চার্চ আর্কিটেকচার বলতে আমরা ক্রিশ্চিয়ানদের গীর্জার বিল্ডিংএর নির্মানরীতিকেই বুঝে থাকি। খ্রিষ্টধর্মের গত দুহাজার বছরের ইতিহাসে, কখনোও নতুন কিছু তৈরী করে বা কখনোও অন্যকোনকিছুকে নকল করে বিশ্বাসের পরিবর্তনশীলতা অনুসারে এলাকাভিত্তিক রীতিনীতি অনুসারে চার্চের গাঠনিক স্ট্রাকচার বিবর্তিত হয়ে আসছে। খ্রিস্টধর্মের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত চার্চ স্থাপত্যের ইতিহাসকে সময়কাল, দেশ/এলাকা এবং ধর্ম-সংক্রান্ত এই তিনভাগে আলোচনা করা যায়। বিষয়টি জটিল, কেননা এক কাজের জন্য নির্মিত বিল্ডিংকে অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। নতুন ভবন নির্মান কৌশল যেকোন পরিবর্তনকে অনুমোদন দেয়, ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত ভবন গুলো তাদের পূর্বসূরীকেই অনুসরণ করে।
চার্চ বিল্ডিংএর উৎপত্তি এবং বিকাশ:
সবচেয়ে সাধারণ চার্চ বিল্ডিংগুলো স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য নির্মানসামগ্রী দ্বারা অন্যান্য সাধারণ ভবনের মতই নির্মিত হয়। এধরনের চার্চগুলো সাধারণত আয়তাকার হয়ে থাকে। আবার আফ্রিকার দেশগুলিতে যেখানে বৃত্তাকার রীতিতে বসবাসের স্থান নির্মিত হয়, সেখানকার চার্চগুলোও বৃত্তাকার হয়। সাধারণ চার্চ মাটির ইট, কঞ্চি আর খড়ি, চেরাই করা কাঠ বা পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরী করা হয়।
ছাদগুলো হয়ত বানানো হয় তালপাতা, কলাপাতা, ঢেউটিন কিংবা কখনো কখনো ছোট পাথর দিয়েও। চতুর্থ শতাব্দী থেকে চার্চ পরিচালনা মন্ডলী স্থায়ীভাবে নির্মানের জন্যে পাকা ভবন একইসাথে শৈল্পিকতার ছোয়া খোজে। এটাই এজন্যেই চার্চ পরিচালনা মন্ডলী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা সময়, অর্থ এবং মেধা ব্যয় করছে চার্চের বিল্ডিংকে আরও মজবুত এবং সৌন্দর্যময় করার কাজে।
যেকোন যাজকসংঘ এলাকায়, চার্চটাই সবচে প্রাচীন বিল্ডিং হতে দেখা যায় এবং আয়তনে সবচেয়ে বিশালাকার হতে দেখা যায় (অগ্নিকান্ডের ঘটনা ছাড়া)। প্রায়ই এইসব চার্চ সেই সময়ের সবচেয়ে মজবুত নির্মানসামগ্রী দিয়ে নির্মিত হয়, বেশিরভাগই ইট কিংবা পাথর। প্রার্থনা করার সুবিধার্থে, চার্চে দুটো অংশ থাকতে হয়। একটি (হল) সর্বসাধারনের প্রার্থনার সময় ব্যবহৃত হয়, আরেকটি যাজকসভার মিটিং এর সময় লাগে। দুই রুমের স্ট্রাকচারের এই ফর্মুলায় অনেক সময় আইল, টাওয়ার/মিনার, চ্যাপেল এবং ভেস্ট্রিস এবং ট্রান্সেপ্টস এবং লাশঘরও সংযুক্ত হয়। অবশ্য অতিরিক্ত কক্ষগুলো মূল প্ল্যানের অংশও হতে পারে, কিন্তু প্রায়শই দেখা যায় বিশেষকরে সুপ্রাচীন চার্চগুলোর ক্ষেত্রে, মূল বিল্ডিএর সাথে আলাদাভাবে বিশেষ কক্ষগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে এবং প্রত্যেকেরই তার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী বজায় রেখেছে
শুরুরকথা:
চার্চ নির্মানের প্রথমদিককার তিনশ বছরে, খ্রিষ্টধর্ম ছিল বিতর্কিত তাই নিষিদ্ধ। চার্চ নির্মানও হয়েছে খুব কমসংখ্যক। প্রথমদিকের খ্রিষ্টানরা উপাসনা করত ইহুদীদের সাথে অথবা বাসায়। খ্রিষ্টধর্ম এবং ইহুদীবাদ আলাদা হয়ে যাবার পরপরই খ্রিষ্টানরা হাউজ চার্চ নাম দিয়ে মানুষের বাসায় প্রার্থনা করতে লাগল। অবশ্যই এটা হত ধর্মের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বাসায়। সেইন্ট পল লিখেছেন - "এশিয়ান সমাবেশ তোমায় স্বাগত জানাবে। এ্যাকুইলা এবং প্রিসিলা তোমায় আরো বেশি স্বাগত জানাবে, ঈশ্বরের নামে; তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় সমাবেশে একসাথে।" - করিন্থিয়ান্স (১৬:১৯)
কিছু গেরস্থবাড়ীকে চার্চ হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছিল। ডুরা ইউরোপোস চার্চ হল সবচেয়ে পুরাতন চার্চে পরিনতকরা বাড়ীগুলির একটি, ২০০ সালের পরপরই নির্মিত, একটা দেয়াল ভেঙে ফেলে দুই রুমকে একরুমে পরিণত করা হয়েছিল এবং একটা ডায়াস বসানো হয়েছিল। ঢোকার পথে একটা ছোট্ট রুমকে ব্যপ্টিস্ট্রি বানানো হয়েছিল। কিছু চার্চ বিল্ডিংকে বানানোই হয়েছিল সমাবেশস্থল রূপে, যেমন: নিকোমাডিয়ার প্যালেসের বিপরীত দিকে। এর ধ্বংসকে বাইবেলে বা অন্য বইতে বর্ণনা করা হয়েছে।
হাউজ চার্চ থেকে সত্যিকারের চার্চ:
