মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়। কিন্তু এই মানুষগুলো ইনক্লুডিং মি যখন একের পর এক কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে যাই তখন নিশ্চই তা ভাল দেখায় না। ছোট্ট একটু কারেকশান ভুল করা আর কাণ্ডজ্ঞানহীনতা দুইটা কিন্তু এক জিনিস নয়। ভুলের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত পরেরবার তা এড়িয়ে চলি। কিন্তু ভুলটাকে যদি ভুল জেনেও রিপিটেডলি চালিয়ে যাই তখন সেটা নিশ্চিতভাবেই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। ক্ষেত্র বিশেষে এক রকম অপরাধও বলা যায়।
মূল প্রসঙ্গে চলে আসি। সেই বিকাল থেকে তিন চারটা বাসার পরেই খুব উৎসব চলছে। খুব ভাল কথা। মানুষজনের বিনোদনের ও দরকার আছে নো অফেন্স উইথ দ্যাট। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে লাগল একের পর এক হিন্দি গান আর সব বিকৃত আইটেম সং এর প্রতিযোগিতা! এই মুহূর্তে রাত দেড়টা কিন্তু তাদের রামলীলা বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না! আমার বাসা থেকে বেশ দুরেই হচ্ছে এসব কীর্তিকলাপ কিন্তু আমি সব জানালা বন্ধ করেও রুমে টিকতে পারছি না। এখন লিটরেলি মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। সো বুঝতেই পারছেন উৎপাতের মাত্রা কতটা সীমালঙ্ঘন করেছে! এটা নিশ্চই কোন রকম ভদ্রতার পর্যায় পরে না।
প্রথমত, আমাদের কারো অধিকার নাই নিজেদের মওজ মাস্তির জন্য পাড়া প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয়ার। এটা রীতিমত এক ধরনের অপরাধ। কেউ যদি মনে করে তারা এলাকার স্থানীয় দেখে মাথা কিনে নিয়েছে তাহলে বলার কিছু নাই। আর যাই হোক তাদের সাথে মানুষের টাইটেলটা কোনভাবেই যায় না।
দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ব্যাপারটা চলে আসে। নিজেরা যদি নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হই তাহলে এই দায়িত্ব আর কেউ নিবে না। তার মানে এই না যে অন্যদেশের গান শুনব না! দেখতে হবে ব্যাপারটা যেন এক্সট্রিম লেভেলে চলে না যায়। সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত তাদের প্লে লিস্টে একটা বাংলা গানও বাজতে শুনলাম না। হতে পারে তারা বাংলা গানকে খ্যাঁত ছাড়া বেশি কিছু ভাবে না। বাসায় দিনরাত সনি, জি বাংলা আর স্টার প্লাস চললে এর থেকে ভাল কিছু আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
তৃতীয়ত, বলব ফ্যামিলি ইডুকেশনের কথা। এখানটায় ঘাটতি হলে বড় হয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ছেলেমেয়েকে আদর করা মানে এই না যে তাদের ডেসপারেটলি চলাফেরা করাটাকে সাপোর্ট দিয়ে যেতে হবে। বেশিরভাগ উচ্চবিত্তদের মাঝে যেই প্রবণতাটা খুব বেশি হারে দেখা যায়। ছেলে মেয়েদের 'টুইংকেল টুইংকেল' শেখান কোন সমস্যা নাই সাথে 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে' একবার রিডিং দিলে ভাল ছাড়া খারাপ কিছু হয়ে যাবে না।
শেষটায় এসে বলব, সময় থাকতে আমাদের সাবধান হয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি। তা না হলে সামনে ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে। নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে সচেতনতাটা গড়ে তুলতে হবে একদম রুট লেভেল থেকে তথা নিজেদের পরিবার থেকে। আর আমরা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীরই এই দায়িত্বটি কাঁধে এগিয়ে আসতে হবে। এতে করে সমাজের বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাটাও কমে আসবে আর নিজেরাও রক্ষা পাব।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২১