১৫ই এপ্রিল, ২০১২-টাইটানিক ডুবির একশ বছর!
১৯৯৭ সালে হলিউড পরিচালক জেমস ক্যামেরনের অস্কার জয়ী “Titanic” মুভির কল্যাণে এই ঐতিহাসিক জাহাজ ডুবির কথা কম বেশী আমরা সবাই জানি। আজ ১৫ই এপ্রিল তথা ঐতিহাসিক এই জাহাজ ডুবির শততম বছর।
এতদিন পরে আজও পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি মানুষের রয়েছে এই টাইটানিক নিয়ে নানা আগ্রহ, কৌতূহল! শততম বছর নিয়ে উজ্জাপিত হচ্ছে নানা আয়োজন। এমনকি Titanic মুভিটি 3D ভার্শনে পুনরায় মুক্তি দেয়া হচ্ছে, আরও বৃহৎ পরিসরে উন্মুক্ত করা হচ্ছে টাইটানিক স্মৃতি সম্বলিত জাদুঘর। এ যেনঃ “টাইটানিক ডুবে প্রমাণ করল, সে ডুবে নাই!!” আমরাও চলুন জেনে নিই এর আদ্যোপান্ত।
টাইটানিক তৈরির পটভূমিঃ
১৯০৭ সালে আমেরিকার White Star Line নামের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সকল প্রকার আধুনিক ও বিলাসবহুল সুবিধার কথা মাথায় রেখে তিনটি সর্ববৃহৎ জাহাজ নির্মাণের লক্ষে Olympic class ocean liner ক্যাটাগরির তিনটি প্রোজেক্ট হাতে নেয়। Titanic ছিল White Star Line প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বৃহৎতম জাহাজ। অপর দুটি ছিল RMS Olympic ও RMS Britannic । প্রথমে White Star Line এর চেয়ারম্যান J. Bruce Ismay এবং আমেরিকান ফিনান্সার J.P. Morgan ১৯০৯ সালের মাঝামাঝি দৈত্যাকার এবং বিলাসবহুল জাহাজ তৈরির কথা চিন্তা করেন।
টাইটানিকের সাইডওয়ে ও কাটওয়ে প্ল্যান
যদিও তাঁদের জন্য তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, Cunard পরিচালিত একই রুটের সবচেয়ে দ্রুততম যাত্রী পরিবাহিত জাহাজ Lusitania এবং Mauretania এবং অপরদিকে সে সময় জার্মানি নির্মিত জনপ্রিয় দুটি জাহাজ Hamburg America এবং Norddeutscher Lloyd -এর জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করা। সে লক্ষে তাঁরা গতিশীল জাহাজের পরিবর্তে, বিশাল আকারের প্রতি নজর দিল। মূলত তাঁরা ধনকুব সম্প্রদায় এবং বিলাসী যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে টাইটানিক এর প্রকল্প তৈরি করে।
শুরু হল টাইটানিক তৈরি
Belfast shipbuilders Harland and Wolff নামক স্থাপত্য ও জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লাভের ৫% পাওয়ার বিনিময়ে টাইটানিকের ডিজাইনে সম্মত হন। Harald and Wolff এর অন্যতম পরিচালক Lord Pirrie, ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের হেড ও নেভাল স্থাপত্যবিদ Thomas Andrews , হিসাব সমন্বয়কারী Edward Wilding, এবং শিপইয়ার্ডের জেনারেল ম্যানেজার Alexander Carlisle এর নেতৃত্বে ২৯শে জুলাই, ১৯০৮ সালে টাইটানিকের ডিজাইন চূড়ান্ত হয়। Harland and Wolff দ্বারা নির্মিত জাহাজের সংখ্যা অনুযায়ী টাইটানিকের নাম্বার ছিল ৪০১!
টাইটানিকের প্রোপেলার!
ইঞ্জিন রুম
Harland and Wolff এর প্রায় ১৫,০০০ শ্রমিক টাইটানিক নির্মাণ করেন। সেটি ছিল তাঁদের জন্য ক্লান্তিকর এবং কঠিন। একাজে ৬ জন শ্রমিক মারা যান, ২৮ জনের অঙ্গহানি ঘটে, এবং ২৪৬ জন আহত হন। অবশেষে প্রায় ২৬ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর স্কটিশ ফার্ম Sir William Arrol & Co. টাইটানিকের নির্মাণ কাজ শেষ করে দর্শানার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে বেলা ১২.১৫ মিনিট, ৩১ শে মার্চ, ১৯১২ সালে।
প্রায় ১০,০০০ দর্শনার্থী River Lagan এ সমবেত হন এই দৈত্যাকার জাহাজটিকে দেখতে।
টাইটানিক আদ্যোপান্তঃ
টাইটানিক ছিল দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮৮২ ফুট ০৯ ইঞ্চি (২৬৯.০৬ মিঃ), প্রস্থে প্রায় ৯২ ফুট ০৬ ইঞ্চি (২৮.১৯ মিঃ)। যে ব্রিজের তলদেশে প্রথম যাত্রা করেছিল, টাইটানিক ছিল সে ব্রিজের মোট আয়তনের ১০৪ ফুট অংশ (৩২ মিঃ)! যাত্রী আবাসস্থলের ওজন প্রায় ৪৬,৩২৮ টন, সাথে ছিল ৩৪ ফিট ৭ ইঞ্চির ইঞ্জিনরুম, সর্বসাকুল্যে টাইটানিকের ওজন ছিল প্রায় ৫২,৩১০ টন!
টাইটানিক নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় $৭,৫০০,০০০ (বর্তমান মূল্য প্রায় $৪০০,০০০,০০০)!
আর ছিল ১১ টি ডেক, তারমধ্যে ৮ টি যাত্রীদের জন্য, বাকীগুলো টাইটানিক স্টাফদের। চলুন ডেকগুলো জেনে নিইঃ
The Boat Deck: এখানে লাইফবোট গুলো সংরক্ষিত ছিল, যদিও তা যাত্রী সংখ্যা তুলনায় অপ্রতুল ছিল। পেছনের অংশে ছিল, টাইটানিকের হুইলহাউজ আর ব্রিজ, সামনের দিকটায় ছিল ক্যাপ্টেন আর ক্রুদের কোয়ার্টার। প্রথম শ্রেণী যাত্রীদের প্রধান ফটক, জিমনেশিয়াম ছিল এর মধ্যম অংশে।
A Deck: এ অংশকে Promenade Deck বলা হত। টাইটানিকের সবচেয়ে বড় অংশ ছিল এটি। প্রায় ১৬৬ মিঃ লম্বা। পুরাটাই ছিল প্রথম শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত। শোবার ঘর, পানশালা, জিমনেশিয়াম, বলরুম, রিডিং রুম সহ ইত্যাদি।
B Deck: এ অংশকে Bridge Deck বলা হত। টাইটানিকের স্তম্ভ গুলো ছিল এই অংশে। স্বভাবতই সবচেয়ে উঁচু ছিল এটি। টাইটানিকের দুটো বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট A La Carte Restaurant ও ক্যাফে The Café Parisien ছিল এ অংশে। দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের সদর দরজাও ছিল এখানে। মূলত উচ্চতার জন্য, দুর্ঘটনার সময় সব যাত্রীরা প্রাণ বাঁচাতে এ অংশে ভিড় করেছিলেন।
C Deck: এ অংশকে Shelter Deck বলা হত। এখানে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের আবাসস্থল। তুলনামূলক ভাবে, এ অনংশটিও যাত্রী সংখ্যা তুলনায় বড় ছিল। টাইটানিক ক্রু কেবিনও ছিল এখানে। আর ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা লাইব্রেরী।
D Deck: এ অংশকে বলা হয় Sallon Deck. তিনটি বিশালাকার কক্ষের সমষ্টি ছিল এ অংশ। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের অভ্যর্থনে একটি হলঘর, অপর দুটি ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা ডাইনিং সেলুন। তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত একটা বারান্দা ছিল এই অংশে।
