সংবাদ সম্মেলনে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ
বর্তমান সরকার ‘হেডলেস’
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার কার্যত ‘হেডলেস’। গতকাল ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপের নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। গ্রুপের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এ সরকারের মাথা কোথায় তা জনগণ খুঁজে পাচ্ছে না। মাথা থাকলে তো সরকার একের পর এক স্বাধীনতা ও দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপের পক্ষ থেকে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান, দৈনিক আমার দেশের উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ, কবি ও কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিয়া আক্তার বানু বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা নাগরিক ও কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের খবরদারি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিলÑ যা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সীমারেখার লঙ্ঘন। লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, বিদেশী কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতদের এসব অপতৎপরতা বন্ধ না হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং দেশের জনগণের আত্মমর্যাদা রক্ষা করা যাবে না। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ সম্পর্কে দেশবাসী ও সরকারকে সচেতন করতেই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপের আত্মপ্রকাশ বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, মাস কয়েক আগেও ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেন চলাচলে সীমান্তে সিকিউরিট ফেন্স তৈরিতে সরকার অসম্মত ছিল। কিন্তু সরকারের এক মাথা ভারত সফর করার পরই খাঁচার ভেতর দিয়ে ট্রেন চালাতে সম্মত হয়ে গেল সরকার। তিনি বলেন, আসলে সরকারের এক মাথা অপর মাথার খবর রাখে কিনাÑ সেটাই জনগণের প্রশ্ন।
সংবাদ সম্মেলনে আতাউস সামাদ বলেন, আমাদের সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা যা করছেন তা অন্য কোন দেশে করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং কোন দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানো রাষ্ট্রদূতদের কাজ নয়। তিনি বলেন, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের দেশ বলে কূটনীতিকরা যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না। জাতীয় নেতা এবং সরকারকে এ দিকটি মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, বাংলাদেশকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর চেষ্টা চলছে। তিনি জাতীয় পত্রপত্রিকার সমালোচনা করে বলেন, কূটনীতিকরা দেশ সম্পর্কে বললে সেটা খবর না। অথচ তা সব পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়। তিনি বলেন, দেশে একটি পরনির্ভরশীল শ্রেণী রয়েছে। তারাও দেশের ওপর বিদেশী খবরদারিতে সহায়তা করে। আতাউস সামাদ বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ এখন বিপন্ন। এ অবস্থায় আমাদের কেবল আত্মরক্ষা করলেই চলবে না। ঐক্যবদ্ধও হতে হবে। ফরহাদ মজহার বলেন, কোন রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে অন্য রাষ্ট্রের বন্ধু হতে পারে না। অথচ বর্তমান সরকার এমন নীতি নিয়েই এগোচ্ছে।
ড. রাজিয়া আক্তার বানু বলেন, বিদেশীরা নিজের স্বার্থেই অন্য দেশকে পরামর্শ দেয়। বিদেশীদের পরামর্শে তেল-গ্যাস বিক্রি করে নাইজেরিয়া এখন যেমন সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশকে হয়তো এমন ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। তিনি বলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিলে এদেশ হবে একটি যুদ্ধক্ষেত্র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় প্রতি তিন মাস পর পর দেশের বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের কার্যক্রম জনসমক্ষে প্রকাশ করবে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ।