somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা নোটবুক -৮

০৮ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হ্যান্ডশেকের ইতিহাস ও জয়-পরাজয় - ০১
------------------------------------
আজ ভুলে যা তোর দুস্ত-দুশমন হাত মেলাও হাতে...কিংবা শত্রুুর সঙ্গে হাত মেলানো বা গোপনে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলানো। এই রকম হাত মেলানো নিয়ে নিত্য নতুন অনেক কাহিনি শুনা যায়। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ হলো যুক্তির বিকাশ, প্রগাঢ় অনুভব, প্রজ্ঞায় স্বকীয়তা ও স্বীয় আচার আচরণে মহানুভবতা। বলা যায় মানুষের শান্তি, সৌহার্দ ও মানবিক বোধের এক অনন্য জীবন দর্শন হলো হ্যান্ডশেক বা করমর্দন।


সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ বন্য মনোভাব ও হিংস্রতা পরিহার করে যে শিষ্টাচার বিধিগুলো আয়ত্ব করেছে তাদের অন্যতম একটি হলো হেন্ডশেক বা করমর্দন। কবে থেকে এই হ্যান্ডশেক চালু হলো তার কোন নিদিষ্ট প্রমাণ নেই। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে গ্রিক কবরগুলোর এপিটাফে খোদাই করা ছবিতে করমর্দনরত মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রাচীন রোমান মুদ্রাতেও বন্ধুত্ব এবং আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ করমর্দনের কথা উল্লেখ আছে। মহাকবি হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসিতে বিভিন্নভাবে শপথ এবং অঙ্গীকার করতে হ্যান্ডশেকের ব্যবহার উল্লেখ করেছেন। প্রাচীনকালে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে করমর্দনের থাকলেও খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে আজকের ইরাকে সম্রাট তৃতীয় শালমানেসেরের শাসনকালের একটি শিলাখণ্ড থেকে গবেষকেরা করমর্দনের প্রমাণ পেয়েছেন। যেখানে দেখা যায়, সম্রাট একজন ব্যাবিলনীয় শাসকের সঙ্গে করমর্দন করছেন।


রাজনৈতিক ও সামাজিক শুভেচ্ছা বিনিময়ে এই হেন্ডশেকে আবার অনেক প্রকারভেদ পাওয়া যায়,যেমন - ডেড ফিস বা সফট, বোন ব্রোকেন বা হার্ড, সোয়েটিং, ভিক্টোরিয়ান, পলিটিক্যাল কিংবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক।
করমর্দনের ইতিহাসবিদ ব্রায়ান চালর্স বার্কের মতানুসারে অনেক আগে থেকেই করমর্দনের প্রচলন হলেও মূলত ঊনিশ শতকের দিকেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাচীনকালে কোন মানুষ শুধু মৌখিক কথার উপর বিশ্বাস না করে তা পাকাপোক্ত করার জন্য পরস্পরের হাতে হাত মেলাত। বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানুষের কাছে আদর্শ, ন্যায় ও নীতির বদলে হ্যান্ডশেক এখন লোভ-লালসা, চাতুরতায় বিকিয়ে দেয়ার প্রবণতায় মিশে গেছে। মানবজীবনে এই হ্যান্ডশেককে নিয়ে তৈরি হয়েছে আনন্দ-বেদনা, শোক ও বিয়োগান্তক ঘটনা ও রটনা। গত কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃটেন রাণীর সাথে দেখা করার সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল যে রাণী যদি নিজ থেকে অতিথির দিকে হাত বাড়িয়ে দেন কেবল তখনিই তার সাথে করমর্দন করতে পারেবেন। যদিও ট্রাম্প সুযোগে রাণী পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। আবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট নববর্ষের এক অনুষ্ঠানে ৮ হাজার ৫১৩ জন ব্যক্তির সাথে হ্যান্ডশেক করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।


জয়ের ঘটনা- সুইডেনে বসবাসকারী মুসলিম তরুণী ফারাহ আলহাজেহ। ২০১৮ সালে একটি সুইডিশ প্রতিষ্ঠানে অনুবাদক হিসাবে আবেদন করে ইন্টারভিউয়ের ডাক পান। ইন্টারভিউ বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে হ্যান্ডশেক করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু বুকে হাত রেখে তাদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও বিনয়ী আচরণ করেন। তবে হ্যান্ডশেক না করায় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আড়চোখে দেখে ইন্টারভিউ বাতিল ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারাহ দেশটির শ্রম আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পাঁচ বিচারকের মধ্যে তিন জন ফারাহর অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণ নিন্দা করেন। সাথে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ৪ হাজার ৩৫০ ডলার জরিমানা গুনতে হয়। জয়ী হয় ফারাহ, জিতে যায় অধিকার ও মানবাধিকার।


