somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্য!

০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুর গেলাম। নূরজাহান রোডে যাবার পর একটা কমবয়সী ছেলে পাশাপাশি হাঁটা শুরু করল। কাঁধে হাত দিয়ে বলল, আজকে গরমটা একটু বেশি, না ভাই? আমি আগ বাড়াইয়াই বললাম, ভাই সাইডে যাব নাকি হাঁটতে হাঁটতেই কাজ সেরে ফেলবেন?

ছেলেটা বলল, আপনি দেখি বুদ্ধিমান লোক। ক্লায়েন্টরা বুদ্ধিমান হলে জবে আরাম আছে। যাই হোক, সাইডেই আসেন। সাইডে নিয়ে যাওয়া আমাদের মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্য। আমি রাস্তার সাইডে গেলাম। সে তার পকেটে হাত দিল। আমি বললাম, ভাই বুঝতে পারছি ছুরি দেখাবেন। আপনার প্রতি বিশ্বাস আছে। দেখানোর দরকার নাই। এমনিই দিয়ে দিচ্ছি, ছেলেটা বলল, বাহ ভাই! আপনি তো মহান মানুষ। যাই হোক, ছুরি দেখানোও আমাদের ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে সম্মান করা উচিত। সে ছুরি বের করে আমার পেটে ধরল। আমি ততক্ষণে মানিব্যাগ বের করে ফেলেছি। তাও সে দাঁত খিঁচিয়ে বলল, (গালি দিয়ে) যা আছে সব বাইর কর।আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি তো বের করেই রেখেছি। হুদাই গালি দিচ্ছেন কেন?

ছেলেটা আমার হাত ধরে বলল, ভাই এইটাও ঐতিহ্য। ছিনতাই আমাদের কাছে ইবাদত। আর গালি দেয়াটা এক ধরনের দোয়া বা নিয়ত বলতে পারেন। স্যরি কিছু মনে করিয়েন না ভাই। এখন জিনিস তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন। আপনার ফাইলের কাজ শেষ হলে আমরা চা খাব। আপনাকে ক্লায়েন্ট হিসেবে আমার অনেক পছন্দ হইছে। নাভির উপরে ছুরির খোঁচা খেয়ে নির্ভার থাকা কঠিন। আমি দ্রুত মানিব্যাগ ও ফোন তার হাতে দিয়ে দিলাম। সে কেবল হাতে নিয়েছে এমন সময় দেখি একজন পেছন থেকে তার কলার ধরল। কলার টেনে ফিরিয়েই দিল এক থাপ্পড়। থাপ্পড় দেয়া লোকটা মধ্যবয়সী। উনি চিৎকার করে বললেন, "শু*রের বাচ্চা, তুই আবার এই কাজ করতেছিস? কতদিন বলছি এসব ভুল করবি না। বাপের কথা শুনতে ভালো লাগে না? তোকে আমি থানায় দেব। "ছেলেটা তখন অনুনয় বিনয় করে বলছে, আর ভুল হবে না আব্বা। আমি আর কোনোদিন এসব করব না। আজকের মতো মাফ করে দাও।

আরো কয়েকটা থাপ্পড় ও দুইটা লাত্থি মেরে ছেলেটাকে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এসব ঝামেলার ফাঁকে ছেলের হাত থেকে মানিব্যাগ ও ফোন পড়ে গিয়েছিল। আমি সেগুলো তুলে হাতে নিয়ে নিলাম। ভদ্রলোকের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল আমার। এমন বাবা এখনো আছে? একদম হাতেনাতে বিচার আমি এই প্রথম দেখলাম।

আমি বললাম, আংকেল আপনি অনেক ভালো মানুষ। আপনি এখন যা করলেন এটা খুব কম মানুষই করে। ভদ্রলোক বললেন, আরে ওর বিচার তো শেষ হয়নি এখনো। বাসায় ফেরার পর খবর আছে ওর। এবার না শোধরালে থানায় দেব। আমার একটা নীতি আছে। নীতি মানলে আমার ঘরে থাকবে নইলে সোজা থানা। আমি আরেকবার অভিভূত হলাম। পায়ে ধরে সালাম করতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু মহান মানুষটা তাতে বিব্রত হয় কিনা ভেবে করা হলো না। আমি বিনয়ের সাথে বললাম, আপনার কথা আমার আজীবন মনে থাকবে আংকেল। থ্যাংক ইউ। এখন যাই। জরুরি কাজ আছে।

আমি ফোন ও মানিব্যাগ পকেটে ঢুকাব, উনি আমার হাত ধরলেন। তারপর বললেন, ফোন মানিব্যাগ নিয়ে কই যাও বাবা? এইগুলা দিয়ে দাও। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কী বলছেন আংকেল? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু আগে বিচার... মানে...

আংকেল হাসতে হাসতে বললেন, আসলে এখন যাকে দেখলেন সে আমার ছোট ছেলে। আমার ছেলে মোট তিনজন। ছিনতাইয়ের জন্য তাদের এলাকা ভাগ করা আছে। নূরজাহান রোড আমার বড় ছেলের আন্ডারে। ছোটটার শের শাহ রোড। ছোট ছেলেটা বেশি লোভ করে এখানে চলে এসেছিল। আমি বেঁচে থাকতে এক ভাইয়ের ব্যবসায় আরেকজন হাত ঢুকাবে এটা তো হয় না। সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ না করা পাপ। যখন তুমিও বাবা হবা, ছেলে মেয়েদের প্রতি এই ইনসাফ করিও বাবা। আমি মুখ হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আংকেল বললেন, তোমার জিনিসগুলা উদ্ধার করে বড়টাকে দিয়ে দেব। বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। ছোট ছেলেটা তোমাকে একবার ছুরি দেখাইছে। আমারও কি আবার দেখাইতে হবে বাবা? প্লিজ বাবা কোনো ঝামেলা করিও না...(গালি দিয়ে) বাবা শুনতেছ?

কবি বদরুল চৌধুরী

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সময়ের স্রোতে ক্লান্ত এক পথিক তবু আশায় থাকি …

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৫


হালকা হাওয়ায় ভেসে আসে গত সময়ের এলবাম
মাঝে মাঝে থেমে যায়, আবার চলে তা অবিরাম
সময় তো এক নদীর মতো, বহমান অবিরত,
জল-কণা আর স্মৃতি বয়ে নেয় যত তার গত।

একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশঃ ইতিহাস কি বিজয়ীরাই লেখে?

লিখেছেন জাদিদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩২

"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০


২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনণের পরপরই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশবিরোধী আদানি চুক্তি ও ব্যাড পলিটিক্সের খপ্পরে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৪


বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য চুক্তি করেন।ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত গোড্ডা পাওয়ার প্লান্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি “এই কথা রিজভী কোন মুখে বলে ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১



অবাক হয়ে রিজভীর কথা শুনছিলাম উনি কি নিজেকে মহান প্রমান করার জন্য এই কথা বললেন নাকি উনি বলদ প্রকৃতির মানুষ সেটাই ভাবতেছি। উনি নিশ্চই জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×