চতুর্থ শতকের প্রথমদিন থেকেই অধিকাংশ খ্রিষ্টান সমাজ বাসাতেই প্রার্থনা করত, বিশেষকরে গোপনে। কিছু রোমান চার্চ (যেমন: রোমের স্যান ক্লিমেন্ট) সরাসরি বাসার উপরেরই নির্মান করা হয়েছে, আগে যেখানে সমাবেশ ও প্রার্থনা করা হত। অন্যান্য প্রথমদিকের রোমান চার্চগুলি বানানো হয়েছিল বধ্যভূমির কাছাকাছি কিংবা খ্রিস্টান কবরস্থানের প্রবেশমুখে। ৩১২ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের মিলভিয়ান ব্রিজ যুদ্ধের সময় খ্রিষ্টধর্ম ছিল গোছানো এবং যুদ্ধজয়ের পরপরই পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিল রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্ম। ধর্মীয় বিশ্বাসটি ভূমধ্যসাগরে ছড়িয়ে পড়েছিল যার প্রভাব বিল্ডিং গুলোতেও লাগতে থাকল। খ্রিস্টীয় স্থাপত্যের নির্মানরীতি ছিল নাগরিক এবং রাজকীয় উভয়ের প্রভাবেই আর তাই ব্যাসিলিকা ( যা মূলত একটি আয়তাকার মিটিং হল ছিল) চারিদিকে পরিচিত হল চার্চের মডেলরূপে। মূল গির্জার অংশের চারপাশে ছিল আইল আর কিছু ক্ষেত্রে গ্যালারী এবং ক্লেরেস্টরীস। নাগরিক ব্যাসিলিকার শেষমাথায় গম্বুজের মতন চূড়া থাকলেও ক্রিশ্চিয়ান ব্যাসিলিকায় সাধারণত বেদীর উপরে গম্বুজ থাকত যেখানে পাদ্রীরা ডায়াসের সামনে বক্তৃতা দিত। মূর্তিপূজকগোষ্ঠী প্যাগান ব্যাসিলিকায় প্রধান আকর্ষন তাদের সম্রাটের মূর্তিতে থাকলেও খ্রিস্টীয় ব্যাসিলিকায় প্রাধান্য থাকত তাঁদের রক্ষাকর্তা, ত্রাতা এক ও অদ্বিতীয় ভালোবাসাময় ক্ষমাশীল ঈশ্বরের প্রতি
প্রথমদিককার চার্চ বানানোর বৈশিষ্ঠ:
প্রাচীন রোমান সভ্যতায় নির্মিত চার্চগুলোতে যেসকল বৈশিষ্ঠ বিদ্যমান/পরিলক্ষিত হয়/ দৃষ্টিগোচর হয়:
এ্যাট্রিয়াম:
যখন প্রারম্ভিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় চার্চ তৈরী করা শুরু করল, তারা একটা বিশেষ রীতি স্থাপন করল আর সেটা হল এ্যাট্রিয়াম বা স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গন। এখন আর এ্যাট্রিয়াম দেখা যায়না। চমৎকার উদাহরণ হতে পারে রোমের ব্যাসিলিকা অফ সান ক্লেমেন্ট আর আরেকটা হচ্ছে, মিলানে রোমস্কয়ার আমলে নির্মিত স্যান্ট এ্যাম্রোগিও এরটা। এই ধরনের এ্যাট্রিয়া'র প্রভাব এখনও দেখা যায় অনেক ক্যাথেড্রালের পাশের চতুস্কোন প্রাচীরে এবং রোমের সেইন্ট পিটার্সের ও ভেনিসের সেইন্ট মার্কসের পিয়াজ্জে (বড় চতুস্কোন বদ্ধ এলাকা) এবং পিসার ক্যাথেড্রলের ক্যাম্পোস্যান্টোতে বা পবিত্র মাঠে।
ব্যাসিলিকা:
প্রারম্ভিক চার্চের গঠন কিন্তু রোমান মন্দির থেকে আসেনি, যেহেতু ওগুলোর ভিতর যাজকসভার বসার মত যথেষ্ট যায়গা ছিল না। তাই আবির্ভাব হল রোমান ব্যাসিলিকার, সভার আয়োজন করা যেত, বিচারকার্যও চালানো যেত। এটাই পরবর্তীকালে "ক্রিশ্চিয়ান ব্যাসিলিকা" নাম নিয়ে বৃহৎ চার্চের জন্য একটা আদর্শরূপে তৈরী হল।
যদিও রোমান ব্যাসিলিকা আর রোমান স্নানঘর উভয়েরই কোর ছিল একটা বড় আয়তনের মাঝখানে ফাকা যায়গা উচু ছাদ বিশিষ্ট যার নিচু চেম্বার বা প্রশস্ত তোরণযুক্ত প্যাসেজ দিয়ে দুই পাশই আটকানো/ঢাকা থাকত। গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট ছিল যে, ব্যাসিলিকার দুই পাশের শেষ মাথায় একটি করে প্রজেক্টিং কক্ষ ছিল। বা ছিল "apse", একটি অর্ধবৃত্তাকার ডোমবিশিষ্ট যায়গা। এটাই ছিল বিচারকদের বসার যায়গা/ বিচারসভার যায়গা। এটা রোমান চার্চ স্থাপত্যে ঢুকে পড়ল এবং পরবর্তীতে বিভিন্নরূপে ক্যাথেড্রল আর্কিটেকচারে ঢুকে পড়ল
বেমা:
সময়ের সাথে সাথে যখন পাদ্রীর সংখ্যা বাড়ল, টেবিল বা বেদীতে হলি কমিউনের সামনে পবিত্র রুটি-পানীয় পরিবেশন করানোর সময় সবাইকে একসাথে ধরানোর মতন যায়গা ছিল না। তখনই বেমা নামক এই উচু ডায়াস বহু ব্যাসিলিকান চার্চে দেখা যেতে লাগল/যায়গা করে নিল। রোমের সেইন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা আর সান পাওলোর সময় এই বেমাকে মেইন মিটিং হল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হল, যাতে দুই বাহু সৃষ্টি হয়ে এপস কে T শেইপ দিল। এভাবেই শুরু হল ল্যাতিন ক্রস চার্চ শেইপের যা এখন বহু পশ্চিমা বড় চার্চ এবং ক্যাথেড্রলে অহরহই দেখা যায়। ক্রুশের দুই বাহুকে ট্রান্সেপ্ট নামে অভিহিত করা হয়
স্মৃতিস্তম্ভ:
