মক্কায় থাকা অবস্থায় আবু জাহিলসহ অন্য কাফির মুশরিকরা নবী করিম (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, যদি আপনি আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকেন তবে নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে চাঁদকে দিখণ্ডিত করে দেখান। রাসূল (সা.) বললেন, যদি এই মু’জিযা দেখাই তবে কি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করবে? তারা বলল, হ্যাঁ আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে স্বীয় পবিত্র আঙুল দ্বারা চাঁদ দিখণ্ডিত করলেন। অর্থাৎ রাসূলের শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করতেই (পূর্ণিমার রাতে) চাঁদের একখণ্ড আবিকুবাইস পাহাড়ে আর অন্য একটি খণ্ড কাইকাআন পাহাড়ে পতিত হয়। আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী পরিমাণ সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় ছিল।
এই দৃশ্য মক্কার কাফির মুশরিকরা স্বচক্ষে দেখেও ঈমান আনার পরিবর্তে বলল, ‘মুহাম্মদ তোমার জাদু দেখি আসমানেও চলে।’ (নাউজুবিল্লাহ) তাদের ধারণা ছিল জাদু যেহেতু জমিনে চলে এবং আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে কোন জাদু চলে না, তাই মহানবী (সা.)-কে অযোগ্য প্রমাণ করার জন্য এবং তাদের হাস্যরসের পাত্র বানাতে আলোচ্য ঘটনার উদ্ভব ঘটায়। কোরআনুল কারিমের সূরাতুল ‘কামার’ এর মধ্যে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
এত বড় বিশাল চাঁদের দিখণ্ডিত হওয়ার অলৌকিক দৃশ্য দেখে তৎকালীন কাফির মুশরিকরা ঈমান গ্রহণ না করলেও আজ দেড় সহস্র বছর পর হলেও গত ১৯৬৭ সালে এক মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং নভোযানে গিয়ে চাঁদ দিখণ্ডিত হওয়ার ফাটল দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
লেখক : হাবিবুর রহমান সরকার, দৈনিক যুগান্তর, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ শুক্রবার
নবী চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করতে পেরেছিলেন কিনা তা নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই আমার বরং আপত্তি এই লেখাটির শেষ বাক্য অর্থাৎ নীল আর্মস্টং এর ইসলাম গ্রহণ করার নিকৃষ্ট দাবিটি নিয়ে। কিছুটা কাকতালীয়ভাবে তার ঠিক আগের দিন বৃহস্পতিবার আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু বেশ গর্ব করে নীল আর্মষ্টং এর ইসলাম গ্রহণের খবরটি আমাকে শুনিয়েছিল, তবে তার কথায় “ছোট্ট ও সামান্য” একটি বিচ্যুতি ছিল, সে বলেছিল একজন নয় চাঁদের মাটিতে পা ফেলা দু’জনই অর্থাৎ আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন উভয়েই নাকি ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
এখন প্রশ্ন হল নীল আর্মস্ট্রং কি সত্যিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর উত্তর হল অবশ্যই ‘না’, এটি সম্পূর্ণ একটি গুজব। মুসলিম ধর্মব্যবসায়ীদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন তাদের অন্তঃসারশূণ্য গর্বের নিকৃষ্ট উদাহরণ এটি।
এই গুজবের ডালপালা ছড়াল যেভাবে
এই কাহিনীর দু’টি ভার্সন পাওয়া যায়।
প্রথম কাহিনী: আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের মাটিতে হাটছিলেন তখন এক অচেনা ভাষায় অদ্ভুত সুরে তিনি কিছু শব্দমালা শুনতে পান। সেই শব্দমালা সেই সময় তার বোধগম্য হয়নি। পরবর্তীতে পৃথিবীতে ফেরার পর তিনি ইজিপ্টে যান এবং সেখানে আযানের ধ্বনি শোনেন। তিনি বলেন, “আমি যখন চাঁদে গিয়েছিলাম তখন এরকমই কিছু শুনতে পেয়েছিলাম”। তখন তার ইজিপ্সিয়ান বন্ধু এটিকে আযানের ধ্বনি জানালে তিনি তৎক্ষনাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় কাহিনী: আর্মস্টং যখন চাঁদের মাটিতে তথ্যানুসন্ধান করছিলেন তখন তিনি চাঁদের মাটিতে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত একটি লম্বা দীর্ঘ ফাটল দেখতে পান। এই ফাটলের সাথে তিনি তিনি মুহাম্মদের চাঁদ দ্বিখন্ডিত করার কাহিনীর যোগসূত্র খুঁজে পান। মুহাম্মদের চাঁদ দ্বিখন্ডিত করার কাহিনীর চাক্ষুস প্রমাণ পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরে এসে দেরি করেননি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। (এখানে একটু বলা প্রয়োজন, মুসলিম ধর্মব্যবসায়ীদের চাঁদের আকার সম্পর্কে সম্ভবত কোন ধারনাই নেই, নয়তো তারা কিভাবে ভাবলেন, চাঁদের এই বিশাল ফাটল দেখার জন্য আর্মষ্টং সত্যিই এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চষে বেরিয়েছেন?)
