"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস রচনা করে না।'
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় - বাংলাদেশের মত একটি আবেগী রাজনৈতিক মতাদর্শের দেশে কি আদৌ একটি সত্যিকার নিরপক্ষে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব? কিংবা ধরুন কারো ছবি বা মুর্তি ভেঙ্গে কি আপনি তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারবেন? গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ কি পেরেছে হাজারো চেষ্টা থাকা স্বত্তেও প্রেসিডেন্ট জিয়াকে এই দেশের হাজারো মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে? বা খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রচন্ড তীব্র নেতিবাচক কোন ধারনা সৃষ্টি করতে?
আমার মনে হয় আমাদের বর্তমান সরকার বেশ লোক দেখানো অপ্রয়োজনীয় কাজ করছে, যেটার আদতে কোন সুবিধা বা মুল্য নেই। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি বঙ্গভবন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমি নিশ্চিত এই কাজটি হয়েছে মুলত ছাত্র সমন্বয়কদের চাপে। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা এবং অপ্রয়োজনীয় আচরন দেখে মনে হয় আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বা সংশ্লিষ্ট আরো বেশ অনেকেই ছাত্র সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তের কাছে এক ধরনের জিম্মি। এই সরকারের কোন সুষ্ঠ সংস্কার পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত আমার নজরে এখন পর্যন্ত আসে নাই। যদিও ফেসবুকে সবচেয়ে বড় সংস্কারের উদহারন ছিলো - মেয়ে ফুটবলাররা জিতে আসার পর ছবি তোলার পজিশন আর শুভেচ্ছা জানানোর স্টাইলে। কিন্তু বাস্তবে ফেসবুকে তরুন উপদেষ্টাদের অসৌজন্যমুলক আস্ফালন আর আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত হুমকি ধামকি ছাড়া দৃশ্যমান তেমন কিছু আমি লক্ষ্য করিনি।
এই সরকারকে বুঝতে হবে, তাদের রাজনৈতিক সমর্থনটি পরগাছা টাইপের। অর্থাৎ এই সরকারের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক ফোর্স নেই। ব্যাপক জনসমর্থন নেই। আজকে শুধু বিএনপি যদি রাজনৈতিক সমর্থন তুলে নেয় - এই সরকার আগামী এক মাসও ঠিকভাবে টিকতে পারবে না। শুনতে খারাপ শোনাবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যখন সমর্থন তুলে নিবে, তখন এই ছাত্র সমন্বয়করা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন, সেটা নিঃসন্দেহে ভালো কোন অভিজ্ঞতা হবে না।
আমি রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই তাঁরা এই কঠিন সময়ে একটি ম্যাচিউর রাজনীতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে কতখানি এই ধারা তারা ধরে রাখতে পারবে আমার ধারনা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নিজ দলে নানা রকম উগ্রবাদী চেতনার উস্কানী থাকা স্বত্তেও তাদের নেতারা বর্তমান পরিস্থিতিটি বেশ ভালো ভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারনা।
পরিশেষে, আমি একজন সাধারন মানুষ হিসাবে মনে করি - আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্বত্তার মৃত্যু হয়েছে। এই ইমেইজ ফিরে পাওয়া কঠিন। ফেসবুকে স্বস্তা স্ট্যাণ্ডবাজি আর বড় বড় কথা দিয়ে মাঠের রাজনীতি চলে না। তাই তাদের উচিত নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ঠিক করে, প্রয়োজনে সরকারের সাথে যথাযথ কমিউনিকেশন করে বাংলাদেশের প্রয়োজনে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত রিসেট আওয়ামী লীগের দরকার - বাংলাদেশের নয়।
শুরুতে বলেছিলাম, ইতিহাস বিজয়ীরা লিখেন। উইনস্টন চার্চিলের নামে এই বানী চালানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি এই ধরনের কিছু বলেন নি বলেই জানা যায়। মুল উক্তিটি করেছিলেন জর্জ অরওয়েল ( অ্যানিমেল ফার্মের লেখক)। তিনি বলেছিলেন, যারা সফল হয় তারাই ইতিহাস লিখে। - আমি এটাই বিশ্বাস করি।