E Deck: এ অংশকে বলা হয় Upper Deck. এখানে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য রান্না করা হত। যাত্রীরা যাতে সমুদ্রের বিশালতা উপভোগ করতে পারেন সেজন্য, লিবারপুলের খোলামেলা রাস্তার আদলে এ অংশে ছিল হাঁটার জন্য প্রশস্থ একটা জায়গা।
F Deck: এ অংশকে বলা হত Middle Deck. সর্বশেষ ডেক ছিল এটি।এখানে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের খাবার ঘর, গোসল ঘর ছিল।
G Deck: এ অংশকে বলা হয় Lower Deck. মূলত আন্ডার গ্রাউন্ডে যাবার পথ, যাত্রীদের মালামাল ইত্যাদি ছিল এঅংশে। ক্রু এবং কলাকুশলী ছাড়া কেও এ অংশে যেতে পারতো না।
The Orlop Decks: একে বলা হত Tank Top. জাহাজের নিচের দিকের এ অংশে টাইটানিকের সবরকমের যন্ত্রাংশ যেমন, বয়লার, ইঞ্জিন রুম, কার্গো রুম, জেনারেটর রুম, ইত্যাদি ছিল। সাধারণ যাত্রীদের দৃষ্টির অগোচরে ছিল এই অংশ। যদিও এটি মিলিত হয়েছিল D Deck এর সাথে।
টাইটানিকের যন্ত্রাংশঃ
তিনটি ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত, দুটো পাশাপাশি তাপ উৎপাদনশীল চার সিলিন্ডার বিশিষ্ট, চাকা বিশিষ্ট তিনটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম স্টিম ইঞ্জিন ছিল টাইটানিকে। প্রতিটি ইঞ্জিন একই সময়ে প্রায় 30,000hp এবং 16,000hp বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো। ইঞ্জিন দুটোই ছিল বিশালাকার। প্রতিটি ছিল ৬৩ ফুট উচ্চতার এবং ওজনে ছিল ৭২০ টন। তাপ উৎপাদন করার জন্য ছিল ২৯ টি বয়লার। উচ্চতায় এক একটি বয়লার ছিল প্রায় ১৫.০৯ ইঞ্চি, ওজন ছিল ৯১.০৫ টন। এবং প্রতিবারে এগুলো ৪৮.০৫ টন পানি ধারণ করতে সক্ষম ছিল।
মোট যাত্রা পথে টাইটানিক ৬,৬১১ টন কয়লা পুড়িয়েছিল। ১৭৬ জন ফায়ারম্যান ক্রমান্বয়ে কাজ করতেন।
টাইটানিকের রাডার ছিল অনেক বড়- দৈর্ঘ্যে ২৩.৯৮ মিঃ, প্রস্থে ৪.৬৫ মিঃ, ওজনে ১০০ টন। ক্যাপ্টেনের কেবিন থেকে দুটো সরাসরি তারদ্বারা যুক্ত ছিল রাডারটি। এছাড়া ১.৫ কিলোওয়াট বিশিষ্ট আন্তঃ টেলিগ্রামের ব্যবস্থা ছিল।
Maiden voyage তথা প্রথম যাত্রাঃ
বুধবার ১০ এপ্রিল, ১৯১২ দুপুরে টাইটানিক অ্যাটলান্টিক এর সমুদ্র পথে তার প্রথম যাত্রা শুরু করে। ইংল্যান্ডের Southampton সমুদ্র বন্দর, ফ্রাঞ্চের Cherbourg , আয়ারল্যান্ডের Queenstown, আমেরিকার New York সমুদ্র বন্দর গুলোই ছিল টাইটানিকের চ্যানেল। কিন্তু সমুদ্রে নামার সপ্তাহ পরই ডুবে যায় টাইটানিক। মূল গন্তব্য লিভারপুল বন্দরে তার আর কখনোই পৌঁছানো হয়ে উঠেনি। কারা ছিলেন সে যাত্রা পথে চলুন তাঁদের একনজর জেনে নিই।
ক্রুঃ
৮৮৫ জন ক্রু ছিলেন টাইটানিকে। এদের কেওই পার্মানেন্ট ছিলেন না। তন্মদ্ধে ৯৭% ক্রু ছিলেন পুরুষ, আর ২৩ জন মহিলা ক্রু ছিলেন।
White Star Line এর অভিজ্ঞ ও সর্বজ্যৈষ্ঠ Captain Edward Smith Jhon , ছিলেন টাইটানিকের ক্যাপ্টেন।