এই গুজবের অসারতার পক্ষে কিছু প্রমাণ
(১) Answering Islam নামক ওয়েবসাইটে নীচের চিঠিটি পাওয়া গেছে।
Click This Link
In the following some statements about this issue, authorized by Mr. Armstrong, to speak on his behalf.
NEIL A. ARMSTRONG
LEBANON, OHIO 45036
July 14, 1983
Mr. Phil Parshall
Director, Asian Research Center
International Christian
Fellowship 29524 Bobrich
Livonia, Michigan 48152
Dear Mr. Parshall:
Mr. Armstrong has asked me to reply to your letter and to thank you for the courtesy of your inquiry. The reports of his conversion to Islam and of hearing the voice of Adzan on the moon and elsewhere are all untrue.
Several publications in Malaysia, Indonesia and other countries have published these reports without verification. We apologize for any inconvenience that this incompetent journalism may have caused you.
Subsequently, Mr. Armstrong agreed to participate in a telephone interview, reiterating his reaction to these stories. I am enclosing copies of the United States State Department's communications prior to and after that interview.
Sincerely
Vivian White
Administrative Aide
এখানে লেবানন শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই ভাবেন আর্মস্টং মুসলিম হয়ে লেবাননে থাকেন। হ্যাঁ, আর্মস্টং লেবাননেই থাকেন, তবে এই লেবানন মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন নয়, এটি আমেরিকার মধ্যপশ্চিমের একটি জায়গা।
(২) নীচের বার্তাটি ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট হতে ইসলামিক বিশ্বের সকল দূতাবাসগুলোতে প্রেরিত হয়েছিল। মূল কপির ফটোকপি দেখা যাবে এখানে।
Click This Link
P 04085 0Z MAR 83 ZEX
FM SECSTATE WASHD C
TO ALL DIPLOMATIC AND CONSULAR POSTS PRIORITY
BI
UNCLAS STATE 056309
FOLLOWING REPEAT SENT ACTION ALL EAST ASIAN AND PACIFIC DIPLOMATIC POSTS DID MAR 02.
QUOTE: UNCLAS STATE 056309
E.O. 12356: N/A
TAGS: PREL, PGOV, US, ID
SUBJECT: ALLEGED CONVERSION OF ENIL ARMSTRONG TO ISLAM
---------------------------------------------
REF: JAKARTA 3081 AND 2374 (NOT ..)
1. FORMER ASTRONAUT NEIL ARMSTRONG, NOW IN PRIVATE BUSINESS, HAS BEEN THE SUBJECT OF PRESS REPORTS IN EGYPT, MALAYSIA AND INDONESIA (AND PERHAPS ELSEWHERE) ALLEGING HIS CONVERSION TO ISLAM DURING HIS LANDING ON THE MOON IN 1969. AS A RESULT OF SUCH REPORTS, ARMSTRONG HAS RECEIVED COMMUNICATIONS FROM INDIVIDUALS AND RELIGIOUS ORGANIZATIONS, AND A FEELER FROM AT LEAST ONE GOVERNMENT, ABOUT HIS POSSIBLE PARTICIPATION IN ISLAMIC ACTIVITIES.
2. WHILE STRESSING HIS STRONG DESIRE NOT TO OFFEND ANYONE OR SHOW DISRESPECT FOR ANY RELIGION, ARMSTRONG HAS ADVISED DEPARTMENT THAT REPORTS OF HIS CONVERSION TO ISLAM ARE INACCURATE.
3. IF POST RECEIVE QUERIES ON THIS MATTER, ARMSTRONG REQUESTS THAT THEY POLITELY BUT FIRMLY INFORM QUERYING PARTY THAT HE HAS NOT CONVERTED TO ISLAM AND HAS NO CURRENT PLANS OR DESIRE TO TRAVEL OVERSEAS TO PARTICIPATE IN ISLAMIC RELIGOUS ACTIVITIES.
উপরের দু'টি চিঠি একত্রে পাওয়া যাবে এখানে -
http://www.wikiislam.com/wiki/Neil_Armstrong
(৩) Journal Arabia, The Islamic World Review, Issue June 1985/Ramadan 1405, পৃষ্ঠা ৫ এ সম্পাদকের কাছে প্রেরিত এই চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছে।
A MUSLIM OVER THE MOON?
