somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবাধিকার পরিস্থিতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচার এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খারাপ, খুবই খারাপ। মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ। প্রতিদিন মানুষ প্রাণের ভয়কে সঙ্গী করে ঘর থেকে বাহিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খোয়াড়ের মধ্যে থাকা দেশী মিডিয়া এ অবস্থার জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করছে বিরোধীদলের অতর্কিত বোমাবাজীকে। কিন্তু এ অবস্থার জন্য আরো বেশি দায়ী আরেকটা ভয়, তুুলনামূলকভাবে অনেক বড় ভয়- সেটা হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর "নির্বিচারে হত্যা" বা ক্রসফায়ার।

প্রতি সপ্তাহেই খবরের কাগজে ছাপছে ক্রসফায়ারের বানোয়াট গল্প যেখানে বলা হয় আসামীকে নিয়ে রাতের বেলায় তদন্তকার্যে বের হলে আসামী এবং তারপক্ষের লোকজন অতর্কিতে পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশ সেই আক্রমণকে প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের গুলিতে আসামী নিহত হয়। এমন গল্প যে তাদের বিনাবিচারে হত্যা'কে আড়াল করতে পারেনা, এইটা সকলেই জানে। সবার কাছেই ক্রসফায়ার তাই পুলিশী হত্যাকান্ডই। অনেকে না-বুঝে নিজেদের নৈতিকতাকে দলীয় স্বার্থের কাছে সমর্পণ করেছেন বলে এখন ক্রসফায়ারকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু এই অস্ত্রের বলে পুলিশ যখন সমস্ত জনগণের উপর ফ্রাঙ্কেন্টাইন হয়ে চেপে বসেছে, ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার আম-জনতাকে "গ্রেফতার বানিজ্যের" শিকারে পরিণত করে নিঃস্ব করে ফেলছে, তখনও কি তাদের সমর্থন দিয়েই চলবেন?

বোমাবাজী নিঃসন্দেহে অপরাধ। অতএব, বোমাবাজকে ধরার জন্য আইন আছে, আইনপ্রয়োগকারী পুলিশ আছে, আদালত আছে, কারাগার আছে। কিন্তু ক্রসফায়ারের মাধ্যেমে মানুষ হত্যাকারী পুলিশের জন্য কি আছে?

একটা আড্ডায় আলাপ হচ্ছিল দেশের বিদ্যমান অবস্থা নিয়ে। রাস্তাঘাটে বোমা-হামলার সমালোচনায় অনেককে পেলাম। বেশ জোড় গলায় তারা বোমাবাজির সমালোচনা করলেন, আর সেই সাথে বিরোধীদলকেও। কিন্তু যেইমাত্র পুলিশের নির্বিচারে হত্যার প্রসঙ্গে আসলাম, তারা দেখলাম বিভিন্ন ভাবে প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করছেন। ক্রস ফায়ারের হত্যা কি তবে অপরাধ নয়? মানবাধিকারের লংঘন নয়? এই ভয় দেখিয়ে পুলিসের গ্রেফতার ও চাঁদাবাজী বানিজ্য কি তবে অপরাধ নয়?

ভাইরে, দ্বিমুখীতা খুব খারাপ অসুখ। শরীরের নয়, আত্মার। এই অসুখ ব্যক্তিবিশেষের মাঝে সব সমাজেই থাকে। কিন্তু সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি যখন এই অসুখে আক্রান্ত হয়, তখন সেই জাতির নের্তৃত্ব মিথ্যাচারীর হাতেই আসবে, এবং তাদের পরিচালনায় সেই জাতির ধ্বংসও অনিবার্য।

গতকাল সব পত্রিকায় দেখেছিলাম আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাতের সময় তারা নাকি বলেছে যে, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা একেবারেই উদ্বিগ্ন নয়। অথচ, এখন দেখলাম মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ডঃ মিজানের কাছে তারা বেশ ক্ষোভের সাথে বলেছেন যে, মন্ত্রী তাদের নিয়ে মিথ্যা বলেছেন, তারা প্রকৃতপক্ষে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। মন্ত্রীর ভাষ্য সকল পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবাদ এই সংবাদ ছাপিয়েছে মাত্র ২/৩টা ছোট পত্রিকা (আমাদের সময়, মানবজিমন)। কেন, সেইটা নিজগুণে বুঝে নিন।

বিরোধীদল খারাপ কারণ তারা বোমাবাজী করে নিরীহ পথচারীদের মৃত্যু ঘটাচ্ছে, সরকার খারাপ কারণ তারা পুলিশকে বিরোধীদল দমনে লেলিয়ে দিয়েছে যা' এখন পাগলাকুত্তার মতো আম-জনতাকে কামড়াচ্ছে। কিন্তু আপনি/আমি কি? আমরা কি এইসব অন্যায়, অপরাধের প্রতিবাদ করছি, না-কি দলবুঝে তারপর একবার সমালোচনা এবং আরেকবার সমর্থন করছি?

বিরোধীদল বা সরকারকে দায়ী করার আগে নিজেকে বিবেকের আয়নায় সামনে দাড় করান। তারপর নিজেকেই প্রশ্ন করুন- আমার বিবেক ঠিকঠাক মতো আছে ত'? থাকলে সেটাকে কি দলীয় স্বার্থের কাছে বিকিয়ে দিয়েছি?

অন্যের সমালোচনা করার আগে আত্মসমালোচনা জরুরী। নিজের যদি বিবেক স্বাধীন থাকে, তবেই স্বাধীনতা আশা করতে পারি। অন্যথায় মিথ্যাচারী নের্তৃত্বে অধীনে, আইনপ্রয়োগকারীর হাতে বেআইনি হত্যার বলী হয়ে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়াই অনিবার্য পরিণতি। দেশের খাঁচায়-পোড়া মিডিয়া এই সত্য প্রকাশ করতে না-পারলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খবরের কাগজ ইতোমধ্যেই এই হতাশাজনক অবস্থার খবর প্রকাশ করেছে।

অতএব, নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন। যাবতীয় অন্যায়কে সক্রিয়ভাবে "না" বলুন। সমাজ বা দেশটা কোন বিশেষ দলের নয়, আমাদের সকলের। তাই একে রক্ষা করার দায়িত্বও সম্মিলিতভাবে আমাদের সকলেরই।






সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নীলপরী আর বাঁশিওয়ালা

লিখেছেন নিথর শ্রাবণ শিহাব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

আষাঢ়ের গল্পের আসর

সন্ধার পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দিনের মত আলো করে। কান ফাটিয়ে দেয়া আওয়াজ। কারেন্ট নেই প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর। চার্জারের আলো থাকতে থাকতে রাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে ক্ষমার অফারের সাথে শর্তগুলো প্রচার হয়না কেন?

লিখেছেন আফনান আব্দুল্লাহ্, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১

ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×