চার্চ আর্কিটেকচারের আরেকটা ধাচ হল স্মৃতিস্তম্ভ। এটি হল একটি চারকোনা কিংবা বৃত্তাকার ডোম দিয়ে ঢাকা প্রাচীন পাথরের উপর কোন ভাস্কর্য অথবা শিলালিপি দ্বারা অলংকৃত কোন রোমান বীরের সমাধী। সম্রাট কনস্টানটাইন নিজেও তাঁর কন্যা কস্টান্জার সমাধির উপর বৃত্তাকার ডোম দিয়ে আচ্ছাদিত করেন এবং চারপাশে স্তম্ভঘেরা প্যাসেজওয়ে বানিয়েছিলেন। সম্রাটের মেয়ের সমাধিটি কেবল মাত্র একটি কবরই ছিল না বরং এটি একটি উপাসনালয় এ পরিনত হয়েছিল। এটাই ছিল সেইধরণের চার্চগুলোর ভিতর প্রথম যেগুলো কিনা লম্বালম্বিভাবে ডিজাইন না করে সেন্ট্রালি/কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল। জেরুজালেমের হলি সেপুলচ্রে চার্চের মতন বৃত্তাকার চার্চ নির্মানে সম্রাট কনস্টানটাইনই ছিলেন অগ্রদূত/পথিকৃত। যেগুলো কিনা পরবর্তীতে অনেক চার্চ নির্মানের আদর্শ মডেলে পরিনত হয়েছে যার মধ্যে আছে রোমের প্রোটো মার্টায়ার স্টিফেনের ধ্বংসাবশেষ, সান স্টিফানো রটোন্ডো আর র্যাভেনার সান ভিটাল ব্যাসিলিকা।
প্রাচীন যুগের বৃত্তাকার কিংবা পলিগোনাল বা বহুভূজ আকৃতির চার্চ অবশ্য বেশ কমই দেখা যায়। যেমন: ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বা স্পেনের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন স্থানে হলি সেপুলচ্রে চার্চের অনুকরণে ক্রুসেডের সময়কালীন লন্ডনের টেম্পল চার্চ নির্মান করা হয়েছে, এগুলো অবশ্য সংখ্যায় অতি নগন্য। তবে অবশ্য ডেনমার্কে এরকম রোমানস্কয়ার চার্চের বেশ প্রাধান্য লক্ষ করা যায়/অহরহই চোখে পড়ে। ইস্টার্ন ইউরোপের বিভিন্ন অংশেও গোলাকার টাওয়ার আকৃতির রোমানস্কয়ার পিরিওডের চার্চ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই স্থানীয় ঢংএ তৈরী। আরও উদাহরনের মধ্যে আছে ভিসগার্ডের সেইন্ট মার্টিন্স রটুন্ডা, চেক রিপাবলিকে অবস্থিত, যেটার ব্যাপারে বিশদ আলোচনায় আসছি
বেশিরভাগ ক্যাথেড্রল আর বড় চার্চেরই ক্রুশাকৃতির গ্রাউন্ডপ্ল্যান হয়ে থাকে। পশ্চিমা ইউরোপে চার্চগুলো পশ্চিমমুখী হয়ে থাকে যেখানে চার্চের মধ্যভাগ একটি ট্রান্সেপ্ট দিয়ে বিভক্ত থাকে, এটাকেই ল্যাটিন ক্রস রীতি বলে। ট্রান্সেপ্টগুলো কখনো আইলের দিকে প্রজেক্ট করানো থাকে যেমনটা হয়েছে ইয়র্ক মিনিস্টারে আবার নাও করা থাকতে পারে যেমন এ্যামিনস ক্যাথেড্রলে।
বাইজেন্টিয়ামের প্রথমদিকের চার্চগুলোর অনেকগুলিই পশ্চিমমুখী করে করা হয়েছে। ইস্তান্বুলের হাগিয়া সোফিয়ায়, পুরো প্ল্যানটি দাড় করানো হয়েছে একটা চতুস্কোন বর্গাকার ভূমির ওপরে যেখানে একটি বিশাল ডোমের দুইপাশে দুইটি উপ-ডোম বসানো হয়েছে এবং অপর প্রান্তে আছে আয়তাকার ট্রান্সেপ্ট। এমনকি একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই বড় চার্চটি পরবর্তী আরও অনেক চার্চের জন্যে অনুকরনীয় আদর্শ মডেল হয়ে গেছে। প্ল্যানটা অনেকটা এরকম: এখানে একটা চারকোনা মেঝের উপরে চার্চের মধ্যভাগ, চ্যান্সেল এবং ট্রান্সেপ্ট (যার দুই বাহু সমান) এসবের সমন্বয়ে ক্রুশাকৃতি তৈরী হয়। প্রচলিত চার্চগুলোতে পুরো ফ্লোরের উপরে একটা ডোম থাকে, এটাই এখন রীতি হয়ে উঠেছে যা দেখা যায় পূর্ব ইউরোপে এবং রাশিয়ার অনেক চার্চে
Divergence of Eastern and Western church architecture
পূর্বীয় এবং পশ্চিমা চার্চের মধ্যকার স্থাপত্যের ভিন্নতা:
৪০০ শতকের দিকে রোমান রাজত্বে একপ্রকার বিভেদ আসে, যার ফলে রাজত্বের পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় আচার -আচরন পালনে বিভেদ (এবং স্বাতন্ত্র) লক্ষ্য করা যায়। অবশেষে ১০৫৪ সালে "চরম বিভেদ" এর মাধ্যমে এর অবসান হয়।
Eastern Orthodoxy and Byzantine Architecture
ইস্টার্ণ অর্থোডক্স আর বাইজেন্টাইন আর্কিটেকচার: (পূর্বীয় মূলধারার এবং বাইজেন্টাইন স্থাপত্য)
৬ষ্ঠ শতকে কনস্টান্টিনোপল স্থাপত্য (বর্তমানে তুর্কী) এমনকিছু চার্চ নির্মান করে যেকানে কেন্দ্রিয়ভাবে এবং ব্যাসিলিকা দুই ধরনের নির্মাননীতির সুন্দরভাবে প্রয়োগ ঘটেছিল, সেমি-ডোম দ্বারা এক্সিস বানানো এবং অন্যপাশে আর্কেডেড গ্যালারী থাকত। হাগিয়া সোফিয়া (বর্তমানে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে) হল সবচে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যার প্রবল প্রভাব পড়েছে পরবর্তীতে অনেক খৃষ্টিয় এবং ইসলামিক স্থাপত্যে যেমন জেরুজালেমের দোম অফ দা রক। আরেকটা হচ্ছে, দামেস্কের উমাইয়াদ গ্রেট মস্ক। পরবর্তির অনেক বড় বড় মূলধারার চার্চে, বিশেষকরে যেগুলা বেশি বড়, ডিজাইন করা হয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে প্ল্যান করে পূর্বদিকে ডোম দিয়ে এবং পশ্চিমদিকে আইলসহ চার্চের মূল অংশ রেখে।
