেলে দেওয়া বা ছেড়ে দেওয়া পরিবারের কাছে ফিরে আসে। ফিরে আসে মরিয়মের জন্য কিছু উপহার নিয়ে। মরিয়ম তার বাবা কে খুব ভালোবাসে তাই কোনো বৃহস্পতিবার যদি জলিল না আসতো তাহলে মরিয়ম খুব দুঃখ পেত।
একদিন মরিয়ম তার বাবা জলিলকে হেরাত শহরের মাল্টিপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু জলিল রাজী হয় না। তাই মরিয়ম পায়ে হেঁটেই শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিজের বাবার বিশাল মহল দেখে অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, “কই আমরা এক কুঠরিতে থাকি! আর কই এই বিশাল মহল!"
দারোয়ান মহলে ঢুকতে না দেওয়ায় দরজার সামনে মরিয়ম অপেক্ষা করতে থাকে। ভেতর থেকে খাবারও আসে কিন্তু রাত হয়ে গেলেও জলিলের দেখা পায় না, মহলে ঢোকার অনুমতিও পায় না। একসময় মহলের সামনেই রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে দেখে জলিলের ড্রাইভার তাকে বলছে, “মরিয়ম, তোমার বাবা তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে।” মরিয়ম যখন বাড়িতে আসে তখন দেখে তার মা (নানু) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এরপর জলিল তাকে নিজের মহলে নিয়ে আসে, যেখানে তার তিন বউ ও বাচ্চাকাচ্চা সব রয়েছে। মরিয়ম এই মস্তবড় মহলের একটি কামরায় বন্দী হয়ে থাকতো। কেউ ও কে বের হতে তেমন দিতো না। একদিন জলিলের বড় বউ মরিয়মকে নিচে ডাকে আর বলে, “তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছি রাশেদ নামে এক মুচির সাথে।” রাশেদের বউ-বাচ্চা মারা গেছে। আর সবসময় রাশেদ পান-জর্দা এবং প্রচুর সিগারেট পান করতো।
মরিয়ম এই বিয়েতে রাজী নয়। তাই সে তার বাবা জলিল কে অনুরোধ করে এই বিয়ের ব্যবস্থা না করতে। কিন্তু তিন বউয়ের সামনে জলিল কিছুই বলতে পারেন না। তাই এর পরের দিন মাত্র পনেরো বছর বয়সী মরিয়মের বিয়ে হয় পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী রাশেদের সাথে। বিয়ের পর রাশেদ মরিয়মকে নিয়ে কাবুল চলে যায়।
রাশেদ কাবুল যাবার পরেই মরিয়মকে ঘরবন্দী করে রাখেন। এবং কড়া করে বলে দেন, “আমি ছাড়া বাইরে যাবে না। আর যদি যাও তবে বোরকা অবশ্যই পড়বে।” এক পর্যায়ে মরিয়ম গর্ভবতী হয়। রাশেদ এই নিয়ে খুবই আনন্দিত। তাই সে বেশ কিছু উপহার পর্যন্ত কিনে ফেলে। কিন্তু মরিয়মের কম বয়সে বাচ্চা নেওয়ায় বাচ্চা হবার পূর্বেই গর্ভপাত ঘটে; বাচ্চা মারা যায়। এতে করে সংসারে অশান্তি। এখন রাশেদ আর মরিয়ম একে অপরের সাথে ঠিক করে আর কথাও বলে না।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান ‘ডেমোক্রেটিভ রিপাবলিক’ হয়ে যায়। এখন মরিয়মের বয়স ১৯ বছর এবং বিয়ের পর ছ’বার গর্ভপাত ঘটেছে। এতে করে নিঃসন্তান রাশেদ আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়ে। আর এই হতাশার জন্য মরিয়মকে মারপিট করাও শুরু করে দেয়। একদিন তো মরিয়মের মুখে পাথর ভরে দিয়ে বলে, “এখন চাবাও।” মরিয়মের এতে মুখ থেকে দুই দাঁত ও অনেক রক্ত ঝরে পড়তে শুরু করে।
১৯৮৭ সাল। পাশের বাড়িতে লায়লা নামের বেশ হাশিখুশি নয় বছরের এক বাচ্চা থাকতো। ‘লায়লা’ নিয়মিত স্কুলে যায়। ওর বান্ধবী ছিলো ‘গীতি’। তো, এরা দুজন মিলে বেশ গল্পগুজব করতো। এদের আবার এক বন্ধুও আছে, ‘তারেক’। এক বিস্ফোরণে তারেক তার এক পা খুইয়ে বসে; মানে উড়ে চলে যায়। তাই এক পা নকল।
তারেক এবং লায়লার মধ্যে ভালো কেমিস্ট্রি ছিলো। কিন্তু লায়লা’র বাবা-মায়ের (ফারিবা ও হাকিম) মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো না। এবং পরিবারের দুই বড় ছেলে ‘আহমেদ’ ও ‘নূর’ তখন জিহাদ করবার জন্য মুজাহিদীনদের সাথে চলে যায়। একদিন খবর আসে যে, ওরা দুজনই এই জিহাদে মারা গেছে।