অপর একটি জাহাজ Olympic থেকে তাঁকে এবং তাঁর প্রধান সহকারী Henry Tingle Wilde সহ দুজনকে স্থানান্তরিত করে টাইটানিকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
টাইটানিকের দায়িত্বে ক্রুরা তিনটি দলে বিভক্ত ছিলেন। ডেকের দায়িত্বে ছিলেন ৬৬ জন, ইঞ্জিনের দায়িত্বে ছিলেন ৩২৫ জন, যাত্রী সেবায় ৪৯৪ জন।
যাত্রীঃ
টাইটানিকের প্রায় ১৩,০১৭ জন যাত্রীর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছিলেন ৩২৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ২৮৪ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ৭০৯ জন। পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮৬৯ জন (৬৬%), মহিলা প্রায় ৪৪৭ জন (৩৪%), এবং প্রায় শিশু ১০৭ জন যাদের বেশীর ভাগ ছিলেন তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রী।
যাত্রীরা মূলত আইরিশ, ফিনিশ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, আর ইংলিশ ছিলেন।
টাইটানিকের যাত্রীদের অনেকেই ছিলেন তৎকালীন অভিজাত ধনী সমাজের, যেমন এখানে ছিলেন, American millionaire John Jacob Astor IV এবং তাঁর স্ত্রী Madeleine Force Astor, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট Benjamin Guggenheim, Macy's এর স্বত্বাধিকারী Isidor Straus এবং তাঁর স্ত্রী Ida, Denver millionaires, Margaret "Molly" Brown, Sir Cosmo Duff Gordon এবং তাঁর স্ত্রী couturière Lucy (Lady Duff-Gordon), ক্রিকেটার ও ব্যবসায়ী John Borland Thayer এবং তাঁর স্ত্রী Marian, ছেলে Jack, লেখক ও সমাজকর্মী Helen Churchill Candee, সাংবাদিক William Thomas Stead, অভিনেত্রী Dorothy Gibson সহ আরও অনেকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, টাইটানিকের Owner J. P. Morgan এরও এই যাত্রায় অংশগ্রহণের কথা ছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে শেষ মিনিটে তা বাদ দেন তিনি।
টিকেট মূল্যঃ
পত্রিকায় টিকেটের বিজ্ঞাপন
তৃতীয় শ্রেণীর টিকেট মূল্য ছিল প্রতিরাত মাথাপিছু £৭.৫ (বর্তমান £৫৩২), প্রথম শ্রেণীর একটি ছিল £২৩ (বর্তমান £১,৬৮৮) মূল্যের, এবং অপর বিলাসবহুল স্যুট গুলোর সর্বোচ্চ টিকেট মূল্য ছিল £৮৭০ (বর্তমান £৬৩,৮৩৭)।
টাইটানিক ডুবিঃ
১০ এপ্রিল ১৯১২ খুব সকলে টাইটানিক এক দফা প্রাণে বেঁচে যায়। যাত্রার কয়েক মিনিটের মধ্যেই Oceanic রুটের অপর একটি জাহাজ SS City of New York এর সাথে টাইটানিকের একটা ধাক্কা লেগে যেত! শেষ মুহূর্তের সতর্কবার্তায় সেই দুর্ঘটনা হাত থেকে টাইটানিক বেঁচে যায়।
১১ই এপ্রিল টাইটানিক দক্ষিন আয়ারল্যান্ডের Cork Harbor এ পৌঁছায়। তখন থেকেই আবহাওয়া মূলত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর প্রতিকুল ছিল। Grand Banks of Newfoundland থেকে টাইটানিক আবহাওয়া সতর্কবাণীও পেয়েছিল। তাঁদের স্পীড কামানোর জন্য এবং আসন্ন বরফ খণ্ড অনুসন্ধান করে পরিচালিত করতে বলা হয়েছিল। যদিও ১৫ই এপ্রিল সকাল বেলা আবহাওয়া বেশ উপযোগী হয়ে ওঠে।
এই সেই বরফ খণ্ড!