১৬শ শতকের দিকে রাশিয়ায় একধরনের কেন্দ্রিয়ভাবে নির্মান করা চার্চ প্রাবল্য পেতে থাকে। এখানে যেটা করা হয় সেটা হল, ডোম বাদ দিয়ে ডোমের যায়গায় একপ্রাকার কৌনিক ছাদ দেয়া হয় যেটা ছিল ডোমের চেয়ে অনেক চিকন এবং লম্বা। ধারণা করা হচ্ছে, এরকম করে ডিজাইন করার উড্দেশ্য ছিল তুষারপাত থেকে চার্চের ছাদকে রক্ষা করা। মস্কোর রেড স্কয়ারের সেইন্ট ব্যাসিলস চার্চের কথাই সবার আগে মনে আসে এই ধরনের চার্চের উদাহরনের কথা বললে।
মধ্যযুগের পশ্চিমা রীতি:
প্রার্থনা করতে আসা লোকের সংখ্যা বাড়ায় "বারান্দা চার্চের" সংখ্যা বাড়তে লাগল। কেন্দ্রীয়ভাবে বানানো চার্চের সংখ্যাও কমতে লাগল।
আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন চার্চের গঠনও পরিবর্তিত হতে লাগল। "দুই রুমের চার্চ" টাই ইউরোপীয় রীতি হয়ে গেল। প্রথম রুমটা হল চার্চের মূল অংশ যেটা কিনা পাদ্রীসভা কর্তৃক ব্যবহৃত হত। আর দ্বিতীয় রুমটি -"দ্যা স্যাংচুয়ারী" হল সেই স্থানটি যেখানে জনসমাগম হলে প্রার্থনা মন্ত্র পাঠ করা হত। এই ব্যবস্থার সুবিধা হল, পাদ্রীগণ কিছুটা দূর থেকে আইলের ফাঁক দিয়ে জনসমাগমকে দেখতে পেত, (পরবর্তীতে অবশ্য রুড স্ক্রীন নামের একপ্রকার কাঠের পর্দা ব্যবহার করা হয়েছিল)। তখন আগত দর্শনার্থীরা অর্থাৎ জনগনই ছিল সমাবেশে মূখ্য বিষয়, পাদ্রীসভার অংশগ্রহণ এখানে মুল আলোচ্য বিষয় ছিল না।
স্তুতিমন্ত্র অবশ্য ল্যাটিনে পাঠ করা হত, যদিও প্রার্থনাকারীরা তাদের নিজেদের ভাষায় দেবতাদের নিকট শ্রদ্ধা অর্পন করে তৃপ্তি বোধ করতেন। দেখার সুবিধার্থে কিছু চার্চের স্কুইন্ট নামের কিছু ফুটা ছিল, হিসাব করেই দেয়াল এবং পর্দার মধ্যে দিয়ে কাটা হত, যেখান দিয়ে চার্চের মধ্যভাগ থেকেও সবকিছু দেখা যেত। আরেকটা কথা, একটা দ্বৈত রীতি ছিল যে প্রত্যেক যাযকই তাঁর অনুসারীদের জন্যে একবার করে খুতবা/বয়ান/বক্তৃতা/ভাষন দেবে / প্রার্থনা করবে কিন্তু একটা বেদী একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না (প্রতি দিন)। তাই একাধিক বেদী রাখারও ব্যবস্থা করতে হল যেটা পরবর্তীতে বিশেষকরে মোনাস্টিক চার্চের একটা রীতি হয়ে গেল।
With the wider use of stone by the Benedictine monks, in the tenth and eleventh centuries, larger structures were erected.
স্তুতিমন্ত্রের পরিবর্তন ছাড়াও, নিত্যনতুন প্রযুক্তি এবং নির্মানসামগ্রীর ব্যবহার চার্চ নির্মান স্থাপত্যের একটা গুরুত্বপুর্ণ দিক হিসেবে প্রকাশ পেল। উত্তর ইউরোপে প্রায়ই কাঠের তৈরী চার্চের দেখা পাওয়া যেত (প্রথমদিকে) কিন্তু একারনেই সেইসব চার্চ আর টেকেনি। বেনেডিক্টাইন মংকসমূহে বড় স্থাপনা দাড়া করিয়ে রাখতে ব্যাপকভাবে পাথরের প্রভাব লক্ষ করা গেল ১০ এবং ১১ শতকের দিকে।
Practical function and symbolism were both at work in the process of development.
দুই কক্ষের চার্চে, বিশেষ করে মঠ টাইপের চার্চে; কখনো ট্রান্সেপ্ট থাকত যেটা ক্রুশাকৃতি তৈরী করত, এখন অবশ্য গ্রাউন্ডপ্ল্যানের সংগেই থাকে। এরফলে ভবন গুলো দেখেই বোঝা যেত এগুলো কিকাজে ব্যবহৃত হয়। কখনো কখনো ক্রুসটা টাওয়ার দিয়ে ঘেরা থাকত, যেটাই চার্চের মূল ফোকাস; যার নাম ছিল কলাপ্স এট এলি। আবাসিক মঠগুলোতে এখন প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার জন্যে সাধুদের বা ধর্মীয়রীতি অনুসারে যায়গার অনুমোদন দেওয়া আছে, তার ফলে মঠগুলো লম্বাটে হয়ে চ্যান্সেল হয়ে গেছে যেটা এখন পর্দা দিয়ে চার্চের মূল অংশ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। চার্চের সিম্বল এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগ, উভয়েরই সমন্বয় ঘটে নির্মানকার্যে।
চার্চ নির্মান স্থাপত্যে যেসব বিষয় প্রভাববিস্তার করে/ চার্চ আর্কিটেকচারে প্রভাববিস্তারকারী উপাদানসমূহ:
ইউরোপের সর্বত্রই বিভিন্ন এলাকায় নির্মিতব্য চার্চের স্থাপত্যাকার গঠনে এলাকাভিত্তিক বিভিন্নতা দেখা যায়। আবার এমনও হয়, একই এলাকায় একই
যেসব ফ্যাক্টর চার্চের ডিজাইনে ভূমিকা রাখতে পারে, সেগুলা হল- এলাকার অবস্থা, শহরের অবস্থান, গ্রাম নাকি মফস্বল শহর, এ্যাবে চার্চ নাকি কলেজিয়েট চার্চ, চার্চটি বিশপের অধীনে থাকবে নাকি কোন স্থানীয় ধনাঢ্য পরিবারের অধীনে থাকবে, চার্চে কি মূর্তি থাকবে নাকি ছবি থাকবে ইত্যাদি।
