নতুন ধান ও আম, কাঁঠাল আর লিচুর সময় এসে পড়ায় হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে হলো ... কারণ এই সময়ে বাড়িতে গেলে "মা" কে ধান ওঠানোর সাহায্যও করা হয় আবার আম , কাঁঠাল ,লিচু ও খাওয়া হয়
ট্রেন ভ্রমণ খুব ভাল লাগে তাই স্টেশনে গিয়ে আগের দিন একটা টিকিট কেটে নিয়ে আসলাম ..। সিট হলো কেবিনে ... অন্য কোথাও আর সিট খালি নেই ..।
কিন্তু সমস্যা হলো পরের দিন ভোর ছয়টায় যখন স্টেশনে গেলাম তখন ..। ট্রেন ৩/৪ ঘন্টা লেটে চলাচল করছে ..। কাছেই বাসা তবুও ফিরে যেতে মন চাইল না । তাই বিশ্রামাগারে বসে একটা নিউজ পেপার কিনে নিয়ে পড়তে থাকলাম .... ১,,,২,,,,৩,,,,৪,,,,৫,,,, এভাবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পরে আমাদের ট্রেন স্টেশনে এসে দাঁড়ালো ..।
হালকা পাতলা মানুষ তাই ভিড়ের ফাক গলে উঠে পড়লাম ট্রেনে ....। কেবিন খুজে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম .আরও ভাল লাগলো একদম ফাকা দেখে ....
তারপর কোনায় একটা হ্যাংগার এর মত অংশে ব্যাগটা ঝুলিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম .....
তারপর জুতা জোড়া খুলে রেখে বালিশ ছাড়াই শুয়ে পড়লাম কেবিনের বড় সিটিং বেঞ্চে .।
প্রায় ২ঘন্টা রেস্ট নিয়ে জানালার দিকে এসে বসলাম ....। তারপর বাইরের চমৎকার দৃশ্যগুলো দেখে আবার মনে পড়ে গেল একটা ভাল ক্যামেরার কথা ....। কিন্তু ভাল ক্যামেরা নেই তাতে কি !!! মোবাইল ক্যামেরাই না হয় এই মুহুর্তের ছবি গুলো ধরে রাখুক ....
দেখলাম একটা ছোট্ট মেয়ে একা একা হেটে যাচ্ছে ..। ওকে দেখে সাবিনা ইয়াসমিনের একটা বিখ্যাত গান একটু ভুল করে গাওয়া শুরু করলাম গুন গুন করে ...
" রেল লাইনের মাঝে "
" মেঠো পথটির দিকে তাকিয়ে"
" এক অল্প বয়সী মেয়ে দেখি "
" চলেছে কোথাও দু পা বাড়িয়ে "
এরপর চোখে পড়লো একটা অতিব সুন্দর দৃশ্য ..... ছোট্ট একটা ধান ক্ষেত পার হয়ে একটা সরু রাস্তা ঘেষে কিছু বাড়ি ঘর আর দোকানপাঠ ...।
তারপরই দেখলাম একটা সুন্দর বর্গাকার পুকুরের মত স্থান কয়েকজন মানুষ সেখানে গোসল করছে ....।
এরপর এসে পড়লাম বিরাট এক মাঠের মাঝখানে .. .. যতদুর চোখ যায় শুধু ধান আর ধান .....
কোথাও কোথাও জমির মাঝখানে এমন একটা বা দুটো গাছ থাকে এগুলো শুধু মাত্র কৃষকদের বিশ্রাম ও খাবার স্থান হিসেবে এবং পাখিদের বসার স্থান হিসেবে ।
আবার অনেক জমির পাশেই এমন বড় পানির প্রবাহ দেখা যায় .. .. যেগুলো সেচ কাজে ব্যাবহার করা হয় ।
অনেক স্থানে এই পানির প্রবাহ এমন আকারে থাকে , ,, যা দেখলে রবী ঠাকুরের সেই ছোট্ট বেলায় পড়া কবিতা
"আমাদের ছোট নদী "
" চলে বাঁকে বাঁকে "
"বৈশাখ মাসে তার "
" হাঁটুজল থাকে "
মনে পড়ে যায় এক নিমেষে ....।
ঝড় ও বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক স্থানেই কৃষকদের সোনার ফসলের খুব ক্ষতি হয়েছে ,,, যার ফলে অনেকেই আগাম কেটে নিয়ে গেছে তাদের ধান ..।
অনেকেই এই বৃষ্টির পানির জন্য ভাল ফসল ফলিয়েও সুখের হাসি হাসতে পারেনি .।
অবশেষে দীর্ঘ আট ঘন্টা যাত্রা শেষ করে বাড়িতে ঐ দিন আর যাওয়া হলো না অনেক রাত হয়ে যাওয়ার কারণে .। তারপর পরদিন যখন বাড়িতে ,, ,, পৌঁছালাম তখন স্বর্ণা আর অর্নী নামের দুই ছোট্ট ভাতিজি আমাকে নিতে এলো বাড়ির বাইরে,, ,,,ওদের সাথেই এই চেনা পথ ধরেই প্রবেশ করলাম বাড়ির ভেতরে ......
বাড়িতে ঢুকেই চোখে পড়লো .. দুটো পাতাবাহার গাছ বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে নতুন রুপ আর রং এ সেজেছে যেন ...।
সবার সাথে দেখা করে ফ্রেস হয়ে খেয়ে গেলাম বাগান দেখতে .... প্রথমেই কষ্ট পেলাম বরই গাছের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে ..। কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে বেচারার এই দশা .... তবে ভাল লাগলো আম গাছের দিকে তাকিয়ে ,,, আম এবার মোটামুটি ভালই এসেছে সব গুলো গাছে..।
তবে যায় বলেন আমাদের বাড়ির এই আঙ্গুর ফল খেলে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে ,, যে " আঙ্গুর ফল টক "
বাগান থেকে ফিরে গেলাম পুরাতন বিল্ডিং এর ছাদে ,,,, যাবার পথে দেখলাম সিঁড়ির মধ্যে জানালার করুন দশা ,, ,, তবে এটাই স্বাভাবিক কারণ বয়স তো আর কম হলো না ,,!! প্রায় দুশো বছরের মত ..।
পুরাতন বিল্ডিং এর একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে এবার কিছু মূল্যবান নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে শুনলাম ,,যার ভেতরে আমি পেয়ে গেলাম দেশ বিভাগ এবং মুক্তি যুদ্ধের আগে ও পরের কিছু মূল্যবান ডাক টিকিট .।
এরপর ঘুরতে ঘুরতে আরও অনেক কিছুরই ছবি তুললাম ,,, যেমন মুরগী ঢেকে রাখার জন্য খাঁচা .. এই জিনিসটার মধ্যে ধান ভেজানো হয় সিদ্ধ করার আগে এটার বয়সও প্রায় চল্লিশ ছুঁইছুঁই ...
প্রতিদিন বিকালে স্কুল মাঠে যেতাম ক্রিকেট খেলতে ,, সেখানে শেষ বিকালের আলোয় তোলা এই ছবিটিই আজকের সর্বশেষ ছবি ......।
গ্রামে এখন ভোট নিয়ে চরম মাতামাতি চলছে ,,, তাই এই সময়ের মজা ফেলে আসতে মন চাইছিল না ,,, তবুও লেখাপড়ার জন্য কি আর সেই উপায় আছে ....!!!!
তাই তো , ফিরে আসতে হলো আবার এই ইট কাঠের আর যান্ত্রিক শহরে ...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১১ দুপুর ১২:০৯