"Arabia" (জার্নাল) is by far the superior newsmagazine regarding what is going on in the Muslim world today. Your reporting is extremely thorough and seeks to be as objective as possible. Your willingness to criticize political policies as well as religious happenings in the Muslim world is refreshing. As an American I would feel your slant on the West is basically fair. It would be most helpful if you would dispel a misconception prevalent in almost all Muslim countries. From Morocco to the Philippines it is commonly believed that Neil Armstrong heard the Azan on the moon, converted to Islam and is now engaged in the full-time propagation of the Muslim faith.
The US State Department has issued a memo saying that the story about Armstrong's conversion was untrue. The memo said "While stressing his strong desire not to offend anyone or show disrespect for any religion, Armstrong has advised department that reports of his conversion to Islam are inaccurate." The memo further says, "if post receives queries on this matter, Armstrong requests that they politely but firmly inform querying party that he has not converted to Islam and has no current plans or desires to travel overseas to participate in Islamic religious activities."
N.B. The memo was sent to all our diplomatic and consular posts.
Dr Phil Parshall
Director, Asian Research Centre Manila, Philippines
ব্লগের কেউ কেউ হয়তো এখনো আমার তথ্যপ্রমাণকে অস্বীকার করার চেষ্টা করবেন কারন brainwashed মানুষের অভাব নেই। তাদের জন্য একটি সাম্প্রতিক তথ্যসূত্র উল্লেখ করছি। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর ৬ তারিখে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত “গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরাম” এ নীল আর্মষ্ট্রং অংশগ্রহণ করেন। মালয়েশিয়ার সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজী দৈনিক “স্টার মালয়েশিয়া” তখন তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে যা প্রকাশিত হয় ৭ ই সেপ্টেম্বর তারিখে। সেই সাক্ষাৎকারে সৌভাগ্যবশত একটি বাক্য ছিল যা নিম্নরূপ :
Armstrong, 75, also denied he had heard the Muslim call to prayer on the moon and had converted to Islam.
Click This Link
গুজব সম্পর্কিত বিস্তারিত খবর
Click This Link
শেষ কথা
এই গুজবের ডালপালা ছড়ায় সম্ভবত ১৯৮০ সালের শুরুতে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে এবং বিভিন্ন ইসলামিক নিউজগ্রুপ ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজবের পাখায় আরো রং চড়িয়ে সারা বিশ্বের সাধারন মুসলমানদেরকে বোকা বানানো হচ্ছে। সম্ভবত একজন আমেরিকান কাফেরের চাঁদের পবিত্র ভূমিকে অপবিত্র করে দেওয়ার ক্ষত ঐসব ইসলামী ধর্মব্যবসায়ীরা ভুলতে পারেনি। তারই ক্ষতিপূরণ তারা করতে চাইছে নীল আর্মষ্ট্রং কে মুসলিম প্রতীয়মান করার মাধ্যমে। ধর্ম ব্যবসা চাঙ্গা রাখার জন্যই তাদের এই নির্লজ্জ্ব দাবি “চাদেঁর বুকে প্রথম পা রেখেছে একজন মুসলমান”।
অশিক্ষিত সমাজের মানুষকে ব্যবহার করার জন্য গুজব/কুসংস্কার একটি প্রধান হাতিয়ার এবং এসব গুজব দ্রুত ছড়ানোর এক উর্বর ভূমি হল পৃথিবীর মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেখানে শতকরা ৫০-৮০ ভাগ লোকই হয় অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত। দুঃখজনকভাবে এ দাবি অস্বীকার করার পর দুই দশক পার হয়ে গেলেও মানুষের মুখে, সংবাদপত্র, মুসলিম রেডিও স্টেশনগুলোতে এখনো এটি প্রচারিত হয়েই চলেছে যার প্রমাণ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ঐ লেখাটি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য তা হল বাংলাদেশের মানুষেরা “ফাটল কাহিনী” বিশ্বাস করলেও ইন্টারনেটে “আযান কাহিনী” বেশি প্রচলিত।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন মুসলিম দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে পীর ব্যবসা, তাবিজ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ধর্মব্যবসায়ীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসক গুজব ছড়ায়। আলু, লাউ, মাংস, ডিমের খোসা, মাছের লেজে বা কাশ্মীরের আকাশে আল্লাহর নাম দেখা যাওয়ার মতো গুজব ছড়ানো হয় নিত্যনৈমিত্তিকভাবে। এবং আশ্চর্য হলেও সত্যি এসব “রাবিশ” বিশ্বাস করার মতো মানুষের অভাব নেই আমাদের সমাজে।