বিশেষকরে, এ্যাবে চার্চ আর কলেজিয়েট চার্চ যা কিনা খুবই ক্ষুদ্র এক ধর্মীয় উপগোষ্ঠীকে (মাযহাব) সার্ভ করে, সাধারণত অন্যান্য যাযকপল্লী চার্চ থেকে অত্যাধিক মাত্রায় ভিন্নতা প্রদর্শন করে, এমনকি একই এলাকায় একই সময়ে নির্মিত হলেও।
বিশপের অধীনে থাকা চার্চটি সাধারনত চার্চ আর্কিটেকচারের উপর পারদর্শী স্থপতি দ্বারাই ডিজাইন এবং নির্মান করা হয়, অন্যান্য সাধারণ যাযকদের তত্বাবধানে নির্মিত চার্চের মত করে নয়।
অনেক যাযকপল্লী সমৃদ্ধ চার্চ সাধারণত স্থানীয় ধনী পরিবারের অধীনে নির্মিত এবং রক্ষনাবেক্ষন হয়ে থাকে। এই ফ্যাক্টরটাই চার্চের গঠন এবং ডিজাইনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এটাই স্বাভাবিক যে স্থানীয় অভিভাবকের আর্থিক সামর্থের উপর চার্চের ডিজাইনে প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, চার্চের অধিকার যে কারো অধীনে আছে সেটা বুঝা যাবে চার্চে আয়তনে, কবরে, মেমোরিলাল বা স্মৃতিস্তম্ভে, ফিটিংসে, কাচের ডিজাইন প্যাটার্ন এবং আরো অন্যসব সাজসজ্জায়।
যেসব চার্চে উল্লেখযোগ্য দামী মূর্তি, বিগ্রহ কিংবা ধর্মীয়ভাবে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আছে, যেগুলো একপর্যায়ে তীর্থস্থানের যায়গায় পরিবর্তিত হয়েছে এবং শেষপর্যায়ে ব্যাসিলিকার মর্যাদা পেয়েছে। আবার, অনেক চার্চে বিভিন্ন ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তির বা বিখ্যাত সাধুর দেহাবশেষ (বা তার অংশ) এমনভাবে রক্ষিত হয়েছে যা কোন কোন ক্ষেত্রে তীর্থস্থানের মত গুরুত্ব বহন করেনা, যা থেকে চার্চ পরিচালনার খরচ আসতেও পারে আবার নাও পারে।
সাধু ব্যক্তির জনপ্রিয়তা, নিদর্শনটির ধর্মীয় মুল্য, চার্চের আকার এবং গুরুত্ব, যে ব্যক্তির স্মৃতিতে চার্চটি নির্মান করা হয়েছে তার ধর্মীয় গুরুত্ব এগুলো সবই বিভিন্ন পরিস্থিতে চার্চের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে আবার নাও পারে। দুজন আপাতঃ দৃষ্টিতে অপিরিচিত সাধু, স্যান গিওভানি এবং সান পাওলো ভেনিসে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ চার্চের নামকরনের মাধ্যমে সম্মানিত হয়ে আছেন। যা Dominican Friars কর্তৃক বানানো হয়েছিল সমসাময়িক আরেকটি চার্চ ফ্রারি চার্চের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্যে। ১৯ শতকেে শেষদিকে ভেনিসে রেলস্টেশন নির্মানের জন্যে একটা চার্চ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, আকৃতিতে অনেক ছোট ছিল চার্চটি, এখানে সেইন্ট লুসির দেহাবশেষ সংরক্ষিত ছিল, যে কিনা ছিল একজন শহীদ। এরকম অনেক চার্চই আছে যেগুলো সারা পৃথিবীর ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট কর্তৃক সম্মানিত হয়ে আসছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই, নরওয়েতে চার্চ স্থাপত্যে আধুনিক নির্মান সামগ্রীর যেমন: কনক্রিট বা ধাতব পাত/প্যানেল ব্যবহার করা শুরু হয়। বদো ক্যাথেড্রাল বানানো হয়েছিল কনক্রিট ব্যবহার করে বিশাল ব্যাসিলিকা বানানোর কথা মাথায় রেখে। ১৯৬০ এ মোটামুটি ঘোষনা দিয়েই ট্রেডিশনাল আর্কটিক ক্যাথেড্রল বানানো বন্ধ হয় সেগুলো বানানো হত হালকা কংক্রিট এবং এ্যালুমিনিয়ামের পাত দিয়ে।
কাঠের চার্চ:
নরওয়েতে একটা সময় কাঠের তৈরী চার্চ জনপ্রিয় ছিল, হয়তোবা কাঠের সহজলভ্যটার কারনেই। এগুলো সাধারণত জনবিরল বা অতটা ঘনবসতিপূর্ণ না এমন যায়গায়ই নির্মিত হত। শুধুমাত্র মধ্যযুগীয় আমলে নির্মিত চার্চগুলো বাদ দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত নির্মিত চার্চের অধিকাংশ (প্রায় ৯০%)ই ছিল কাঠনির্মিত। মধ্যযুগে নরওয়েতে প্রায় হাজারখানেক কাঠের তৈরী চার্চের বেশিরভাগই ছিল ঠেকনা দিয়ে দাড় করানো টেকনিকে বানানো। আর বাকি ২৭১ ছিল রাজমিস্ত্রী দিয়ে পাকা করে বানানো। প্রোটেস্ট্যান্টদের পুনঃগঠনের পরে নতুন চার্চের নির্মান এবং পুরনো চার্চের নতুন করে নির্মান শুরু হয়। কাঠই ছিল মূল ম্যটেরিয়াল কিন্তু গাছের গুড়িও প্রাধান্য পেতে লাগল।
In Ukraine, wood church constructions originate from the introduction of Christianity and continued to be widespread, particularly in rural areas, when masonry churches dominated in cities and in Western Europe.
