আমি এখনো চোখ কচলাই
আমি এখনো চোখ কচলাই,
স্মৃতির ধূলোকণা কখন যে চোখে এসে জমে!
মা আঁচলে মুখ ঢেকে গোপনে কান্না লুকায়, শান্তনা দেয়-
বাবা তোর যুদ্ধে যায়- কাঁদিসনে বাবা।
চারিদিকে এখন শত্রুর আনাগোণা।
আমি কি তখন যুদ্ধ বুঝি! বুঝি কী কে শত্রু!
মায়ের মুখে শুধুই উৎকন্ঠার ছাপ।
মনে পড়ে, আমি তখন ঘুম ঘুম চোখে-
বাবা তড়িঘরি করে আলনা থেকে জামা তুলে নিল,
মা হাতের পুঁটলিটা বাবাকে দিয়ে বললো-
সামান্য চিড়া আর গুঁড় আছে, ক্ষিধে লাগলে খেয়ে নিও।
আমি কিছু বুঝে না উঠতেই বাবা আমার গালে
ছোট্ট একটু আদর দিয়ে বললো- তোর মাকে দেখিস।
দরজার খিড়কি খুলে গেল, বাইরে তখনো গাঁঢ় অন্ধকার।
বাবা সেই অন্ধকারে মিশে গেলো।
বাবার যুদ্ধ আমি চোখে দেখিনি- দেখেছি মায়ের যুদ্ধ।
আমাকে আগলে রাখার সে এক কঠিন যুদ্ধ!
নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর অবিশ্বাস্য এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ!
শত্রুর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক অমানবিক যুদ্ধ!
এ কোন শত্রু! মুখোশের আড়ালে সবই যে হায়েনার দল!
বাবার মতো লাখো মুক্তিযোদ্ধার ছুঁড়ে দেয়া লক্ষ্যভেদী বুলেট
আর আমার মায়ের মতো লাখো নারীর মলিন, ছিন্নভিন্ন আর রক্তাক্ত বস্ত্র
একদিন ছিনিয়ে আনলো এদেশের স্বাধীনতা। শত্রুরা পরাভূত হলো।
অথচ আমি এখনো চোখ কচলাই।
বাবা আমার যুদ্ধ থেকে এখনো বাড়ী ফেরেনি।
আমার মায়ের শরীর থেকে এখনো রক্তের দাগ মুছে যায়নি।
আমি অপেক্ষায় আছি, হয়তো কোন এক বিজয়ের মাসে কেউ এসে
আমার সাক্ষাৎকার নেবে, আমাকে শান্তনা দেবে।
কিংবা ইতিহাসের পাতা থেকে আমার মা, বাবা কিংবা
তাদের একমাত্র সন্তানের নাম চিরতরে মুছে যাবে।
আমি এখনো চোখ কচলাই।
(বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে একটি অসমাপ্ত লেখার অসময়োচিত সমাপ্তি)