টাইটানিকের সময় অনুযায়ী তখন রাত ১১.৪০মিনিট। Frederick Fleet প্রথম বিশালাকার আইসবার্গটি দেখতে পান। তিনি দ্রুত First Officer William Murdoch কে জানান। পরে তিনিও সবকটি ইঞ্জিন দ্রুত বন্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পূর্ণ গতিতে চলছিল বলে, তৎক্ষণাৎ বন্ধ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ততক্ষণে বিশালাকার আইসবার্গের ধাক্কায় ইঞ্জিনরুমের একাংশ ফেটে গিয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
বুঝতে বাকী থাকে না, টাইটানিক ডুবতে যাচ্ছে। প্রায় ১,৫০০ যাত্রীর জন্য লাইফবোট ছিল মাত্র ২০ টি। তাই মোট যাত্রীর মাত্র ৩ ভাগ লাইফবোট থাকায়, নারী ও শিশুদের (The Captain's orders were: ("Women and chindren first!" ) অগ্রাধিকার দিয়ে যাত্রীদের নিচে নামানো শুরু হয়। ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে টাইটানিকের প্রধান স্তম্ভ ভেঙে পড়ে দুভাগ হয়ে যায়। রাত ২.২০ মিনিটে টাইটানিকের প্রথম অংশ ডুবতে শুরু করে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা (28 °F / −2 °C) আর হিমশীতল পানিতে পড়ে, Hypothermia বা Cardiac Arrest তে আক্রান্ত হয়েও অনেক যাত্রী মারা যান।
যদিও বিতর্ক আছে যে, SS Californian নামক আরেকটি জাহাজ মাত্র কয়েক মাইল দূরে ছিল, কিন্তু টাইটানিকের বার্তা পাওয়া শর্তেও তারা টাইটানিকের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে উদ্ধারকারী জাহাজ RMS Carpathia ঘটনার দুঘণ্টা পর আসে। মাত্র ৭১০ জন যাত্রী ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরে আসেন।
তদন্তঃ
টাইটানিক ট্র্যাজেডি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ, তদন্ত, অনুসন্ধান ইত্যাদির কমতি ছিল না। ১৯শে এপ্রিল আমেরিকান সিনেটর William Alden Smith এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি, বিভিন্ন কারণ-অনুসন্ধান, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি বিবেচনা করে, ২৫ শে মে-এর মধ্যে টাইটানিক ডুবির কারণ ব্যাখ্যা করেন।
পরবর্তীতে ইংল্যান্ডও তার দেশের পক্ষ থেকে British Board of Trade's -এর প্রধান Lord Mersey -এর নেতৃত্বে আরেকটি তদন্ত করে। দুটি তদন্ততেই যে কারণ গুলো উঠে আসে, সেগুলো হলঃ
* লাইফবোটের অপ্রতুলতা।
* লাইফবোটের পূর্ণ ব্যাবহারে অক্ষমতা।
* আবহাওয়া সতর্কতা বাণী পাওয়া স্বর্তেও জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ না করা।
* ক্যাপ্টেন এর অবহেলা।
* হিম শীতল পানিতে করুণ মৃত্যু।
১৯১২ সালে The New York Times –এ প্রকাশিত টাইটানিকের বিজ্ঞাপন ও পরবর্তীতে প্রকাশিত খবর
ট্র্যাজেডির পরদিন New York Herald এর কভারপেজ
The Time Dispatch-এ টাইটানিক ডুবির খবর
টাইটানিক উদ্ধার ও স্মৃতিতে টাইটানিকঃ
দুবন্ত টাইটানিককে খুঁজে পেতে সমুদ্র প্রিয় আর অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। কিন্তু অ্যাটলান্টিক এর ঠাণ্ডা পানিতে প্রায় ১২,০০০ ফুট (৩,৭০০ মিঃ) গভীরে টাইটানিক কে খুঁজে বের করা কঠিনই ছিল।
অবশেষে মানুষের অদম্য ইচ্ছা আর চেষ্টায় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ সালে Franco-American Expedition এর অধীনে একদল মানুষ প্রথম টাইটানিকের ডেকের একটি অংশের ধ্বংসাবেশ খুঁজে পায় দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে প্রায় ১৩.২ মাইল দূরে!