গাছের গুড়ি দিয়ে বানানো চার্চগুলো ছিল ঠেকনা দিয়ে লম্বাভাবে দাড়া করানো চার্চের চেয়ে কম শক্তপোক্ত। গাছের গুড়ি দিয়ে বানানো চার্চগুলো ছিল গাঠনিকভাবেই লম্বা দেয়াল নির্মানের জন্যে অনুপযোগী বিশেষকরে যদি কাঠ কেটে জানালা বানানো লাগত। ট্রান্সেপ্ট জুড়ে দেওয়ার পরে কাঠের গুড়ির স্থায়িত্ব খানিকটা বাড়লো যেটাই কারণ ছিল ১৬০০ এবং ১৭০০ সালের সময়কালে এই টেকনিকটি বহুল ব্যবহৃত হওয়ার। ১৭৫৯ সালে একটি হারিকেনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে ওল্ড ওল্ডেন চার্চটাকে পুরোটাই একটা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলা হল। পরে চার্চটাকে একনভাবে ক্রুশাকৃত্তি দিয়ে বানানো হল যাতে এটা সর্বোচ্চ বাতাসেও টিকে থাকতে পারে। গাছের গুড়ির দৈর্ঘ্যই চার্চের দেয়ালের দৈর্ঘ্য হয়। উদাহরনস্মরূপ: শ্যামনগর চার্চে কাঠের গুড়ির জোড়া লাগানোর অসুবিধা দূর করতে কোনাগুলি কেটে ফেলা হত। ফলস্বরূপ: চার্চটি আয়তাকার না হয়ে অষ্টভূজাকৃতির হত।
ক্রুশাকৃতি দেওয়ার ফলে চার্চগুলো আরও বেশি দৃঢ় হত কিন্তু ট্রান্সেপ্টের কোনায় আসনবিন্যাসের কারনে মূল বেদী/মন্চ এবং মন্চে উপবিস্ট/আসনগ্রহণকারী যাযকসম্প্রদায়কে আর দেখতে পাওয়া যেত না, দেখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করত। অষ্টভূজাকৃতির ফ্লোর প্ল্যান হওয়ার কারণে মন্চ দেখতেও সুবিধা হত আবার শক্তপোক্ত স্ট্রাকচারও হত, মোটকথা চার্চের মধ্যভাগ তুলনামূলকভাবে বেশ বড় হত।
Håkon Christie বিশ্বাসনুসারে, এটাই ছিল ১৭০০ সালের দিকে অষ্টভূজাকৃতির চার্চের জনপ্রিয় হওয়ার কারণ।
Vreim বিশ্বাস করতেন যে, গাছের গুড়ী দিয়ে চার্চ বানানোর কৌশল আবিস্কৃত/প্রয়োগ হবার পরপরই নরওয়েতে চার্চের ডিজাইনে একপ্রকার নতুন সমাহার আসতে শুরু করে।
ইউক্রেনে কাষ্ঠ নির্মিত চার্চের নির্মান আসে মূলত ক্রিশ্চিয়ানী থেকেই এবং সেটা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে গ্রামান্চলে যখন কিনা পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ইটের গাথুনি দিয়ে নির্মিত চার্চই শহরে বেশি জনপ্রিয় ছিল।
ইথিওপিয়ান চার্চ আর্কিটেকচার:
যদিও এর মূল ছিল পূর্বীয় খ্রিষ্ট মতবাদ, বিশেষ করে সিরিয়ান চার্চগুলোতে, তারপরেও পরবর্তীতে ইউরোপীয় ধাচের ছোয়া লাগায়, ইথিওপিয়ার মূলধারার চার্চগুলো কিন্তু তাদের নিজস্ব রীতি / স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছিল। ওখানকার সবচে প্রাচীন চার্চে ব্যাসিলিকার মত গঠন পাওয়া যায়। উদাহরনস্বরূপ: ডেব্রে ডেমোকে সজ্জিত করা হয়েছিল পুনঃব্যবহৃত চারটি মনোলিথিক কলাম দিয়ে চার্চের মধ্যভাগকে আলাদা করে দিয়ে। এটার পশ্চিম দিক ছিল নিচু নার্থেক্স এর ছাদ দেয়া/ নিচু ছাদের নার্থেক্স দেওয়া। কিন্তু পূর্বপাশে এটার ছিল মাকদাস বা হলি অফ হলিস। ভবনটির একমাত্র আর্কটি দিয়ে আলাদা করা ছিল (!!!)
পরবর্তী সময়কালে, অর্থাৎ খ্রিষ্টপরবর্তী সহস্রাব্দের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথমদিকে শুরু হয়ে ১৬শ শতক পর্যন্ত ছিল প্রচলিত মাধ্যম এবং পাথের কুঁদে বানানো উভয় মাধ্যমের ব্যবহার। যদিও এখন পর্যন্ত টিকে থাকা উদাহরনের নিদর্শন কেবল গুহাতেই পাওয়া যায়, থমাস পাকেনহ্যাম ওয়ালো তে একটা উদাহরণ খুজে পান যার বৃত্তাকার দেয়ালের ভিতরদিকে পরবর্তী আমলের প্রযুক্তি দ্বারা বাধাই করা হয়েছে। আবার এরকম বিল্ট-আপ বা জোড়া-তালি দেওয়া চার্চের আরেকটা উদাহরণ হল Yemrehana Krestos, যার সাথে Debre Damo এর প্ল্যান এবং নির্মান কৌশলের অনেক মিল পাওয়া যায়।
আর এই সময়কালের আরেকটা স্টাইল হল, হতে পারে এটাই ইথিওপিয়ার আর্কিটেকচার ঐতিহ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দিক; আর সেটা হল মনোলিথিক বা পাথরের চার্চ। এগুলোর মধ্যে পাহাড়ের পাশ কেটে প্রার্থনার জন্যে বানানো ঘরবাড়ীও পরে। Abreha we Atsbeha, যেটার মধ্যভাগ আনুমানিক বর্গাকার এবং ট্রান্সেপ্ট দিয়ে ক্রুশাকৃতি বানানো হয়েছে, এটাই এক্সপার্টদের প্রলুব্ধ করেছে এই চার্চটাকে ক্রস-ইন-স্কয়ার চার্চের ক্যাটাগরিতে ফেলার জন্যে। তারপর আসে চার্চেস অব লালিবেলার কথা, যেগুলো তৈরীই করা হয়েছিল তুলনামূলকভাবে নরম লাল চুনাপাথরের পাহাড়ে কমবেশী খোদাই করে। কিছু কিছু চার্চতো যেমন, Bete Ammanuel আর ক্রস শেইপ Bete Giyorgis দাড়িয়ে ছিল চারপাশে থেকে আগ্নেয় চুনাপাথর সরিয়ে ফেলার পরেও, যেখানে কিনা Bete Gabriel-Rufael আর Bete Abba Libanos এর মতন অন্যান্য চার্চগুলো ছিল কেবল একপাশ বা দুপাশ থেকে পাথর সড়িয়ে ফেলা। আর মজার ব্যাপার হল এরকম সব চার্চেই ঢুকতে হয় একপ্রকার গোলকধাঁধার মত পাথুরে সুরঙ্গপথ পেরিয়ে।
ইথিওপিয়ান চার্চ আর্কিটেকচারের শেষ সময়কালে (যেটা এখনও পর্যন্ত চলছে) এর বিশেষত্বই হল কৌনিক ছাদ বিশিষ্ট গোলাকার চার্চ। দেকে মনে হবে ইথিওপিয়ান সাধারণ বসতবাড়ীই যেগুলোতে পাহাড়ী লোকেরা বসবাস করে। সবকিছুতে মিল থাকা সত্ত্বেও ইন্টেরিওর এবং কক্ষের লেআউট কিন্তু একদমই আলাদা। কক্ষের বিন্যাসকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে: (১) মাসডাক: যেখানে কিনা পবিত্র ধর্মবানী লিপিবদ্ধ ট্যাবলেটই কেবল থাকে আর সেখানে শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরোহিতরাই প্রবেশ করতে পারে, অন্য সাধারনের জন্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ। (২) কিদিষ্ট নামের একটি ভ্রাম্যমান টেবিল যেটা লোকজনের মাঝে চলাচলে করে থাকে আর (৩) qene mehlet নামক আরেকটা ভ্রাম্যমান টেবিল যেটা বাইরে থাকে, বিশেষ নৃত্যশিল্পী বা dabtaras কর্তৃক ব্যব হৃত হয় আর বাকি সবাইও ব্যব হার করতে পারে...