পরাজয়ের ঘটনা- ২০০৬ সালে গাজী সালাউদ্দিন এক বছরের ওয়াকিং হলিডে মেকার ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্য আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা নামার আগেই এক বছর শেষ হলে গাজী সাহেব একজন ওভারস্টেয়ার বা অবৈধ অভিবাসী হিসাবে বৃটেনে থেকে যান। বাংলাদেশ থেকে বি,এ পাস করা গাজী ইংল্যান্ডের একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করেন। দীর্ঘ দিন কাজের সুবাদে অনেকের সাথে পরিচয় হয়ে ওঠে। তেমনি এক সাদা চামড়ার মেয়ে ক্যাটরিনার সাথে পরিচয়। প্রায়ই সে টেইক-ওয়ে নিতে আসে। মাঝে মাঝে গোটা পরিবার নিয়ে রাতের খাবার খেতে আসে। মিঃ গাজী অনেক সময় খাতির করে কমপ্লিমেন্টারি ডিংকস দেয়। তাকেও তারা টিপস দেয়। বেশ ভালো কাস্টমার সার্ভিস হলে যা হয় তেমনি অবস্থা । একদিন দুপুর বেলা গাজী সাহেব টাউন সেন্টার থেকে আসার সময় বাস স্টেশনে মিস ক্যাটরিনার সাথে দেখা। আবেগী গাজী সাহেব হাই বলে হাত বাড়িয়ে অনেকটা বেষ্ট কাস্টমারের দাবি নিয়ে মেয়েটির সাথে হেন্ডশেক করেন। বিকেলে কাজে নামার কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো জোর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছেন। মিঃ গাজীর আকাশে দূর্যোগের ঘনঘটা নেমে এলো। আদালত তাকে অবৈধ অভিবাসী এবং শ্লীলতাহানি দুটি অপরাধে তিন বছরের সাজা দেয় এবং সাজা শেষ হওয়ার পর নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। হেরে যায় গাজী, হেরে যায় আবেগ ও বিবেক।

নোট-
১) অতি সহজেই কাউকে বন্ধু কিংবা শত্রুু কোনটাই ভাবা উচিৎ নয়।
২) পর-নারীকে বিশ্বাসের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
৩) স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে কখনো কোন কিছুতে বেশি কৌতুহলী মনোভাব ভালো নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৮:৪৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সংস্কার কার্যক্রম ঢিলেঢালা ভাবে চলার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:১৮


ইন্টেরিম সরকার ছয়মাস পার হয়ে সপ্তম মাসে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। সরকারের দেশ চালানোর ক্রিয়াকর্মে যেমন ভালো দিক রয়েছে ঠিক মন্দ ঘটনা ঘটেছে প্রচুর। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ইন্টেরিম সরকার যেহেতু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিথিলা-অপর্ণাকে অবৈধ সহযোগিতা পররাষ্ট্রের

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০৯


একজন সার্ডিং ডিপ্লোম্যাট বা কর্মরত কূটনৈতিকের ‍কূটনৈতিক পাসপোর্ট কখনো বাতিল করা যায় না। এক্ষেত্রে হয় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে অথবা সংশ্লিষ্ট কূটনীতিককে আগে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কারো কষ্ট, পারে না নিতে কেউ =

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



কষ্টগুলো নিজের একান্ত, নিতে পারে না কেউ
দেহের রোগও যেন নিজের তৈরী
কষ্ট দিয়ে দেহে, রোগ ভাঙ্গে অশান্তির ঢেউ,
মানুষের জীবন আকাশে উড়ে হাওয়া বৈরী।

বেপরোয়া জীবন যদি হয় কারো
জিভের স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসিনার আস্থাভাজন ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুল আলমের বাসায় মিললো আড়াই কোটি টাকা :(

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮


ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক সাইফুল আলমের বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেওয়া....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪

জীবন থেকে নেওয়া....


'গুম এবং অতঃপর' বইটি একান্তই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সত্যিকার ঘটনা এলোমেলো ভাবে লেখা একটি বই। আমাকে কিভাবে গুম করা হয়েছিল, গুম অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতনের বর্ননা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×