এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি,
শূন্যতার দিকে চোখ, শুন্যতা চোখের ভেতরও
এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে একা বসে আছি।
-রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
সুবোধও কি বসে ছিল খাচাবন্দী সূর্য হাতে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে... হয়তোবা.........
ফিরে যাই ২০ বছর আগে। প্রাইমারী ক্লাসে পড়ি। ঢাকার আজিমপুর রোড দিয়ে স্কুলে যেতাম। ইডেন কলেজ এর দেয়ালে একটা লেখা দেখে প্রায়ই অবাক হতাম। জ্বলজ্বলে লাল মোটা হরফে দেয়ালে কোনও এক আইজুদ্দিন এর কষ্টে থাকার কথা- “কষ্টে আছি আইজুদ্দিন।“ বেশ অবাক হতাম- কে এই আইজুদ্দিন? কি তার কষ্ট? ২০০২-২০০৩ সালের দিকেও দেখেছিলাম একই দেয়াল লিখন।এক সময় আইজুদ্দিন বিস্মৃত হল- তার জায়গায় আরেকটি দেয়াল লিখন দেখলাম- “অপেক্ষায় নজির”। কে এই নজির? কার অপেক্ষার প্রহর গুনছে? আইজুদ্দিন হারিয়ে গেল, নজিরও অপেক্ষা করতে করতে হারিয়ে গেল। মাঝে মাঝে জানতে খুব ইচ্ছে করে- আইজুদ্দিন কি এখনও কষ্টে আছে? নজিরের অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হয়েছে ?
প্রিয় ঢাকার নাগরিক দেয়াল অনেকদিন পর আবার শৈল্পিক রুপে দেখা দিল- বোবা দেয়াল কথা বলে উঠলো সুবোধ এর ভাষায়। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছে সুবোধকে নিয়ে।
দেয়াল লিখন- অনেক আগে থেকেই প্রতিবাদের এক সৃষ্টিশীল ও ব্যাতিক্রমী মাধ্যম। সুবোধ সিরিজ এর দেয়াল লিখন গুলো এ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। সুবোধকে চিত্রিত করা হয়েছে একজন দুর্দশাগ্রস্থ মানুষ হিসেবে- যার সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার খাচাবন্দী সূর্য।
অফিসে যাবার পথেই বাসের জানালা দিয়ে চোখ চলে গিয়েছিলো সুবোধ আর তার খাচাবন্দী সূর্যের দিকে- ছবির পাশেই লেখা “সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্য কিছুই নেই।“ কিছুদিন পর পরই শহরের বোবা দেয়ালগুলোতে সুবোধের আবির্ভাব তার খাচাবন্দী সূর্যটার সাথে আর সাথে নিয়ে আসে তার বার্তা-
-সুবোধ এখন জেলে। পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে।
-সুবোধ তুই পালিয়ে যা-এখন সময় পক্ষে না। মানুষ ভালবাসতে ভুলে গেছে।
-তবুও সুবোধ রাখিস সূর্য ধরে।
-সুবোধ তুই পালিয়ে যা, মানুষ ভালবাসতে ভুলে গেছে।
সুবোধ কি তবে এই নষ্ট সমাজের প্রতিচ্ছবি? যেখানে প্রতিদিন সংবাদপত্রে জায়গা করে নেয় ধর্ষণ, খুন, ধর্ষিতার কান্না ? সুবোধ কি তবে Metaphorically আমাদের সমাজের একজন প্রতিনিধি হয়েই কথা বলে যায় নগরের বোবা দেয়ালে- আর সুবোধের খাচা বন্দী সূর্যটা কি Metaphorically represent করে আমাদের এ সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, নিরাপত্তা, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা। সেজন্যই হয়তো সুবোধ পালিয়ে বেড়াচ্ছে খাচা বন্দী সূর্যটাকে সাথে নিয়ে...
তবে অনেকদিন পর নাগরিক দেয়ালে যে অসম্ভব সুন্দর শৈল্পিক প্রতিবাদের সূচনা দেখলাম- যা নাগরিক দেয়ালকে ব্যাঞ্জনাময় করেছে – তা আবার ফিরে আসুক। সুবোধের সূর্যটা খাচা থেকে মুক্তি পাক। পবিত্র আলোয় এ সমাজকে উদ্ভাসিত করুক।
সুবোধ তুই ফিরে আয়। ......
ছবিঃ সংগৃহীত