খ্রিষ্টধর্মের সংস্কার এবং চার্চের গঠনে এর প্রভাব:
১৬শ শতকের শুরুর দিকেই মার্টিন লুথার আর ক্রিষ্টধর্মের সংস্কারায়ন এই দুয়ে মিলে চার্চ আর্কিটেকচারের ত্বরিৎ পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রোটেস্ট্যান্টদের সংস্কাররীতি অনুযায়ী, ধর্মীয় বক্তৃতাকে চার্চের অন্যতম বৈশিষ্ট করা উচিৎ। এর ফলে যাযকরাই চার্চের ভিতরের মূল আকর্যনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেল আর তাই চার্চের ভিতরের ডিজাইন এমনভাবে করা হল যাতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সবাই সুস্পস্টভাবে চার্চের প্রতিনিধিকে দেখতে ও শুনতে পায়। আর পশ্চিমা চার্চের মূল ফিচারের মধ্যে যাযকরা তো সবসময়ই ছিল। প্রোটেস্ট্যান্টিজমের জন্মের সাথেসাথেই খ্রিষ্টধর্ম চর্চার রীতিনীতি আর চার্চের ডিজাইনেও ব্যাপক উল্লেকযোগ্য পরিবর্তন আসল।
সংস্কারায়নের সময়ে, রিচুয়ালে প্রত্যেকের সাবলীল এবং পূর্ণ অংশগ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হল। প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোর ফোকাসই হল যাতে সহজ সরল ভাষায় মানুষের কাছে ধর্মীয়বাণী পৌছানো যায়, আগেরদিনের মত কেবল ভাবগম্ভীর সর্বস্ব যাযকদের বানীর গুষ্টি কিলানো হল। হলি কমিউনের টেবিলটি বানানো হল কাঠ দিয়ে যাতে সবাই বুঝতে পারে যে যীশুখ্রিষ্টের আত্নৎসর্গ ছিল সবার মুক্তির নিমিত্তে, আর ধর্মসভার সাথে সবার যোগাযোগ আরও সাবলীল করা হল যাতে সবাই খ্রিস্টধর্মের সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে পারে।
নেদারল্যান্ডের প্রথম প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোকে অতুর্ভূজাকৃতির শেইপ দেওয়া হয়েছিল যাতে পূর্ববিধানবাদের ধর্মোপদেশের ওপর প্রাধান্য থাকে। এরকম চার্চগুলোর মধ্য ছিল: Willemstad, North Brabant এবং ১৬০৭ সালে নির্মিত ডোমযুক্ত চার্চ Koepelkerk।
১৭ এবং ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটেনে এ্যাংলিকান চার্চগুলোতে রয়্যাল আর্মস বাইরের পরিবর্তে ভিতরে বসানোর নীতি চালু হয়ে গেল। "কেবল সম্রাটই সকল চার্চের অভিভাবক"- এই ধারনাটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যে এমনটি করা হয়েছিল।
ঊত্তরাধুনিককাল:
অন্যান্য উত্তরাধুনিক নিদর্শনের মতও, চার্চের আর্কিটেকচারেও আধুনিক যুগের আদর্শ অনুকরণে কোমলতা, শত্রুতা এবং ইউটোপিয়ানিজম বা কল্পনাদৃষ্টির প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। (!!!) চার্চ আর্কিটেকচার ডিজাইনে যদিও খুব কমই আছে তবুও কিছু বেশ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ আছে যেখানে চার্চ নির্মানে আবারও সেই পুরান এবং প্রাচীন স্টাইলকেই আবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে কাজ করছেন যেসব আর্কিটেক্ট তাদের মধ্যে যাদের নাম সবার আগে মনে আসে তারা হলেন: ডক্টর স্টিভেন স্ক্লোয়ডার, ডানকান স্ট্রইক এবং থমাস গর্ডন স্মিথ।
কার্যকরী গ্রহনযোগ্য আধুনিক স্টাইলকে ক্ষমার অযোগ্যভাবে বৈচিত্রময় সৌন্দর্য দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হল। (!!!) পুরানো স্টাইলটা ভেঙে পড়ল, দরকারমত ফর্ম/গঠন দেওয়া হল এবং পরিচিত স্টাইলগুলোকে সম্পূর্ণ নতুন কোন দৃষ্টিকোন থেকে পরিবর্তনের জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া হল। হয়তোবা অতি অবশ্যই, আর্কিটেক্টরা নতুন করে দেখা শুরু করল সেই সুপ্রাচীন স্থপত্যরীতিকে যা কিনা হাজার বছর সময় নিয়েছিল বিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হতে। প্রায় যায়গাতেই সাহিত্য, কবিতা কিংবা শিল্পকে অবিকৃত রাখা হল যেগুলো কিনা আধুনিক সময়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
আধুনিককাল:
ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনাও যে একটা কর্পোরেট একটিভিটি এবং মন্ত্রপাঠের সময়ে যাযকবৃন্দকে আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা যাবেনা এটা আধুনিক সময়ে এসে অনুভূত হয়। কেবল একটা মাত্র বড় হলরুমই হল আধুনিককার সময়ে চার্চ আর্কিটেকচারে শৈল্পিকতার ছোয়া। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে কিছু বেশ বড় পরিবর্তন আসে ফ্রান্স এবং জার্মানীতে।