কিন্তু তাঁদের জীবন একেবারে বিফলে যায় নি। কারণ, ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সরকার একটি পিস ট্রিটি সাইন করে। সব সেনাদের প্রত্যাহারও করে নেয়। এবং ১৯৯২ সালে মুজাহিদীনদের জয় হয়। আফগানিস্তানের মানুষ সেদিন শান্তিতে ঘুমালেও গল্প সেখানেই শেষ হয়ে যায় নি।
যেহেতু সোভিয়েত সরকার নেই তাই মুজাহিদীনদের মধ্যে কে রাষ্ট্র শাসন করবে এই নিয়ে চলে স্নায়ুযুদ্ধ। এক দল অন্য দল কে আক্রমণ করে, মেরে ফেলে। খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, চুরি, ছিনতাই… এত বেড়ে যায় যে, মানুষ নিঃশ্বাস নেবার মত অবস্থায় ছিলো না। কেউ কেউ তো নিজ দেশ ছেড়ে ইরান, ইরাক অথবা, পাকিস্তানে গিয়ে জায়গা নেয়।
এরমধ্যে এক রকেট লঞ্চারে ‘গীতি’র দেহ চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। আর ‘গীতি’র মা সেই দেহের ছেঁড়া ছেঁড়া অংশগুলো একত্র করে এক থলেতে নিয়ে দাফন কার্য সারেন। তখন লায়লার বয়স ১৪ বছর। তারিক লায়লাকে জানায় যে, তারা পেশাওয়ার যাচ্ছে এবং লায়লাকেও একদিন নিয়ে যাবে। কিন্তু লায়লা জানায়, তার পরিবারে আর কেউ নেই। তার বাবা কে সাপোর্ট দেবার জন্য তার থাকাটা খুব জরুরী।
লায়লার বাবা মা কাবুলের অবস্থা দেখে পেশাওয়ার যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পিছুটানও কাজ করে। জন্মভূমি ছেড়ে যাবার কষ্ট। লায়লা একটু ভালো ছিলো। কারণ পেশাওয়ার গেলে তারেকের সাথে আবার দেখা হবে এই ভেবে। তাই সবাই মিলে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মাত্র রওনা দিবে ঠিক তখনই একটি রকেট লঞ্চার এসে লায়লাদের বাসায় পড়ে এবং লায়লার বাবা ও মা দুজনেই মারা যান। লায়লা হয়ে পড়ে খুব একা।
রাশেদ কোনোভাবে লায়লাকে বাঁচিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। একদিন এক অজানা ব্যক্তি রাশেদের বাড়িতে আসে এবং বলে, “এক ট্যাংকার করে ১৯ জন মানুষ পেশাওয়ার যাচ্ছিলো, কিন্তু বিস্ফোরণে সবাই মারা যায়। শুধুমাত্র তারেক নামের এক ছেলে বেঁচে আছে। তার দুটো পা’ই নেই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একসময় তারেকও মারা যায়।”
লায়লার জীবনে এবার কেউ নেই। তাই রাশেদ ভাবে লায়লাকে সে বিয়ে করবে। এজন্য সে বিষয়টা মরিয়য়ম কে জানায়। মরিয়য়ম লায়লাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই সে ‘হ্যাঁ’ বলে দেয়। কারণ, লায়লার পেটে তখন তারেকের বাচ্চা। লায়লার বাচ্চা হয়, নাম ‘আজিজা’।
ওদিকে সতীনে সতীনে তেমন মিল ছিলো না। তো, একদিন রাশেদ মরিয়মকে খুব মারছিলো। তাই দেখে লায়লা এগিয়ে আসে এবং মরিয়মকে বাঁচায়। এরপর থেকে ওদের সম্পর্ক মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়। একসময় লায়লা মরিয়মকে জানায় যে, ‘আজিজা’ রাশেদের সন্তান নয়; তারেকের সন্তান।
১৯৯৮ সাল। তালেবান বনাম মুজাহিদীন। তালেবান এই যুদ্ধে জিতে যায় এবং আফগানিস্তানে শরিয়াহ্ আইন চালু করে। নারীদের জন্য এখন ধাপে ধাপে বিভিন্ন রকমের নিয়ম-রীতি চালু করা হয়। বোরকা অবশ্যই পড়তে হবে, টিভি দেখা যাবে না, স্কুলে যাওয়া যাবে না, বাইরে গেলে সাথে একজন পুরুষ থাকতে হবে (অজানা/অচেনা নয়) ।
এখন লায়লা এবং মরিয়ম দুইজন এই অবস্থা থেকে পালাতে পেশাওয়ারের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু রাস্তায় পুলিশ ওদের ধরে ফেলে। তারপর কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে পুনরায় রাশেদের ঘরে ওদের ফিরিয়ে দেয়। রাশেদ যখন জানতে পারে এসব তখন দুজনকেই বেধড়ক মারধর করে; বিশেষ করে মরিয়মকে।
