বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর উন্নতির ধারা অব্যহত আছে। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং, সব জায়গাতেই আছে উন্নতির ছোঁয়া। ব্যাটিং এ এখন আমরা আর শুধু দু-একজন ব্যাটসম্যান এর দিকে চেয়ে থাকি না। বরং মাঝ পথে এমনকি শেষের দিকেও এসে হাল ধরেন হটাৎ ব্যাটসম্যান হয়ে যাওয়া বোলাররা। এটা অবশ্যই শুভ দিক। ব্যাটসম্যানরাও এতে চাপ মুক্ত থাকতে পারেন। তবে ব্যাটসম্যান নয়। কথা বলব ফাস্ট বোলিং নিয়ে।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বোলিং এ সবচেয়ে বড় শক্তি "স্পিন"। তবে স্পিনারদের ঘূর্নী যাদু দেখতে হলে অবদান রাখতে হয় ফাস্ট বলারদেরকেও। কেননা তারাই নতুন বল কিছুটা স্পিন উপযোগী করার গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকনে। নতুন বলে স্পিনাররা খুব একটা সুবিধা পান না যতটা পান তারা পুরোনো বলে। তাই খেলা শুরু হওয়ার পরে যত দ্রুত সম্ভব বল কিছুটা লুজ করার দায়িত্ব পড়ে ফাস্ট বলারদের উপর। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আমাদের ফাস্ট বোলারদের মধ্যে একমাত্র রুবেল হোসেন ছাড়া আর কারো বলের গতিই ১৪৫ কি.মি/ঘন্টা অতিক্রম করে না। এর মধ্যে সফিউল এর বলের গতি ১৩০-১৪০ কি.মি/ঘন্টা আর শাহাদাত এর ১৩২-১৩৪ কি.মি/ঘন্টা। শাহাদাতের গড় স্পিড ১২০ কি.মি/ঘন্টা। মাশরাফির ১২৫-১৩৮ কি.মি/ঘন্টা (যদিও ইনজুরির কারনে তার বলের গড় গতি এখন ১২০ কি.মি/ঘন্টা এর কাছাকাছি)। অন্যান্য দেশে খেলতে গেলে ফাস্ট বোলিং অন্যতম এক অস্রের নাম। বিশেষকরে সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্টইন্ডিস এ। কাজেই এসব দেশে খেলতে গেলে স্পিনারদের সফলতা পাওয়ার চান্স কিছুটা হলেও কমে যায়। আর তখন জ্বলে উঠতে হয় ফাস্ট বলারদেরকেই। এর সেখানে লাইন লেন্থ এর পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে "গতি"।
বলে কি রকম গতি হবে তা পারতপক্ষেই নির্ভর করে শারিরিক শক্তির উপর। তার পরেও থাকে কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার, যেমন- বোলিং একশন। আর এই টেকনিক্যাল ব্যাপার গুলোই খুজে খুজে বের করে বিভিন্ন ফাস্ট বোলার এনালিস্টরা। কিভাবে আরো দ্রুত গতিতে বল করা যায় তার উপর রিসার্চ করে এমন একটি সংস্থার নাম BowlStrong। তারা তাদের ওয়েবসাইটে নামকরা সব ফাস্ট বোলারদের বোলিং একশন এনালাইসিস করেন। কোন একশনে বল করলে বোলিং এ সর্বোচ্চ গতি প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে তা তারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে থাকেন। তেমন কিছু নমুনা দেখুন নিচের ছবিগুলোতে-
শোয়েব আকতারঃ
শোয়েব আকতার এর বোলিং একশন অনেকটা গুলতি (ছড়রা) এর মত। আপনি শুরুতে যতদুর সম্ভব টেনে পড়ে একসাথে যেমন ছড়রা থেকে গুলতি ছুড়েন ঠিক তেমনি শোয়েব আকতার বলিং করার সময় তার ডান হাতকে যতদুর সম্ভব ঘুরিয়ে বল ছাড়ে। এতে করে শরীরের উপরিভাগ বেশি সময় ধরে শক্তি সঞ্চার করতে পারে এবং বলে তুলনামূলক বেশি গতি পাওয়া যায়।
ব্রেট লিঃ
ব্রেট লি'র বলিং একশন কিছুটা ভিন্ন ধর্মী। খেয়াল করুন তার পায়ের চেয়ে বরং মাথা এবং কাধ তার বল ছোড়ার মুহুর্তে সামনে চলে আসে। এতে বল করার জন্য সর্বোচ্চ গতি প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে। তবে এই একশনটি অনেকদিন প্র্যাকটিস না করে করা সম্ভব নয়। কেননা বল ছোড়ার মুহুর্তে বোলার এর চোখ এবং মাথা উইকেট বরাবর থাকতে হয় এবং পজিশন এমন ভাবে থাকতে হয় যেন ব্যাটসম্যান আপনার পিঠ দেখতে পান।
ডেল স্টেইনঃ
রান-আপ এবং কৌশল ডেল স্টেন এর বলিং একশনে লক্ষণীয়। সে বল ছোড়ার সময় পিছনের পায়ে সজোরে ধাক্কা দেয় যা বল ছাড়ার সময়ে তাকে গতি সঞ্চার এ সাহায্য করে। তার বোলিং একশনটি দেখুন। তার ডান পা এবং ডান হাত একই সময়ে ঊপরে উঠে গেছে। আর বলটিকেও সে অনেক দূর (একদম সামনে থেকে ঘুরিয়ে পেছনে) ঘুরিয়ে ছাড়ছে। এই একশন তাকে বলে গতি ও বাউন্স দিতে সহায়তা করে।
মিশেল জনসনঃ
মিশেল জনসন এর বোলং একশন কে এনালিস্টরা তুলনা করেন স্প্রিং বা কয়েল সাথে। যখন কোন বলার উড়ে এসে বল ছাড়ে সেই উড়ন্ত মুহুর্তে তার শরীরের উপরিভাগে একটি শক্তি সঞ্চার হয়। তাই বল ছাড়ার মূহুর্তেও সে এক্সট্রা কিছু শক্তি পায়। ব্যাপারটা অনেকটা একটি মোরানো কয়েল বা স্প্রিং এর মত। আপনি স্প্রিং কে মুড়িয়ে হঠাৎ ছেড়ে দিলে এটা একসাথে খুলে যাবে।
জেমস এন্ডারসনঃ
উপরের সবারই বলে দুর্দান্ত গতির পেছনে পেশী শক্তির পাশাপাশি বোলিং একশন ও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। আমাদের রুবেল-সফিউল-শাহাদাতরাও বোলিং একশন নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারেন। যদিও বোলিং একশন অনেকদিনের পুরোনো একটি অভ্যাস। এটি রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তারপরেও একশনে বৈচিত্র এনে যদি পজেটিভ কিছু পাওয়া যায় সেই চেষ্টাটুকু ওনারা করতে পারেন। পজেটিভ কিছু আসলে সেটা আমাদের দেশ-দশের জন্যই ভাল। এমনকি বোলার এর নিজের জন্যও এটা একটি বড় প্রাপ্তি।
সবশেষে শুভ কামনা রইল বাংলাদেশ টাইগারদের প্রতি। এমন ছবি আমরা দেখতে চাই বারবার।
বিঃদ্রঃ ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য গুলো সংগৃহীত। কোথাও কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৫