somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেট্রোরেল

২৭ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেট্রোরেল আমার অতি প্রিয় এবং গর্বের বস্তু। যখন মেট্রোরেলে ভিড় হতো না, তখন কোথাও যাবার দরকার না থাকলেও, শুধু মেট্রোরেলে চলা উপভোগ করার জন্য আমি মেট্রোরেলে ঘোরাঘুরি করেছি! মেট্রোরেল স্টেশন দেখে মুগ্ধ হয়েছি, স্টেশনের প্রতিটি জিনিস লক্ষ্য করে দেখেছি যে সবকিছু খুবই নিখুঁত, খুবই সুসামঞ্জস্যপূর্ণ, এবং খুবই সুশৃঙ্খল।

মেট্রো রেলের স্টেশনে অনেক সিসিটিভি/ক্যামেরা আছে, সে সম্পর্কে পরে বলছি।

মেট্রোরেল স্টেশন চলে অতি আধুনিক, মূল্যবান এবং সংবেদনশীল কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে। খুব ভালো লেগেছে দেখে যে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে এবং নিরাপত্তায় খুবই ভালো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের মূল প্রবেশদ্বার, যেখান দিয়ে ঢুকলে একপাশে সিঁড়ি একপাশে এস্কেলেটর আছে, সেটাতে খুবই মজবুত কলাপসিবল গেটের ব্যবস্থা আছে। (সম্ভবত এটা জাপানিদের তৈরি বলে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখেই এটা বানিয়েছে) যে সময়গুলোতে মেট্রোরেল চলাচল করে সেই সময়ে এই প্রবেশ দ্বারের কলাপসিবল গেট খোলা থাকে, এখানে বন্দুক হাতে আনসার বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় থাকেন। দোতলায় কনকর্স হল এবং তিনতলায় স্টেশনেও বন্দুকধারী আনসার বাহিনীর অনেক সদস্য থাকেন, এদের সাথে সাথে পুলিশের নারী এবং পুরুষ সদস্যরাও থাকেন, অর্থাৎ পুরো স্টেশন জুড়ে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে।

মেট্রোরেল চলাচল যখন বন্ধ থাকে সেসময় গেট পাহারার দায়িত্বে থাকে বন্দুকধারী পুলিশ।

এখানে একটা কথা বলি, উত্তরার তিন স্টেশন বাদে বাকি সব এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ কালে এলাকাবাসীর কমবেশি দুর্ভোগ হয়েছে, কিন্তু মিরপুর এলাকার অধিবাসীদের দুর্ভোগ হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। সেই মেট্রোরেল ভাঙচুর হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে, এই সম্ভাবনার কথা জানলে মিরপুরবাসী নিজেরাই মেট্রো রেল স্টেশন পাহারা দিতে বসতেন।

যখন ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভেঙে দেয়া হচ্ছিল, তখনো কিন্তু মেট্রোরেল স্টেশনে কিছু হয়নি!!১৬ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা বিভিন্ন জায়গার মতো মিরপুর ১০ নাম্বারেও সংঘর্ষ হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোর ১৭ জুলাই ২০২৪ প্রথম পৃষ্ঠায় "ঢাকায় পথে পথে সংঘর্ষ- গুলি, নিহত ২" এই খবরে বলা হয়েছে, "বেলা ১১ টার দিকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস টেকনোলজি, মিরপুর কমার্স কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, ভাষানটেক সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বেলা ১টার দিকে সরকারি দলের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালান। এতে আন্দোলনকারীরা ওই এলাকা ছেড়ে যান।"

এত জায়গার সংঘর্ষের ছবি ছাপানো সম্ভব হয় না। ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে পত্রিকায় আগের দিন ঢাকায় হওয়া সংঘর্ষের একটা ছবি ছেপেছে, আমি সেটাই নিচে তুলে দিলাম কিভাবে। তখনো শুধু ছাত্রলীগকে দিয়ে রাস্তায় আন্দোলনকারীদের পিটানো হচ্ছে, গুলি করে মারা শুরু হয় নাই।



সেই ১৬ তারিখ মঙ্গলবার আমার এক আপনজন বেলা একটার দিকে মিরপুর ১০ নাম্বার ক্রস করার সময় এই ভাঙচুরের কবলে পড়েন। তিনি জানান, লাঠি হাতে কয়েকজন হামলাকারী সামনে যাকে পাচ্ছিল তাকেই মারছিল, গাড়িও ভাঙতে চাচ্ছিল কিন্তু তিনি কোনোমতে পালিয়ে এসেছেন! এই গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা শুনে আমার মনে হচ্ছিল, মেট্রো স্টেশন নিরাপদ আছে তো!!