লায়লা, মরিয়ম ও আজিজা (লায়লার মেয়ে) কে রাশেদ এক ঘরে দুই দিনের জন্য বন্দী করে রাখে। এরপর লায়লার এক ছেলে হয়, নাম ‘জালমাই’। জালমাই কে লায়লা খুব ভালোবাসে। সবসময় নিজের কাছেই রাখে। আজিজা কে কোনোদিন উপহার না দিলেও জালমাই কে ঠিকই দিত।
২০০০ সাল। চারদিকে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। রাশেদের কাজও ছুটে যায়। তাই এই পরিবার নিজেদের খেয়ে পরে বাঁচতে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করে। এখন ওরা দিনে একবেলা খায়। আর এরমধ্যে রাশেদের ননস্টপ মারপিট চলতেই থাকে। মানে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স।
এবার লায়লা ‘আজিজা’ কে বাধ্য হয়ে এক অনাথ আশ্রমে রেখে আসে। এটা ভেবে যে, অন্তত অনাথ আশ্রমে দু’বেলা খাবার তো মিলবে! এবং লায়লা আজিজাকে বলে প্রায় প্রায় দেখা করার কথা। কিন্তু একা যখনই লায়লা আজিজাকে দেখার জন্য বের হত তখনই তালেবানদের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যেত। তারপর… তালেবান’রা একা বের হওয়ায় লায়লাকে মারতো। কিন্তু তবুও লায়লা খুব কষ্ট করে আজিজার সাথে দেখা করে আসতো।
একদিন লায়লার সাথে তারেকের দেখা হয়ে যায়। কাহিনীতে ফের টুইস্ট। তারেক বলে, সে যখন পেশাওয়ার যায় সেখানে একটি রিভিউজি ক্যাম্পে ছিলো। সেখানে খাবারের জন্য খাবার ছিলো না, পানের জন্য জল ছিলো না। একদিন ঠান্ডায় তার বাবা মারা যায়। এরপর তারেকের সাত বছরের জন্য কারাদণ্ড হয়ে যায়। এরমধ্যে তারেকের মা-ও মারা যায়। তারপর তারেক পাকিস্তানের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতো। যখন কাবুলে আসে তখন সব জেনে যায়।
লায়লা তখন বুঝতে পারে যে, রাশেদ সেদিন যে কাহিনী তার কাছে উপস্থাপন করেছিলো তা মিথ্যা। এদিকে ঘরে ফিরতেই ‘জালমাই’ রাশেদ কে বলে, সে তার মা কে এক অজানা ব্যক্তি ‘তারেক’ এর সাথে কথা বলতে দেখেছে। আবার রাশেদ ফর্মে… মারপিট চালু… হাতের কাছে যেটা পায়… বেল্ট দিয়ে… হাত দিয়ে… পা দিয়ে…
লায়লার গলা এক পর্যায়ে রাশেদ এমনভাবে ধরে যেন প্রায় মরে বুঝি; গায়ের রঙ নীল আকার ধারণ করেছে। ঠিক এই মূহুর্তে মরিয়ম পেছন থেকে রাশেদের মাথায় এক কুড়াল দিয়ে আঘাত করে… এরপর লায়লা ও মরিয়ম মিলে রাশেদের লাশের ঠিকানা করে।
তারপর মরিয়ম লায়লাকে সুপারিশ করে যে, আজিজা এবং তারেক কে নিয়ে পেশাওয়ার যেতে এবং সেখানে ভালো থাকতে। যদি একসাথে একই পরিবারের দুই নারী বাইরে বের হয় তাহলে তালেবান ওদের ছাড়বে না। লায়লার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও মরিয়ম কাবুলে থেকে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ মরিয়মকে ধরে ফেলে। বিচারে সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় লায়লার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মরিয়ম ভাবতে থাকে ফেলে আসা জীবনের গল্পগুলো। একসময় তালেবান’রা মরিয়মের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে।
শেষের দিকে দেখা যায়, লায়লা আর তারেক মিলে পুনরায় হেরাতে ফিরে আসে। মাওলানা ফাজলুল্লাহ জলিলের দেওয়া একটি বাক্স লায়লাকে দেয়। উক্ত বাক্সে খুঁজে পায় কিছু টাকা-পয়সা এবং একটি চিঠি। চিঠিতে জলিল মরিয়মের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এরপর (লেখক যেহেতু আফগান-অ্যামেরিকান) অ্যামেরিকার সৈন্যরা আফগানিস্তানে আসে তাই শান্তিও ফিরে আসে এবং লায়লা ও তারেক কাবুলে গিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৫