প্যারিসের নিকটবর্তী Le Raincy নামক চার্চ যা কিনা ডিজাইন করা হয়েছিল সুবিখ্যাত ফ্রেন্চ আর্কিটেক্ট Auguste Perret দ্বারা, সেটাকেই পরিবর্তনের প্রথম মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবলমাত্র এর প্ল্যানের জন্যেই না, এটা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল এর নির্মানসামগ্রীর জন্যে যা কিনা ছিল শক্ত কনক্রিটের তৈরী। আর জার্মানির Schloss Rothenfels-am-Main ও আলোচলায় আসে যখন একে ১৯২৮ সালে পুনঃসংস্কার করা হয়। এর আর্কিটেক্ট Rudolf Schwartz পরবর্তীতে কেবল ইউরোপেই না বরং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এরকম চার্চের অনুরূপ প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। পাথরের মেঝের উপর স্থাপিত Schloss Rothenfels ছিল আয়তাকার, সাদা দেয়ালে গভীর জানালা সমৃদ্ধ। এতে কোন সাজসজ্জাই ছিল না। একমাত্র আসবাবপত্র বলতে কেবল ছিল হাজারখানেক চারকোনাইচ্চা আলগা টুল যেগুলা চাইলেই এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় নেওয়া যেত। প্রার্থনার জন্যে অবশ্য একটা বেদী বসানো হয়েছিল যেটার তিনপাশে পাদ্রীরা দাড়াতে পারত।
আচেন শহরে কর্পাস ক্রিশ্চি ছিল Schwartz এর প্রথম আবাসিক চার্চ যা সেইসকল সব পুরাতন নিয়মই মেনে চলে আর বাহাউসের শিল্প বিপ্লবের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এর বাইরের দিকটা ছিল চতুস্কার। ইন্টেরিয়র করা হয়েছিল সাদা দেয়ালে স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে। একটা ল্যাংবাউ ছিল যেটা ছিল আসলে একটা বেদীর বর্ধিত রূপ। একে ক্রিস্টোসেন্টিক না বলে বরং থিওসেন্ট্রক বলাই মনে হয় ভালো। বেদীর সামনে ছিল সাধারণ বেন্চ। বেদীর পিছনেই ছিল সাদা দেয়াল, যেটা আসলে "হলি ফাদার" এর ধারনাকে সিম্বোলাইজ করত। এই চার্চটির প্রভাব পরবর্তীতে সুইজারলয়ান্ডেও পড়ে যার উদাহরণ হল: Fritz Metzger এবং Dominikus Böhm।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, Metzger তার চার্চ আর্কিটেকচার সংক্রান্ত ধারনাকে আরও বিকশিত করার চেষ্টা করেন যার ছায়া আমরা দেখতে পাই ব্যাসেল রিচেন এর সেইন্ট ফ্রানকাস চার্চে। আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিল্ডিং হল ১৯৫৪ সালে লে করবুশ্যিয়ার নির্মিত রনচ্যাম্পের নটর ডেম দু হট চার্চ। একই ধাচের অতি সরল ডিজাইন আর একই রকম স্টাইলের চার্চ দেখতে পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৭১ সালে শিকাগোর কাছাকাছি লিসলেতে নির্মিত রোমান ক্যাথলিক এ্যাবে চার্চ অব সেইন্ট প্রকোপিয়াস এ।
১৯৬৩ সালে দ্বিতীয় ভ্যাটিক্যান কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত একটি ধর্মীয় ধারণা Sacrosanctum কাউন্সিলের একটি ঘোষনায় পরিবর্তন আনে। এই নিয়মে চার্চের পবিত্র পাদ্রী এবং ধর্মরক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য অফিসিয়ালবর্গের সাথে সাধারণ জনগনের স্বাভাবিক ও সাবলীল যোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারে এরকম ডিজাইনে চার্চ তৈরী করতে বলা হয়। আরও বলা হয় যে, ধর্মবিধি এবং নির্দেশনা অনুসারে বেদীর অবস্থান এমনভাবে করতে হবে যাতে বেদীতে বসা অবস্থায় পুরোহিত সবার চেহারা দেখতে পারে। এই নীতির প্রভাব দেখা যায় লিভারপুলের রোমান ক্যাথলিক মেট্রোপলিটন ক্যাথেড্রলে এবং ব্রাসিলিয়তেও। দুটো চার্চই ছিল কিছুটা গোলাকার শেইপের যাতে উন্মুক্ত মন্চ/বেদী ছিল।
বিভিন্ন নীতির প্রয়োগের ফলেই আরো অন্যান্য পরিবর্তনও আসতে থাকল। যাজকপল্লী সমৃদ্ধ চার্চসমূহও অতি অবশ্যই আরও সুন্দর ও গোছালেভাবে বানানো শুরু হতে লাগল। অর্থনৈতিক কারনে এবং অন্যান্য কর্পোরেট চাহিদা পূরণের স্বার্থে "সেক্যুলার ধর্মীয় মতবাদ" বা "ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মীয় আচরন" শুরু হতে লাগল। সোজাভাবে বললে, এমনভাবে চার্চের বিল্ডিং বানানো হতে লাগলো, প্রার্থনার সময়টুকু বাদে অন্যসময় যায়গাটা যাতে অন্যকাজে লাগানো যায়। আবার, ধর্মপ্রচারের মাধ্যম বিভিন্নরকম ভিন্ন ধারনার দ্বারাও প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে লাগল।
তিনটা আলাদা কাজের জন্যে তিন রকম আলাদা যায়গা বানানো হল। একটা হল ব্যাপ্টিজমের জন্যে, একটা হল ধর্মীয় পবিত্র মন্ত্রাদি পাঠ করার জন্যে আর আরেকটা হল বেদীর চারপাশে উপবিষ্ট যাজকগনের নৈশভোজের জন্য- এই তিনরকমের কাজই রিচার্ড জাইলস কর্তৃক ইংল্যান্ডে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্টে প্রচলিত হল। যাজকসভাকে শুধু প্রয়োজনের সময় এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় চলাফেরা করতে হত। তবে এই বুদ্ধিটা ছোট যাজকসভার যায়গায় একটু বড় হলেই আর ফলপ্রদ হত না। এমন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপযোগী ছিল, সেটা হল বিশাল এ্যাম্ফিথিয়েটার আর আর্চের মধ্যবর্তী বসার যায়গা যেমনটা করা হয়েছিল শিকাগোর ঊইলো ক্রিক কমিউনিটি চার্চে, আগের প্ল্যানে যেটা ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০২