১)
সুটকেসগুলো বেশ কিছুদিন আগেই গুছিয়ে রাখা ছিল, মোট তেতাল্লিশটা। যাবার আগে শেষবারের মতো চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম, আহা কত কিছু ছড়িয়ে আছে, কত কথা মনে পড়ছে... প্রতিদিন সকালে আমার খামার বাড়ির তাজা সবজি ক্ষেত থেকে তুলে স্তুপ করে রাখা হয়, কিছু খাই আর কিছু বিলিয়ে দেই। আমি সবসময় ভেজাল মুক্ত খাবার খাওয়ার পক্ষে, তাই বাজার থেকে কেনা শাকসবজি মাছ মুরগি আমি খাইনা। সবকিছু আমার নিজের খামারে হয়। আমার গরুর খামারে যে গরু আছে তা বাংলাদেশের আর কোনো খামারে নেই, ইমরান ছেলেটা এই খামার করে দিয়েছে! প্রশংসা করে আমি ওকে ডিজিটাল কাউ বয় নাম দিয়েছি! পুকুরে চাষ করা মাছ খাই। মাছ ধরতে আমার খুব ভালো লাগে, কিন্তু মাছ ধরার কাজে আমি তেমন পারদর্শী না। অসুবিধা হয় না অবশ্য! সবাই জানে আমি মস্ত মাছ শিকারি! কারণ অন্যের ধরে দেওয়া মস্ত বড় চিতল মাছ ছিপের আগায় গেঁথে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দেই! আমার সালোয়ার কামিজের সাথে মাথায় সাদা ওড়না দেয়া, হাতে ছিপসহ চিতল মাছের ছবিটা তো অনেকেই দেখেছেন। মাছ ধরা নিয়ে আমি একটা কবিতাও লিখে ফেলেছি:
লিখিবো পড়িব মরিব দুখে
মৎস্য মারিব খাইব সুখে।
শুধু মাছ কেন, মানুষ মারতেও আমি খুব ভালবাসি। শুরু করেছিলাম সাতান্ন জনকে মেরে, তারপর থেকে কত মানুষকেই মারলাম। এটা আমার একটা মজার খেলা। পুলিশ দিয়ে যাকে মারলাম, ক'দিন পর তার আত্মীয় স্বজনদের আমার বাড়িতে দাওয়াত করি। তাদের জড়িয়ে ধরে শুধু যে স্বান্তনা দেই তা না, গ্লিসারিন চোখে দিয়ে অনেক চোখের পানিও ফেলি...
২)
এইসব ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম অফিসারের ডাকে, আমাকে বলছে হেলিকপ্টারে উঠে পড়তে হবে, সুটকেসগুলো সব উঠে গেছে হেলিকপ্টারে...
ইমেলদা মার্কোস গেছিলেন প্লেনে করে, তাই তার ২০০০জোড়া জুতা ফেলে যেতে হয়েছিল। শুনেছি ইরানের শাহ সাহেবও শেষ মুহূর্তে মিশরে গেছিলেন প্লেনে করে, তাই তেমন কিছু সাথে নিতে পারেন নাই। এনাদের কথা জানি বলে আমি অনেক দিন আগে থেকেই দুটো হেলিকপ্টার সবসময় রেডি করে রেখেছি আমার বাড়ির উঠানে, আর সুটকেসগুলো রেডি করেছি ডলার আর সোনার বার দিয়ে।
সুটকেস ওঠানোর পর আমিও উঠে পড়লাম, কিন্তু হেলিকপ্টার দেখি ওড়ে না!! কী ব্যাপার! একটু পর এসে আমার অফিসার বলল, দুটো হেলিকপ্টারেরই ফুয়েল ট্যাঙ্ক ফুটো, দেখে মনে হচ্ছে বুলেট দিয়ে ফুটো করা হয়েছে। এই বন্ধুকধারী গাধাগুলোকে নিয়ে যে কী করি! বেশি বুলেট পেয়ে যেখানে সেখানে খরচ করে! এই তো সেদিন দেখলাম এক পুলিশের ছেলেকে মারতে আটটা বুলেট খরচ করেছে, অথচ মারার জন্য একটা বুলেটই যথেষ্ট! এই বাড়তি বুলেট খরচ করার জন্যই গর্ধবগুলো যেখানে সেখানে বুলেট মেরে চলেছে... এই দ্যাখো না, কোন দরকার ছিল নেই তবু আমার হেলিকপ্টারের ফুয়েল ট্যাঙ্কে বুলেট মেরেছে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৩৮