১৬ তারিখের পরে ১৭ তারিখ ছিল আশুরা। ১৮ জুলাই ছিল কমপ্লিট শাটডাউন। এদিন দুপুরে মিরপুর ১০ নাম্বারে আবার সংঘর্ষ হয়। সেদিন ১০ নাম্বারের গোল চত্বরে পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়, যার ঠিক উপর দিয়েই মেট্রোরেল গেছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুর ২:১৫ থেকে শেওড়াপাড়া কাজীপাড়া মিরপুর ১০ এবং মিরপুর ১১ এই চারটি স্টেশন বন্ধ করে দেয়। (১০ নাম্বারের গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে আগুন দেয়ায় শুধু নিরাপত্তার কারণে ১০ নাম্বার স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া যেত, বাকি তিনটি স্টেশন বন্ধ করার কারণ কী!!!) এই খবরের স্ক্রিনশট নিচে দেয়া হল।



এর কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শেষ ট্রেনটি মতিঝিল ছেড়ে যাবে উত্তরার দিকে। তারপর থেকে আর কোন ট্রেন চলবে না, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। ধরেই নিতে পারি, স্টেশনের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ, এভাবে রেল চলা বন্ধ করা হয়। এই খবরের স্ক্রিনশট নিচে রইল।



সেদিনই , অর্থাৎ ১৮ জুলাই ঢাকা জুড়ে তীব্র সংঘর্ষ হয়, অনেক মানুষ মারা যায়, এক্সপ্রেস ওয়েসহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা হয়, সেগুলো একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মেট্রো রেলের কোনো স্টেশনে সেদিন কোনো আক্রমণ হয়নি। সবাই ধারণা করেছিল মেট্রো রেলের নিরাপত্তা ব্যবসা এত ভালো যে এখানে কেউ ঢুকতে পারেনি।‌

পরদিন শুক্রবার ছিল মেট্রোরেল বন্ধের দিন। সেদিনই দুর্বৃত্তরা মিরপুর ১০ এবং কাজীপাড়া মেট্রো রেলস্টেশন ভেঙেচুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল। এটা ঠিক করতে প্রাথমিকভাবে পাঁচশ পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, ঠিক করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে!!

রহস্য এটাই, মানুষ জনের নিরাপত্তার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এই চারটি স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হলো। শুক্রবার ছিল ছুটির দিন, এদিন মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকে এবং বরাবরের মতো সে সময় প্রবেশ পথগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারা থাকার কথা। আগের দিন ১৮ জুলাই যখন এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে, তখন মেট্রোরেল ভাঙচুর হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি এটা বিবেচনা করে মেট্রোরেল রক্ষার জন্য এদিন তো বিশেষ ব্যবস্থাও নেবার কথা। তাহলে দুর্বৃত্তরা কনকোর্স হলে পৌঁছালো কি করে?

যারা মেট্রোরেলে চলাচল করেন তারা নিশ্চয়ই শুনেছেন, মেট্রো রেলস্টেশনগুলোতে কিছুক্ষণ পরপর ঘোষণা করা হয়, পুরো এলাকা সিসিটিভির অধীনে আছে। গত রমজানের সময় মেট্রোরেলের দরজা আটকাতে পানির বোতল আটকানো যাত্রীকে পরে এই সিসিটিভির ফুটেজের সাহায্যে ধরা হয়, তাই বলা যায় এই ক্যামেরা গুলো খুবই কার্যকর। স্টেশনের প্রবেশ পথের বাইরেও এই ক্যামেরা আছে। ধরে নিলাম, ১৯ তারিখ দুর্বৃত্তদের দেখে সব গেটের সব পুলিশ পালিয়ে গেছে। কিন্তু কলাপসিবল গেট ভাঙতে সময় লাগার কথা, সেই সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের কর্মকান্ড গেটের ক্যামেরায় দেখে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আইন রক্ষাকারীদের জানাতে পারতেন, ফলে রাস্তায় রাস্তায় টহলরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসময়মতো এসে ভাঙচুর ঠেকাতে পারতেন।

রহস্য গল্পে অনেক সময় দেখা যায়, খুনি ঘরে ঢুকে খুন করে গেল অথচ ঘরের দরজা ভাঙার কোন আলামত নেই!!! গল্পে গোয়েন্দা এমন রহস্যের সমাধান করেন। মেট্রোরেল রহস্যের সমাধান কে করবে!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:০৫
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×