অবশেষে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় টাইটানিকে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী, যেমনঃ প্লেট, টেবিল, যাত্রীদের নানা পোশাক, জুতা, চিঠি, গহনা ইত্যাদি। এসবের বেশীর ভাগই সংরক্ষিত আছে নিউওয়ার্ক টাইটানিক যাদুঘরে।
এছাড়া গত একশ বছরে টাইটানিক নিয়ে হাজারো সৃষ্টিকর্ম বই, গান, এলিজি, সিনেমা তৈরি হয়ে আসছে, এমনকি আছে টাইটানিক সংগ্রহশালা ও যাদুঘর।
Institution of Engineers and Shipbuilders in Scotland এর ত্বরতাবধায়নে ১৫ই এপ্রিল ১৯১৪ Southampton তে টাইটানিক নিয়ে প্রথম একটি যাদুঘর তৈরি করা হয়।
এছাড়া যাদুগর আছে White Star Line এর হেডকোয়ার্টার লিভারপুলে। আছে নির্মাণক্ষেত্র City Hall in Belfast, Northern Ireland -তে আরেকটি যাদুঘর। তার তাইতো এই ট্র্যাজেডির এত বছর পরেও এর স্মৃতি আমাদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে।
১৯৫৬ সালে Walter Lord এর মুভি "A Light To Remember" ছিল টাইটানিক নিয়ে আবর্তিত প্রথম কর্ম। যাত্রীদের বাঁচার আকুলতা, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা, ক্রুদের, প্রথম- তৃতীয় শ্রেণীদের মানসিক দ্বন্দ্ব, বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের ভাষ্য, ইত্যাদি ছিল বইটির মূল উপজীব্য। এখন পর্যন্ত এই বইটিকে টাইটানিক নিয়ে শ্রেষ্ঠকর্ম বলা হয়। পরবর্তীতে এর নামানুসারে ছবিও নির্মাণ করা হয়।
হলিউড পরিচালক James Cameron- -ও এই বইয়ের তথ্য সাহায্য নিয়ে তৈরি করেন "Titanic." বিলিয়ন ডলার আয়ে এবং ১১ টি অস্কার প্রাপ্ত এই সিনেমার সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই।
টাইটানিক কে ঘিরে অনেক নামকরা উক্তির মধ্যে অন্যতম হলঃ "down like the Titanic” যার মানে epic failure!
বলা হয়ে থাকে, “Sky is the limit” কিংবা যদি বলি, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।“ বোধ করি টাইটানিক ছিল এমন কিছু। এর সাথে জড়িয়ে আছে মানুষের অদম্য সৃষ্টির নেশা, আছে সৃষ্টিশীলতা, নিপুণতা, পরিশ্রম,একাগ্রতা, স্বপ্ন, অ্যাডভেঞ্চার আর ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষা—“Unsinkable!” শতবছর আগে বরফখণ্ডের আঘাতে টাইটানিক ডুবে গিয়েছিল সত্যি, কিন্তু মানুষের স্মৃতিতে এটি যেন সত্যিই “Unsinkable and unforgettable!!”
_________________________________________________
** তথ্য, সূত্র, ছবিঃ ইন্টারনেট, উইকি!!
টাইটানিক ট্র্যাজেডির শততম পূর্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী মাতামাতির কমতি নেই। মূলত সেই আগ্রহেই এটি লেখা। কিন্তু সুখকর বিপদ হল, টাইটানিক নিয়ে হাজার হাজার লেখা, লিঙ্ক, তথ্য- উপাত্ত!! সবকিছুকে এক করা- রীতিমতো হিমশিম ব্যাপার!! সবার জন্য শুভকামনা। ও হ্যাঁ টাইটানিক নিয়ে কথা হচ্ছে, এর টাইটানিক নিয়ে Celine Dion এর গাওয়া "My Heart Will Go On..." থাকবে না, তা হয় না।
বোনাসঃ টাইটানিক ছবির থ্রিডি ট্রেলার
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন