প্রাচীন পৃথিবীর বিস্ময়
প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনত্রয়ী! একটি গড়ে উঠেছে দজলা-ফোরাতের (Tigris-Euphrates) অববাহিকায়, একটি নীলের (Nile) কোলে, আর অন্যটি সিন্ধুর (Indus) তীরে। হাজার হাজার বছর ধরে তারা জাগিয়ে গেছে মানুষের অনাবীল বিস্ময়, অপার কৌতূহল, আর অদম্য প্রচেষ্টা। কী লিখে গেছে তাতে অতীতের মানুষেরা? রাজা-রাণীদের রোমাঞ্চকর সমরগাঁথা, গ্রহ-নক্ষত্রে বিচরণকারী দেব-দেবীদের সভাকার্য, মৃত্যু-দরিয়া অতিক্রমের গল্প, নাকি সাধারণ মানুষের আনন্দ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বঞ্চনা-দ্রোহের কথা?
পিরামিডের দ্বার উন্মোচন
ফ্রান্সের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং উপমহাদেশে ব্রিটিশদের প্রবেশ রোধ করতে ১৭৯৮ সালে মিশরে অভিযান চালান নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। বন্দরনগরী রাশেদ (Rosetta)-এ তার সৈন্যদল মুখোমুখি হয় অদ্ভুত এক পাথরের; থমকে দাঁড়ায় তারা অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারে, স্বতঃস্ফূর্ত প্রণোদনায় ভূমিতে নামিয়ে রাখে উত্তোলিত অস্ত্র। পাথরটির গায়ে উৎকীর্ণ রাজকীয় এক ফরমান—কপটিক, ডেমোটিক এবং হায়ারোগ্লিফ—তিন ভাষায় লিখিত। ১৮২২ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে সেনাদলের ফরাসী পণ্ডিত, ভাষাবিদ ও প্রাচ্যবিশারদ জ্যাঁ ফ্রাসোয়া চ্যাম্পোলিও (Jean-François Champollion), যিনি কপটিক এবং ডেমোটিক দুই ভাষায়ই পড়তে পারতেন, উন্মোচন করেন প্রাচীন পৃথিবীর রহস্য। সম্রাট চতুর্থ টলেমির (Ptolemy IV) এই ফরমানটিতে ঘোষণা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর মওকুফের এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপাসনালয়গুলোতে মূর্তি নির্মাণের। আবিষ্কৃত হয় হায়ারোগ্লিফ লিখন পদ্ধতি—আমাদের সামনে এক নিমেষে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে শত-সহস্র বছরের রহস্যময় মিশরীয় সভ্যতা, ফারাওদের জৌলুসপূর্ণ প্রাসাদ, পিরামিডের বিজন কোণ। [১]
কপটিক, ডেমোটিক এবং হায়ারোগ্লিফে উৎকীর্ণ রোজেটা স্টোন
পারস্যরাজ প্রথম দারিয়ুসের (Darius I) উপহার
হায়ারোগ্লিফের রহস্য উন্মোচনের পরে নব প্রেরণায় ঝাঁপিয়ে পড়েন গবেষকগণ, দজলা-ফোরাতের কূলে সুমেরীয়-ব্যাবিলনীয়দের কিউনিফর্ম লিখনপদ্ধতির রাজ্যে। এক সময় পেয়েও যান তা, বাইবেলে বর্ণিত প্রাচীন পারস্যরাজ প্রথম দারিয়ুসের কাছ থেকে।
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের বিখ্যাত সম্রাট দারিয়ুস হিব্রুভাষীসহ বহু জনগোষ্ঠিকে অধীনস্থ করেন। নিজের বংশলতিকা এবং বিজয়াভিযান কিউনিফর্ম ভাষায় উৎকীর্ণ করে রাখেন পারস্যরাজ, পশ্চিম পারস্যের বেহিস্তুনে জাগরোজ পর্বতমালার শৈলচূড়ায়। আর কেউ যাতে কোনোদিন তার কীর্তিকে বিনাশ করতে না পারে, তাই পাহাড়ের ধারগুলো কেটে দেন তিনি। আড়াই হাজার বছর ধরে মানুষ দূর থেকে অবলোকন করে গেছে এ লিপি, কিন্তু জানতে পারেনি কী লিখে গেছেন পারস্যরাজ পাহাড় চূড়ায়। [২]
প্রাচীন পার্সি, সুসিয়ান এবং কিউনিফর্মের ব্যাবিলনীয় রূপে বেহিস্তুন শিলালিপি
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্যার হেনরী রলিনসন (Sir Henry Rawlinson) নামে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির একজন সেনাকর্মকর্তা পারস্যে শাহের সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে গিয়ে খুঁজে পান রহস্যময় এ শিলালিপি। পরবর্তী ৪ বছর, জীবনের উপর হুমকি নিয়ে, শিলালিপিগুলো নকল করেন তিনি। সম্পূর্ণ নকলকাজ শেষ হবার পর, যা লিখা ছিল প্রাচীন পার্সি, সুসিয়ান এবং ব্যাবিলনীয় ভাষায়, রলিনসন প্রথমে পার্সি লিপির পাঠোদ্ধার করেন যেহেতু তার জানা ভাষার সাথে এর ছিল সবচেয়ে বেশি মিল। পরে সুসিয়ান এবং ব্যাবিলনীয় কিউনিফর্ম ভাষারও পাঠোদ্ধার হয় যদিও তুলনামূলকভাবে অনেক দুরূহ ছিল সেগুলো।
বাকি রয়ে গেল সিন্ধু সভ্যতার লিপি!
সিন্ধু লিপি, অশ্বচাতুরি এবং নতুন আলো
১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে হারিয়ে যায় সিন্ধু সভ্যতা—বিস্ময়কর এক সভ্যতা, যা তার স্বর্ণযুগে আরো দুটি বিশাল সভ্যতা মেসোপটেমিয়া (Mesopotamia) ও মিশরের (Egypt) সম্মিলিত আয়তনের চেয়েও ছিল বৃহৎ। হারিয়ে যায় অনেকটা রহস্যময়ভাবে, রেখে যায় দুর্বোধ্য লিপি, আর একটি জটিল প্রশ্ন: কেন। না, পরশপাথর কিংবা আলাদীনের চেরাগ হিসেবে রেখে যায়নি রোজেটা স্টোন কিংবা বেহিস্তুন লিপির মতো আন্তঃভাষিক কোনো ফরমান। যুগ যুগ ধরে আলেয়ার মতো সিন্ধু লিপি তাই ফাঁকিই দিয়ে গেছে গবেষকদের। কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেও উঠেছেন, এ কোনো লিখন পদ্ধতিই নয়। [৩]
তবে সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজেশ পি এন রাও-এর নেতৃত্বে ভারত ও আমেরিকার একটি যৌথ গবেষকদল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) প্রয়োগ করে নতুন গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করেন যাতে সিন্ধু লিপি সত্যিকারের ভাষা হিসেবে আবিষ্কৃত হবার জোরালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, এবং সেই সাথে অনেক রহস্যের দ্বার উন্মোচনের অপেক্ষায় বিশ্ব। বিজ্ঞান জগতে ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া জাগাচ্ছে এ গবেষণাকর্ম। [৪]
রাও-এর গবেষকদল তাদের প্রোগ্রামে প্রাচীন সুমেরীয়, সংস্কৃত, প্রাচীন তামিল এবং আধুনিক ইংরেজি ভাষার বিন্যাস উপস্থাপন করেন। সে সাথে তারা এতে চারটি অব্যক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার (non-spoken communication system) নমুনা প্রবেশ করান: মানব ডিএনএ, ফরট্রান, ব্যাকটেরীয় প্রোটিন বিন্যাস এবং একটি কৃত্রিম ভাষার।
সিন্ধু লিপি
সবশেষে প্রোগ্রামে সিন্ধু লিপির টুকরো প্রবেশ করিয়ে সেগুলোকে ব্যক্ত এবং অব্যক্ত ভাষার সাথে তুলনা করে তারা দেখতে পান বিভিন্ন প্রতীক বিন্যাসের ফলাফল হিসেবে সিন্ধু লিপি ব্যাকরণের নিয়মের দিকে ইঙ্গিত করছে। ব্যক্ত ভাষার মতো সেগুলো মোটামুটি সুশৃঙ্খল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। [৫]
তবে ফার্মার, স্প্রোয়াট এবং উইটজেল রাও-এর গবেষণাকর্মের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং আগামী দিনগুলিতে পারস্পরিক বিতর্ক আশা করা যাচ্ছে। [৩]
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিন্ধু সভ্যতার প্রতি মানুষের আগ্রহ হঠাৎ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় ইতিহাসবিদ এন. এস. রাজারাম (N. S. Rajaram) এবং তার সহযোগী, পুরাতত্ত্বলিখক ডক্টর নটবর ঝা (Dr. Natawar Jha) হঠাৎ করেই হরপ্পার ধ্বংসাবশেষে অশ্ব প্রতিকৃতি (Horse Image) খুঁজে পাওয়ার পর সাড়া পড়ে যায় ভারতে। এক নিমেষেই যেন পরিবর্তিত হয়ে যায় ইতিহাস, কারণ আর্যদের জীবনযাত্রা, সমাজব্যবস্থা এবং সমরাভিযানে অশ্বের প্রয়োজনীয়তা ছিল প্রচুর এবং বহুবার অশ্বের উল্লেখ পাওয়া যায় তাদের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে। আর হরপ্পায় কোনো অশ্ব প্রতিকৃতি পাওয়া মানে এটি বৈদিক সভ্যতার অত্যন্ত জোরালো প্রমাণ।
উগ্র হিন্দুদের কাছে উঠে আসলো রাজনৈতিক এক হাতিয়ার এবং জোরালো প্রোপাগাণ্ডা: সিন্ধু সভ্যতা আসলে বৈদিক সংস্কৃতিরই অন্তর্গত; আর্যরাই ভারতের আদি অধিবাসী, বাকিরা বহিরাগত; এবং গোত্রভেদ প্রথা আসলে অভিশপ্ত কিছু নয়, বরং বিভিন্ন ক্ষমতার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের সহায়ক একটি সমাজ ব্যবস্থা মাত্র। [৬]
পরবর্তীতে প্রমাণ হয় রাজারামের এই অশ্ব আসলে পৌরাণিক প্রাণী ইউনিকর্ণের (Unicorn) ছবির উপর কম্পিউটারের কারসাজি, শিং-বিশিষ্ট ইউনিকর্ন ষাঁড়কে শিং-হীন অশ্ব বানানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা। গবেষকরা একে বিবর্তনবাদীদের Piltdown Man জালিয়াতির সাথে তুলনা করেন। [৭] [৮]
ভারতীয় পত্রিকা Frontline-এর শিরোনামে আর্য প্রোপাগাণ্ডাবাজদের চাতুরি ফাঁস
কিন্তু এই জালিয়াতি রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডায় এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে ২০০৬ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে শিশুদের পাঠ্য বইয়ে ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা পর্যন্ত চালানো হয়। আমেরিকায় সফল না হলেও ভারতে বিজেপি সরকারের আমলে সফল হয়েছে উগ্রবাদীদের প্রচেষ্টা। ইউনেস্কো একে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। [৯] [১০]
ইতিহাস বিকৃত করে নানা সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষার অপূর্ব মিলনমেলা ভারতকে এভাবে একক বৈদিক সভ্যতার ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা কি ভারতকে বাস্তবিকই সুগঠিত করবে, নাকি বরং আরো ছড়িয়ে দিবে সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিষবাষ্প!
নিষ্ঠুর পরিহাসের মতো উগ্রবাদীরা সংখ্যায় সব সময়ই কম হলেও, তাদের ধ্বংসাত্মক কণ্ঠস্বর আক্রান্ত করে যায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে; ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধারের গুরুত্ব তাই অপরিসীম!
গুরুত্বপূর্ণ শব্দসমূহ:
কপটিক (Coptic): আফ্রো-এশিয়াটিক ভাষা-শাখার অন্তর্গত মিশরীয় ভাষার চূড়ান্ত পর্যায়, যা অন্তত সপ্তদশ শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। গ্রিক বর্ণমালায় লিখিত, কিন্তু ব্যাকরণগত দিক দিয়ে হায়ারোগ্লিফের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
ডেমোটিক (Demotic): হায়ারোগ্লিফের পর মিশরে তুলনামূলকভাবে সহজবোধ্য প্রাচীন যে হায়েরাটিক ভাষার প্রসার ঘটে, তার কার্সিভ রূপটিকেই (হাতে লেখার মতো, যেখানে শব্দের বর্ণ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে) মূলত ডেমোটিক ভাষা বলা হয়। কপটিক ভাষা প্রচলনের পর ডেমোটিক তার ব্যবহার হারিয়ে ফেলে।
হায়েরোগ্লিফ (Hieroglyph): প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিখন পদ্ধতি, যাতে বিভিন্ন প্রাণী, মানুষ/দেবদেবী বা যন্ত্রপাতির ছবির মাধ্যমে ভাষা প্রকাশ করা হতো। হায়েরো- মানে পবিত্র, -গ্লিফ মানে লিপি, হায়েরোগ্লিফ তাই পবিত্র লিপি। হায়েরাটিক এবং ডেমোটিক এর পরিবর্তিত রূপ হলেও এ দুটো যথাযথ হায়ারোগ্লিফ নয়।
কিউনিফর্ম (Cuniform): এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ইতিহাস মতে, পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখনপদ্ধতি, যা দক্ষিণ ইরাকে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা উদ্ভাবন করে। কীলকের মতো লিখন যন্ত্রের মাধ্যমে লিপিগুলো লেখা হতো, তাই এর নাম কিউনিফর্ম বা কীলক লিখন।
সিন্ধু লিপি (Indus Script): সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন প্রতীকের ছোট ছোট সারি, যা আদৌ কোনো ভাষা কিনা, এ ব্যাপারে গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে সবচেয়ে জোরালো মত, এটি প্রোটো-দ্রাবিড় ভাষা। উগ্র হিন্দুরা একে ইন্দো-আর্য সংস্কৃত ভাষা এবং সিন্ধু সভ্যতাকে আর্য সভ্যতা হিসবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে একাডেমিক জগতে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। একে হরপ্পান লিপিও বলা হয়।
রোজেটা স্টোন (Rosetta Stone): মিশরের বন্দরনগরী রাশেদে প্রাপ্ত আন্তঃভাষিক শিলালিপি যার উপর ভিত্তি করে হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়।
বেহিস্তুন লিপি (Behistun Script): ইরানের জারগোজ পর্বতের শৈলচূড়ায় সম্রাট দারিয়ুস কর্তকৃ উৎকীর্ণ আন্তঃভাষিক শিলালিপি যার ফলে কিউনিফর্ম লিখনপদ্ধতির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়।
ঋগ্বেদ (Rig Veda): আর্যদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ চতুষ্টয়ের সবচেয়ে প্রাচীনতম শাস্ত্র, যা প্রাথমিক বৈদিক যুগে (আনু. ১৭০০-১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) রচিত হয়।
তথ্সূত্রঃ
[১] Rosetta Stone, Wikipedia, http://en.wikipedia.org/wiki/Rosetta_Stone
[২] Henry Rawlinson, Minnesota State University, Click This Link
[৩] Indus Script, Wikipedia, http://en.wikipedia.org/wiki/Indus_script
[৪] Click This Link
[৫] A Markov Model of Indus Script, Rao et el, Click This Link
[৬] http://dissidentvoice.org/Jan06/Swamy19.htm
[৭] Horseplay in Harappa, Steve Farmer, Ph.D, http://www.safarmer.com/frontline/
[৮] Horseplay in Harappa, thehindu.com, Click This Link.
[৯] Ideology Clashing with History, UNESCO, Click This Link
[১০] The Politics of Hindutva and the NCERT Textbooks, Atishi Marlena, Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৩:৩৩